—সামীউর রহমান শামীম
.
আমাদের সমাজে এরকম অনেক লোক আছে, যারা যাচাই বাছাই ছাড়াই ফতোয়াবাজী করে যে, জুমুআর ফরযের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নেই। এ ব্যাপারে একটিও মারফূ হাদীস নাই। আর যে একটিও বা মারফূ হাদীস সুনানে ইবনে মাজাহ-তে আছে, তাও যয়ীফ। সুতরাং এই নামায বিদআত (নাউযুবিল্লাহ)।
.
তাদের কথা আংশিক সঠিক। কাবলাল জুমুআ বা জুমুআর ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাতের যে মারফূ হাদীস সুনানে ইবনে মাজায় কিতাবুল জুমুআ -তে বাবুস সালাহ কাবলাল জুমুআ অনুচ্ছেদে রয়েছে, হাদীস নম্বর ১১২৯, এই হাদীসটি যয়ীফ বা দূর্বল। আমি বলবো, হাদীসের সনদটি অতি দূর্বল।
.
কথিত আহলে হাদীস শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবও শুধু এই হাদীসটি উল্লেখ করেই বলেছেন, এটি দূর্বল। আর কোনো মারফূ হাদীস নেই।
.
আমি বলছি, হাদীসটি শুধু দূর্বলই নয়, অতি দূর্বল। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আর কোনো সহীহ মারফূ হাদীস নেই।
.
আসুন দেখি, সহীহ মারফূ হাদীসে কি বলা হয়েছে...
.
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, শাফেয়ী ফকীহ, সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী’র রচয়িতা- আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)'র উস্তাদ ইমাম ইমাম হাফিয যায়নুদ্দীন আল ইরাকী (রহ.)'র ছেলে ইমাম হাফিয আবূ যুরআ আল ইরাকী (রহ.) লিখেছেন,
.
ﻭﺍﻟﻤﺘﻦ ﺍﻟﻤﺬﻛﻮﺭ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻟﺨِﻠَﻌﻲ ﻓﻲ ﻓﻮﺍﺋﺪﻩ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺟﻴﺪ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﺿﻤﺮﺓ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
.
‘‘ইবনে মাজাহ'র সনদটি তো যয়ীফ। কিন্তু এই মতন ইমাম হাফিয আবুল হাসান খিলায়ী তাঁর ফাওয়াইদ কিতাবে জায়্যিদ (হাসান সনদ হতে উত্তম) সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদটি- আবূ ইসহাক সাবিয়ী বর্ণনা করেন আসেম ইবনে দমরাহ হতে, তিনি হযরত আলী (রা.) হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে।’’ [ তরহুত তাছরীব, ৩/৩৬]
.
আবু ইসহাক আস সাবীয়ী আসিম ইবনে দমরাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আলী (রা.) থেকে, যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাআত পড়তেন।’ [আল-ফাওয়াইদ; আবুল হাসান আল খিলায়ী-তরহুত তাছরীব খ ৩, পৃ. ৩৬]
.
এই রেওয়ায়াতটিকে সকল মুহাদ্দিসীনগণ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। কোনো একজন মুহাদ্দিসও এই রেওয়ায়াতের ব্যাপারে আপত্তি করেন নি।
.
আবুল হাসান আল খিলায়ীর সনদের সমর্থন ঐ রেওয়ায়েত দ্বারাও হয়, যা তবারানী ‘‘আলমুজামুল আওসাত’’ কিতাবে এবং আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী তাঁর ‘‘আলমু’জাম’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি এই-
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴَّﻬْﻤﻲ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣُﺼَﻴْﻦ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴُّﻠَﻤِﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﺿَﻤْﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻳﺠﻌﻞ ﺍﻟﺘﺴﻠﻴﻢَ ﻓﻲ ﺁﺧﺮﻫﻦ
.
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস সাহমী বর্ণনা করেন, আমাদেরকে হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আসসুলামী বর্ণনা
করেছেন, তিনি আবু ইসহাক (সাবীয়ী) থেকে, তিনি আসিম ইবনে দমরা থেকে, তিনি আলী রা. থেকে, যে ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন এবং সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন।’’-[আলমুজামুল আওসাত, তবারানী খ. ২, পৃ. ৩৬৮ আলমু’জাম আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী]
.
এ বার আলোচনা করছি, এই সনদের প্রত্যেকটি রাবীকে নিয়ে।
.
# মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস সাহমী (রহ.) তিনি ১৮৭ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন । তাঁর সম্পর্কে ইবনে আদী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋَﺪِﻱ : ﻋﻨﺪﻱ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ
.
অর্থাৎ ‘‘আমার নিকট তাঁর ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।’’ [আল কামিল, ৬/১৯১-১৯২]
.
ﻭﺫَﻛَﺮﻩ ﺍﺑﻦ ﺣِﺒَّﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ
.
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁর ব্যাপারে তাঁর ছিকাত কিতাবে আলোচনা করেছেন। যে কিতাবে তিনি শুধু ছিকা (নির্ভরযোগ্য) রাবীদের নিয়ে এসেছেন।
.
# হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আস সুলামী (রহ.)। তাঁর কুনিয়াত ছিল আবুল হুযাইল। আল কূফী। মৃত্যু ১৩৬ হিজরীতে। তাঁর সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ.) তাঁর আল কাশিফ কিতাবের ১ম খণ্ডে বলেন,
.
ﺛﻘﺔ ﺣﺠﺔ
.
অর্থাৎ তিনি ছিকাহ রাবী। এবং প্রামাণ্য।
.
ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেন,
.
ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন।’’
.
ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন,
.
ﺛﻘﺔ ﺛﺒﺖ ﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি ছিকাহ (বিশ্বস্ত/নির্ভরযোগ্য) রাবী। তিনি ছিকাহ এটা হাদীসশাস্ত্রে প্রমাণিত।’’
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন,
.
ﺍﻟﺜﻘﺔ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻥ ﻣﻦ ﻛﺒﺎﺭ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি ছিকাহ। তিনি আসহাবুল হাদীসের একজন আকাবির ছিলেন।’’
.
ইমাম আবূ যুরআ (রহ.) বলেন,
.
ﻗﺎﻝ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ : ﺳﺄﻟﺖ ﺃﺑﺎ ﺯﺭﻋﺔ ﻋﻨﻪ ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতিম বলেন, আমি হাফিয আবূ যুরআকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁর ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে ছিকাহ রাবী।’’
.
[আল কাশিফ লিয যাহাবী, খণ্ড ১; পৃষ্ঠা ৩৩৮; বর্ণনা ১১২৪]
.
# আসিম ইবনে দমরাহ (রহ.)। তিনি একজন বিখ্যাত তাবেয়ী ছিলেন। হযরত আলী (রা.) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিকাহ সবাই এ বিষয়ে ঐক্যমত্য। তবুও দুই একজন ইমামের বক্তব্য পেশ করছি,
.
ইমাম বুখারী উস্তাদ, আলী ইবনুল মাদিনী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﺠﻠﻲ ، ﻭﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﻲ : ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ও আলী ইবনুল মাদিনী বলেন, তিনি ছিকাহ ছিলেন।’’
.
ইমাম নাসায়ী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ : ﻟﻴﺲ ﺑﻪ ﺑﺄﺱ
.
অর্থাৎ ‘‘তাঁর ব্যাপারে অসুবিধার কিছুই নেই। লাইসা বিহি বা’স।’’
.
এছাড়াও হরব বিন ইসমাঈল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল থেকে বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমাদ তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সবাই তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
.
[দেখতে পারেন, তাহযীবুল কামাল লিলমিযযী। মাকতাবা ইসলামী ওয়েব ডট নেট, তাহযীবুল কামাকের হাওয়ালা দিয়ে প্রকাশ করেছে]
.
এই হলো রাবীদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আর আবুল হাসান খিলায়ী’র সনদ তো সকলের নিকট সর্বসম্মতি ক্রমে নির্ভরযোগ্য।
.
তাই যারা বলেন যে, কাবলাল জুমুআ’র চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের পক্ষে কোনো মারফূ হাদীস নাই, তাদের উচিত আরো তাহকীক করা। অযথা চিল্লানো উচিত না।
.
আর যারা এতদিন এই কাবলাল জুমুআ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন, ইনশাআল্লাহ সংশয় আর থাকলো না।
.
আমাদের সমাজে এরকম অনেক লোক আছে, যারা যাচাই বাছাই ছাড়াই ফতোয়াবাজী করে যে, জুমুআর ফরযের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নেই। এ ব্যাপারে একটিও মারফূ হাদীস নাই। আর যে একটিও বা মারফূ হাদীস সুনানে ইবনে মাজাহ-তে আছে, তাও যয়ীফ। সুতরাং এই নামায বিদআত (নাউযুবিল্লাহ)।
.
তাদের কথা আংশিক সঠিক। কাবলাল জুমুআ বা জুমুআর ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাতের যে মারফূ হাদীস সুনানে ইবনে মাজায় কিতাবুল জুমুআ -তে বাবুস সালাহ কাবলাল জুমুআ অনুচ্ছেদে রয়েছে, হাদীস নম্বর ১১২৯, এই হাদীসটি যয়ীফ বা দূর্বল। আমি বলবো, হাদীসের সনদটি অতি দূর্বল।
.
কথিত আহলে হাদীস শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবও শুধু এই হাদীসটি উল্লেখ করেই বলেছেন, এটি দূর্বল। আর কোনো মারফূ হাদীস নেই।
.
আমি বলছি, হাদীসটি শুধু দূর্বলই নয়, অতি দূর্বল। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আর কোনো সহীহ মারফূ হাদীস নেই।
.
আসুন দেখি, সহীহ মারফূ হাদীসে কি বলা হয়েছে...
.
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, শাফেয়ী ফকীহ, সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী’র রচয়িতা- আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)'র উস্তাদ ইমাম ইমাম হাফিয যায়নুদ্দীন আল ইরাকী (রহ.)'র ছেলে ইমাম হাফিয আবূ যুরআ আল ইরাকী (রহ.) লিখেছেন,
.
ﻭﺍﻟﻤﺘﻦ ﺍﻟﻤﺬﻛﻮﺭ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻟﺨِﻠَﻌﻲ ﻓﻲ ﻓﻮﺍﺋﺪﻩ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺟﻴﺪ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﺿﻤﺮﺓ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
.
‘‘ইবনে মাজাহ'র সনদটি তো যয়ীফ। কিন্তু এই মতন ইমাম হাফিয আবুল হাসান খিলায়ী তাঁর ফাওয়াইদ কিতাবে জায়্যিদ (হাসান সনদ হতে উত্তম) সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদটি- আবূ ইসহাক সাবিয়ী বর্ণনা করেন আসেম ইবনে দমরাহ হতে, তিনি হযরত আলী (রা.) হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে।’’ [ তরহুত তাছরীব, ৩/৩৬]
.
আবু ইসহাক আস সাবীয়ী আসিম ইবনে দমরাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আলী (রা.) থেকে, যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাআত পড়তেন।’ [আল-ফাওয়াইদ; আবুল হাসান আল খিলায়ী-তরহুত তাছরীব খ ৩, পৃ. ৩৬]
.
এই রেওয়ায়াতটিকে সকল মুহাদ্দিসীনগণ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। কোনো একজন মুহাদ্দিসও এই রেওয়ায়াতের ব্যাপারে আপত্তি করেন নি।
.
আবুল হাসান আল খিলায়ীর সনদের সমর্থন ঐ রেওয়ায়েত দ্বারাও হয়, যা তবারানী ‘‘আলমুজামুল আওসাত’’ কিতাবে এবং আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী তাঁর ‘‘আলমু’জাম’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি এই-
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴَّﻬْﻤﻲ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣُﺼَﻴْﻦ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴُّﻠَﻤِﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﺿَﻤْﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻳﺠﻌﻞ ﺍﻟﺘﺴﻠﻴﻢَ ﻓﻲ ﺁﺧﺮﻫﻦ
.
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস সাহমী বর্ণনা করেন, আমাদেরকে হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আসসুলামী বর্ণনা
করেছেন, তিনি আবু ইসহাক (সাবীয়ী) থেকে, তিনি আসিম ইবনে দমরা থেকে, তিনি আলী রা. থেকে, যে ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন এবং সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন।’’-[আলমুজামুল আওসাত, তবারানী খ. ২, পৃ. ৩৬৮ আলমু’জাম আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী]
.
এ বার আলোচনা করছি, এই সনদের প্রত্যেকটি রাবীকে নিয়ে।
.
# মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস সাহমী (রহ.) তিনি ১৮৭ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন । তাঁর সম্পর্কে ইবনে আদী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋَﺪِﻱ : ﻋﻨﺪﻱ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ
.
অর্থাৎ ‘‘আমার নিকট তাঁর ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।’’ [আল কামিল, ৬/১৯১-১৯২]
.
ﻭﺫَﻛَﺮﻩ ﺍﺑﻦ ﺣِﺒَّﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ
.
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁর ব্যাপারে তাঁর ছিকাত কিতাবে আলোচনা করেছেন। যে কিতাবে তিনি শুধু ছিকা (নির্ভরযোগ্য) রাবীদের নিয়ে এসেছেন।
.
# হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আস সুলামী (রহ.)। তাঁর কুনিয়াত ছিল আবুল হুযাইল। আল কূফী। মৃত্যু ১৩৬ হিজরীতে। তাঁর সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ.) তাঁর আল কাশিফ কিতাবের ১ম খণ্ডে বলেন,
.
ﺛﻘﺔ ﺣﺠﺔ
.
অর্থাৎ তিনি ছিকাহ রাবী। এবং প্রামাণ্য।
.
ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেন,
.
ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন।’’
.
ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন,
.
ﺛﻘﺔ ﺛﺒﺖ ﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি ছিকাহ (বিশ্বস্ত/নির্ভরযোগ্য) রাবী। তিনি ছিকাহ এটা হাদীসশাস্ত্রে প্রমাণিত।’’
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন,
.
ﺍﻟﺜﻘﺔ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻥ ﻣﻦ ﻛﺒﺎﺭ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
অর্থাৎ ‘‘তিনি ছিকাহ। তিনি আসহাবুল হাদীসের একজন আকাবির ছিলেন।’’
.
ইমাম আবূ যুরআ (রহ.) বলেন,
.
ﻗﺎﻝ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ : ﺳﺄﻟﺖ ﺃﺑﺎ ﺯﺭﻋﺔ ﻋﻨﻪ ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতিম বলেন, আমি হাফিয আবূ যুরআকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁর ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে ছিকাহ রাবী।’’
.
[আল কাশিফ লিয যাহাবী, খণ্ড ১; পৃষ্ঠা ৩৩৮; বর্ণনা ১১২৪]
.
# আসিম ইবনে দমরাহ (রহ.)। তিনি একজন বিখ্যাত তাবেয়ী ছিলেন। হযরত আলী (রা.) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিকাহ সবাই এ বিষয়ে ঐক্যমত্য। তবুও দুই একজন ইমামের বক্তব্য পেশ করছি,
.
ইমাম বুখারী উস্তাদ, আলী ইবনুল মাদিনী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﺠﻠﻲ ، ﻭﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﻲ : ﺛﻘﺔ
.
অর্থাৎ ‘‘ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ও আলী ইবনুল মাদিনী বলেন, তিনি ছিকাহ ছিলেন।’’
.
ইমাম নাসায়ী (রহ.) বলেন,
.
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ : ﻟﻴﺲ ﺑﻪ ﺑﺄﺱ
.
অর্থাৎ ‘‘তাঁর ব্যাপারে অসুবিধার কিছুই নেই। লাইসা বিহি বা’স।’’
.
এছাড়াও হরব বিন ইসমাঈল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল থেকে বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমাদ তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সবাই তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
.
[দেখতে পারেন, তাহযীবুল কামাল লিলমিযযী। মাকতাবা ইসলামী ওয়েব ডট নেট, তাহযীবুল কামাকের হাওয়ালা দিয়ে প্রকাশ করেছে]
.
এই হলো রাবীদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আর আবুল হাসান খিলায়ী’র সনদ তো সকলের নিকট সর্বসম্মতি ক্রমে নির্ভরযোগ্য।
.
তাই যারা বলেন যে, কাবলাল জুমুআ’র চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের পক্ষে কোনো মারফূ হাদীস নাই, তাদের উচিত আরো তাহকীক করা। অযথা চিল্লানো উচিত না।
.
আর যারা এতদিন এই কাবলাল জুমুআ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন, ইনশাআল্লাহ সংশয় আর থাকলো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন