ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার শতকরা হার ছিল এখনকার তুলনায় অনেক বেশি, তবে তখন এ অঞ্চলের মুসলমানদের মুসলমানিত্ব এখনকার তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ় ছিল। যার ফলে এখনকার তুলনায় হিন্দু অধ্যুষিত বাংলাদেশে থেকেও সে সময়কার মুসলমানরা তাদের জন্য আলাদা ভূখণ্ড দাবি করার মনমানসিকতা রেখেছিল। বাঙালি মুসলমানদের ত্যাগের কারণেই পাকিস্তান লাভ করা সম্ভবপর হয়েছিল উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য।
পাকিস্তান গঠিত হবার পর এ অঞ্চলে হিন্দুদের সংখ্যা একলাফে অনেক কমে যায়। তাতে করে এ অঞ্চলের মুসলমানদের মুসলমানিত্ব আরো পোক্ত হওয়ারই কথা ছিল, কিন্তু হলো উল্টোটা। পাকিস্তান আমলেই এ অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র আর রবীন্দ্র ঠগের অপ-সাহিত্য প্রচলন করার ব্যাপক অপচেষ্টা চলে। রবীন্দ্র ঠগের গান প্রচলন করতে পাকিস্তান আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয় ছায়ানট।
কিন্তু তারপরও তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের মধ্যে পর্দার বিষয়টি গুরুত্ববহ ছিল। পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলের মুসলিম মেয়েরা রিকশায় যাতায়াত করতে হলে গোটা রিকশা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিত, যা এখনো উক্ত প্রজন্মের লোকদের স্মরণে রয়েছে।
একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়ে এদেশে হিন্দুদের সংখ্যা গেল আরও কমে। কিন্তু পূর্বেকার মতোই এদেশের মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুয়ানী কমল না, বরং তা আরও চরমভাবে বৃদ্ধি পেল।
একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়ে এদেশে হিন্দুদের সংখ্যা গেল আরও কমে। কিন্তু পূর্বেকার মতোই এদেশের মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুয়ানী কমল না, বরং তা আরও চরমভাবে বৃদ্ধি পেল।
পাকিস্তান আমলে ফররুখ আহমদের মতো যেসব প্রতিভাবান ইসলামপন্থী কবি-সাহিত্যিক ছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে তাদেরকে সপরিবারে চাকরিচ্যুত করে একঘরে করা হলো। নিজের তো বটেই, এমনকি মেয়েজামাইয়েরও চাকরি চলে যাওয়ার কারণে ফররুখ আহমদের মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল, যা সাহিত্যিক আহমদ ছফা তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। প্রবন্ধটির নাম ছিল ‘কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?’ ছাপা হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ১৬ই জুন তৎকালীন দৈনিক গণকণ্ঠে।
এখন এদেশে মাত্র ২ শতাংশ হিন্দু। কিন্তু পহেলা বৈশাখের দিন রাস্তায় বের হয়ে দেখুন, মনে হবে এদেশে যেন কোন মুসলমানের অস্তিত্বই নেই! নাঊযুবিল্লাহ!
পর্দাঘেরা রিকশায় আব্রু ঢেকে চলাচল করা নানী-দাদীদের উত্তরসূরী মুসলিম নামধারী যুবতীরা এখন যেভাবে খোলামেলাভাবে চলাচল করছে, তা পাকিস্তান আমলে হিন্দু মেয়েরাও করতো না। এদেশ থেকে হিন্দু যত চলে যাচ্ছে, এদেশের মুসলমানরা যেন আরো তত বেশি করে হিন্দুয়ানী আচারপ্রথাকে গ্রহণ করে নিজেরাই হিন্দুর ভূমিকায় নেমে পড়ছে, সেসব চলে যাওয়া হিন্দুদের জায়গা পূরণের জন্য। নাউযুবিল্লাহ!
যে কারণে ব্রিটিশআমলে সংখ্যায় কম হয়েও যেখানে এ অঞ্চলের মুসলমানরা আলাদা ভূখণ্ড পেয়েছিল, সেখানে সেই মুসলমানদের উত্তরসূরীরাই আজ স্বাধীন দেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক হয়েও বর্ডারে বিএসএফের হিন্দুদের হাতে বেঘোরে মারা যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন