এক. মুফতী আমিনী রহ. ছিলেন একজন স্বয়ং সমপন্ন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাঁর রাজনীতি ছিলো ইসলামী দর্শনের মানদন্ডানুযায়ী। সাদা সাদা আরা কালোকে কালো বলতেন নিদ্বির্ধায়। কোন আলেম নামদারী ব্যক্তিও যদি অন্যায় করতেন। তাকেও তিনি ছাড় দিতেন না ইঞ্চি পরিমাণ। বাতিলকে ছাড় দেওয়া তো কল্পনার বাইরে।
দুই. মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। যাকে এদেশের আলেম সমাজ আওয়ামীপন্থী হিসেবেই জানেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সরকারী কদর বেড়েছে। আওয়ামীলীগ বাইতুল মোকাররমের খতীবের দায়িত্ব না দিলেও শোকালিয়া ঈদগাহের ইমামের পদ দিয়ে সন্তুষ্ট করে তাকে। তিনিও শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করতে উঠে পড়ে লাগলেন।
তিন. জামেয়া ইউনুছিয়া বাৎসরিক মাহফিল চলছে। মঞ্চে বয়ান করছেন ভারতের জমিয়তে উলামা হিন্দের মহাসচিব মুফতী মাহমুদ মাদানী এমপি। তার পাশেই একটি চেয়ারে বসা ছিলেন আলোচিত সমালোচিত আলেম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। মুফতী আমিনী আমাদেরকে নিয়ে উপস্থিত হলেন সেখানে। সরাসরি চলে গেলেন মঞ্চে। তাঁর আগমনী দৃশ্য দেখে পুরো মুক্তমঞ্চ স্লোগানে মুখরিত হচ্ছিল। মাহমুদ মাদানী বলছেন, আমিনী ছাহাব তাশরীফ লায়া, আব হামারী বাত খাতাম হু চুকি হ্যায়,’। এ কথা বলে তিনি মাইক ছেড়ে দিয়ে মুফতী আমিনীর সাথে সালাম-মোসাফাহা করলেন। জামেয়ার মুহতামিম মুফতী নুরুল্লাহ রহ. উপস্থিত ছিলেন সেখানে (এর কিছুদিন পরই মুফতী নুরুল্লাহ হুজুর ইন্তেকাল করেন)। এই সুযোগে ফরিদ উদ্দীন মাসুদও হাত বাড়ালেন। মুফতী আমিনী মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এবার ফরিদ উদ্দীন মাসুদ হুজুরের পাঞ্জাবী টেনে ধরে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ ও বিফল হয়ে মাহমুদ মাদানীর সাথে জামেয়ার দফতরে ফিরে গেলেন।
চার. ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছিল, যখন ফরিদ উদ্দীন মাসুদ সাহেব কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি নিয়ে কওমী কমিশনের মাধ্যমে নানামুখি ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করেছিলেন। তাই হুজুর তার প্রতি ছিলেন ভীষণ ক্ষুদ্ধ এবং তাকে উলামায়ে ছুঁ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। মাহফিল শেষে হুজুরকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। হুজুর আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর একটি ঘটনা শুনালেন। ৬০ এর দশকের শেষ দিকে ইন্তেকালের কিছুকাল আগে আল্লামা শামুসুল হক ফরিদপুরীর সাথে একজন নামদারী আলেম দেখা করতে যান। (যিনি ইসলাম বিদ্বেষী তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানের খুব কাছের লোক ছিলেন)। হুজুর তাকে সাক্ষাত দিতে নারাজী প্রকাশ করেন। ঐ আলেম জানালা দিয়ে হুজুরকে এক নজর দেখতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন: ‘উলামায়ে ছুঁদের সাথে পর্দা করাই শ্রেয়’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন