বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০১৫

অলীদ কে ছিল?

islamic-history



  অলীদ বিন মুগীরা ছিল মক্কার সেরা ধনী। আল্লাহ তাকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য দান করেছিলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তার ফসলের ক্ষেত ও বাগ-বাগিচা মক্কা হ’তে ত্বায়েফ পর্যন্ত (৬০ মাইল) বিস্তৃত ছিল। ছওরী বলেন, তার বার্ষিক আয় ছিল এক কোটি দীনার। শীত-গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে তার ক্ষেতের ফসল ও বাগানের আমদানী অব্যাহত থাকত। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেছেন, وَجَعَلْتُ لَهُ مَالاً مَّمْدُوداً ‘তাকে আমি দিয়েছিলাম প্রচুর মাল-সম্পদ’(মুদ্দাছছির৭৪/১২)। তাকে আরবদের সরদার গণ্য করা হ’ত। সে ‘রায়হানাতু কুরায়েশ’ (কুরায়েশ-এর শান্তি) নামে খ্যাত ছিল। অহংকারে স্ফীত হয়ে সে নিজেকে ‘অহীদ ইবনুল অহীদ’ ‘অদ্বিতীয়ের বেটা অদ্বিতীয়’ বলত। অর্থাৎ  সে ভাবত যে, গোটা কুরায়েশ বংশের মধ্যে সে ও তার বাপ ছিল অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়। একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা গাফের/মুমিন পাঠ করছিলেন- حم، تَنزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ، غَافِرِ الذَّنبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ الْعِقَابِ ذِي الطَّوْلِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيرُ- ‘হা-মীম’। কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হ’তে, যিনি পরাক্রমশালী। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তাঁর কাছেই সবার প্রত্যাবর্তন স্থল’ (গাফের৪০/-)
শুরুতে উক্ত তিনটি আয়াত শুনে সে বলে উঠল… ‘আল্লাহর কসম আমি তার মুখে এমন কালাম শুনেছি, যা কোন মানুষের কালাম হ’তে পারে না এবং তা কোন জিনেরও কালাম হ’তে পারে না। এতে রয়েছে এক অপূর্ব মাধুর্য এবং এর শব্দ বিন্যাসে রয়েছে এক বিশেষ বর্ণাঢ্যতা। এর বাহ্যিক আবরণ হৃদয়গ্রাহী এবং অভ্যন্তরভাগে প্রবাহিত রয়েছে এক স্নিগ্ধ ফল্পুধারা। এটা নিশ্চিতই সবার ঊর্ধ্বে থাকবে এবং এর উপরে কেউ প্রবল হ’তে পারবে না। এটা কখনোই মানুষের কালাম নয়’।
কিন্তু দুঃখজনক কথা এই যে, সবকিছু স্বীকার করার পরও কেবল অহংকার ও বিদ্বেষবশতঃ সে রাসূলের নবুঅতকে স্বীকৃতি না দিয়ে বিরুদ্ধাচরণের পথ বেছে নিল। ওইদিন অলীদের গৃহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাসূলকে ‘জাদুকর’ বলে প্রচার করার সিদ্ধান্তের ঘটনা এবং অলীদের বাকভঙ্গী আল্লাহ নিজস্ব রীতিতে বর্ণনা করেন নিম্নোক্ত ভাবে-
إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ- فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ نَظَرَ- ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ- ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ- فَقَالَ إِنْ هَذَا إِلاَّ سِحْرٌ يُّؤْثَرُ- إِنْ هَذَا إِلاَّ قَوْلُ الْبَشَرِ-
‘সে চিন্তা করল ও মনস্থির করল’। ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ মনস্থ করল’? ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ মনস্থ করল’? ‘অতঃপর সে তাকাল’। ‘অতঃপর ভ্রুকুঞ্চিত করল ও মুখ বিকৃত করল’। ‘অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল ও অহংকার করল’। ‘তারপর বলল, অর্জিত জাদু বৈ কিছু নয়’। ‘এটা মানুষের উক্তি বৈ কিছু নয়’ (মুদ্দাছছির৭৪/১৮-২৫)। অত্র সূরায় ১১ হ’তে ২৬ পর্যন্ত ১৬টি আয়াত কেবল অলীদ সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, অলীদ রাসূলকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলতে সাহস করেনি। তাই অবশেষে কালামে পাকের জাদুকরী প্রভাবের কথা চিন্তা করে রাসূলকে ‘জাদুকর’ বলে অপবাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। এতে আল্লাহ তাকে পরপর দু’বার অভিসম্পাৎ দিয়ে বলেন, فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ মনস্থ করল’। ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ মনস্থ করল’।
– চলবে, ইনশা আল্লাহ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন