এ বিষয়টি মূলত ২ ভাগে বিভক্তঃ
১। ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস যদি ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিসের বিপরীত হয় তখন করণীয়।
১। ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস যদি ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিসের বিপরীত হয় তখন করণীয়।
২। মারফু (রসূলুল্লাহ্ (দ.) এঁর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতি) হাদিস যখন অন্য মারফু হাদিসের বিপরীত মনে হবে তখন করণীয়ঃ
১। ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস যখন ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিসের বিপরীত হয়ঃ
এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসূলুল্লাহ্ (দ.) এর ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস যখন ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিসের বিপরীত হয় তখন ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস-ই গ্রহণযোগ্য হয়। আর ফে’লী (যা করেছেন) হাদিসটি রসূলুল্লাহ্ (দ.) এর জন্য খাস (নির্দিষ্ট) হয়ে যায়। এ বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলছি।
#উদাহরণ আবু হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত,
‘‘রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা করতে বসলে কখনো যেন সে ক্বিবলার দিকে পিঠ বা মুখ করে না বসে।’’ -বুখারী, অধ্যায়ঃ ৪, অনুচ্ছেদঃ ১১, পিঠ-মুখ করে ক্বিবলামূখী হয়ে পেশাব বা পায়খানা করবে না, তবে দেয়াল অথবা কোন কিছু দ্বারা আড়াল থাকলে ভিন্ন কথা, হাদিস # ১৪৪, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বলাত, অনুচ্ছেদঃ ২৯, মাদীনা, সিরিয়া ও পূর্ব দিকের অধিবাসীদের ক্বিবলা, পূর্বে বা পশ্চিমে ক্বিবলা নয়, হাদিস # ৩৯৪, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ২, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ১৭, ইসিত্মঞ্জার বিবরণ, হাদিস # ৫৭/২৬২, ৫৯/২৬৪, ৬০/২৬৫, নাসাঈ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ১৯, প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় ক্বিবলামূখী হওয়া নিষেধ, হাদিস # ২০, অনুচ্ছেদঃ ২১, পেশাব পায়খানা করার সময় পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসার নির্দেশ, হাদিস # ২২, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা অর্জন, অনুচ্ছেদঃ ৪, ক্বিবলামূখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা মাকরুহ্, হাদিস # ৭,৮,৯, তিরমিযী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ৬, ক্বিবলামূখী হয়ে পিঠ-মুখ না করা, হাদিস # ৮, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ১৭, ক্বিবলার দিকে পীঠ-মুখ করে না বসা, হাদিস # ৩১৭, ৩১৮, ৩২০, ৩২১, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ৬, ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে (প্রস্রাব-পায়খানা) না করা, হাদিস # ৬৬৫ (হাদিসটি নাসাঈ’র বর্ণনা)।
এই হাদিসটি বলছে যে, আমরা যেন ক্বিবলার দিকে পিঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করি। অথচ আরেকটি হাদিস বলছে, ইবনে ওমার (রা.) হতে বর্ণিত,
‘‘তিনি বলেন (ইবনে ওমার), আমি একদা আমার বোন হাফসা (রা.) এর ঘরের ছাদে উঠলাম তখন রসূলুল্লাহ্ (দ.) কে প্রস্রাব-পায়খানায় বসা অবস্থায় দেখলাম, তিনি শামের (সিরিয়া) দিকে মুখ করে এবং ক্বিবলার দিকে পিঠ করে বসে ছিলেন।’’ -বুখারী, অধ্যায়ঃ ৪, উযু, অনুচ্ছেদঃ ১৪, গৃহের মধ্যে প্রস্রাব-পায়খানা করা, হাদিস # ১৪৮, অধ্যায়ঃ ৫৭, এক পঞ্চমাংশ, অনুচ্ছেদঃ ৪, নাবী (দ.) এর স্ত্রীগণের ঘর এবং যেসব ঘর তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেসবের বর্ণনা, হাদিস # ৩১০২, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ২, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ১৭, ইসিত্মঞ্জার বিবরণ, হাদিস # ৬২/২৬৬, নাসাঈ, স্বহীহ, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ২২, বাড়ীর ভিতরে ক্বিবলার দিকে ফিরে বসার অনুমতি, হাদিস # ২৩, তিরমিযী, স্বহীহ, অধ্যায়ঃ ১, পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ৭, উলেস্নখিত ব্যাপারে অনুমতি সম্পর্কে, হাদিস # ৯,১১, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ১৮, ঘরের মধ্যে ঐ বিষয়ে অনুমতি কিন্তু খোলা স্থানে নয়, হাদিস # ৩২৩, ৩২৫ (হাদিসটি মুসলিমের বর্ণনা)।
এই হাদিসটি বলছে যে, রসূলুল্লাহ্ (দ.) একবার ক্বিবলার দিকে পিঠ করে ইসেত্মঞ্জা করছিলেন। তাই কেউ যদি বলে রসূলুল্লাহ্ (দ.) ক্বিবলার দিকে পিঠ করে ইসেত্মঞ্জা করেছেন তাই আমরাও ক্বিবলার দিকে পিঠ করে ইসেত্মঞ্জা করতে পারবো। তার কথা কি ঠিক হবে ? নিশ্চয়ই না। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (দ.) আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে পিঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই, এখানে ক্বিবলার দিকে পিঠ করে প্রস্রাব বা পায়খানা করার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ (দ.) কে অনুসরণ করা যাবে না। তাই, বুঝতে হবে যে, ক্বিবলার দিকে পিঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করা আদেশটি রসূলুল্লাহ্ (দ.) এর ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস। আর তিনি (দ.) ক্বিবলার দিকে পিঠ করে প্রস্রাব-পায়খানা করেছেন তা ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিস। আর ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিসের বিপরীতে ফে’লী হাদিস আমাদের পালনীয় নয়।
তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে, ক্বওলী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা বলেছেন) হাদিস এবং ফে’লী (রসূলুল্লাহ্ দ. যা করেছেন) হাদিসকে এভাবে বুঝ নেয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে নিতে হবে যে, হাদিসগুলো উসূলে হাদিস অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য কি’না। যদি উভয় হাদিস গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এইভাবে বুঝ নিতে হবে, নতুবা নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন