শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

গুজরাটে হিন্দুদের ‘ফতোয়া’, পবিত্র কোরানে গরুর মাংস খাওয়া নিষেদ - মুসলিমদের ক্ষোভ

ভারতের গুজরাটে গরুর গোস্ত নিয়ে হিন্দুদের নতুন ‘ফতোয়া’ মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আরবি শব্দ ব্যবহার করে সেটাকে পবিত্র কোরআনের আয়াত বলে চালিয়ে প্রচারণায় নেমেছে গুজরাট সরকার।
‘গৌসেবা এবং গৌচার বিকাশ বোর্ড’ বিলবোর্ড টাঙিয়েছে রাজধানী আমেদাবাদে । তাতে আরবি শব্দের পাশাপশি গুজরাটি ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘গরুর গোস্ত খেলে নাকি অসুখ করে। পবিত্র কোরআনে এমন আয়াত রয়েছে।’
এ ঘটনার পর ভারতের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিরোধীনেতারা বলছেন, বিজেপি সরকার ফের দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিচ্ছেন।
ওই বিলবোর্ডে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেলের ছবি আর ইসলাম ধর্মের প্রতীক হিসেবে চাঁদ-তারা ব্যবহার করা হয়েছে। ‘আকরামুল বাকরা ফাইনাহা সইয়েদুল বাহাইমা’— অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘গরুকে সম্মান কর। এর দুধ, ঘি, মাখন রোগ সারায়। তবে এর গোস্ত খেলে অনেক রোগ হয়’। এ বাণী পবিত্র ধর্মগ্রন্থ’ আল কোরআনের। গুজরাটের বাপুনগরের সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানাতে এই আরবি নাকি বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
এ বিলবোর্ড টাঙানোর পর ভারতের আলেম-ওলামা বলেছেন, গরুর গোস্ত খাওয়া নিয়ে ইসলামে কোন বিধান নেই। তবে হালাল খাবার হিসেবে গরুর গোস্ত খাওয়া ইসলাম সম্মত।
এ ঘটনার পর গুজরাজেটের বিরোধী নেতা মনোজ ঝা বললেন, হার্দিক প্যাটেলের আন্দোলন থেকে নজর ঘোরাতেই এসব করছে গুজরাট সরকার।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সদস্য মুফতি আহমেদ বললেন, ‘আরবি ভাষায় এ রকম কোনও প্রবাদ থাকতে পারে। তবে কোরআনে এ রকম কিছু বলা নেই। মুসলিমদের ভুল পথে চালিত করার জন্যই এসব লেখা হচ্ছে’।
মুসলিম প-িত আখতার উল ওয়াসি বরেন, ভারতে অনেক সময়ই মুসলিম শাসকরা গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেটা সম্পূর্ণ এদেশের মানুষদের ধর্মাবেগের কথা ভেবে। মোঘল সম্রাট বাবরও ছেলে হুমায়ুনকে গোহত্যা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর উইলে। কোথায় পেয়েছিলেন এই উপদেশ? প্রশ্ন করা হলে গৌসেবা এবং গৌচার বিকাশ বোর্ডের চেয়ারম্যান বল্লভভাই কাঠিরিয়ার জবাব, হিন্দি এবং গুজরাটিতে ছাপানো ২০ পাতার একটি বইয়ে ছিল প্রবাদটি। তাঁর রাজকোটের বাড়িতে নাকি এখনও রয়েছে সেই বই। তবে বইয়ের নাম, লেখকের নাম কিছুই মনে করতে পারেননি সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাঠিরিয়া।
গরু সংরক্ষণ এবং কল্যাণের জন্য গুজরাটে ১৯৯৯ সালে তৈরি হয় গৌসেবা আয়োগ। ২০১২ সালে তা গৌসেবা এবং গৌচার বিকাশ বোর্ডে পরিণত করে গুজরাট সরকারের কৃষি এবং সহযোগ দপ্তরের আওতায় আনা হয়।
মুসলিমদের অভিযোগ, গুজরাট সরকার গরু সংরক্ষণের নামে গরুর গোস্ত খাওয়ার ওপরেই পরোক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে।
গুজরাটের রাষ্ট্রীয় জনতা দল আবার এর পিছনে অন্য অভিসন্ধি দেখছে। তারা বলছে, গুজরাট মডেলের ভাঁওতাবাজি দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন হার্দিক প্যাটেল। তা চাপা দিতেই এসব বিতর্ক উসকে দিতে চাইছে রাজ্যের বি জে পি সরকার। আসলে তারা কোরআন, বাইবেল বা গীতা কোনওটাই পড়েনি। আবারো প্রমাণ করলেন বিজেপি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন