[বি:দ্র: আমাদের এই আলোচনাগুলো বেশ কয়েকটি পর্বে প্রকাশিত হবে। আলোচনা যদি দীর্ঘ হয়, তবে এর উপর একটি বই প্রকাশের নিয়ত আছে। আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার জন্য কোন পাঠক বিরক্ত হবেন না বলে আশা রাখি।]
মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে ভূমিকা হিসেবে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করবো।
ইমাম আবু হানিফা রহ. একজন বিখ্যাত তাবেয়ী। কোন মুসলমানের নিকট ইমাম আবু হানিফা রহ. এর পরিচয় উল্লেখের কোন প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ পাক ইমাম আবু হানিফা রহ. কে এমনভাবে কবুল করেছেন, তার খেদমতকে এমনভাবে গ্রহণযোগ্যতা প্রদান করেছেন, দীর্ঘ তের শ' বছর যাবৎ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মুসলমান তার ফিকহ অনুসরণ করছে।
কারও মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য এর চেয়ে বড় কোন দলিলের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি, আদল ও ইনসাফের চূড়ায় অবস্থান করা সত্ত্বেও একটা শ্রেনি সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
এমনকি শিয়ারা কয়েকজনকে সাহাবী ব্যতীত আর সবাইকে কাফের ও মুরতাদ বলে থাকে। সাহায়ে কেরামের মর্যাদায় আঘাত করার জন্য তারা বিভিন্ন ধরণের হাদীস ও ঘটনা বানিয়েছে। এগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে জাল ঘটনা ও হাদীসগুলোর বিভিন্ন সনদ বানিয়েছে।
বাহ্যিকভাবে সনদগুলো দেখলে মনে হয়, সিল-সিলাতুয যাহাব বা স্বর্ণ দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ এই সনগুলোতে কোন দুর্বল বা অভিযুক্ত বর্ণনাকারী থাকে না। এই জন্য হাদীস বিশারদগণ একটা হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য সনদ সহীহ হওয়ার পাশাপাশি হাদীসের মূল বক্তব্য বা মতন বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তারোপ করেছেন।
শুধু সনদ সহীহ হলেই হাদীস সহীহ হয় না, হাদীসের মূল বক্তব্য বা মতনও সহীহ হওয়া জরুরি। সুতরাং হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ হলেও তার মতন যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে এই হাদীসগুলো কখনও সহীহ সাব্যস্ত হবে না। যারা হাদীস জাল করতে পারে, তাদের জন্য সনদ জাল করা অসম্ভব কিছু নয়।
সুতরাং হাদীস বা কোন বর্ণনা বিশ্লেষণের জন্য উক্ত বক্তব্যের সনদ ও মতন উভয়টি বিশুদ্ধ হওয়া আবশ্যক।
শিয়ারা সাহাবায়ে কেরামের নামে কুৎসা রটালে সাহাবাদের মর্যাদায় সামান্য প্রভাবও পড়ে না। বরং যারা এগুলো করে থাকে, তাদের মর্যাদা কমে থাকে।
একইভাবে যারা বড় বড় ইমামের নামে কুৎসা বর্ণনা করে, তারা ইমামের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, ইমামের অনুসারীদেরও কোন ক্ষতি হবে না, একজন পূণ্যবান ব্যক্তির নামে মিথ্যাচার ও অপবাদের কারণে ঐ ব্যক্তির আমল নষ্ট হবে।অন্যের নামে অপবাদ দেয়ার কারণে নিজে গোনাহের মাঝে লিপ্ত হবে।
যারা সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করছে, তারা সাহাবীদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা কমাতে পারবে না। তারা এতটুকু হয়তো করতে পারবে, একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে অপবাদ দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে কলুষিত করবে, নিজের আমলনামা কালো করবে।
একইভাবে যারা বড় বড় ইমামদের সমালোচনায় লিপ্ত, তারাও ইমামদের বিশেষ কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আল্লাহ পাকের নিকট তাদের মর্যাদাও কমবে না। বরং যে এই ধরণের হীন কর্মে লিপ্ত হবে, তার আমলনামায় গোনাহের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, প্রত্যেক যুগে বাতিল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিছু চমকপ্রদ শ্লোগান নিয়ে হাজির হয়। এদের শ্লোগান, বড় বড় উপাধি ও বাহ্যিক সূরত বা আকৃতি দেখে তাদেরকে চেনা যায় না। হক্বপন্থী উলামায়ে কেরাম কখনও বাতিলের উপাধি ও বাহ্যিক সূরত দিয়ে বিশ্লেষণ করেন না।
গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ছবি যারা দেখেছেন, তারা হয়তো বলবেন, এতো যামানার কুতুব, এ লোক কাফের হয় কি করে? বিশাল দাড়ি, মাথায় পাগড়ি।
একজন সাধারণ মানুষ এতো বড় একজন হুজুরকে কাফির বলা তো দূরে থাক, তার সম্পর্কে কোন কু-ধারণা করতেও দ্বিধা-বোধ করবে।
আহলে কুরআন নামে আরেকটা গ্রুপ আছে। এদের নাম নিয়ে যদি একটু চিন্তা করেন, এদেরকে কখনও বাতিল বলতে পারবেন না।
আহল শব্দের অর্থ হলো, পরিবার। আহলে কুরআন অর্থ হলো যারা কুরআনের একনিষ্ঠ অনুসারী। প্রত্যেক মুসলমান কুরআনের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকে। সুতরাং আহলে কুরআন হওয়া তো প্রশংসনীয় একটা ব্যাপার।
আমরা বলবো, এটা হলো, তাদের বাহ্যিক শ্লোগান। কিছু মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য তারা এই চমৎকার নামটি গ্রহণ করেছে। এরা মূলত: আহলে কুরআন বলে রাসূল স. এর হাদীস অস্বীকার করে থাকে। সুতরাং এরা মুনকীরে হাদীস। এতো বড় জঘন্য কাজ করে, অথচ এদের নামটা চমৎকার। আমাদের দেশে কবরপূজারী-মাজারপূজারী পীর-ফকিরদের অভাব নেই।
এই বেদআতী গোষ্ঠী যখন তাদের পীরের নাম লেখে, নামের শুরুতে অর্ধেক পৃষ্ঠা শুধু পীরের উপাধি থাকে।
এই উপাধি গুলো দেখে যদি এইসমস্ত ভণ্ডদেরকে গাউসে আজম, কুতুব ইত্যাদি মনে করা শুরু করি, তাহলে এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর কী হতে পারে? আমাদের বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য হলো, আমরা বাতিলের চেহারা, শ্লোগান বা উপাধি দেখে ভুলি না। আমরা তাদেরকে বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করে থাকি।
সে কোন শ্লোগান নিয়ে এসেছে, সেটা মূখ্য বিষয় নয়, সে কী করছে, সেটাই মূল বিষয়। কারও নামের শুরুতে শায়খ, শাইখুল ইসলাম, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস (মুহাদ্দিসুল আসর), মুজাদ্দিদ ইত্যাদি উপাধি দেখলেই আমরা তার প্রতি আবেগী হয়ে তার বাতিল বক্তব্য ও মতবাদকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করি না। বরং কুরআন-সুন্নাহের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখি, তার এই উপাধির পিছে আদেৌ কোন বাস্তবতা আছে কি না। ইংরেজদের সময়ে ভারত উপ-মহাদেশে আহলে হাদীস নামে একটা ফেরকার জন্ম হয়েছে। এদের শ্লোগানও খুবই চমকপ্রদ। আমরা হাদীসের অনুসারী। পৃথিবীর সকল মুসলমানই তো রাসূল স. এর হাদীস অনুসরণ করে। একজন মুসলমান সে যে স্তরেরই হোক না কেন, অবশ্যই সে মনে-প্রাণে রাসূল স. এর হাদীস অনুসরণ করে থাকে। সবাই যখন রাসূল স. এর হাদীস অনুসরণ করছে, তাহলে এরা আহলে হাদীস নামে নতুন দল সৃষ্টি করলো? আহলে কুরআনদের মতো এদেরও একটা উদ্দেশ্য আছে। সাধারণ মানুষকে হাদীস অনুসরণের কথা বলে তাদেরকে ফিকহ ও উসুলে ফিকহ থেকে বিমুখ করে। ফিকহকে বাতিল করার জন্য এদের এই গ্রুপিং।
আরবে নতুন একটা দলের সৃষ্টি হয়েছে সালাফী নাম ধারণ করে। সালাফ শব্দের অর্থ হলো, পূর্ববতী ব্যক্তিগণ। এখন পূর্ববর্তী ব্যক্তির মাঝে যেমন পূণ্যবান, যেমন সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রযেছেন, তেমনি মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসাইলামাতুল কাযযাব, সাহাবীদের যুগে খারেজী, কাদেরিয়া মতবাদ, পরবর্তীতে জাহমিয়া, মুরজিয়া ও মুজাসসিমা আবির্ভাব হয়েছে। এখন, তারা সালাফ দ্বারা যদি পূণ্যবান ব্যক্তিদের অনুসরণ উদ্দেশ্য নেয়, তাহলে পৃথিবীর অন্য সকল মুসলমান সালাফে-সালেহীনের অনুসরণ করে থাকে। নতুন করে গ্রুপিং করে, কিছু চমকপ্রদ শ্লোগান দেযার কোন অর্থ নেই। তাদের এই নতুন মতবাদ সৃষ্টির প্রযোজন হলো কেন? তারা পূর্ববতীদের অনুসরণ দ্বারা নির্দিষ্ট একটি গ্রুপকে উদ্দেশ্য নিয়েছে। এই দলটি মুজাসসিমা নামে প্রসিদ্ধ। তাবেয়ীদের যুগে এই মুজাসসিমাদের উদ্ভব হয়। ভ্রান্ত এই ফেরকার বক্তব্যগুলো সরাসরি প্রচার করলে মানুষ গ্রহণ করবে না, তাই একে নতুন নাম দিয়ে, নতুন মোড়কে কিছু চমকপ্রদ শ্লোগান দিয়ে মানুষকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের নিকট কারও বাহ্যিক শ্লোগান বা নামের কোন মূল্য নেই। আমরা বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে থাকি। সকল হক্বপন্থী উলামায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা উপাধি, শ্লোগানের পরিবর্তে মূল কাজ ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উক্ত বিষয়গুলো আমাদের পরবর্তী আলোচনায় ইনশাআল্লাহ সহায়ক হবে। এবার মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থাবলী:
১. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী ও ফযিলত সম্পর্কে সর্বপ্রথম পৃথক কিতাব রচনা করেন, আহমাদ ইবনুস সালত (মৃত: ৩০৮ হি:)
২. এরপর বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ত্বহাবী রহ. (মৃত:৩২১) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর পৃথক কিতাব রচনা করেন।
৩. অত:পর, কাযী মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর তুহফাতুস সুলতান ফি মানাকিবিন নু'মান নামে একটা গ্রন্থ রচনা করেন।
৪. ইমাম ত্বহাবী রহ. এর ছাত্র আবুল কাসেম ইবনুল আওয়াম রহ. ফাযায়িলু আবি হানিফা ও আসহাবিহি নামে একটা কিতাব রচনা করেন।
৫. ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল-হারেসী (মৃত: ৩৪৫ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর কাশফুল আসতার নামে একটা কিতাব রচনা করেন।
৬.ইমাম আবু ইয়াহইয়া যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া নিসাপুরী ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর স্বতন্ত্র কিতাব লেখেন।
৭. ইমাম আবু আহমাদ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মদ নিসাপুরী (মৃত:৩৫৭ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর বিশ খন্ডে একটি কিতাব রচনা করেন। ইমাম হাকেম রহ (মৃত:৪০৫ হি:) তারীখে নিসাপুরে এ সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন।
৮. এরপর, ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবনে আলী আস-সাইমুরী (মৃত:৪৩৬ হি:) আখবারু আবি হানিফা ও আসহাবিহি নামে একটা কিতাব রচনা করেন। কিতাবটি বর্তমানে মধ্যবাড্ডার মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
৯. ইমাম আবু ইয়াকুব ইউসুফ ইবনে আহমাদ ইবনে ইউসুফ আল-মক্কী আস-সায়দালানী রহ. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর পৃথক কিতাব লিখেছেন। আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. আল-ইন্তেকা (পৃ. ১৩৭) কিতাবে তার এই কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
১০. ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. (মৃত:৪৬২) আল-ইন্তেকা ফি ফাযায়িলিস সালাসাতিল আইম্মাতিল ফুকাহা রচনা করেছেন। এই কিতাবে তিনি ফকীহ তিন ইমাম তথা, ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমাম মালেক রহ. ও ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মর্যাদা ও জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিতাবটি আল্লামা আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এর তাহকীকে প্রকাশিত হয়েছে। অসাধারণ এই তাহকীকটি সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি।
১১. ইমাম আলী ইবনে আব্দুল আযীয় জহিরুদ্দীন মারগিনানী রহ.(মৃত:৫০৬ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. মর্যাদা ও জীবনীর উপর পৃথক কিতাব রচনা করেছেন।
১২. ইমাম জারুল্লাহ যামাখশারী রহ. (মৃত: ৫৩৮ হি:) শাকাইকুন নু'মান ফি মানাকিবিন নু'মান নামে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
১৩. চল্লিশটি পরিচ্ছেদে ইমাম মুয়াফফাকুদ্দিন বিস্তারিত একটি কিতাব রচনা করেছেন।
১৪. আল্লামা আবুল মুজাফফার ইউসুফ ইবনে আব্দুল্লাহ, তিনি সাবত ইবুনল জাওযী নামে প্রসিদ্ধ (মৃত:৬৫৪ হি:) আল-ইন্তেসার ওয়াত তারজীহ লিল মাজহাবিস সহীহ ও আল-ইন্তিসার লিইমামি আইম্মাতিল আমসার (দুই খন্ডে) লিখেছেন।
১৫. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-কারদারী (মৃত: ৭২৭ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর প্রসিদ্ধ একটি কিতাব রচনা করেছেন।
১৬. ইমাম যাহাবী রহ. মৃত (৭৪৫ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর কিতাব লিখেছেন।
১৭. শায়খ আব্দুল কাদের আল-কারাশী (মৃত.৭৭৫ হি:) আল-বুসতান ফি মানাকিবিন নু'মান নামে একটি কিতাব লিখেছেন।
১৮. ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহ. (মৃত: ৯১১ হি:)তাবইযুয সয়ীফা ফি মানাকিবি আবি হানিফা নামে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর পৃথক কিতাব লিখেছেন।
১৯.ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী রহ. (মৃত: ৯৭৩ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আল-খাইরাতুল হিসান লিখেছেন।
২০. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আস-সালেহী রহ. (মৃত:৯৪২ হি:) উকুদুল জুমান ফি মানাকিবিল ইমামিল আ'জম আবি হানিফাতান নু'মান লিখেছেন।
২১. মোল্লা আলী কারী রহ. (মৃত: ১০১৪ হি:) ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে পৃথক কিতাব লিখেছেন। এটি আল-জাওয়াহিরুল মুজিয়্যা এর শেষে ছাপা হয়েছ।
২২. ইমাম কুদুরী রহ. (মৃত: ৪২৮ হি:) শরহু মুখতাসারিল কারখীর এর শুরুতে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
২৩. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান গজনভী রহ. জামিউল আনওয়ার কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
২৪. আহমাদ ইবনে সুলাইমান ইবনে সাইদ রহ. তার আদ-দুরার কিতাবের শেষে ইমম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
২৫. শামসুদ্দিন ইউসুফ ইবনে আবু সাইদ সিজিস্তানী মুনইয়াতুল মুফতী নামক কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।২৬. শরফুদ্দিন ইসমাইল ইবনে ইসা আল-আওগানী আল-মক্কী (মৃত: ৮৯২ হি:) মুখতাসারুল মুসনাদ কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
২৭.আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ আল-বালখী (মৃত: ৫২৬ হি:) তার আল-মুসনাদ কিতাবের শুরুতে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
২৮. আবুল বাকা আহমাদ ইবনে আবুল বাকা আল-কারাশী আল-মক্কী (মৃত:৫৪৮ হি:) তার মুসনাদের শুরুতে আলোচনা করেছেন।
২৯. উসমান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ আশ-শিরাজী আল-ইজাহ ফি উলুমিন নিকাহ কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩০. মুহাম্মাদ ইবনে সুলাইমান আল-কাফাভী রহ.(মৃত: ৯৯০ হি:) তার ত্ববাকাতে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
৩১. ত্বকিউদ্দীন তামিমি রহ. (১০৫০ হি:) তার ত্ববাকাতে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩২.ইমাম আবু ইসহাক শিরাজী (মৃত:৪৬৬ হি:) তার ত্ববাকাতে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩৩. ইমাম নববী রহ. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত নামক কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ.এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩৪. ইমাম হিসামুদ্দিন শহীদ রহ. তার আল-ফাতায়াল কুবরা কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
৩৫. ইমাম ইবনে খল্লিকান ওফায়াতুল আ'য়ান নামক বিখ্যাত কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
৩৬. ইমাম আব্দুল ওয়াহহাব শা'রানী রহ. তার কিতাবুল মিযানে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
৩৭. শায়খ আবু যাহরা রহ. আবু হানিফা হায়াতুহু ও আসরুহু ও আরাউহু ও ফিকহুহু নামে একটি পৃথক কিতাব রচনা করেছেন।
৩৮. সাইয়্যেদ আফিফি হায়াতুল ইমাম আবি হানিফা নামে একটা কিতাব লিখেছেন।
৩৯. উস্তাদ আব্দুল হালীম জুনদী আবু হানিফা বাতালুল হুররিয়া ওয়াত তাসামুহ ফিল ইসলাম লিখেছেন।
৪০. আল্লামা ওহবী সুলাইমান আল-গাওজী রহ. আবু হানিফা আন-নু'মান ইমামু আইম্মাতিল ফুকাহা নামে বিখ্যাত একটি কিতাব রচনা করেছেন। কিতাবটি খুবই মূল্যবান।
৪১. তাযকিরাতুন নু'মান নামে আব্দুল কুদ্দুস কাদেরী বিঙ্গুলুরী রহ. একটি কিতাব লিখেছেন।
৪২. আল্লামা শিবলী ন'মানী রহ. নামে বিখ্যাত একটি কিতাব লিখেছেন।
৪৩. আল্লামা মুস্তাকিম যাদাহ সুলাইমান সা'দুদ্দিন আফিন্দী মানাকিবুল ইমাম আজম নামে একটা কিতাব লিখেছেন।
৪৪. নজমুল জুমান নামে শায়খ সারিমু্দ্দিন ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ (মৃত: ৮০৯ হি:) একটি তিন খন্ডে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৪৫. ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-হারেসী রহ. কাশফুল আসার নামে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করেছেন।
৪৬.মাকামে আবু হানীফা নামে মাওলানা সরফরায খান সফদর একটি বিখ্যাত কিতাব রচনা করেছেন।
৪৭.মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফিল হাদীস নামে মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী (১৪২০হি.) হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অবস্থান উল্লেখ করে একটি বিখ্যাত কিতাব লিখেছেন। এটি শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ এর তত্ত্বাবধানে সউদী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
৪৮. হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অবস্থান বিশ্লেষণ করে লেখা আরেকটি বিখ্যাত কিতাব হলো, আল-ইমাম আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহুল মুহাদ্দিসুন, আল্লামা যফর আহমদ উছমানী রাহ. (১৩৯৪ হি.)।
৪৯. জামিয়াতুত দিরাসাতিল ইসলামিয়া, পাকিস্তান থেকে ড. মুহাম্মাদ কাসেম আব্দুহ আল-হারেসী মাকানাতুল ইমাম আবি হানিফা বাইনাল মুহাদ্দিসীন (মুহাদ্দিসগণের মাঝে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অবস্থান) নামক থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন।
৫০. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর উপর আরোপিত অভিযোগ বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে বিখ্যাত একটি কিতাব লিখেছেন, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফকীহ, উসুলবিদ আল্লামা যাহেদ আল-কাউসারী রহ.। তিনি ইমাম আবু হানিফা রহ. সহ ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম যুফার ও ইমাম ত্বহাবী রহ. এর জীবনী লিখেছেন।
এখানে অর্ধ শত কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা মাঝে সামান্য কয়েকটি কিতাব ছাড়া অন্যান্যা কিতাব শুধু ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনীর উপর লেখা এছাড়াও ইতিহাস, রিজাল শাস্ত্রের প্রায় সকল কিতাবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের পরবর্তী আলোচনাগুলোতে ইনশাআল্লাহ রিজাল শাস্ত্র ও ইতিহাসের কিতাব থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হবে। আলোচনা দীর্ঘ হওয়াই পৃথকভাবে এখানে এসমস্ত কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলো না।
আমাদের পরবর্তী নোট, আলবানী ও তথাকথিত সালাফীদের হানাফী বিদ্বেষের প্রামাণিক আলোচনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন