জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল: মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা আসলে কি? আচ্ছা জীবন কি স্বপ্নের মতো নাকি স্বপ্ন জীবনের মতো? আসলে জীবন এর কোনোটিই না। ভাগ্যের নির্মমতার কাছে কারো করো জীবন হয়ে যায় দুঃস্বপ্নের মতো। তেমনই এক দুঃস্বপ্নের
যাত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এম আব্দুল আউয়াল। যে মানুষটি সারাজীবন প্রিয় শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছেন আইনস্টাইন, কখনো পিথাগোরাস কিংবা নিউটনের মতো বিশ্ববিখ্যাত মনিষীদের জটিল জটিল সূত্র। জাতির মেরুদণ্ড তৈরির এই কারিগরের জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল এখন বৃদ্ধাশ্রমে। ভাবা যায়! ভাবতে গেলে বারবার গা শিউরে
ওঠে। আমরা তবে লেখাপড়া শিখে কি শিক্ষিত হতে পারছি না? নাকি আমরা মূল্যবোধহীন অশিক্ষাটাই মগজে ঢুকিয়ে নিচ্ছি? ড. এম আব্দুল আউয়াল ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। যার সংসারে কোন দিন আর্থিক দৈন্যতা ছিল না। এই মানুষটি তার শিক্ষকতার জীবনে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন। অন্যের সন্তানদের মতো নিজের সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের মতো
করেই। সেই ব্যক্তিই এখন থাকেন প্রবীণ আশ্রয় কেন্দ্রে। দীর্ঘ ১৭ বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কিছুদিন ভালোভাবে চলতে পারলেও তার জীবনে বর্তমানে শুধুই অন্ধকার। তাই তো চোখের জলে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা আমার সঙ্গে এতো ছলচাতুরি করে কেনো, ওরা আমার এতো কষ্ট দেয় কেনো? এ সময় কোরআন- হাদিসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলা আছে, সন্তানদের আচরণে বাবা-মা উহ..আহ শব্দ করলেই আল্লাহ সন্তানদের প্রতি নারাজ হন। তারপরও আমাকে কেন এভাবে রাখে আল্লাহ। অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের দুই ছেলে, এক
মেয়ে। তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় রেজিনা ইয়াসিন থাকেন আমেরিকায়। এরপর বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) ইফতেখার হাসান। সবার ছোট ছেলে রাকিব ইফতেখার হাসান। রাকিব থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। জীবনে এতো কিছু থাকার পরও আজ তার দু’চোখে অন্ধকার। তিনি এখন থাকেন আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের ৫ম তলার ৫০২ নম্বর কক্ষে। এবারের ঈদ কিভাবে কাটিয়েছেন তিনি? জানতে চাইলে অধ্যাপক আওয়াল বলেন, ঈদের দিন সকালে প্রবীণ নিবাস থেকে পরটা, সেমাই, পায়েস দিয়েই সেরেছেন সকালের নাস্তা। এরপর তিনি তার জীবনের করুণ গল্পটি বলতে শুরু করেন। আব্দুল আউয়াল জানান, শিক্ষকতার আগে ১৯৬৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এটমিক এনার্জিতে চাকরি করেছি। এরপর শিক্ষকতা। জীবনে অনেক টাকা-পয়সা উপার্জন করেছি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে অবসর নেয়ার সময়ও আমার ২ কোটির বেশি টাকা ছিল। সেসব টাকার মধ্যে কিছু একটি এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ধরা খাই। এরপর আবার অপরিচিত একজনের আশ্বাসে আফ্রিকা যাওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ধরা খাই। তারপর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলেমেয়েরা আমার খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটে নিজের ফ্ল্যাট ছিল আব্দুল আউয়ালের। এছাড়া পল্লবীতেও বেশ কিছু জমি ছিল। কিন্তু এসব বড় ছেলে কৌশলে বিক্রি করে টাকা পয়সা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন, আক্ষেপ করেই বলেন অধ্যাপক আউয়াল। আমি কি এই জন্য ওদের এতো কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছিলাম? অধ্যাপক আউয়াল বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু দিন বড় ছেলের সঙ্গেই থাকতাম। ছেলের সংসারে থাকার সময় জানতে পারি ছেলে ও বউয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। একদিন বাসায় থাকা অবস্থায় বউয়ের মুখে গালি শুনে বাসা থেকে নেমে আসি। আর ফিরে যাই না। ওরা কেউ খোঁজও নেয় না।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে ছোট ছেলে দেশে এসে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে মিরপুর-১ নম্বরে একটি দোকানের সামনে যেতে বলে। সেখানে গেলে আমাকে জানায়
তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ওর বাবা অথচ বিয়ের কথা আমাকে জানালোও না সে! এতকিছুর পরও যখন বিয়ে করে আবার চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া তখন আমি বউ মাকে
দোয়া করতে চাইলে দেখা করা যাবে না বলে জানিয়েদেয় আমার মানিক। অথচ এই ছেলের পড়ালেখার জন্যই ফুরিয়েছি আমার পেনশনের ২৬ লাখ টাকা।
আমরা যদি সঠিক মূল্যবোধ নিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে না পারি কিংবা সঠিকভাবে পারিবারিক ও রাষ্ট্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো
হাজারো অধ্যাপক আওয়ালকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে। যেটা জাতি হিসাবে মুসলমান হিসেবে আমাদের বড়ই লজ্জার।
২২ জুলাই,২০১৫/ এমটিনিউজ২৪ / রাসেল / এমআর
ভাই লিসানুল হকের আইডি হতে সংগৃহিত
যাত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এম আব্দুল আউয়াল। যে মানুষটি সারাজীবন প্রিয় শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছেন আইনস্টাইন, কখনো পিথাগোরাস কিংবা নিউটনের মতো বিশ্ববিখ্যাত মনিষীদের জটিল জটিল সূত্র। জাতির মেরুদণ্ড তৈরির এই কারিগরের জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল এখন বৃদ্ধাশ্রমে। ভাবা যায়! ভাবতে গেলে বারবার গা শিউরে
ওঠে। আমরা তবে লেখাপড়া শিখে কি শিক্ষিত হতে পারছি না? নাকি আমরা মূল্যবোধহীন অশিক্ষাটাই মগজে ঢুকিয়ে নিচ্ছি? ড. এম আব্দুল আউয়াল ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। যার সংসারে কোন দিন আর্থিক দৈন্যতা ছিল না। এই মানুষটি তার শিক্ষকতার জীবনে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন। অন্যের সন্তানদের মতো নিজের সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের মতো
করেই। সেই ব্যক্তিই এখন থাকেন প্রবীণ আশ্রয় কেন্দ্রে। দীর্ঘ ১৭ বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কিছুদিন ভালোভাবে চলতে পারলেও তার জীবনে বর্তমানে শুধুই অন্ধকার। তাই তো চোখের জলে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা আমার সঙ্গে এতো ছলচাতুরি করে কেনো, ওরা আমার এতো কষ্ট দেয় কেনো? এ সময় কোরআন- হাদিসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলা আছে, সন্তানদের আচরণে বাবা-মা উহ..আহ শব্দ করলেই আল্লাহ সন্তানদের প্রতি নারাজ হন। তারপরও আমাকে কেন এভাবে রাখে আল্লাহ। অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের দুই ছেলে, এক
মেয়ে। তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় রেজিনা ইয়াসিন থাকেন আমেরিকায়। এরপর বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) ইফতেখার হাসান। সবার ছোট ছেলে রাকিব ইফতেখার হাসান। রাকিব থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। জীবনে এতো কিছু থাকার পরও আজ তার দু’চোখে অন্ধকার। তিনি এখন থাকেন আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের ৫ম তলার ৫০২ নম্বর কক্ষে। এবারের ঈদ কিভাবে কাটিয়েছেন তিনি? জানতে চাইলে অধ্যাপক আওয়াল বলেন, ঈদের দিন সকালে প্রবীণ নিবাস থেকে পরটা, সেমাই, পায়েস দিয়েই সেরেছেন সকালের নাস্তা। এরপর তিনি তার জীবনের করুণ গল্পটি বলতে শুরু করেন। আব্দুল আউয়াল জানান, শিক্ষকতার আগে ১৯৬৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এটমিক এনার্জিতে চাকরি করেছি। এরপর শিক্ষকতা। জীবনে অনেক টাকা-পয়সা উপার্জন করেছি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে অবসর নেয়ার সময়ও আমার ২ কোটির বেশি টাকা ছিল। সেসব টাকার মধ্যে কিছু একটি এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ধরা খাই। এরপর আবার অপরিচিত একজনের আশ্বাসে আফ্রিকা যাওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ধরা খাই। তারপর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলেমেয়েরা আমার খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটে নিজের ফ্ল্যাট ছিল আব্দুল আউয়ালের। এছাড়া পল্লবীতেও বেশ কিছু জমি ছিল। কিন্তু এসব বড় ছেলে কৌশলে বিক্রি করে টাকা পয়সা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন, আক্ষেপ করেই বলেন অধ্যাপক আউয়াল। আমি কি এই জন্য ওদের এতো কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছিলাম? অধ্যাপক আউয়াল বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু দিন বড় ছেলের সঙ্গেই থাকতাম। ছেলের সংসারে থাকার সময় জানতে পারি ছেলে ও বউয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। একদিন বাসায় থাকা অবস্থায় বউয়ের মুখে গালি শুনে বাসা থেকে নেমে আসি। আর ফিরে যাই না। ওরা কেউ খোঁজও নেয় না।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে ছোট ছেলে দেশে এসে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে মিরপুর-১ নম্বরে একটি দোকানের সামনে যেতে বলে। সেখানে গেলে আমাকে জানায়
তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ওর বাবা অথচ বিয়ের কথা আমাকে জানালোও না সে! এতকিছুর পরও যখন বিয়ে করে আবার চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া তখন আমি বউ মাকে
দোয়া করতে চাইলে দেখা করা যাবে না বলে জানিয়েদেয় আমার মানিক। অথচ এই ছেলের পড়ালেখার জন্যই ফুরিয়েছি আমার পেনশনের ২৬ লাখ টাকা।
আমরা যদি সঠিক মূল্যবোধ নিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে না পারি কিংবা সঠিকভাবে পারিবারিক ও রাষ্ট্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো
হাজারো অধ্যাপক আওয়ালকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে। যেটা জাতি হিসাবে মুসলমান হিসেবে আমাদের বড়ই লজ্জার।
২২ জুলাই,২০১৫/ এমটিনিউজ২৪ / রাসেল / এমআর
ভাই লিসানুল হকের আইডি হতে সংগৃহিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন