শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নয়ন চ্যাটার্জি

আজকে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পদকীয় কলামে এসেছে- “পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে প্রতিবারই কোরবানির পশুর হাট বসে। এমনিতেই ঢাকা শহর মানুষ, যানবাহন এবং ভবনের ভিড়ে ভারাক্রান্ত। তবু বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুর আমদানি ঘটে এ সময়ে। পশুর সঙ্গে পশুবিক্রেতা বা পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীরা রাজধানীতে আসেন। ফলে ওই সময়টায় মহানগরীর যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বড় ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এসব অসুবিধা মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই মেনে নেয় বটে। যদিও মানুষের স্বাভাবিক রুটিন কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে শহরের ভেতরে স্থাপিত পশুর হাটগুলো বরাবরই বিঘ্ন ঘটায়। এমনিতেই যানজট ঢাকাবাসীর জন্য নিত্য বিড়ম্বনা ও সমূহ সঙ্কটের কারণ। তার ওপর পশুর হাটের কারণে অতিরিক্ত মানুষ ও পশুর যাতায়াতের ফলে ঢাকায় অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।.....সম্প্রতি ঢাকা পেয়েছে দু’জন নতুন মেয়র। দায়িত্ব গ্রহণের পর উভয়ের জন্য প্রথম কোরবানি ঈদ। তারাও হাট বিষয়ে সচেতন। কোরবানির পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, মানুষের দুর্দশা সীমিত পর্যায়ে থাকুক সবার ভেতরেই এ ধরনের শুভ চিন্তা কাজ করছে।...........হাটের জন্য খালি জায়গা পাওয়া সম্ভব, কিন্তু সেই খালি জায়গার আশপাশেই তো রয়েছে জনাকীর্ণ অঞ্চল। তাই শহরের ভেতরে নয়, বরং শহরের প্রান্তবর্তী কিংবা নগর-সীমানা ঘেঁষে দশটি দিকে এসব হাট বসানো সম্ভব হলে সেটাই উত্তম হতো।.............................. আমরা আশা করব, রাজধানীতে বসবাসকারী দেড় কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে অচল, বিপন্ন বা বিপর্যস্ত করে যত্রতত্র পশুর হাট বসানো বন্ধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে ” (http://www.dailyjanakantha.com/?p=details&csl=141960)
বলাবাহুল্য-
১) যখন পহেলা বৈশাখের কারণে ঢাকার বড় বড় হাসপাতালগুলোর (ঢামেক, পিজি, বারডেম) গেট বন্ধ হয়ে যায় তখন জনকণ্ঠের চুলকানি কোথায় থাকে ?
২) দূর্গাপূজা-জন্মষ্টমী-রথযাত্রার সময় সময় যখন হিন্দুরা ঢাকা শহরে যানজট বাধিয়ে মিছিল করে, যখন যখন রাস্তা আটকে হাজার হাজার পূজা মণ্ডপ করা হয়, তখন জনকণ্ঠের চুলকানি কোথায় থাকে ?
৩) রাজনৈতিকদলগুলো যখন সারা বছর তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে রাস্তা আটকে মিটিং-মিছিল করে তখন জনকণ্ঠের জনদুর্ভোগের কথা কোথায় থাকে ?
৪) শাহবাগ আন্দোলনের নামে যখন ৩-৪ মাস পিজি-বারডেম-ঢামেক হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ ছিলো তখন জনকণ্ঠের সম্পাদক কোথায় ছিলো ?
সত্যিই বলতে, হাট নিয়ে এ চুলকানি উৎস যানজট নয়, বরং সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদের পকেটে ওপারের টাকা প্রবেশই মূল কারণ। যেই টাকার জোরে হাটের সংখ্যা কমিয়ে, হাটগুলো দূরে ঠেলেও দিয়ে আতিকুউল্লাহ ক্ষান্ত হয় না, চায় হাটগুলো শহর থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
আমার মনে হয়, বামপন্থী নাস্তিকদের হাট বিরোধী অপপ্রচারের জবাবে মুসলমানদের উচিত অধিক হাট নির্মাণের প্রতি দাবি তোলা। দাবি তোলা প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় মহল্লায় মহল্লায় পশুর হাট তৈরী করা, যেন মানুষ ঘরের সামনে থেকে প্রয়োজনী পশু কিনতে পারে। যদি সরকার অনুমতিও না দেয়, তবে এলাকাবাসী মিলেই কাজটি সেরে ফেলা উচিত বলেই মনে করি।
-------------------------------------------------------------------------
নয়ন চ্যাটার্জি
কথিত মানবতাবাদীরা সব সময় ‘মানুষ মানুষের জন্য বলে মুখে ফেনা’ তুলে, অথচ কোরবানীর বিরুদ্ধে বলে, অপপ্রচার করে, বাধা দেওয়া চেষ্টা করে, কোরবানীকে কষ্টসাধ্য করতে প্ররোচনা চালায়। অথচ কোরবানী হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম, যার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও গ্রামীন জনগোষ্ঠী বিরাট উপকৃত হয়। যেমন:
১) গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক/রাখাল যদি সারা বছর একটি গরু পালন করে, তবে সে গরুটি কোরবানীর হাটে বিক্রি করে সে ভালো ইনকাম করতে সক্ষম। দেখা যায় প্রতি গরু বাবদ যে টাকা (৩০-৪০ হাজার) পাওয়া যায় তা দিয়ে একটি গ্রামীন কৃষক পরিবারের সারা বছরের জন্য একটি বড় যোগান হয়। দেখা যায় প্রতি বছর কোরবানী ঈদে প্রায় ৭০ লক্ষ গরুর প্রয়োজন হয়। তাই গড় হিসেব করলে ৭০ লক্ষ গরু দিয়ে ৭০ লক্ষ গ্রামীন কৃষক/রাখাল পরিবারের (প্রায় ৪ কোটি জনগণ ) আর্থিক অবস্থা সচ্ছল করা সম্ভব। এছাড়া কোরবানী উপলক্ষে ৩০ লক্ষ ছাগলের প্রয়োজন হয়। সেটাও গ্রামীন জনগোষ্ঠীর আর্থিক যোগানে মারাত্মক প্রভাব ফেলে থাকে।
২) কোরবানীর মাংশ কিন্তু সমাজের ধনী শ্রেনী নিজের ঘরে আটকে রাখে না, ৩ ভাগের ১ ভাগ বিলি করে দেয়। ধরুন প্রতি বছর ৭০ লক্ষ গরু কোরবানী হয় এবং প্রতি গরুর ওজন যদি কমকরে গড়ে আড়াই মন বা ১০০ কেজি হয়, তাহলে মোট মাংশ হয় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মন এবং তার তিন ভাগের এক ভাগ প্রায় ৫৮ লক্ষ মন গরুর মাংশ ঈদ উপলক্ষে বিলি হয়। আর প্রতি কেজি মাংশের দাম ৪০০ টাকা করে ধরলে কোরবানী ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার গরুর মাংশ দরিদ্রদের মাঝে বিলি হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোরবানী ঈদ আসলে শুধু মাংশকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ধনী থেকে দরিদ্রদের কাছে আসছে। তাই কোরবানীর সংখ্যা যত বৃদ্ধি করা যাবে দরিদ্রদের ততই উপকার।
৩) কোরবানী ঈদ উপলক্ষে গরু বা ছাগল কাটাকুটি করতে কসাইয়ের খরচ লাগে। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এত বিশাল এমাউন্টের টাকাও কিন্তু ধনী শ্রেনীর থেকে দরিদ্র শ্রেনীর পকেটে ঢুকছে। তাই কোরবানীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলে দরিদ্র শ্রেণীর আরো উপকার হবে।
৪) হাটের ইজারা যদিও ধনী শ্রেনী নেয়, কিন্তু সেই হাটে কাজ করে হাজার হাজার দরিদ্র লোক। প্রতি বছর হাটগুলোকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ দরিদ্রের কর্মসংস্থান হয়। হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলে আরো মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
৫) কোরানী ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর খাদ্য- ভূসি, কাঠাল পাতা, খড় ইত্যাদির বিজনেস ব্যাপক জমে ওঠে। এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র শ্রেনী খুবই উপকৃত হয়।
৬) কোরবানী ঈদকে উপলক্ষ্য করে চাটাই, মাংশ কোপানোর খাইট্টা, ছুরি-চাপাতি ‍উৎপাদন করাকে কেন্দ্র করেও অনেক দরিদ্র মানুষ লাভবান হয়।
৭) কোরবানী ঈদে চামড়া বিক্রয়ের মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এই পুরো টাকাটাই চলে যায় বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসা ও দরিদ্র শ্রেনীর কাছে।
কোরবানী ঈদকে উপলক্ষ্য করে ধনী শ্রেণীর পকেট থেকে কত উপায়ে টাকা দরিদ্র শ্রেণীর পকেটে ঢুকে তার হিসেব মেলানো যাবে না। তবে এখানে একটি চিন্তার খোরাক আছে বাংলাদেশীদের জন্য। যেমন ধরুন, সৌদী আররেব একটি বড় ইনকাম হচ্ছে হজ্জ থেকে প্রাপ্ত টাকা, সেই টাকা তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সউদীর সাথে তুলনা না হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ কোরবানী। বিশেষ করে কোরবানী কারণে পরিবর্তিত হতে পারে গ্রামীন দরিদ্র শ্রেনীর ভাগ্য। তবে এর জন্য কয়েকটি কাজ করতে হবে-
ক) গ্রামীন জনগোষ্ঠীকে প্রচুর পরিমাণে গরু/ছাগল উদপাদনে উৎসাহ/সহায়তা দিতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানী ছাড়তে হবে, নিজ দেশের গরু/ছাগল দিয়ে চাহিদা মিটাতে হবে। সোজা ভাষায়, নিজের টাকায় নিজ দেশেই রাখতে হবে।
খ) ধনী শ্রেনী যেন প্রচুর পরিমাণে কোরবানী দেয় সে জন্য উৎসাহ দিতে হবে। ধর্ম প্রচারকরা প্রচুর গরু/ছাগল কোরবানী করতে ধনী শ্রেণীকে উৎসাহ দিবে।
গ) কোরবানীর পশু সহজলভ্য করতে হবে, দোকান থেকে চাল/ডাল কেনা যত সহজ কোরবানীর পশুকে তত সহজলভ্য করতে হবে। হাটের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা যাবে না।
ঘ) কোরবানী জবাইয়ের বিষয়টিও সহজলভ্য করতে হবে, কোন স্থান নির্দ্দিষ্টকরণ করা যাবে না। সোজা ভাষায় এমন কিছু করা যাবে না, যাতে মানুষ কোরবানী বিমুখ হয়।
ঙ) কোরবানী বিরোধী কোন ফালতু অপপ্রচার (অ্যানথ্রাক্স, মোটাতাজা) করা যাবে না, যারা করছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।
আমি আবার বলছি, এক কোরবানীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সদিচ্ছা, ব্যস সেটাই যথেষ্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন