এ ব্যাপারে ওলামায়ে দেওবন্দের মত আলোচনা করার আগে সকলকে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার যে আহলে হাদীস শায়খগণ এ ব্যাপারে ওলামায়ে দেওবন্দের নামে খেয়ানতের সাথে মিথ্যাচার করে আসছে। ওলামায়ে দেওবন্দের বিভিন্ন কিতাব থেকে এক অংশ প্রকাশ করে আলোচনার ফলাফলকে চেপে রাখে। এটা তাদের নতুন কোন পদ্ধতি না। সাধারণ মানুষ যেহেতু বড় বড় আরবী কিতাব মুতালায়া করে তাদের মত যাচাই করতে পারে না তাই দলিলের চিপায় ফেলে সাধারণ মানুষদের আই ওয়াশ করে আসছে। তারা যে অংশটুকু গোপন করে আসল বিষয় সে অংশের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে। আলোচনা করতে গিয়ে আমি সে গোপন করা অংশটুকুই প্রকাশ করবো ইনশাল্লাহ।
হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""
ফকীহুন্নফস হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.ও মুনাজাত অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করেছেন। (আল কাওকাবুদ্দুররী: ২/২৯১)
হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""""""
নামাযের পরে ইমামের দুআ’ করা এবং উপস্থিত লোকদের আমীন বলার বিষয়ে অনেক আলোচনা-পর্যালোচ
না করা হয়েছে। ইমাম ইবনে আরাফা এবং অন্যান্যদের বক্তব্যের সার কথা এই যে, যদি নামাযের পরের দুআ’ এই বিশ্বাসে করা হয় যে, এটা নামাযের ছুন্নাত-মুস্তাহ
াবসমূহের একটি ছুন্নাত বা মুস্তাহাব আমল। তাহলে এটা বৈধ নয়। তবে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করা ব্যতীত যদি এ জন্য দুআ’ করে যে, এটা স্বতন্ত্র একটা মুস্তাহাব ইবাদাত। তাহলে দুআ’র মূল হুকুমের উপর ভিত্তি করে এটাও মুস্তাহাব হবে যেহেতু দুআ’র ফজিলত কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (ইমদাদুল ফতোয়া-১ম খন্ড, ৮০৪ পৃষ্ঠা)
মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রহ.
"""""""""""""""""""""""""
মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রহ. বলেন: ফরয নামাযের পরে ইমাম সাহেব কর্তৃক উচ্চ আওয়াজে দুআ করা এবং মুক্তাদী কর্তৃক আমীন আমীন বলার পদ্ধতিকে জরুরী মনে না করলে বৈধ। (কিফায়াতুল মুফতী: ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা)
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
""""""
আজানের পরে হাত উঠিয়ে দুআ করার বিষয়ে হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. বলেন: জেনে রাখ যে, অনুরূপ পদ্ধতিতে দুআ করা রসূলুল্লাহ স. থেকে প্রমাণিত নয়। আর নামাযের পরে হাত তুলে দুআ করার আমলও রসূলুল্লাহ স. থেকে খুব কমই পাওয়া যায়। এতদসত্ত্বেও এ ব্যাপারে মৌখিক উৎসাহ প্রমাণিত। এ জাতীয় বিষয়কে বিদআত বলা যায় না। আমাদের যুগের এ দুআ রসূলুল্লাহ স. থেকে প্রমাণিত সুন্নাত নয়। আবার দ্বীনের মধ্যে ভিত্তিহীন বিদআতও নয়।
আরও কিছু পরে গিয়ে তিনি বলেন: .
যদি এ বিষয়গুলো তুমি অনুধাবন করে থাক তাহলে তোমার মনের সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দাও। (দুআর সময়) হাত তোলা বিদআত নয়। রসূলুল্লাহ-এর অনেক কথা এবং নামাযের পরে কিছু কাজ সেদিকে পথ দেখিয়েছে। আর এমনই অবস্থা জিকির ও অজীফার। রসূলুল্লাহ স. নিজের জন্য তাই বেছে নিয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যা পছন্দ করেছেন। আর কিছু বিষয় তিনি উম্মাতকে উৎসাহিত করেছেন। আমাদের কেউ যদি নামাযের পরে হাত উঠিয়ে দুআ করার আমল করতে থাকে তাহলে সে এমন আমল করলো যে কাজে রসূলুল্লাহ স. উৎসাহ দিয়েছেন; যদিও তিনি নিজে এ কাজ বেশী করেননি। (ফাইজুল বারী: ‘মুয়াজ্জিনের আজান শুনে কী বলবে’ অধ্যায়)
আনোয়ার শাহ কাশ্মরিী রাহঃ আরো বলনে –
“নামাযরে পর মুনাজাত প্রসঙ্গে হাদীস সমূহ ব্যাপকতা সম্পন্ন। এ হাদীস সমূহে মুনাজাতরে কোন ক্ষত্রে উল্লখে নইে। অতএব হাদীস সমূহরে ব্যাপকতার ভত্তিতিে নামাযরে পর র্সবক্ষত্রেরে/ধরনরে মুনাযাতই মুস্তাহাব বলে ববিচেতি হব।ে মূলভত্তিি সহীহ হাদীসে বদ্যিমান থাকার পর বদোয়াতরে প্রশ্নয় উঠে না।” (ফাইযুল বারী ২/ ৪৩১)।
আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ.
"""""""""""""""""""""""""""
ﻓﻬﺬﻩ ﻭﻣﺎ ﺷﺎﻛﻠﻬﺎ ﺗﻜﺎﺩ ﺗﻜﻔﻰ ﺣﺠﺔ ﻟﻤﺎ ﺍﻋﺘﺎﺩﻩ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺕ ﺍﻹﺟﺘﻤﺎﻋﻴﺔ ﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﻭﻟﺬﺍ ﺫﻛﺮﻩ ﻓﻘﻬﺎﺅﻧﺎ ﺃﻳﻀﺎ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﻧﻮﺭ ﺍﻹﻳﻀﺎﺡ ﻭ ﺷﺮﺣﻪ ﻣﺮﺍﻗﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ ﻟﻠﺸﺮﻧﺒﻼﻟﻰ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻬﺬﺏ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻭ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻡ ﻭﺍﻟﻤﻨﻔﺮﺩ ﻣﺴﺘﺤﺐ ﻋﻘﺐ ﻛﻞ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺑﻼ ﺧﻼﻑ ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺍﻥ ﻳﻘﺒﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﻠﺖ ﻭﺛﺒﺖ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻣﺴﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺃﻳﻀﺎ ﻛﻤﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻓﻰ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ ﻓﺜﺒﺘﺖ ﺍﻟﺼﻮﺭﺗﺎﻥ ﺟﻤﻴﻌﺎ ﻓﻠﻴﻨﺒﻪ - ( ﻣﻌﺎﺭﻑ ﺍﻟﺴﻨﻦ ,(৩/১২৩) ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﻠﻢ )
হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. বেশ কিছু হাদীস পেশ করার পরে বলেন: এগুলো এবং এর অনুরূপ যা আছে তা দ্বারা আমাদের দেশে প্রচলিত নামাযের পরে সম্মিলিত দুআর প্রমাণের জন্য প্রায় যথেষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নামাযের পরে সম্মিলিত দুআর কথা আমাদের ফকীহগণ বলেছেন। যেমনটি উল্লেখ রয়েছে আবুল হাসান শারান্বুলালীর লিখিত ‘নুরুল ঈযাহ’ এবং উক্ত কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মারাকিল ফালাহ’ কিতাবে। ইমাম নববী ‘শরহুল মুহাজ্জাব’ কিতাবের ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠায় বলেন: ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামাযী সকলের জন্য প্রত্যেক নামাযের পরে দুআ করা সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহাব। আর ইমামের জন্য মুস্তাহাব হলো (দুআর সময়) মুসল্লীদের দিকে ফেরা। আল্লামা বিন্নুরী রহ. বলেন: কিবলার দিকে ফিরে দুআ করাও প্রমাণিত, যেভাবে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে তাফসীরে আবু হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং (মুসল্লীদের দিকে ফিরে এবং কিবলামুখী হয়ে) উভয় পদ্ধতিই প্রমাণিত হলো। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখুন। (মাআরিফুস সুনান: ৩/১২৩, ‘সালামের পরে কী বলবে’ অধ্যায়)
আল্লামা জাফর আহমাদ উসমানী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""
প্রখ্যাত হাদীস সংকলক হযরত মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী রহ. বলেন: “আমাদের দেশে যে রীতি প্রচলিত রয়েছে যে, ইমাম সাহেব কোন কোন নামযের পরে কিবলামুখী হয়ে দুআ করেন, তা বিদআত নয়। বরং হাদীসে উক্ত দুআর ভিত্তি রয়েছে। যদিও ইমামের জন্য প্রত্যেক নামাযের পর ডানে বা বামে ফেরা উত্তম”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৯৯)
তিনি আরও বলেন: “আমাদের দেশে যে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রথা চালু আছে যে, ইমাম সাহেব নামাযের পরে কিবলামুখী বসে দুআ করে থাকেন, এটা কোন বিদআত কাজ নয়। বরং হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে ইমামের জন্য উত্তম হলো ডানদিক বা বামদিকে ফিরে মুনাজাত করা”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৬৩, ৩/১৯৯)
তিনি আরও বলেন: “হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। যেমন আমাদের দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রচলিত আছে”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৬৭, ৩/২০৪) এরপর তিনি নামাযের পরে মুনাজাত অস্বীকারকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। (ই’লাউস সুনান: ৩/২০৩)
আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা,বা
"""""""""""""""""""""""""""""
আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা,বা
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ত্বাকী উসমানি দা,বা বলেন- “ উভয় দিক বিবেচনার পর সঠিক অবস্থান এটা যে – (ফরয সালাতের পর) ইজতেমায়ি দোয়া সুন্নতও নয় এবং নিষেধ করার মতো বিষয়ও নয়। বরং এটা এবাদাতের বিভিন্ন বৈধ পদ্ধতি হতে একটি (several permissible ways of perforoming supplication)। ” (Contemprary fatwah - 32)
বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠ ‘জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া’ এর দারুল ইফতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রশ্নের উত্তরে মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা,বা হুজ্জত ও উসূলের উপর ভিত্তি করে প্রমান করেছেন ফরয সালাতের পর ইজতেমায়ি দোয়া করা মুস্তাহাব। এরপর তিনি বলেন -
“এ সকল বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নামাযের পর ইমাম, মুক্তাদী সকলের জন্য সম্মিলিতভাবে মুনাযাত করা মুস্তাহাব। এ মুনাজাতকে বেদায়াত বলার কোন যুক্তিই নেই। কারণ-বিদায়াত বলা হয় সে আমলকে শরীয়তে যার কোন অস্তিত্বই নেই। মুনাজাত সেই ধরনের মূল্যহীন কোন আমল নয়। তবে যেহেতু মুনাজাত ‘মুস্তাহাব আমল’ তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।
অতএব, কেউ মুনাজাতের ব্যাপারে যদি এমন জোর দেয়, মুনাজাত তরককারীকে কটাক্ষ বা সমালোচনা করতে থাকে, বা মুনাজাত না করলে তার সাথে ঝগড়া ফাসাদ করতে থাকে তাদের জন্য বা সেরূপ পরিবেশের জন্য মুনাজাত করা নিঃসন্দেহে মাকরুহ ও বিদআত হবে। মুনাজাত বিদায়াত হওয়ার এই একটি মাত্র দিক আছে। আর এটা কেবল মুনাজাতের বেলায় নয় বরং সমস্ত মস্তাহাবের বেলায় এ হুকুম। অতএব মুনাজাতও পালন করতে পারবে এবং বেদায়াত থেকেও বাঁচতে পারবে। আর এ জন্য সুষ্ঠ নিয়ম আমাদের জন্য এই যে , মসজিদের ইমাম সাহেবান মুনাজাতের আমল জারী রেখে মুনাজাতের দর্জা সম্পর্কে মুসল্লীগণকে ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বুঝাবেন এবং ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নত মুস্তাহাবের দর্জা-ব্যাবধান বুঝিয়ে দিয়ে বলবেন যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা যেহেতু মুস্তাহাব সুতরাং যার সুযোগ আছে সে মুস্তাহাবের উপর আমল করে নিবে। আর যার সুযোগ নেই তার জন্য মুস্তাহাব তরক করার অবকাশ আছে। এমনকি কেউ যদি ইমামের সাথে মুনাজাত শুরু করে, তাহলে ইমামের সাথে শেষ করাও জরূরী নয়। কারণ, সালাম ফিরানোর পর ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং কেউ চাইলে ইমামের আগেই মুনাজাত শেষ করে দিতে পারে। আবার কেউ চাইলে ইমামের মুনাজাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ একা একা মুনাজাত করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শরীয়তে নিষেধ। এভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ইমাম সাহেবান প্রত্যেক ফরয সালাতের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই।” (ফাতওয়ায়ে রাহমানিয়া ১/ ৩২৬- ৩২৭)
বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া এর প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি হাফেয আহমাদুল্লাহ দোয়ার উপর একটি সতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। কিতাবটির নাম “ বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ ও ইজমার আলোকে ফরজ নামাযের পর দোয়া ও মুনাজাত...” কিতাবটির ২৩ পৃষ্ঠায় তিনি লেখেন
– “ সে জন্য আমাদের দেওবন্দের ওলামায়া কেরামের মুরুব্বি হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দাদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী রাহঃ এই মাসয়ালা সম্পর্কে অর্থাৎ ফরজ সালাতের পর সম্মিলিতভাবে, হাত উঠিয়ে দোয়া করা সুন্নত ও মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে আমাদের চার মাযহাবের ইমামদের ইজমা নকল করত কোরআন হাদীস এবং নির্ভরযোগ্য ফিকাহ ফতোয়ার কিতাবাদি থেকে অনেক দালায়িল একত্রিত করে একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম ‘ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﻋﻘﻴﺐ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ’ । কিতাবটি কয়েক জায়গায় মুদ্রিত হয়ে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সবজায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তা থানভী রাহঃ এর প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ ‘উমদাদুল ফাতওয়া’র প্রথম খন্ডের শেষে যুক্ত করে ছাপানো হয়েছে। এরকম তদানিন্তন অখন্ড ভারতের ফতোয়া বিষারদ মুফতিয়ে আজম হযরত মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহ” ও ফরয সালাতের পর সম্মিলিত দোয়া ও মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে পৃথকভাবে একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম ‘ ﺍﻟﻨﻔﺎﺀﺱ ﺍﻟﻤﺮﻏﻮﺑﺖ ﻓﻲ ﻣﺲﺀﻟﺔ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﺘﻮ ﺑﺔ ’। সে কিতাবটিও অনেকবার মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম আরো বহু দেওবন্দি ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনেক কিতাব লিখেছেন। ” (পৃ-২৩)
আমাদের আহলে হাদীস ভায়েরা দেওবন্দের আলেমদের যে সকল কওল দিয়ে বুঝাতে চায় যে দেওবন্দের আলেমগণ ফরয সালাতের পর ইজতেমায়ি দোয়া করতে নিষেধ করেছেন সে সকল কওল সমূহের মূল কথা হল –
“রসূলুল্লাহ স. বা সাহাবায়ে কিরাম এ আমলটি স্থায়ীভাবে করেছেন মর্মে কোন পরিষ্কার বর্ণনা আমরা হাদীসে খুঁজে পাইনি। তাই হাদীসের মর্মানুসারে ফরয নামাযের পরে হাত উত্তোলন করে ইজতিমাঈ দুআ মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দেয়া উত্তম। যাতে সাধারণ মানুয়ের মধ্যেও এ বুঝ সৃষ্টি হয় যে, এটা নফল পর্যায়ের আমল; সুতরাং করা উত্তম হলেও না করাতে কোন দোষ নেই।”
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির থেকে হেফাযত করুন।–আমিন
হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""
ফকীহুন্নফস হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.ও মুনাজাত অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করেছেন। (আল কাওকাবুদ্দুররী: ২/২৯১)
হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""""""
নামাযের পরে ইমামের দুআ’ করা এবং উপস্থিত লোকদের আমীন বলার বিষয়ে অনেক আলোচনা-পর্যালোচ
না করা হয়েছে। ইমাম ইবনে আরাফা এবং অন্যান্যদের বক্তব্যের সার কথা এই যে, যদি নামাযের পরের দুআ’ এই বিশ্বাসে করা হয় যে, এটা নামাযের ছুন্নাত-মুস্তাহ
াবসমূহের একটি ছুন্নাত বা মুস্তাহাব আমল। তাহলে এটা বৈধ নয়। তবে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করা ব্যতীত যদি এ জন্য দুআ’ করে যে, এটা স্বতন্ত্র একটা মুস্তাহাব ইবাদাত। তাহলে দুআ’র মূল হুকুমের উপর ভিত্তি করে এটাও মুস্তাহাব হবে যেহেতু দুআ’র ফজিলত কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (ইমদাদুল ফতোয়া-১ম খন্ড, ৮০৪ পৃষ্ঠা)
মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রহ.
"""""""""""""""""""""""""
মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রহ. বলেন: ফরয নামাযের পরে ইমাম সাহেব কর্তৃক উচ্চ আওয়াজে দুআ করা এবং মুক্তাদী কর্তৃক আমীন আমীন বলার পদ্ধতিকে জরুরী মনে না করলে বৈধ। (কিফায়াতুল মুফতী: ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা)
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
""""""
আজানের পরে হাত উঠিয়ে দুআ করার বিষয়ে হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. বলেন: জেনে রাখ যে, অনুরূপ পদ্ধতিতে দুআ করা রসূলুল্লাহ স. থেকে প্রমাণিত নয়। আর নামাযের পরে হাত তুলে দুআ করার আমলও রসূলুল্লাহ স. থেকে খুব কমই পাওয়া যায়। এতদসত্ত্বেও এ ব্যাপারে মৌখিক উৎসাহ প্রমাণিত। এ জাতীয় বিষয়কে বিদআত বলা যায় না। আমাদের যুগের এ দুআ রসূলুল্লাহ স. থেকে প্রমাণিত সুন্নাত নয়। আবার দ্বীনের মধ্যে ভিত্তিহীন বিদআতও নয়।
আরও কিছু পরে গিয়ে তিনি বলেন: .
যদি এ বিষয়গুলো তুমি অনুধাবন করে থাক তাহলে তোমার মনের সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দাও। (দুআর সময়) হাত তোলা বিদআত নয়। রসূলুল্লাহ-এর অনেক কথা এবং নামাযের পরে কিছু কাজ সেদিকে পথ দেখিয়েছে। আর এমনই অবস্থা জিকির ও অজীফার। রসূলুল্লাহ স. নিজের জন্য তাই বেছে নিয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যা পছন্দ করেছেন। আর কিছু বিষয় তিনি উম্মাতকে উৎসাহিত করেছেন। আমাদের কেউ যদি নামাযের পরে হাত উঠিয়ে দুআ করার আমল করতে থাকে তাহলে সে এমন আমল করলো যে কাজে রসূলুল্লাহ স. উৎসাহ দিয়েছেন; যদিও তিনি নিজে এ কাজ বেশী করেননি। (ফাইজুল বারী: ‘মুয়াজ্জিনের আজান শুনে কী বলবে’ অধ্যায়)
আনোয়ার শাহ কাশ্মরিী রাহঃ আরো বলনে –
“নামাযরে পর মুনাজাত প্রসঙ্গে হাদীস সমূহ ব্যাপকতা সম্পন্ন। এ হাদীস সমূহে মুনাজাতরে কোন ক্ষত্রে উল্লখে নইে। অতএব হাদীস সমূহরে ব্যাপকতার ভত্তিতিে নামাযরে পর র্সবক্ষত্রেরে/ধরনরে মুনাযাতই মুস্তাহাব বলে ববিচেতি হব।ে মূলভত্তিি সহীহ হাদীসে বদ্যিমান থাকার পর বদোয়াতরে প্রশ্নয় উঠে না।” (ফাইযুল বারী ২/ ৪৩১)।
আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ.
"""""""""""""""""""""""""""
ﻓﻬﺬﻩ ﻭﻣﺎ ﺷﺎﻛﻠﻬﺎ ﺗﻜﺎﺩ ﺗﻜﻔﻰ ﺣﺠﺔ ﻟﻤﺎ ﺍﻋﺘﺎﺩﻩ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺕ ﺍﻹﺟﺘﻤﺎﻋﻴﺔ ﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﻭﻟﺬﺍ ﺫﻛﺮﻩ ﻓﻘﻬﺎﺅﻧﺎ ﺃﻳﻀﺎ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﻧﻮﺭ ﺍﻹﻳﻀﺎﺡ ﻭ ﺷﺮﺣﻪ ﻣﺮﺍﻗﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ ﻟﻠﺸﺮﻧﺒﻼﻟﻰ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻬﺬﺏ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻭ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻡ ﻭﺍﻟﻤﻨﻔﺮﺩ ﻣﺴﺘﺤﺐ ﻋﻘﺐ ﻛﻞ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺑﻼ ﺧﻼﻑ ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺍﻥ ﻳﻘﺒﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﻠﺖ ﻭﺛﺒﺖ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻣﺴﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺃﻳﻀﺎ ﻛﻤﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻓﻰ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ ﻓﺜﺒﺘﺖ ﺍﻟﺼﻮﺭﺗﺎﻥ ﺟﻤﻴﻌﺎ ﻓﻠﻴﻨﺒﻪ - ( ﻣﻌﺎﺭﻑ ﺍﻟﺴﻨﻦ ,(৩/১২৩) ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﻠﻢ )
হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. বেশ কিছু হাদীস পেশ করার পরে বলেন: এগুলো এবং এর অনুরূপ যা আছে তা দ্বারা আমাদের দেশে প্রচলিত নামাযের পরে সম্মিলিত দুআর প্রমাণের জন্য প্রায় যথেষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নামাযের পরে সম্মিলিত দুআর কথা আমাদের ফকীহগণ বলেছেন। যেমনটি উল্লেখ রয়েছে আবুল হাসান শারান্বুলালীর লিখিত ‘নুরুল ঈযাহ’ এবং উক্ত কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মারাকিল ফালাহ’ কিতাবে। ইমাম নববী ‘শরহুল মুহাজ্জাব’ কিতাবের ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠায় বলেন: ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামাযী সকলের জন্য প্রত্যেক নামাযের পরে দুআ করা সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহাব। আর ইমামের জন্য মুস্তাহাব হলো (দুআর সময়) মুসল্লীদের দিকে ফেরা। আল্লামা বিন্নুরী রহ. বলেন: কিবলার দিকে ফিরে দুআ করাও প্রমাণিত, যেভাবে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে তাফসীরে আবু হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং (মুসল্লীদের দিকে ফিরে এবং কিবলামুখী হয়ে) উভয় পদ্ধতিই প্রমাণিত হলো। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখুন। (মাআরিফুস সুনান: ৩/১২৩, ‘সালামের পরে কী বলবে’ অধ্যায়)
আল্লামা জাফর আহমাদ উসমানী রহ.
""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""
প্রখ্যাত হাদীস সংকলক হযরত মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী রহ. বলেন: “আমাদের দেশে যে রীতি প্রচলিত রয়েছে যে, ইমাম সাহেব কোন কোন নামযের পরে কিবলামুখী হয়ে দুআ করেন, তা বিদআত নয়। বরং হাদীসে উক্ত দুআর ভিত্তি রয়েছে। যদিও ইমামের জন্য প্রত্যেক নামাযের পর ডানে বা বামে ফেরা উত্তম”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৯৯)
তিনি আরও বলেন: “আমাদের দেশে যে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রথা চালু আছে যে, ইমাম সাহেব নামাযের পরে কিবলামুখী বসে দুআ করে থাকেন, এটা কোন বিদআত কাজ নয়। বরং হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে ইমামের জন্য উত্তম হলো ডানদিক বা বামদিকে ফিরে মুনাজাত করা”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৬৩, ৩/১৯৯)
তিনি আরও বলেন: “হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। যেমন আমাদের দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রচলিত আছে”। (ই’লাউস সুনান: ৩/১৬৭, ৩/২০৪) এরপর তিনি নামাযের পরে মুনাজাত অস্বীকারকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। (ই’লাউস সুনান: ৩/২০৩)
আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা,বা
"""""""""""""""""""""""""""""
আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা,বা
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ত্বাকী উসমানি দা,বা বলেন- “ উভয় দিক বিবেচনার পর সঠিক অবস্থান এটা যে – (ফরয সালাতের পর) ইজতেমায়ি দোয়া সুন্নতও নয় এবং নিষেধ করার মতো বিষয়ও নয়। বরং এটা এবাদাতের বিভিন্ন বৈধ পদ্ধতি হতে একটি (several permissible ways of perforoming supplication)। ” (Contemprary fatwah - 32)
বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠ ‘জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া’ এর দারুল ইফতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রশ্নের উত্তরে মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা,বা হুজ্জত ও উসূলের উপর ভিত্তি করে প্রমান করেছেন ফরয সালাতের পর ইজতেমায়ি দোয়া করা মুস্তাহাব। এরপর তিনি বলেন -
“এ সকল বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নামাযের পর ইমাম, মুক্তাদী সকলের জন্য সম্মিলিতভাবে মুনাযাত করা মুস্তাহাব। এ মুনাজাতকে বেদায়াত বলার কোন যুক্তিই নেই। কারণ-বিদায়াত বলা হয় সে আমলকে শরীয়তে যার কোন অস্তিত্বই নেই। মুনাজাত সেই ধরনের মূল্যহীন কোন আমল নয়। তবে যেহেতু মুনাজাত ‘মুস্তাহাব আমল’ তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।
অতএব, কেউ মুনাজাতের ব্যাপারে যদি এমন জোর দেয়, মুনাজাত তরককারীকে কটাক্ষ বা সমালোচনা করতে থাকে, বা মুনাজাত না করলে তার সাথে ঝগড়া ফাসাদ করতে থাকে তাদের জন্য বা সেরূপ পরিবেশের জন্য মুনাজাত করা নিঃসন্দেহে মাকরুহ ও বিদআত হবে। মুনাজাত বিদায়াত হওয়ার এই একটি মাত্র দিক আছে। আর এটা কেবল মুনাজাতের বেলায় নয় বরং সমস্ত মস্তাহাবের বেলায় এ হুকুম। অতএব মুনাজাতও পালন করতে পারবে এবং বেদায়াত থেকেও বাঁচতে পারবে। আর এ জন্য সুষ্ঠ নিয়ম আমাদের জন্য এই যে , মসজিদের ইমাম সাহেবান মুনাজাতের আমল জারী রেখে মুনাজাতের দর্জা সম্পর্কে মুসল্লীগণকে ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বুঝাবেন এবং ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নত মুস্তাহাবের দর্জা-ব্যাবধান বুঝিয়ে দিয়ে বলবেন যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা যেহেতু মুস্তাহাব সুতরাং যার সুযোগ আছে সে মুস্তাহাবের উপর আমল করে নিবে। আর যার সুযোগ নেই তার জন্য মুস্তাহাব তরক করার অবকাশ আছে। এমনকি কেউ যদি ইমামের সাথে মুনাজাত শুরু করে, তাহলে ইমামের সাথে শেষ করাও জরূরী নয়। কারণ, সালাম ফিরানোর পর ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং কেউ চাইলে ইমামের আগেই মুনাজাত শেষ করে দিতে পারে। আবার কেউ চাইলে ইমামের মুনাজাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ একা একা মুনাজাত করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শরীয়তে নিষেধ। এভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ইমাম সাহেবান প্রত্যেক ফরয সালাতের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই।” (ফাতওয়ায়ে রাহমানিয়া ১/ ৩২৬- ৩২৭)
বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া এর প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি হাফেয আহমাদুল্লাহ দোয়ার উপর একটি সতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। কিতাবটির নাম “ বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ ও ইজমার আলোকে ফরজ নামাযের পর দোয়া ও মুনাজাত...” কিতাবটির ২৩ পৃষ্ঠায় তিনি লেখেন
– “ সে জন্য আমাদের দেওবন্দের ওলামায়া কেরামের মুরুব্বি হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দাদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী রাহঃ এই মাসয়ালা সম্পর্কে অর্থাৎ ফরজ সালাতের পর সম্মিলিতভাবে, হাত উঠিয়ে দোয়া করা সুন্নত ও মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে আমাদের চার মাযহাবের ইমামদের ইজমা নকল করত কোরআন হাদীস এবং নির্ভরযোগ্য ফিকাহ ফতোয়ার কিতাবাদি থেকে অনেক দালায়িল একত্রিত করে একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম ‘ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﻋﻘﻴﺐ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ’ । কিতাবটি কয়েক জায়গায় মুদ্রিত হয়ে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সবজায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তা থানভী রাহঃ এর প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ ‘উমদাদুল ফাতওয়া’র প্রথম খন্ডের শেষে যুক্ত করে ছাপানো হয়েছে। এরকম তদানিন্তন অখন্ড ভারতের ফতোয়া বিষারদ মুফতিয়ে আজম হযরত মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহ” ও ফরয সালাতের পর সম্মিলিত দোয়া ও মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে পৃথকভাবে একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম ‘ ﺍﻟﻨﻔﺎﺀﺱ ﺍﻟﻤﺮﻏﻮﺑﺖ ﻓﻲ ﻣﺲﺀﻟﺔ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﺘﻮ ﺑﺔ ’। সে কিতাবটিও অনেকবার মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম আরো বহু দেওবন্দি ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনেক কিতাব লিখেছেন। ” (পৃ-২৩)
আমাদের আহলে হাদীস ভায়েরা দেওবন্দের আলেমদের যে সকল কওল দিয়ে বুঝাতে চায় যে দেওবন্দের আলেমগণ ফরয সালাতের পর ইজতেমায়ি দোয়া করতে নিষেধ করেছেন সে সকল কওল সমূহের মূল কথা হল –
“রসূলুল্লাহ স. বা সাহাবায়ে কিরাম এ আমলটি স্থায়ীভাবে করেছেন মর্মে কোন পরিষ্কার বর্ণনা আমরা হাদীসে খুঁজে পাইনি। তাই হাদীসের মর্মানুসারে ফরয নামাযের পরে হাত উত্তোলন করে ইজতিমাঈ দুআ মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দেয়া উত্তম। যাতে সাধারণ মানুয়ের মধ্যেও এ বুঝ সৃষ্টি হয় যে, এটা নফল পর্যায়ের আমল; সুতরাং করা উত্তম হলেও না করাতে কোন দোষ নেই।”
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির থেকে হেফাযত করুন।–আমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন