উম্মু ইবরাহীমের বিখ্যাত কাহিনী ।
এই কাহিনী আবূ জাফর আল-লুবান এর মত আলেমগণ উল্লেখ করেছেন । তিনি বর্ননা করেন, এ কথা বর্নিত আছে যে, ইরাকের বসরায় একজন সৎকর্মপরায়ণ নারী থাকতেন যিনি ছিলেন উম্মু ইবরাহীম আল-হাসিমিয়াহ (রহঃ)। তার সময়ে ইসলামের শত্রুরা একটি মুসলিম শহরে আত্রুমন করল এবং মুসলিমরা জিহাদে যোগদানে উৎসাহিত হতে থাকল । মুজাহিদ কমান্ডার আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়িদ আল-বাসরি (রহঃ) জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে একটি ভাষন দিলেন । শ্রোতাদের মাঝে উম্মু ইবরাহিম উপস্হিত ছিলেন । আব্দুল ওয়াহিদ জান্নাতের অপরুপা কুমারী রমনী হুরদের নিয়ে আলোচনা করলেন । হুরদের বর্ননা শুনে উম্মু ইবরাহিম (রহঃ) দাড়িয়েঁ গেলেন । এবং আব্দুল ওয়াহিদ কে বললেন, আপনি আমার পুত্র ইবরাহীমকে চেনেন এবং এও জানেন যে, বসরার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের একটি কন্যাকে তার সাথে বিবাহ দেয়ার আশা করে । আমি এখনো তাদের (প্রস্তাবের ) ব্যাপারে একমত হইনি। কিন্তু তোমার বর্ণিত মেয়েটিকে আমি পছন্দ করছি । আমি তার সাথে আমার পুত্রের বিবাহ দিতে পারলে সুখি হব । তুমি কি দয়া করে আমাকে আরেকবার তার বর্ননা দিবে ?
আব্দুল ওয়াহিদ বিন (রহঃ) তখন একটি কবিতা আবৃতি করে পুনরায় হুরের বর্ননা দিলেন। উম্মু ইবরাহিম বলেন, আমি আমার ছেলেকে এই মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতে চাই এবং তার পণ (মহরানা) বাবদ তোমাকে ১০,০০০(দশ হাজার) দিরহাম দিচ্ছি । তুমি আমার ছেলেকে তোমার সাথে এই সৈন্যবাহিনীতে নিয়ে যাও যাতে সে একজন শহীদ হিসেবে নিহত হতে পারে এবং আমার জন্য শেষ বিচারের দিনে সুপারিশ করতে পারে।
আব্দুল ওয়াহিদ বিন (রহঃ) বললেন “আপনি যদি তা করেন, তবে আপনার ও আপনার পুত্রের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার ।” উম্মু ইবরাহীম (রহঃ) তখন তার পুত্রকে শ্রোতাদের মাঝ থেকে ডাক দিল- “হে আমার পুত্র! ” তার পুত্র উঠে দাড়াল এবং বলল,“জী আমার মা! ” তিনি (মা) বললেন “তুমি কি এই মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হবে এই শর্তে যে, তোমার আত্মা আল্লাহ তা’আলাকে দিয়ে দিবে ।” সে (পুত্র) বলল, “হাঁ, মা আমি খুবই সন্তুষ্ট । তিনি (মা) বললেন “ হে আল্লাহ ! তুমি আমার সাক্ষি থাক, আমি আমার পুত্রকে জান্নাতের এই মেয়ের সাথে বিবাহ দিলাম এই শর্তে যে, সে তার আত্মা তোমার জন্য ব্যয় করবে । সে (মা) বাড়ীতে ফেরত গেল এবং ১০,০০০(দশ হাজার) দিরহাম নিয়ে ফেরত আসল । সে এই দিরহাম আব্দুল ওয়াহিদকে (রহঃ) দিয়ে বলল, “এটা ঐ (মেয়ের) পণ। এটা গ্রহন কর এবং মুজাহিদীনদের প্রয়োজনে ব্যয় কর ”। তিনি তখন তার ছেলের জন্য একটি ঘোড়ার ব্যবস্হা করলেন এবং তাকে সশস্ত্র করলেন । যখন সৈন্যবাহিনী যাত্রা (advance) শুরু করল, তখন ইবরাহীম কোরআন তিলাওয়াতকারীদের সাথে বেড়িয়ে আসল এবং তিলাওয়াত করলঃ
إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ
( ইন্না আল্লাহা আশতার মিনালমুমিনুনা আনফুচাকুম ওয়া আমওয়ালাহুম বিআন্না লাহুমুল জান্নাতা)
অর্থাতঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা বিশ্বাসীদের কাছ থেকে তাদের জীবন এবং সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ত্রুয় করে নিয়েছেন ।”
যখন উম্মু ইবরাহীম (রহঃ) তার পুত্রকে বিদায় দিচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন, “সাবধান থাক এবং তোমর কাছ থেকে আল্লাহর দৃষ্টিতে যেন কোন কমতি অনুমোদন করো না । তিনি তখন তাকে আলিঙ্গন করলেন, চুমু দিলেন এবং বললেন “ আল্লাহ যেন শেষ বিচারের দিন ছাড়া আমাদেরকে কখনো একত্রিত না করেন”।
আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) বললেন “যখন আমরা শত্রুর শিবিরে পৌছলাম এবং মুসলিমদেরকে যুদ্ধের জন্য ডাকা হল, তখন ইবরাহীম সবার সামনে চলে গেল এবং অসংখ্য শত্রু নিধন করল । (এভাবে অনেক সময় যুদ্ধ করার পর ) শত্রুরা তার উপর চড়াও হয়ে তাকে হত্যা করে । আমাদের ফেরত আসার পথে আমি আমার সৈন্যদেরকে বললাম, তারা যেন ইবরাহীমের শহীদ হবার সংবাদ; তার মাকে না বলেন. যতক্ষন পর্যন্ত না আমি তাকে বলি” ।
যখন আমরা বসরায় প্রবেশ করলাম,তখন উম্মু ইবরাহীম সংবাদ শুনার জন্য বাস্তায় দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কি আমার উপহার গ্রহন করেছেন, যাতে আমি আনন্দ পেতে পারি অথবা তিন কি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন যাতে আমাকে কাদঁতে হয় ? আমি বললাম আল্লাহ আপনার উপহার গ্রহন করেছেন এবং আপনার ছেলে শহীদ হিসেবে মৃত্যু বরণ করেছেন । তিনি (মা) তখন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন এবং বললেন, ‘ হে আল্লাহ ! আমার উপহার নেয়ার জন্য শুকরিয়া ।
পরদিন তিনি (মা) মসজিদে এসে আমাকে বললন, “আনন্দ করুন । আমি আমার ছেলে ইবরাহীমকে গত রাত্রে স্বপ্নে দেখেছি । সে একটি খুব সুন্দর বাগানে সবুজ কাপড় পরিহিত অবস্হায় একটি মুক্তা খচিত আসনে বসা ছিল এবং তার মাথায় ছিল একটি মুকুট । সে আমাকে বলল “মা আনন্দ কর ! আমি আমার বধুকে পেয়েছি । আল্লাহ বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ أُوْلَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ
“ওয়াছ্ছাবিকুনা আচ্ছাবিকুন উলায়িকাল মুকাররাবুন”।
অর্থাৎ "আর যারা অগ্রবর্তী তারা অগ্রবর্তীই হবে । এরাই বিশেষ নৈকট্যের অধিকার ”।
উসমান বিন আবী সাওদাও বলেছেন, আমাদের বলা হয়েছে এ আয়াতে অগ্রবর্তী বলতে যারা প্রথমে জিহাদে যেতে বের হয় তাদেরকে বুঝিয়েছে এবং তাদেরকে বুঝিয়েছে যারা প্রথমে স্বলাতের জন্য যায় । ( ইবনে আবি শায়বা, সহীহ)। (মাশারী আল-আশুউয়াক ইলা মাশারী আল- উশাক)
সর্বশেষ আমরা কুরআনের দুটি আয়াত স্বরণ করে শেষ করছি ।
فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ لاَ تُكَلَّفُ إِلاَّ نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَسَى اللّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَاللّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلاً
"অতএব আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন ( হে মুহাম্মদ (সঃ) ! আপনাকে শুধু আপনার নিজের জন্য দায়ী করা হবে । আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করুন । অচিরেই আল্লাহ আঝ্ঝা ওয়াজাল্লা কাফিরদের শক্তি খর্ব করে দিবেন । আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং শাস্তিদাতা ।" সুরা আন-নিসা ৪:৮৪ ।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُواْ مِئَتَيْنِ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّئَةٌ يَغْلِبُواْ أَلْفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُونَ
"হে নবী ! আপনি মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন । যদি আপনাদের মধ্যে ২০ জন দৃঢ়পদ লোক থাকে তবে তার ২০০ লোকের উপর জয়লাভ করবে আর যদি আপনাদের মধ্যে ১০০ জন দৃঢ়পদ লোক থাকে তবে তারা ১০০০ জন কাফিরের উপর জয়লাভ করবে । কেননা তারা এমন লোক যারা বোঝে না ।"
সুরা আনফাল ৮:৬৫।
সুরা আনফাল ৮:৬৫।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন