শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০১৫

ঈদের নামাজের মাসয়ালা



মাসয়ালা : ঈদের নামাজে আজান ও একামত নেই। হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.)
বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক বার নয় দুই বার নয়; একাধিক বার ঈদের নামাজ পড়েছি তাতে আজান ও একামত ছিল না।’ -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ১৪৭০

মাসয়ালা : সর্বপ্রথম ঈদের নামাজ হবে তারপর খুতবা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করতেন, কোনো উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোনো নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাজের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোনো বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোনো নির্দেশ জারি করার ইচ্ছা করলে তা জারি করতেন। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ৯০৩

মাসয়ালা : ঈদের নামায দুই রাকাত। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ১৩৪১

মাসয়ালা: ঈদের নামাজে কেরাআত সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবি নোমান ইবনে বশির (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে দেখা যায়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদ ও জুমার নামাজে প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘হাল আতাকা হাদিসুল গাশিয়াহ’ পাঠ করতেন। -সুনানে নাসাঈ: হাদিস নং ১৫৫০

সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সায়া পড়ার কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। -সুনানে নাসাঈ: হাদিস নং ১৫৪৯

মাসয়ালা : ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির বলা হয়। হিজরি প্রথম সনে এর প্রচলন শুরু হয়েছে। ঈদের নামাজে ৬টি তাকবিরের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে আহকামুল ইসলাম কিতাবে লেখা হয়েছে, ‘ঈদের দিন মানুষ খুব ভালো কাপড় পরিধান করে জাঁকজমকের সঙ্গে মানুষের মাঝে চলাফেরা করে। এর পাশাপাশি আল্লাহতায়ালার প্রশংসাজ্ঞাপক বাক্য তথা সানা ও তাসবিহ আদায় করে চলা দরকার। অতএব প্রতিবার কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাকবির বলা দ্বারা একথা বুঝানো হচ্ছে যে, আমাদের মতো মানুষের জাঁকজমকের চেয়ে আল্লাহতায়ালার জাঁকজমক ও ইজ্জত অনেক বড়। সুতরাং ৬টি অতিরিক্ত তাকবির দ্বারা এদিকে ইশারা করা হয়েছে।’ -মাসায়েলে ঈদাইন: ২৬; আহকামে ইসলাম: ১৬৩

ঈদের জামাত সম্পর্কীয় মাসয়ালা
মাসয়ালা : ইমাম সাহেব জুমার মতো দু’টি খুতবা দিবেন। তবে জুমার খুতবা দেয়া ফরজ আর ঈদের খুতবা দেয়া সুন্নত কিন্তু ঈদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। ওই সময় কথাবার্তা, চলাফেরা ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ।

মাসয়ালা : ঈদের নামাজের পূর্বে মহিলা হোক কিংবা পুরুষ, বাড়িতে কিংবা মসজিদে অথবা ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ।

মাসয়ালা : সম্ভব হলে এলাকার সবাই এক স্থানে একত্রে পড়া উত্তম। তবে কয়েক জায়গায় পড়াও জায়েজ।

মাসয়ালা : ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে তার কাজা করতে হবে না, যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশকিছু লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা অন্য একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন।

মাসয়ালা : ১ শাওয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরিয়তসম্মত কোনো কারণে ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে শাওয়ালের ২ তারিখে পড়ার অনুমতি আছে। এরপর পড়া যাবে না।

মাসয়ালা : কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সালামের পর যখন উক্ত ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতের (প্রথম রাকাত) জন্য দাঁড়াবে তখন প্রথমে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...), তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে ফাতেহা ও কেরাতের পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। ফাতেহার আগে নয়।

মাসয়ালা : ইমাম তাকবির ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে বলবে, রুকু ছেড়ে দাঁড়াবে না। তবে রুকু ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাকবির বলে আবার রুকুতে গেলেও নামাজ নষ্ট হবে না। বেশি লোক হওয়ার কারণে সহুসিজদা দিতে হবে না।

মাসয়ালা : কোনো লোক যদি ইমাম সাহেবকে তাকবির শেষ হওয়ার পরে পায় সে তাকবিরে তাহরিমা বেঁধে প্রথমে ওয়াজিব তিন তাকবির বলে নিবে। আর রুকুতে পেলে যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, তাকবির বলেও ইমাম সাহেবকে রুকুতে পাবে তাহলে তাহরিমা বেঁধে দাঁড়িয়ে তাকবির বলে নিবে, তারপর রুকুতে যাবে। আর দাঁড়িয়ে তাকবির পড়তে পড়তে ইমাম সাহেবকে রুকুতে না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাহরিমা বেঁধে রুকুতে চলে যাবে এবং রুকুর তাসবিহ না বলে প্রথমে তাকবির বলে নিবে, রুকুতে তাকবির বলার সময় হাত উঠাবে না, এবং সময় পেলে রুকুর তাসবিহ পড়বে, না পেলে না পড়বে। আর তাকবির শেষ করার পূর্বেই যদি ইমাম রুকু থেকে মাথা তুলে ফেলেন তাহলে মুক্তাদিও তুলে ফেলবে। তাকবির বাকি থাকলে তা ক্ষমাযোগ্য।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন