আমাদের দেশে অনেক মসজিদের মেহরাবের একপাশে লিখা থাকে আল্লাহ এবং অপর পাশে লেখা থাকে মুহাম্মাদ।
মুজাফফর বিন মুহসিন সাহেব লিখেছেন, এমনভাবে লেখা পরিস্কার শিরক।তিনি কারণ উল্লেখ করেছেন, এতে নাকি বুঝানো হয়, আল্লাহই মুহাম্মাদ। অর্থাৎ আল্লাহকে নাকি মুহাম্মাদ বানানো হয়ে যায়।(নাউযুবিল্লাহ)
জাল হাদীসের কবলে রাসুলুল্লাহ (সা) এর সালাত/১১০
জবাবঃ
লোকটির একথার দ্বারা প্রমাণ হয় যে আমাদের দেশের একজন সাধারণ মুসলিম ভাইয়ের কমন সেন্স ও তো কথিত আহলে হাদীস সর্দারের নেই। অথবা বিষয়টি জেনেও মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে ধোঁকাবাজি করছেন।
আমার দেশের একজন মুসলমান ভাই ও তো মনে করেনা, এখানে আল্লাহ দ্বারা মুহাম্মাদ বুঝানো হয়েছে।
তাহলে সর্দার এ উদ্ভট ও বানোয়াট কথা কোথায় পেলেন? একটা সম্ভাবনা রয়েছে-“শয়তান তার ওলীদের নিকট ওহী নাযিল করে”।
মসজিদের মেহরাবে এভাবে আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ লেখার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহই মুহাম্মাদ।
আমার তো মনে হয়, আজো কোন মসজিদে গিয়ে কেউ যদি এ অর্থ মুসল্লীদের সামনে বলে যে, এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহই মুহাম্মাদ, তাহলে উপস্থিত মুসল্লীগণ এই লোকটাকে গণধোলাই দিয়ে জনমের মত এমন ফেতনাবাজির মুখ বন্ধ করে দেবে।
সকল মুসল্লিগণই এ ধরণের শব্দদ্বয় ব্যবহার থেকে স্পষ্টতই বুঝে থাকে,
১/মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
১/ ‘আল্লাহ’ আমাদের রাব্ব (প্রতিপালক) এবং ‘মুহাম্মাদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নবী এবং রাসুল।
আর এ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই এভাবে ‘আল্লাহ’ এবং ‘মুহাম্মাদ’ লেখা হয়ে থাকে।মুজাফফর বলেছেন, আরবীতে ‘একসঙ্গে’ আল্লাহু মুহাম্মাদ লিখলে অর্থ হয়, আল্লাহই হচ্ছেন মুহাম্মাদ।কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোথায় এভাবে ‘একসঙ্গে’ আল্লাহু মুহাম্মাদ লেখা হয়? কোন মসজিদে? বরং মসজিদে সচরাচর যা দেখা যায়, মেহরাবের এক পাশে আল্লাহ লেখা হয় এবং অপর পাশে লেখা হয় ‘মুহাম্মাদ’। তাহলে এটা তো এক সঙ্গে লেখা হলো না,বরং দুটি শব্দ লেখা হয় মেহরাবের দু’পাশে। কিন্তু এটাকে একসঙ্গে লেখার অপপ্রচার করার মানে টা কী?ওয়াসওয়াসা? আর যদি পাশাপাশি/কাছাকাছি এভাবে লেখলে যদি শিরক হয়ে যায়, তবে তো তারা বলতে চায় স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আংটি মুবারকের মধ্যে ও শিরক বিদ্যমান ছিল!!(নাউযুবিল্লাহ।) কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আংটি মুবারকের উপর লেখা ছিল
আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ। তাহলে মুজাফফর সাহেবের কথা মত এর অর্থ দাঁড়াবে, আল্লাহই হলেন রাসুল, আর রাসুল ই হলেন মুহাম্মাদ। তারমানে আল্লাহই হলেন মুহাম্মাদ!! (নাউযুবিল্লাহ) এখন যদি তারা বলে, না, এখানে আল্লাহ, রাসুল, মুহাম্মাদ- উপর নীচ করে লেখা হয়েছে, একসাথে লেখা হয় নাই। তাই এমন শিরকের অর্থ নেয়ার সম্ভাবনা নেই। https://www.youtube.com/watch?v=ey9pVHGBsV8
তাহলে আমরা ও বলবো,মেহরাবে আল্লাহ মুহাম্মাদ এক সাথে লেখা হয় না। দুটি শব্দের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। তাই এখানে ও শিরকের সম্ভাবনা নেই। যদি তারা বলে যে, হাদীস শরীফে রয়েছে, আংটিতে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখা ছিল।
আমরা বলবো, মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আংটিতে তিনটি শব্দ দেখা যায়। আংটিতে লিখিত ঐ তিনটি শব্দ আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ দ্বারা যদি হাদিস শরীফে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে বুঝানো হয়ে থাকে, তবে মসজিদের মেহরাবের দু পাশে লেখা আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ দ্বারা মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এটাই বুঝানো হবে। এখানে ওয়াসওয়াসা পূর্ণ অর্থ নেয়ার কোন অবকাশ নেই।
অন্তরে রোগ থাকলে কেউ এমন আজগুবি কথা বলতে পারে। মোট কথা
১/ আল্লাহ শব্দের পাশে মুহাম্মাদ শব্দ লিখলেই শিরক হয়ে যায় না। এটা ভুয়া কথা।
২/ এ দুটি শব্দ লেখার মাধ্যমে বুঝানো হয়, ‘আল্লাহ হচ্ছেন মুহাম্মাদ’- এমন কথা বলার কোন ভিত্তি নেই। কারণ কোন মুসলমান এমন বিশ্বাস পোষণ করে না। করতে পারে না।
৩/ মূলত আল্লাহ শব্দ দ্বারা রাব্ব এবং মুহাম্মাদ দ্বারা এখানে তাঁর প্রেরিত রাসুলকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর এটাই মুসলমানগণ বিশ্বাস করে থাকে।
এখানে কোন বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
৪/ কিছু লোক মুসলমানের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এভাবে উদ্ভট ও আজগুবি কথা বলছে। এটা নতুন নয়। মুসলমানদের বিভ্রান্ত ও সন্দেহ প্রবণ করতে এমন অপপ্রচার বহুকাল থেকেই চলে আসছে।কেউ সফল হয় নাই।
এরাও সফল হবে না। ইনশা আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন