হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের হক ছয়টি, যথা- ১. অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া; ২. মারা গেলে জানাজায় শরিক হওয়া; ৩. বিপদে ডাকলে সাড়া দেয়া; ৪. সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করা; ৫. হাঁচি শুনলে ইয়ার হামুকুমুল্লাহ বলা এবং ৬. সর্বাবস্থায় শুভ কামনা করা’ (তিরমিজি)।
অসুস্থ-রোগী দেখতে গিয়ে কী করতেন রাসুল [সা.] কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা- শুশ্রষা করা মানবিক দায়িত্ব। এটি একটি মহৎ ইবাদতও বটে। অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছে দ্রুত কবুল হয়। এ জন্য যে রোগীর সেবা শুশ্রষা করেন রোগীর মুখ থেকে যদি নাও আসে অন্তর থেকে তার জন্য দোয়া আসে। আল্লাহ অন্তর্জামী, রোগীর অন্তরের দোয়াও তিনি দ্রুত কবুল করে নেন। রোগীর সেবা করাকে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের গুণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। হাশরের দিন তিনি বান্দাকে বলবেন, আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি। অর্থাৎ বান্দা রোগাক্রান্ত অন্য কোনো বান্দার সেবা-শুশ্রুষা করলেই সেই সেবা আল্লাহ পান। অর্থাৎ এর প্রতিদান আল্লাহর বান্দাকে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ওপর যে কয়েকটি অধিকার রাখেন এর অন্যতম হলো অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। রোগী দেখা এবং তার খোঁজখবর নেয়া রাসুলের (সা.) সুন্নত। একান্ত মানবিক তাগিদ থেকেও কেউ কোনো রোগীর সেবা-শুশ্রষা বা খবরাখবর রাখলে এর বিনিময় আল্লাহ দান করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মুসলমান অসুস্থ হলে অপর মুসলমান যখন তাকে দেখতে যায়, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত সে সেখানে অবস্থান করে ততক্ষণ সে জান্নাতের বাগিচায় অবস্থান করে।’ অন্য হাদিসে আছে, কোনো মুসলমান অসুস্থ অন্য মুসলমানকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। রোগী দেখার নিয়ম হলো, রোগীর কাছে এত সময় অপেক্ষা করা যাবে না যাতে রোগী বিরক্তিবোধ করে। রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে; তার মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করতে হবে। রাসুল (সা.) শিখিয়েছেন, রোগীর কাছে গিয়ে বলতে হবে, ইনশাআল্লাহর আপনি শিগগির ভালো হয়ে যাবেন। অসুস্থতার কারণে গোনাহ মাফ হয়। এ জন্য রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাইতে হবে। অসুস্থ কোনো মুসলমান ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করতে হবে। কোনো রোগ বা রোগীকে ঘৃণা করা যাবে না। রোগী দেখলে অন্তর নরম হয়, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জাগে। এ জন্য বেশি বেশি রোগী দেখা এবং রোগীর সেবা করার কথা বলা হয়েছে। মানুষ তার মানবিক বিবেচনা থেকেই অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। সর্বোপরি ইবাদত মনে করে রোগীর সেবা- শুশ্রষায় নিয়োজিত হওয়া ইমানেরই দাবি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন