কাবা শরীফ পানিতে ডুবে গেছে, আর একজন সাতার কেটে তওয়াফ করছে, ৭৪ বছর পুরনো সাদাকালো এই ছবিটি যিনিই দেখেছেন তিনিই অবাক হয়ে তাকিয়ে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করেছেন ছবিটির মর্মার্থ কি ? কাবা শরিফ যে ভ্যালিতে আল্লাহর নির্দেশে তৈরী হয়েছে সেখানে বেশি বৃষ্টি হলে সবসময়ই পানি জমে যেতো।
১৯৪১ সনে একাধারে ৭ দিন বৃষ্টি হওয়াতে ৬ফুট পানি জমে গিয়েছিলো কাবার চারপাশে। বাহরাইনের ১২ বছর বয়সী শেখ আলআওয়াদী তখন মক্কায় দ্বীনি স্কুলের ছাত্র। ২০১৩ সনে কুয়েত আল রাই টেলিভিশনে তিনি তার স্মৃতি চারণে বলেন, "বন্যার পানিতে মানুষ, যানবাহন, আর গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। ৭ দিন পর বৃষ্টি থামলে আমর ভাই হানিফ, বন্ধুবর তিমবাক্তুর মালিয়ান শহরের মোহাম্মদ আল তাইয়িব, ও আলী থাবিত, আর ইয়ামেনের এডেনের হাসিম আল বার, আর আমাদের শিক্ষক তিউনিসের আব্দুল রউফ মিলে কাবা শরীফের বন্যার অবস্থা দেখতে যাই।
বাচ্চারা পানি দেখলে যা করে আমরাও তাই করলাম, মাথায় আসলো সাতরিয়ে তওয়াফ করবো। যা ভাবা তাই, আমরা চারজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়লাম।পুলিশ হই হই করে উঠলো, আমরা কালো পাথর চুরি করার নিয়তে পানিতে নেমেছি কিনা। আমি সাতরাতে সাতরাতে পুলিশকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম, আমি শুধু সাতরিয়ে তওয়াফ করব ৭ বার, পুলিশ তার স্বভাব সুলভ খবরদারী করেই চলছিলো। ইতিমধ্যে আলী থাবিত আর মোহাম্মদ আল তাইয়িব ক্লান্ত হয়ে পড়লে কাবা শরীফের দরজার ওপর বসে থাকে, উদ্ধার হবার আশায়।"
তিনি বলেন, "আমার ভয় হচ্ছিলো যে পুলিশ আমাকে গুলি করে না বসে আবার আনন্দ হচ্ছিলো এই ভেবে যে, পৃথিবীতে কেউ কোনদিন এই ভাবে কাবা প্রদক্ষিন করেনি, আমিই প্রথম। তাই ভয় আর আনন্দের মিশ্র অনুভুতি নিয়ে আমি কাবার চারপাশে সাতরিয়েই চললাম। পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম, পুলিশের রাইফেলে আসলে গুলি ছিলোনা।"
শেখ জানান তিনি তত্কালীন মক্কার বুড়ো মানুষদের কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন তারা এরকম বানের পানি আগে দেখেছেন কিনা, তারা কস্মিন কালেও এত পানি দেখেননি বলে খবর দিয়েছেন।
২০১৫ র মে মাসের ১৬ তারিখ ৮৬ বছর বয়সে শেখ আল আওয়াদি বাহরাইনে ইন্তেকাল করেন। তার ছেলে আব্দুল মজিদ ২০ বছর আগে হজ্জ করতে গিয়ে তার বাবার ছবির পোস্টার কপি কিনে এনেছিলো মক্কা থেকে পিতার জন্যে উপহার হিসাবে।
প্রতিটি মুসলমান জানে কাবাঘর আল্লাহর হুকুমে বানানো একটি প্রতিকী ঘর, মুসলমানরা এই ঘরের দিকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্যেশ্যে সেজদা, প্রনতি করে, কাবাঘর বা এর আনুসঙ্গিক কালো পাথর, মাকামে ইব্রাহিম এগুলির পূজা করেনা কেউ, তাই অনেকবার কাবা পানিতে ডুবে গেছে, আগুন লেগেছে, কালো পাথর খুলে নিয়ে গেছে বহু বছরের জন্যে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। আব্বাসীয় খলিফাদের উদ্ধার পর্বে ভাঙ্গা পাথরটির সব টুকরাও পাওয়া যায়নি হয়তো, এখন রুপোর বেষ্টনী দিয়ে আটকানো আছে বাকিগুলি সেই থেকে। মহা বিশ্বের যেকোনো উপাদান দিয়ে তৈরী কোনো জিনিষ স্থায়ী নয়, এগুলি সবই আল্লার সৃষ্ট বস্তু নীচয় । আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা, চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, মুসলমানরা শুধু আল্লাহরই উপাসনা করে। সৃষ্ট কোনো কিছুরই পূজা ইসলামে নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন