বিডিনিউজ২৪-এ প্রকাশিত কুখ্যাত রাইনার এবার্টের লেখার জবাবে এটি লেখা হয়েছে। যুক্তির চেয়ে বেশি এতে কুরআন-হাদীসের দলীল পেশ করা হয়েছে। কেননা লেখক কুরআন-হাদীস দিয়ে তার মত প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। মূল লেখাটি প্রথমে পড়তে এই
লিংক ভিজিট করুন :-
opinion.bdnews24.com/bangla/archives/6475
লিংক ভিজিট করুন :-
opinion.bdnews24.com/bangla/archives/6475
এই পোষ্টে রাইনার এবার্টের লেখার উদ্ধৃতি উল্লেখপূর্বক জবাব উল্লেখ করা হয়েছে।
“প্রাণী কুরবানী ইসলামের মূল আধ্যাত্মিক সত্যের অংশ নয় এবং আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য আরও অনেক দানশীল পথ রয়েছে।”
“প্রাণী কুরবানী ইসলামের মূল আধ্যাত্মিক সত্যের অংশ নয়” কথাটি দ্বারা লেখক যদি বুঝিয়ে থাকেন যে কুরবানী ইসলামের মূল অংশ নয়, তাহলে তা চরম অসত্য হবে।
কুরবানীর কথা আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনে বলেছেন:
১. আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﺍﻧْﺤَﺮْ ﴿ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ : ٢ ﴾
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (১০৮:২)
আর আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কোন নির্দেশ দিলে তা উম্মতের ওপরও ওয়াজীব হয়ে যায়, যদি না তা রাসূলের জন্য বিশেষায়িত বলে প্রমাণিত হয়।
২. আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
ﻗُﻞْ ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲ ﻭَﻣَﺤْﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﴿ ١٦٢ ﴾
আপনি বলুনঃ আমার নামায,আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। (৬:১৬২)
৩. কুরবানীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻟَﻦ ﻳَﻨَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟُﺤُﻮﻣُﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺩِﻣَﺎﺅُﻫَﺎ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻳَﻨَﺎﻟُﻪُ ﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯٰ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﴿ﺍﻟﺤﺞ : ٣٧ ﴾
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (২২:৩৭)
রাসূল স. কুরবানী করেছেন বলে বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
আনাস রা. বর্ণনা করেন,
ﺿَﺤَّﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻜَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﺃَﻣْﻠَﺤَﻴْﻦِ ﺃَﻗْﺮَﻧَﻴْﻦِ ، ﺫَﺑَﺤَﻬُﻤَﺎ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ، ﻭَﺳَﻤَّﻰ ﻭَﻛَﺒَّﺮَ ، ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺻِﻔَﺎﺣِﻬِﻤَﺎ
রাসূল স. দুটো শিং যুক্ত শুভ্র রংয়ের দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি নিজ হাতে যবেহ করেছেন, আল্লাহর নাম নিয়েছেন এবং আল্লাহু আকবার বলেছেন। দুম্বা দুটোর উপর তাঁর পা রেখেছেন (শক্ত করে ধরার জন্য)।
-বুখারী: ৫৫৬৫, মুসলিম: ১৯৬৬
রাসূল স. কুরবানী না করার প্রতি অন্তোষ প্রকাশ করেছেন
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন,
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ
যার সামর্থ্য আছে, অথচ কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের নামাযের জায়গার কাছেও না আসে।
-ইবনে মাজাহ: ৩১২৩। ইমাম হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী সহমত প্রকাশ করেছেন।
যারা কুরবানী দিবেন, জিল হজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন তাদেরকে চুল-নখ কাটতে নিষেধ করেছেন:
উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল স. বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻠَﺖِ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮُ ، ﻭَﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳُﻀَﺤِّﻲَ ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻤَﺲَّ ﻣِﻦْ ﺷَﻌَﺮِﻩِ ﻭَﺑَﺸَﺮِﻩِ ﺷَﻴْﺌًﺎ
যখন জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন শুরু হবে, তখন থেকে কুরবানী করতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তি যেন তার নখ ও চামড়া না ধরে।
মুসলিম: ১৯৭৭, নাসায়ী: ৪৩৬৪।
রাসূল স. কুরবানীকে ইব্রাহীম আ. এর সুন্নত বলে উল্লেখ করেছেন:
যায়েদ বিন আরকাম রা. বর্ণনা করেন, রাসূল স. কে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কুরবানী আসলে কী? রাসূল স. জবাব দিলেন,
« ﺳُﻨَّﺔُ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ »
তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের আ. সুন্নত।
প্রশ্ন করা হলো, এতে আমাদের কী আছে? রাসূল স. জবাব দিলেন,
ﺑِﻜُﻞِّ ﺷَﻌَﺮَﺓٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼُّﻮﻑِ ، ﺣَﺴَﻨَﺔٌ
চামড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে সাওয়াব রয়েছে।
-ইবনে মাজাহ: ৩১২৭, মুসনাদ আহমাদ: ১৯২৮৩
রাসূল স. তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে কুরবানী করতে বলেছেন:
১. আবুল আশাদ সুলামী তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল স. এর সাথে সাতজনের মধ্যে সপ্তম জন ছিলেন। তিনি আমাদের সবাইকে এক দিরহাম করে একত্রিত করতে বললেন। এরপর আমরা সাত দিরহাম দিয়ে একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করলাম। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বেশি দামী কিনে ফেললাম না? তিনি বললেন,
ﺇِﻥَّ ﺃَﻓْﻀَﻞَ ﺍﻟﻀَّﺤَﺎﻳَﺎ ﺃَﻏْﻠَﺎﻫَﺎ ، ﻭَﺃَﺳْﻤَﻨُﻬَﺎ
সর্বোত্তম কুরবানীর পশু হলো দামী ও মোটা-তাজা পশু।
এরপর দুজন সামনের দুই পা ধরল, দুজন পেছনের দুই পা, দুজন দুই শিং ধরল। আর সপ্তম জন যবেহ করল। আর আমরা সবাই আল্লাহু আকবার বললাম।
-মুসনাদ আহমাদ: ১৫৪৯৪
২. উরওয়া বারিকী বলেন, রাসূল স. তাকে এক দিনার দিয়ে একটি কুরবানীর পশু (বকরী) ক্রয় করতে পাঠালেন। তিনি এক দিনার দিয়ে দুটি ক্রয় করলেন। পথিমধ্যে একটি বিক্রয় করে এক দিনার এবং পশুসহ রাসূল স. এর কাছে আসলেন। রাসূল স. তার জন্য বরকতের দুয়া করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, দুয়ার ফলে তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তিনি মাটি বিক্রয় করলেও লাভবান হতেন।
-মুসনাদ আহমাদ: ১৯৩৫৬
৩. জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমরা হুদাইবিয়ার বছর রাসূল স. এর সাথে কুরবানী করেছি। উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরু সাতজনের পক্ষ থেকে।
-মুসলিম: ১৩১৮
৪. এছাড়া অন্যান্য সাহাবীদেরও কুরবানী করার কথা বর্ণিত আছে:
ইবনে ওমর রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৩৬
আলী রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৩৭
ইবনে আব্বাস রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৪৬
আবু হুরায়রা – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৫২
আয়েশা রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৬০
রাসূলের স. আনুগত্য করা উম্মতের ওপর আবশ্যক:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﺎﻧﺘَﻬُﻮﺍ ﴿ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٧ ﴾
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। (৫৯:৭)
আল্লাহর ভালবাসা চাইলে রাসূলের স. অনুসরণের বিকল্প নেই:
ﻗُﻞْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤْﺒِﺒْﻜُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮْ ﻟَﻜُﻢْ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ﴿ﺁﻝﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ﴾
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (৩:৩১)
বরং রাসূলের স. অনুসরণই আল্লাহর অনুসরণ:
ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ﴾
যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। (৪:৮০)
সারকথা: কুরবানী অবশ্যই ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। একে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
বর্তমান বাংলাদেশে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর সময়কার মরুভূমির জনগোষ্ঠির মত গোশত তেমন দুর্লভ মূল্যবান সম্পদ নয়। বর্তমানে আমরা দরিদ্র অভাবীদের সাহায্য করার জন্য প্রাণী কুরবানী দেবার টাকা আরও কার্যকরী খাতে ব্যয় করতে পারি। যেমন, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী ও আরও উপকারী উদ্দেশ্যে। সেই অর্থ বা টাকা ঢাকা বা অন্য বড় শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল শিশুদের অবস্থার উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারি। অথবা যে সব স্থানে চিকিৎসা সেবা এখনও পৌঁছেনি, সে সব স্থানে হাসপাতাল নিমার্ণের জন্য সেই টাকা ব্যয় করা যেতে পারে।
দুর্লভ কোন কিছুকে সুলভ করা কুরবানীর বিধানের উদ্দেশ্য নয়। বরং মানুষের ভেতর তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সঞ্চার করা। বিনা বাক্যে আল্লাহর অনুসরণের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহর বিধান মানার জন্য ত্যাগ শিকার করার শিক্ষা দেয়া।
তাছাড়া আল্লাহর দেয়া রিযিকের নেয়ামতের প্রকাশ করা এবং নিজের আনন্দে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুখীকে শরীক করা।
উন্নয়নের কাজ করার জন্য আল্লাহর আলাদা বিধান আছে। আল্লাহ মানুষকে সদকা করতে বলেছেন। সদকা অর্থ দান।
আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺃَﻧﻔِﻘُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻣَّﺎ ﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝَ ﺭَﺏِّ ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺃَﺧَّﺮْﺗَﻨِﻲ ﺇِﻟَﻰٰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻓَﺄَﺻَّﺪَّﻕَ ﻭَﺃَﻛُﻦ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﴿ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻮﻥ : ١٠ ﴾
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৬৩:১০)
অনুরূপভাবে আল্লাহ ওশর ও যাকাতের বিধান দিয়েছেন। সেগুলো দিয়ে মানুষের উন্নয়নের কাজ করা হবে।
ওশর-যাকাত ও সাদকা উসুল না করে কুরবানীর খাতকে সেখানে লাগানোর কথা বলা উদ্দেশ্যপ্রণদিত বলেই মনে হয়।
প্রাণী উৎসর্গের পরিবর্তে এই দানের অভিপ্রায়ও ইসলাম ও কুরবানী ঈদের উদ্দেশ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।
মোটেও না। প্রাণী কুরবানী করা হয় বলেই এই ঈদের নাম ঈদুল আযহা। আযহা এসেছে উযহিয়া থেকে, যার অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু যবেহ করা। আমরা যাকে কুরবানী বলি।
কাজেই প্রাণী কুরবানী না করে অর্থ দান করলে সেই দানের সওয়াব হবে, কিন্তু এই কুরবানীর সওয়াব হবে না এবং কুরবানীর উদ্দেশ্যের সাথেও তা সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
মুসলমানদের জন্য কুরবানী ঈদ আনন্দের একটি পর্ব হলেও আল্লাহ্র প্রাণীদের জন্য এটা সুখের সময় নয়। এই উৎসবে বহু ছাগল, গরু ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর জীবনের ইতি ঘটে।
আল্লাহর প্রাণীদেরকে আল্লাহই কুরবানী করতে বলেছেন। আর প্রাণীদেরকে সৃষ্টিই করেছেন মানুষের জন্য।
আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺍﻟْﺒُﺪْﻥَ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻫَﺎ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺷَﻌَﺎﺋِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﻴْﺮٌ ۖ ﻓَﺎﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﺳْﻢَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮَﺍﻑَّ ۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭَﺟَﺒَﺖْ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬَﺎ ﻓَﻜُﻠُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﺃَﻃْﻌِﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘَﺎﻧِﻊَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﺮَّ ۚ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﺳَﺨَّﺮْﻧَﺎﻫَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ ﴿٣٦ ﴾
এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (২২:৩৬)
কাজেই এই মায়া দেখানোর কোনো মানে হয় না।
সর্বোপরি, আমরা জানি যে মহানবী মোহাম্মদ (স.) প্রানীদের উপর দয়ার বাণী প্রচার করে গেছেন। তিনি “সমগ্র সৃষ্টির প্রতি করুণা” (কুরআন ২১ঃ১০৭) প্রদানের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কুরআন খোলাখুলিভাবে নির্দেশ করে যে, প্রাণীরা আমাদের মতই অনুভবক্ষম; অতএব এটা আধুনিক প্রাণী অধিকার আন্দোলনের মৌলিক মতবাদকেই ধারন করে- “পৃথিবীতে তারা শুধু প্রাণীই নয়, পাখায় ভর করে উড়ে বেড়ানো শুধু পাখিই নয়, তার সাথে তারা আমাদের মতই এক একটি গোষ্ঠী” (কুরআন ৬ঃ৩৮)।
প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদেরকে খাওয়া যাবে না। বরং ইসলামের সৌন্দর্য্য এটিই যে, যবেহের সময়েও যেন প্রাণীর প্রতি দয়াশীল হয়, সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাসূল স. বলেন,
ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺘﺐ ﺍﻹﺣﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺷﻲﺀ . ﻭﺇﺫﺍ ﺫﺑﺤﺘﻢ ﻓﺄﺣﺴﻨﻮﺍ ﺍﻟﺬﺑﺢ . ﻭﻟﻴﺤﺪ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺷﻔﺮﺗﻪ . ﻓﻠﻴﺮﺡ ﺫﺑﻴﺤﺘﻪ
আল্লাহ তায়ালা সবক্ষেত্রে ইহসান (সৌন্দর্য) করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই যখন যবেহ করবে, উত্তমরূপে করবে। এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন ছুরি ধার করে নেয় এবং যবেহকৃত পশুকে আরাম দেয়।
-মুসলিম: ১৯৫৫
কুরবানী হওয়ার আগে বাংলাদেশে কুরবানীর বহু প্রাণী বহুদূর পথ পায়ে হেঁটে আসে- প্রায়শই একসাথে কয়েকদিন ধরে ভারতের মত দূরবর্তী দেশ থেকে অথবা অপর্যাপ্ত স্থান, খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবা ছাড়াই ট্রাকে গাদাগাদি করে তাদের আনা হয়। এটা হালালও নয়, মানবিকও নয় এবং করুণা ও দয়ার মত ইসলামী অনুশাসনের সাথেও এর তীব্র বিরোধ রয়েছে।
এটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এর কারণে কোনো হালালকে “হালাল নয়” বলা ইসলামের বিধানের সাথে তামাশা বৈ কিছুই নয়।
আমাদের এই বাস্তবতা ভুললে চলবে না। সহীহ্ আল বুখারীতে উল্লেখ আছে মহানবী মোহাম্মদ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পরকালে প্রাণীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন পুরস্কৃত হবে কিনা। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “প্রতিটি জীবন্ত প্রানীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য প্রশংসিত পুরস্কার রয়েছে”। সাধারণত কুরবানীর প্রাণীদের পা বাঁধা থাকে এবং তারা প্রায় নড়তেই পারে না। তারা একদল মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। আতঙ্কিত প্রাণীদের বেশ কয়েকজন চেপে ধরে রাখে আর তারপর তীক্ষ্ণ ছুরি তাদের গলা বরাবর চালানো হয়। তারা মুক্ত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে, কিন্তু ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়।
পশুর প্রতি মায়া প্রদর্শনের ব্যাখ্যা পূর্বে বলা হয়েছে। শিশুর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ তার অভিভাবকের অসতর্কতা। শিশু পিঁপড়া, টিকটিকিসহ যে কোনো প্রাণী দেখেই ভয় পায়। তাকে কুরবানীর সময় সামনে রাখা উচিৎ নয়। কিন্তু এজন্য কোনো বিধান পরিবর্তন হতে পারে না।
নীচে স্বাক্ষরকারী আমরা শ্রদ্ধার সাথে আপনাদের বিবেচনার জন্য এই লেখা নিবেদন করছি এবং আশা করছি মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) মানবতার জন্য করুণা ও দয়ার যে সার্বজনীন মাপকাঠির আলোকবর্তিকা দিয়ে গেছেন, এই লেখা পড়ে তার আলোকে আপনারা প্রাণী কুরবানী চর্চার ব্যাপারে আপনাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তুলতে পারবেন।
রাসূল স. এর মানবতার দোহাই দিয়ে তাঁরই চর্চিত বিধানের ব্যাপারে নিজস্ব ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার আহ্বান করা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বৃথা চেষ্টা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। স্বাক্ষরকারীদের কেউ ইসলাম নিয়ে জানাশোনা নেই। ব্যাপারটি আরো আশ্চর্যজনক নয় কি?
শেষকথা:
লেখক সম্পর্কে:
আমরা লেখকের ব্যক্তিগত
ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি যে, তিনি প্রাণীর অধিকার বিষয়ে সক্রিয় একজন কর্মী। আমরা তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা এও জানতে পারি যে, তিনি মানবাধিকার বিষয়ে বেশ সক্রিয়। এজন্যও আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
কিন্তু মানুষের ধর্মীয় অধিকারও যে মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত, আশা করি তাকে তা বলার প্রয়োজন নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে আছে:
Article 18.
Everyone has the right to freedom of thought, conscience and religion; this right includes freedom to change his religion or belief, and freedom, either alone or in community with others and in public or private, to manifest his religion or belief in teaching, practice, worship and observance. Article 29.
(1) Everyone has duties to the community in which alone the free and full development of his personality is possible.
(2) In the exercise of his rights and freedoms, everyone shall be subject only to such limitations as are determined by law solely for the purpose of securing due recognition and respect for the rights and freedoms of others and of meeting the just requirements of morality, public order and the general welfare in a democratic society.
(3) These rights and freedoms may in no case be exercised contrary to the purposes and principles of the United Nations.Article 30.
Nothing in this Declaration may be interpreted as implying for any State, group or person any right to engage in any activity or to perform any act aimed at the destruction of any of the rights and freedoms set forth herein.
আর OIC –র মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে আছে:
ARTICLE 10: Islam is the religion of unspoiled nature. It is prohibited to exercise any form of compulsion on man or to exploit his poverty or ignorance in order to convert him to another religion or to atheism.
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগ (মৌলিক অধিকার) -এ আছে:
৪১। (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;
এ ধরণের লেখা আমরা বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষের মৌলিক অধিকারে আঘাত হানার অপচেষ্টা বলে মনে করি।
প্রতি বছর একই লেখা প্রকাশ:
আমরা লেখকের ওয়েবসাইটে তার CV তে উল্লেখ পাই যে, এই লেখাটি ২৭ অক্টোবর ২০১১ তে ঢাকা কোরিয়ারে ছাপানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিডিনিউজ২৪ (ইংরেজী ও
বাংলা উভয় সংস্করণ) একই দিনে, ফাইনানসিয়াল এক্সপ্রেস, সংবাদ প্রতিদিন ও
উইকলি ব্লিটজ পরদিন ২৮ অক্টোবর ২০১১ -এ এবং এ বছর বিডিনিউজ২৪ পুনরায় ১৬ অক্টোবর ২০১২ তে
ইংরেজী সংস্করণে এবং ২১ অক্টোবর ২০১২ তে বাংলা সংস্করণে প্রকাশ করতে দেখি।
ষড়যন্ত্র?
ঈদুল আযহার আগ মুহূর্তে প্রতি বছর এটা প্রকাশ করার পেছনে পশুর অধিকারভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।
লেখকের মতামতের প্রতি আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি মুসলিম হলে লেখাটি লেখকের ধর্মীয় বিশ্বাসের আঘাত হানার পর্যায়ে কিনা তা খতিয়ে দেখা যেত। কিন্তু একটি মুসলিম দেশে পরপর দু’বছর একই সময়ে লেখাটি ছাপানো এবং তা বিভিন্ন নামের অনেকগুলো স্বাক্ষরসহ ছাপানোর পেছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।
“প্রাণী কুরবানী ইসলামের মূল আধ্যাত্মিক সত্যের অংশ নয় এবং আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য আরও অনেক দানশীল পথ রয়েছে।”
“প্রাণী কুরবানী ইসলামের মূল আধ্যাত্মিক সত্যের অংশ নয়” কথাটি দ্বারা লেখক যদি বুঝিয়ে থাকেন যে কুরবানী ইসলামের মূল অংশ নয়, তাহলে তা চরম অসত্য হবে।
কুরবানীর কথা আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনে বলেছেন:
১. আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﺍﻧْﺤَﺮْ ﴿ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ : ٢ ﴾
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (১০৮:২)
আর আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কোন নির্দেশ দিলে তা উম্মতের ওপরও ওয়াজীব হয়ে যায়, যদি না তা রাসূলের জন্য বিশেষায়িত বলে প্রমাণিত হয়।
২. আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
ﻗُﻞْ ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲ ﻭَﻣَﺤْﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﴿ ١٦٢ ﴾
আপনি বলুনঃ আমার নামায,আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। (৬:১৬২)
৩. কুরবানীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻟَﻦ ﻳَﻨَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟُﺤُﻮﻣُﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺩِﻣَﺎﺅُﻫَﺎ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻳَﻨَﺎﻟُﻪُ ﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯٰ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﴿ﺍﻟﺤﺞ : ٣٧ ﴾
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (২২:৩৭)
রাসূল স. কুরবানী করেছেন বলে বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
আনাস রা. বর্ণনা করেন,
ﺿَﺤَّﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻜَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﺃَﻣْﻠَﺤَﻴْﻦِ ﺃَﻗْﺮَﻧَﻴْﻦِ ، ﺫَﺑَﺤَﻬُﻤَﺎ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ، ﻭَﺳَﻤَّﻰ ﻭَﻛَﺒَّﺮَ ، ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺻِﻔَﺎﺣِﻬِﻤَﺎ
রাসূল স. দুটো শিং যুক্ত শুভ্র রংয়ের দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি নিজ হাতে যবেহ করেছেন, আল্লাহর নাম নিয়েছেন এবং আল্লাহু আকবার বলেছেন। দুম্বা দুটোর উপর তাঁর পা রেখেছেন (শক্ত করে ধরার জন্য)।
-বুখারী: ৫৫৬৫, মুসলিম: ১৯৬৬
রাসূল স. কুরবানী না করার প্রতি অন্তোষ প্রকাশ করেছেন
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন,
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ
যার সামর্থ্য আছে, অথচ কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের নামাযের জায়গার কাছেও না আসে।
-ইবনে মাজাহ: ৩১২৩। ইমাম হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী সহমত প্রকাশ করেছেন।
যারা কুরবানী দিবেন, জিল হজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন তাদেরকে চুল-নখ কাটতে নিষেধ করেছেন:
উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল স. বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻠَﺖِ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮُ ، ﻭَﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳُﻀَﺤِّﻲَ ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻤَﺲَّ ﻣِﻦْ ﺷَﻌَﺮِﻩِ ﻭَﺑَﺸَﺮِﻩِ ﺷَﻴْﺌًﺎ
যখন জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন শুরু হবে, তখন থেকে কুরবানী করতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তি যেন তার নখ ও চামড়া না ধরে।
মুসলিম: ১৯৭৭, নাসায়ী: ৪৩৬৪।
রাসূল স. কুরবানীকে ইব্রাহীম আ. এর সুন্নত বলে উল্লেখ করেছেন:
যায়েদ বিন আরকাম রা. বর্ণনা করেন, রাসূল স. কে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কুরবানী আসলে কী? রাসূল স. জবাব দিলেন,
« ﺳُﻨَّﺔُ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ »
তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের আ. সুন্নত।
প্রশ্ন করা হলো, এতে আমাদের কী আছে? রাসূল স. জবাব দিলেন,
ﺑِﻜُﻞِّ ﺷَﻌَﺮَﺓٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼُّﻮﻑِ ، ﺣَﺴَﻨَﺔٌ
চামড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে সাওয়াব রয়েছে।
-ইবনে মাজাহ: ৩১২৭, মুসনাদ আহমাদ: ১৯২৮৩
রাসূল স. তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে কুরবানী করতে বলেছেন:
১. আবুল আশাদ সুলামী তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল স. এর সাথে সাতজনের মধ্যে সপ্তম জন ছিলেন। তিনি আমাদের সবাইকে এক দিরহাম করে একত্রিত করতে বললেন। এরপর আমরা সাত দিরহাম দিয়ে একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করলাম। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বেশি দামী কিনে ফেললাম না? তিনি বললেন,
ﺇِﻥَّ ﺃَﻓْﻀَﻞَ ﺍﻟﻀَّﺤَﺎﻳَﺎ ﺃَﻏْﻠَﺎﻫَﺎ ، ﻭَﺃَﺳْﻤَﻨُﻬَﺎ
সর্বোত্তম কুরবানীর পশু হলো দামী ও মোটা-তাজা পশু।
এরপর দুজন সামনের দুই পা ধরল, দুজন পেছনের দুই পা, দুজন দুই শিং ধরল। আর সপ্তম জন যবেহ করল। আর আমরা সবাই আল্লাহু আকবার বললাম।
-মুসনাদ আহমাদ: ১৫৪৯৪
২. উরওয়া বারিকী বলেন, রাসূল স. তাকে এক দিনার দিয়ে একটি কুরবানীর পশু (বকরী) ক্রয় করতে পাঠালেন। তিনি এক দিনার দিয়ে দুটি ক্রয় করলেন। পথিমধ্যে একটি বিক্রয় করে এক দিনার এবং পশুসহ রাসূল স. এর কাছে আসলেন। রাসূল স. তার জন্য বরকতের দুয়া করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, দুয়ার ফলে তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তিনি মাটি বিক্রয় করলেও লাভবান হতেন।
-মুসনাদ আহমাদ: ১৯৩৫৬
৩. জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমরা হুদাইবিয়ার বছর রাসূল স. এর সাথে কুরবানী করেছি। উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরু সাতজনের পক্ষ থেকে।
-মুসলিম: ১৩১৮
৪. এছাড়া অন্যান্য সাহাবীদেরও কুরবানী করার কথা বর্ণিত আছে:
ইবনে ওমর রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৩৬
আলী রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৩৭
ইবনে আব্বাস রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৪৬
আবু হুরায়রা – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৫২
আয়েশা রা. – মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৮১৬০
রাসূলের স. আনুগত্য করা উম্মতের ওপর আবশ্যক:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﺎﻧﺘَﻬُﻮﺍ ﴿ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٧ ﴾
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। (৫৯:৭)
আল্লাহর ভালবাসা চাইলে রাসূলের স. অনুসরণের বিকল্প নেই:
ﻗُﻞْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤْﺒِﺒْﻜُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮْ ﻟَﻜُﻢْ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ﴿ﺁﻝﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ﴾
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (৩:৩১)
বরং রাসূলের স. অনুসরণই আল্লাহর অনুসরণ:
ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ﴾
যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। (৪:৮০)
সারকথা: কুরবানী অবশ্যই ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। একে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
বর্তমান বাংলাদেশে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর সময়কার মরুভূমির জনগোষ্ঠির মত গোশত তেমন দুর্লভ মূল্যবান সম্পদ নয়। বর্তমানে আমরা দরিদ্র অভাবীদের সাহায্য করার জন্য প্রাণী কুরবানী দেবার টাকা আরও কার্যকরী খাতে ব্যয় করতে পারি। যেমন, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী ও আরও উপকারী উদ্দেশ্যে। সেই অর্থ বা টাকা ঢাকা বা অন্য বড় শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল শিশুদের অবস্থার উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারি। অথবা যে সব স্থানে চিকিৎসা সেবা এখনও পৌঁছেনি, সে সব স্থানে হাসপাতাল নিমার্ণের জন্য সেই টাকা ব্যয় করা যেতে পারে।
দুর্লভ কোন কিছুকে সুলভ করা কুরবানীর বিধানের উদ্দেশ্য নয়। বরং মানুষের ভেতর তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সঞ্চার করা। বিনা বাক্যে আল্লাহর অনুসরণের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহর বিধান মানার জন্য ত্যাগ শিকার করার শিক্ষা দেয়া।
তাছাড়া আল্লাহর দেয়া রিযিকের নেয়ামতের প্রকাশ করা এবং নিজের আনন্দে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুখীকে শরীক করা।
উন্নয়নের কাজ করার জন্য আল্লাহর আলাদা বিধান আছে। আল্লাহ মানুষকে সদকা করতে বলেছেন। সদকা অর্থ দান।
আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺃَﻧﻔِﻘُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻣَّﺎ ﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝَ ﺭَﺏِّ ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺃَﺧَّﺮْﺗَﻨِﻲ ﺇِﻟَﻰٰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻓَﺄَﺻَّﺪَّﻕَ ﻭَﺃَﻛُﻦ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﴿ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻮﻥ : ١٠ ﴾
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৬৩:১০)
অনুরূপভাবে আল্লাহ ওশর ও যাকাতের বিধান দিয়েছেন। সেগুলো দিয়ে মানুষের উন্নয়নের কাজ করা হবে।
ওশর-যাকাত ও সাদকা উসুল না করে কুরবানীর খাতকে সেখানে লাগানোর কথা বলা উদ্দেশ্যপ্রণদিত বলেই মনে হয়।
প্রাণী উৎসর্গের পরিবর্তে এই দানের অভিপ্রায়ও ইসলাম ও কুরবানী ঈদের উদ্দেশ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।
মোটেও না। প্রাণী কুরবানী করা হয় বলেই এই ঈদের নাম ঈদুল আযহা। আযহা এসেছে উযহিয়া থেকে, যার অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু যবেহ করা। আমরা যাকে কুরবানী বলি।
কাজেই প্রাণী কুরবানী না করে অর্থ দান করলে সেই দানের সওয়াব হবে, কিন্তু এই কুরবানীর সওয়াব হবে না এবং কুরবানীর উদ্দেশ্যের সাথেও তা সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
মুসলমানদের জন্য কুরবানী ঈদ আনন্দের একটি পর্ব হলেও আল্লাহ্র প্রাণীদের জন্য এটা সুখের সময় নয়। এই উৎসবে বহু ছাগল, গরু ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর জীবনের ইতি ঘটে।
আল্লাহর প্রাণীদেরকে আল্লাহই কুরবানী করতে বলেছেন। আর প্রাণীদেরকে সৃষ্টিই করেছেন মানুষের জন্য।
আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺍﻟْﺒُﺪْﻥَ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻫَﺎ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺷَﻌَﺎﺋِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﻴْﺮٌ ۖ ﻓَﺎﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﺳْﻢَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮَﺍﻑَّ ۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭَﺟَﺒَﺖْ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬَﺎ ﻓَﻜُﻠُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﺃَﻃْﻌِﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘَﺎﻧِﻊَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﺮَّ ۚ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﺳَﺨَّﺮْﻧَﺎﻫَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ ﴿٣٦ ﴾
এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (২২:৩৬)
কাজেই এই মায়া দেখানোর কোনো মানে হয় না।
সর্বোপরি, আমরা জানি যে মহানবী মোহাম্মদ (স.) প্রানীদের উপর দয়ার বাণী প্রচার করে গেছেন। তিনি “সমগ্র সৃষ্টির প্রতি করুণা” (কুরআন ২১ঃ১০৭) প্রদানের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কুরআন খোলাখুলিভাবে নির্দেশ করে যে, প্রাণীরা আমাদের মতই অনুভবক্ষম; অতএব এটা আধুনিক প্রাণী অধিকার আন্দোলনের মৌলিক মতবাদকেই ধারন করে- “পৃথিবীতে তারা শুধু প্রাণীই নয়, পাখায় ভর করে উড়ে বেড়ানো শুধু পাখিই নয়, তার সাথে তারা আমাদের মতই এক একটি গোষ্ঠী” (কুরআন ৬ঃ৩৮)।
প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদেরকে খাওয়া যাবে না। বরং ইসলামের সৌন্দর্য্য এটিই যে, যবেহের সময়েও যেন প্রাণীর প্রতি দয়াশীল হয়, সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাসূল স. বলেন,
ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺘﺐ ﺍﻹﺣﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺷﻲﺀ . ﻭﺇﺫﺍ ﺫﺑﺤﺘﻢ ﻓﺄﺣﺴﻨﻮﺍ ﺍﻟﺬﺑﺢ . ﻭﻟﻴﺤﺪ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺷﻔﺮﺗﻪ . ﻓﻠﻴﺮﺡ ﺫﺑﻴﺤﺘﻪ
আল্লাহ তায়ালা সবক্ষেত্রে ইহসান (সৌন্দর্য) করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই যখন যবেহ করবে, উত্তমরূপে করবে। এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন ছুরি ধার করে নেয় এবং যবেহকৃত পশুকে আরাম দেয়।
-মুসলিম: ১৯৫৫
কুরবানী হওয়ার আগে বাংলাদেশে কুরবানীর বহু প্রাণী বহুদূর পথ পায়ে হেঁটে আসে- প্রায়শই একসাথে কয়েকদিন ধরে ভারতের মত দূরবর্তী দেশ থেকে অথবা অপর্যাপ্ত স্থান, খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবা ছাড়াই ট্রাকে গাদাগাদি করে তাদের আনা হয়। এটা হালালও নয়, মানবিকও নয় এবং করুণা ও দয়ার মত ইসলামী অনুশাসনের সাথেও এর তীব্র বিরোধ রয়েছে।
এটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এর কারণে কোনো হালালকে “হালাল নয়” বলা ইসলামের বিধানের সাথে তামাশা বৈ কিছুই নয়।
আমাদের এই বাস্তবতা ভুললে চলবে না। সহীহ্ আল বুখারীতে উল্লেখ আছে মহানবী মোহাম্মদ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পরকালে প্রাণীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন পুরস্কৃত হবে কিনা। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “প্রতিটি জীবন্ত প্রানীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য প্রশংসিত পুরস্কার রয়েছে”। সাধারণত কুরবানীর প্রাণীদের পা বাঁধা থাকে এবং তারা প্রায় নড়তেই পারে না। তারা একদল মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। আতঙ্কিত প্রাণীদের বেশ কয়েকজন চেপে ধরে রাখে আর তারপর তীক্ষ্ণ ছুরি তাদের গলা বরাবর চালানো হয়। তারা মুক্ত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে, কিন্তু ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়।
পশুর প্রতি মায়া প্রদর্শনের ব্যাখ্যা পূর্বে বলা হয়েছে। শিশুর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ তার অভিভাবকের অসতর্কতা। শিশু পিঁপড়া, টিকটিকিসহ যে কোনো প্রাণী দেখেই ভয় পায়। তাকে কুরবানীর সময় সামনে রাখা উচিৎ নয়। কিন্তু এজন্য কোনো বিধান পরিবর্তন হতে পারে না।
নীচে স্বাক্ষরকারী আমরা শ্রদ্ধার সাথে আপনাদের বিবেচনার জন্য এই লেখা নিবেদন করছি এবং আশা করছি মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) মানবতার জন্য করুণা ও দয়ার যে সার্বজনীন মাপকাঠির আলোকবর্তিকা দিয়ে গেছেন, এই লেখা পড়ে তার আলোকে আপনারা প্রাণী কুরবানী চর্চার ব্যাপারে আপনাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তুলতে পারবেন।
রাসূল স. এর মানবতার দোহাই দিয়ে তাঁরই চর্চিত বিধানের ব্যাপারে নিজস্ব ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার আহ্বান করা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বৃথা চেষ্টা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। স্বাক্ষরকারীদের কেউ ইসলাম নিয়ে জানাশোনা নেই। ব্যাপারটি আরো আশ্চর্যজনক নয় কি?
শেষকথা:
লেখক সম্পর্কে:
আমরা লেখকের ব্যক্তিগত
ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি যে, তিনি প্রাণীর অধিকার বিষয়ে সক্রিয় একজন কর্মী। আমরা তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা এও জানতে পারি যে, তিনি মানবাধিকার বিষয়ে বেশ সক্রিয়। এজন্যও আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
কিন্তু মানুষের ধর্মীয় অধিকারও যে মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত, আশা করি তাকে তা বলার প্রয়োজন নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে আছে:
Article 18.
Everyone has the right to freedom of thought, conscience and religion; this right includes freedom to change his religion or belief, and freedom, either alone or in community with others and in public or private, to manifest his religion or belief in teaching, practice, worship and observance. Article 29.
(1) Everyone has duties to the community in which alone the free and full development of his personality is possible.
(2) In the exercise of his rights and freedoms, everyone shall be subject only to such limitations as are determined by law solely for the purpose of securing due recognition and respect for the rights and freedoms of others and of meeting the just requirements of morality, public order and the general welfare in a democratic society.
(3) These rights and freedoms may in no case be exercised contrary to the purposes and principles of the United Nations.Article 30.
Nothing in this Declaration may be interpreted as implying for any State, group or person any right to engage in any activity or to perform any act aimed at the destruction of any of the rights and freedoms set forth herein.
আর OIC –র মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে আছে:
ARTICLE 10: Islam is the religion of unspoiled nature. It is prohibited to exercise any form of compulsion on man or to exploit his poverty or ignorance in order to convert him to another religion or to atheism.
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগ (মৌলিক অধিকার) -এ আছে:
৪১। (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;
এ ধরণের লেখা আমরা বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষের মৌলিক অধিকারে আঘাত হানার অপচেষ্টা বলে মনে করি।
প্রতি বছর একই লেখা প্রকাশ:
আমরা লেখকের ওয়েবসাইটে তার CV তে উল্লেখ পাই যে, এই লেখাটি ২৭ অক্টোবর ২০১১ তে ঢাকা কোরিয়ারে ছাপানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিডিনিউজ২৪ (ইংরেজী ও
বাংলা উভয় সংস্করণ) একই দিনে, ফাইনানসিয়াল এক্সপ্রেস, সংবাদ প্রতিদিন ও
উইকলি ব্লিটজ পরদিন ২৮ অক্টোবর ২০১১ -এ এবং এ বছর বিডিনিউজ২৪ পুনরায় ১৬ অক্টোবর ২০১২ তে
ইংরেজী সংস্করণে এবং ২১ অক্টোবর ২০১২ তে বাংলা সংস্করণে প্রকাশ করতে দেখি।
ষড়যন্ত্র?
ঈদুল আযহার আগ মুহূর্তে প্রতি বছর এটা প্রকাশ করার পেছনে পশুর অধিকারভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।
লেখকের মতামতের প্রতি আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি মুসলিম হলে লেখাটি লেখকের ধর্মীয় বিশ্বাসের আঘাত হানার পর্যায়ে কিনা তা খতিয়ে দেখা যেত। কিন্তু একটি মুসলিম দেশে পরপর দু’বছর একই সময়ে লেখাটি ছাপানো এবং তা বিভিন্ন নামের অনেকগুলো স্বাক্ষরসহ ছাপানোর পেছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন