পলাশী যুদ্ধের একশো বছর পর ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশের মুসলমানরা ইংরেজের গোলামী থেকে মুক্ত হবার জন্য তাদের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করে। সিপাহী বিদ্রোহ ছিল একটি উপলক্ষ মাত্র। আসলে শাহ অলিউল্লাহর নতুন ও বিপ্লবী ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সমগ্র উপমহাদেশে ইসলামী পুনরুজ্জীবনের যে কার্যক্রম শুরু হয় এবং যাতে নেতৃত্ব দেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী। তারই সূত্র ধরে সারা ভারতে আলেম সমাজের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান চর্চা বৃদ্ধি পায়। ইসলামকে তারা উনিশ শতকের ভারতবর্ষের জাতি-বর্ণ নির্বিশেষ সকল মানুষের জন্য রাজতন্ত্রের পরিবর্তে একটি পরামর্শভিত্তিক যথার্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইনসাফপূর্ণ নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এ উদ্দেশে সাইয়েদ আহমদ শহীদের নেতৃত্বে জিহাদ আন্দোলনও শুরু হয়। কিন্তু ১৮৩৭ সালে বালাকোটের যুদ্ধে সাইয়েদ আহমদ ও তাঁর বিশ্বস্ত অনুচরদের শাহাদত বরণের ফলে এ আন্দোলন একটা বড় রকমের ধাক্কা খাওয়ার পর খতম হয়ে যায়নি, বরং অলিউল্লাহী চিন্তাকেন্দ্র ও আযীযী শিক্ষা কেন্দ্রগুলো থেকে অজস্র আলেম দেশের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এই আলেমগণের জিহাদী প্রেরণাকে উজ্জীবিত করে। জিহাদ ও সংঘর্ষে ইংরেজের বিরুদ্ধে সর্বত্র তাঁরা জড়িয়ে পড়েন।
কিন্তু সময় তাদের অনুকূল ছিল না। সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসা ইংরেজের কার্যক্রম, শক্তি, জ্ঞানবত্তা ও তাদের পরিচালিত ব্যবস্থা সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের আরো গভীর জ্ঞান ও পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল। বলা যায়, শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকটা অন্ধকারেই ছিলেন তাঁরা। যার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। অন্যদিকে ইংরেজ তার আসল শত্রুকে ঠিকমতো চিনতে ভুল করেনি। ফলে সারা দেশে প্রায় তেরো হাজার আলেমকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়। এডওয়ার্ড টমাস দিল্লী শহরের হৃদয়বিদারক ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে লিখেছেন : একমাত্র দিল্লী শহরে পাঁচশো শ্রেষ্ঠ আলেমকে শুলবিদ্ধ করা হয়েছিল। জল্লাদদের বাধ্য করা হতো যাতে তারা বেশি সময় পর্যন্ত লাশ শূলের ওপর টাঙিয়ে রাখে। ময়দানে প্রতিষ্ঠিত শূলদণ্ডগুলো থেকে বারবার লাশ নামানো হচ্ছিল। আর তা দেখে সাম্রাজ্যবাদী শাসক ইংরেজদের কলিজা ঠাণ্ডা হচ্ছিল।
১৮৫৭-এর প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা
আবদুল মান্নান তালিব
আবদুল মান্নান তালিব

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন