রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৫

আমি সংস্কার চাই। তবে মুরুব্বিদের বাঁধন ছিঁড়ে নয়..............

ছোটকালে কবি আল-মাহমুদের লেখা ১টি গল্পের বইয়ে পড়েছিলাম “ এক রাজা রাজ্যে খাদ্যের সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে শাহী ফরমান জারী করলেন, সকল বৃদ্ধ বাবা-মাকে জঙ্গলে ফেলে আসতে হবে। কারণ, তারা কোনো কাজ করতে পারে না। আর রাজ্যে অকর্মা মানুষ থাকলে অভাব দিনে দিনে বাড়তেই থাকবে। এক যুবকের ছিলো এক বৃদ্ধ বাবা। সে রাজার কথা মতো বাবাকে কাঁধে করে জঙ্গলের দিকে চলতে শুরু করলো। বাবা কাঁধে বসে বসে ডাল ভেঙ্গে পথে ফেলতে ফেলতে গেলো। জঙ্গলের গভিরে পৌঁছার পর বৃদ্ধ তার ছেলেকে একটি কচি ডাল ধরিয়ে দিয়ে বললো, পথে আমি এমন ডাল ফেলে ফেলে এসেছি। যাতে তুমি পথ ভুলে না যাও। একথা শুনে যুবক তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। বললো, বাবা ! আমি তোমাকে জঙ্গলে ছেড়ে যাবো না। তোমাকে আমি রাজার অজান্তে ঘরে লুকিয়ে রাখবো।
:
যুবক বুদ্ধ বাবাকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো।
কিছু দিন পর রাজা সবাইকে ডাকলেন দরবারে। একটা কাঠের টুকরা হাতে নিয়ে ঘোষণা করলেন, এই কাঠের আগা-গোড়া যে চিহ্নিত করতে পারবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে। সবাই বিভিন্ন জবাব দিতে লাগলো। কেউ টোঁকা মেরে বলছে। কেউবা শুঁকে বলছে এটা আগা ওটা গোড়া। কিন্তু কারোটাই রাজার পসন্দ হচ্ছে না। যুবক তার বাবার কাছে দৌড়ে এসে খুলে বললো। বাবা বললেন, এটা কঠিন কোনো বিষয়ই না। কাঠটি তুমি পানিতে ফেলে দাও যে মাথা উঁচু হয়ে থাকবে তা আগা। অন্যটি গোড়া। যুবক তাই করলো। রাজারও জবাব মনপুত হলো। পুরষ্কার দিতে চাইলেন তাকে । কিন্তু যুবক সবিনয়ে পুরষ্কার ফিরিয়ে দিলো।
:
কিছু দিন পর রাজা আবারো পুরষ্কার ঘোষণা করলেন, ছাইয়ের রশি বানাতে হবে এবার। কেউ সক্ষম হলো না তাতে। যুবক বাবার কাছে জানতে চাইলো। বাবা বললেন, কঠিন কিছু না। তুমি একটা রশি টান টান করে বেঁধে তাতে আগুন ধরিয়ে দাও । ব্যাস ছাইয়ের রশি হয়ে যাবে। এবারও যুবক পুরষ্কার নিতে অস্বিকৃতি জানালো।
:
কিছুদিন পর। রাজা ঘোষণা করলেন, এমন ঢোল বানাতে হবে যে ঢোল বাজনা ছাড়াই বাজে। এবারও যুবক বাবার সাথে পরামর্শ করলো। বৃদ্ধ বললো, ঢোলের ভিতর মৌমাছির চাক ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ কর দাও। যখন মৌমাছিগুলো ছুটতে ছুটতে চামড়ার সাথে ধাক্কা লাগবে তখন মনে হবে যেনো বাজনা ছাড়াই বাজছে। যুবক তাই করলো। রাজাতো এমন ঢোল পেয়ে মহা খুশি।
:
দরবারে ডাকা হলো যুবককে। তাকে কাছে টেনে নিলেন রাজা। এতো বুদ্ধির রহস্যও জানতে চাইলেন। যুবক বললো, রাজা ! আপনি অভয় দিলে আমি একটা কথা বলতে চাই। রাজা তাকে অভয় দিলো।
আপনি যখন রাজ্যের সকল বৃদ্ধ বাবা-মাকে বনবাস দিতে বললেন, তখন আমি তা করি নি। আমার বাবাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম ঘরে। আপনার করা প্রতিটি প্রশ্নের জবাব বাবার কাছ থেকে জেনেই আমি দিয়েছি। রাজা একথা শুনে যারপর নাই তাজ্জব বনে গেলেন। যুবককে মোটা অঙ্কের পুরষ্কার ইনাম দিলেন।
:
এবার রাজা নতুন করে ঘোষণা করলেন। বৃদ্ধদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার। এর পর বুড়ো মানুষের সাথে পরামর্শ করে রাজ্য পরিচালনা শুরু করলেন। রাজ্যে আর কোন অভাব রইলো না।”
:
বন্ধুরা ! ইদানিং কিছু বন্ধু “কামাশিসা“ নিয়ে অনলাইনে কাজ করছেন। আমি তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে তাদের প্রতি আমার আবেদন থাকবে “যাই করেন মুরব্বিদের সাথে পরামর্শ করে করুণ, এবং অনলাইনে এমন বিষয় নিয়ে মাতামাতি বন্ধ করুন। না হয় আপনাদের সব সাধনাই ব্যার্থ হতে বাধ্য। আমাদের মুরব্বিরা এখনো এতোটা অথর্ব হয়ে যাননি যে, তাদের বাদ দিয়েই আমাদের “কামাশিসা“ চালিয়ে যেতে হবে।
:
পরিশেষে, আবারও বলি “কামাশিসা“ জিন্দাবাদ। তবে, মুরব্বিদের বাঁধন ছিঁড়ে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন