মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

জুমঅার খুতবা আরবী কেনো ?


                                            ★★★★★★ ★★★★ ★★ ★★★★★★★★★
জুমা ও ঈদের খুতবা আরবীতে দিতে হবে। এটা শরীয়তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
আজকাল আমাদের মাঝে ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল জুমার খুতবা। জুমার খুতবা আরবীতে না অন্য ভাষায়? এ বিষয়ে ডা.জাকির নায়েক সহ আমাদের লা মাজহাবী ভাইদের মত হলো- খুতবা নিজ নিজ মাতৃভাষায় দিতে হবে। অন্যদিকে উম্মতের উলামায়ে কেরাম একমত খুতবা আরবীতেই দিতে হবে।
যারা খুতবা মাতৃভাষায় বা বাংলায় দেওয়ার কথা বলেন, তাদের যুক্তি হলো- খুতবা একটি সাপ্তাহিক বক্তৃতা-ভাষণ। এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। রাসুল সাঃ এর ভাষা আরবী ছিলো, তাই তিনি আরবীতে খুতবা দিতেন। আমাদের ভাষা বাংলা। আমরা বাংলায় খুতবা দেবো। এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আরবীতে খুতবা দেওয়া হলে আমরা এর কিছুই বুঝি না। এতে খুতবার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়। তাই খুতবা বাংলা ভাষায় হওয়া উচিৎ।
তাদের এসব কথার ভিত্তি হলো- ﺧﻄﺒﺔ শব্দের আভিধানিক অর্থ । কেননা ﺧﻄﺒﺔ এর অর্থ হল বক্তৃতা ।
যদি আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করা যেত তাহলে নামাজ না পড়ে দিনে পাঁচবার নিতম্ব দোলালেই হতো । কেননা সালাতের আভিধানিক অর্থ নিতম্ব দোলানো।
এখন আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করবো। কেনো খুতবা আরবীতে দেওয়া হয়।
১. খুতবা হলো- যিকরুল্লাহ বা আল্লাহর যিকির।
২. খুতবা নামজের স্থলাবিষিক্ত।
৩. খুতবা ইসলামের প্রতীক ।
৪. খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
এই চারটা বিষয় একটু খুলে বলি। তাহলে আশা করি বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে।
১. খুতবা সাধারণ কোনো বক্তৃতা নয়, খুতবা হলো আল্লাহর যিকির। দেখুন কোরআনের আয়াত কী বলেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻟِﻠﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻣِﻦ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﺎﺳْﻌَﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰٰ ﺫِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ۚ ﺫَٰﻟِﻜُﻢْ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَّﻜُﻢْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ] ٦٢ :٩ ]
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়,তখন তোমরা
আল্লাহর যিকুরের দিকে চেষ্টা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম। যদি তোমরা বুঝো। ( সুরা জুমা আয়াত ৯ )
এই আয়াতের মধ্যে যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসীরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসীরে রুহুলমাআনি ২৮/১০২, তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ)
হাদীসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমনঃ
ﻓﺈﺫﺍ ﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻳﺴﺘﻤﻌﻮﻥ ﺍﻟﺬﻛﺮ
যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । (বোখারি ১/৩০১, মুসলিম হাদিস নং ৮০৫)
ফিকহের কিতাবগুলোতেও খুতবাকে যিকির বলা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রহঃ বলেন, কেউ যদি শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলে, তাহলেও খুতবা আদায় হয়ে যাবে। খুতবার মধ্যে যত বড় বক্তৃতাই দেওয়া হোক না কেনো সেটা খুতবা হিসেবে গণ্য হবেনা যদি তার মধ্যে যিকরুল্লাহ না থাকে। আর যদি যিকরুল্লাহ ছাড়া আর কিছুই না থাকে তাহলেও সেটা খুতবা হিসেবে গণ্য হবে। খুতবা যিকির বলেই আমরা দেখি যে ইমাম সাহেবগণ খুতবা শুরু করেন আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং শেষ করেন কোরআনের আয়াত পড়ে। এসকল আয়াত ও হাদিস থেকে একথাই প্রমাণ হয় যে, খুতবা নিছক কোনো বক্তৃতা বিবৃতি নয়; বরং খুতবা হলো যিকির। আর যিকির কোন ভাষায় করবেন সেটা বলাই বাহুল্য।
২. জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।
হযরত ওমর ও আয়েশা রঃ থেকে বর্ণিত,
ﺣَﺪِﻳﺚُ ﻋُﻤَﺮَ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻩِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺼُﺮَﺕْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻟِﺄَﺟْﻞِ ﺍﻟْﺨُﻄْﺒَﺔِ জুমার নামাজ কে খুতবার জন্য ছোট করে দেওয়া হয়েছে। (ইবনে হাজার আসকালানী তালখীসুল হাবীর ২/১৭৬)
ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔُ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻓَﺠُﻌِﻠَﺖِ ﺍﻟْﺨُﻄْﺒَﺔُ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﺍﻟﺮَّﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ জুমার নামাজ চার রাকাত ছিলো। অতঃপর খুতবাকে দুই রাকাতের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে (বাইহাকি ৫২৫৮ নং)
অর্থাৎ জুমার নামাজ চার রাকাত ফরজের স্থলে দুই রাকাত ফরজ রাখা হয়েছে আর দুই রাকাতের জায়গায়
খুতবাকে রাখা হয়েছে। খুতবা নামাজের মত বলেই আমরা দেখি যে খুতবার আগে আযান দেওয়া হয়,খুতবা চলা কালে কথাবার্তা এমনকি নামাজ পড়াও নিষেধ। যা নামাজের মধ্যেও নিষেধ। এছাড়া ও আরো অনেক বিধান রয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায় খুতবা প্রায় নামজের মত । সাধারণ বক্তৃতা বা লেকচারের ক্ষেত্রে এই বিধানগুলো প্রযোজ্য নয়। খুতবার জন্য এসকল বিধিবিধান ও নির্দেশনাবলী একথাই প্রমাণ করে যে , খুতবা একটা গুরুত্তপুরর্ণ ইবাদাত, নিছক কোনো বক্তৃতা বা লেকচার নয়।
৩.খুতবা ইসলামের একটা প্রতীক বা নিদর্শন ।
অর্থাৎ আযান,ইকামাত, নামাজ, তাকবীর এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক ও নিদর্শন, তেমনি খুতবাও একটি প্রতীক । সুতরাং আযান ইকামাত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবে না। আজ খুতবা বাংলায় দেওয়ার দাবী উঠছে। কাল নামাজ বাংলায় করার দাবী উঠবে।
৪.খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
আরবী ভাষা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। এ ভাষা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া। কারণ, কোরআন হাদীস বোঝা আমাদের কর্তব্য। কোরআন হাদীস বোঝার জন্য আরবী জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই আরবী শেখার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরবীতে খুতবা দেওয়া হয় । একজন আরবী না জানা ব্যাক্তির সামনে যখন প্রতি সপ্তাহে আরবীতে খুতবা দেওয়া হবে তখন তার সামনে নিজের অক্ষমতাটা বারবার স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়বে, যা তাকে আরবী শিখতে উৎসাহিত করবে।
★★★★★★ ★★★★ ★★ ★★★★★★★★★

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন