ককেশাস হলো রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ককেশাস পার্বত্য অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে এক সময় মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলটি আজারবাইজান, চেচনিয়া, দাগেস্তান, ইঙ্গুশেতিয়া, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, ওসেতিয়া, সারকাসিয়া, বালকারিয়া প্রভৃতি দেশে বিভক্ত। সপ্তম শতকেই আরব বিজয় অভিযানের মাধ্যমে এ অঞ্চল মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এখানকার বেশিরভাগ জনগণও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। খোলাফায়ে রাশেদিনের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের (রা.) আমলে সেনাপতি আবদুর রহমান বিন রবিয়ার নেতৃত্বে আরব সৈন্যরা কাস্পিয়ান সাগর পার হয়ে উপকূলীয় দেশ দাগেস্তানে গিয়ে পৌঁছে এবং দারবেন্ত শহর জয় করে। এভাবে এখানে প্রথম ইসলামের আলো পৌঁছে যায়। তারপর দাগেস্তানের লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। অনেক সাহাবি (রা.) তখন পূর্ব ককেশাসে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তাদের প্রচারে গোটা দাগেস্তান অঞ্চল ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। দাগেস্তানে অনেক সাহাবির কবর রয়েছে। পরবর্তীকালে উমাইয়া শাসনামলের শেষ দিকে ককেশাসের বেশিরভাগ এলাকা মুসলমানের শাসনভুক্ত হয়। তারপর আব্বাসীয় এবং সেলজুক তুর্কিদের শাসনামলে জর্জিয়া ও আর্মেনিয়ার কিছু অংশ ছাড়া পুরো ককেশাস ইসলামের বিজয় পতাকাতলে সমবেত হয়। এ এলাকায় ইসলামী শাসনের অবসান হয় মোঙ্গল-তুর্কি মুসলিম সাম্রাজ্য আলতুন উর্দা বা গোল্ডেন হোর্ডের পতনের মাধ্যমে। আলতুন উর্দার সর্বশেষ খান রাজ্য ক্রিমিয়ার পতন ঘটে রুশ সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের মুখে। এর পর রাশিয়ার জারের সেনাবাহিনী একের পর এক ককেশাসের মুসলিম দেশগুলো দখল করতে থাকে। চালানো হয় গণহত্যা আর যুদ্ধাপরাধ। মুসলামানদের জোর করে খ্রিস্টান বানানো হয়। মসজিদ-মাদ্রাসা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। ককেশাসের ওপর ক্রমেই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসতে থাকে রুশ আধিপত্য। মুসলমানদের সর্বশেষ রাজনৈতিক শক্তি ওসমানী তুর্কি সাম্রাজ্যও ক্রমে রুশ আগ্রাসনের মুখে একের পর এক নিজেদের এলাকা হারাতে থাকে।
রুশ আগ্রাসনকে প্রতিহত করে ককেশাসের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানদের একতাবদ্ধ করে যিনি সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ বা জেহাদের ডাক দিয়েছিলেন তার নাম শেখ মনসুর উসুরমা। তিনি চেচনিয়ার আলদাইয়ের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। শেখ মনসুর মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিখে জ্ঞান অর্জন করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি নকশবন্দি তরিকার অনুসারী একজন আলেম থেকে ক্রমে এলাকার জনপ্রিয় একজন পীর হিসেবে আবির্ভূত হন। ককেশাসে ইমাম মনসুর হিসেবে সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। মাটির ঘরে বাস করতেন। কয়েকটি ঘোড়া আর গরু ছাড়া তার কেনো সম্পদ ছিল না। নিজের সব সম্পদ তিনি জেহাদের জন্য খরচ করেন। ইমাম মনসুর দেখতে পেলেন রাশিয়ার জুলুমশাহী ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে গোটা ককেশাসের মুসলিম আবাসভূমি। তুর্কি খেলাফত তাদের প্রতিহত করতে পারছে না। এ সংকট মুহূর্তে ককেশাসকে বাঁচাতে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখলেন না তিনি। ককেশাসের প্রায় ৩০টি জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই মুসলমান। নিজেরা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষায় বিভক্ত হলেও ইসলাম তাদের প্রধান সেতুবন্ধন। সবাই মুসলিম। শেখ মনসুর এসব মুসলমানকে একতাবদ্ধ হয়ে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ করার ডাক দিলেন। এই জেহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তার হাজার হাজার মুরিদের নেতৃত্বে স্থানীয় চেচেন, ইঙ্গুশ, সার্কাসিয়ান, আভার, নোগাই, বালকার, কারাচাই প্রভূতি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শক্তিশালী এক মোজাহিদ বাহিনী গড়ে ওঠে। ইমাম মনসুর নিজেও একজন দুঃসাহসী বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি সুসংগঠিত মোজাহিদ বাহিনী নিয়ে রাশিয়ার জারিনা ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের বিশাল সেনাবহিনীর মুখোমুখি হন। মোজাহিদ বাহিনীর চেয়ে দশগুণ বেশি ছিল রুশ সেনাবাহিনী। ১৭৮৫ সালে ঐতিহাসিক সুনজা নদীর তীরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দু’পক্ষে প্রচাহিদ বাহিনীর বীর বিক্রমের মুখে জারিনার বিশাল রুশ বাহিনীর ব্যুহ ভেঙে পড়ে। অসংখ্য সৈনিকের মৃতদেহ পেছনে ফেলে রুশ বাহিনী পালিয়ে যায়। মোজাহিদরা বিজয় অর্জন করার পর ইমাম মনসুরের নেতৃত্বে চেচনিয়া, দাগেস্তান, ইঙ্গুশেতিয়া ও উত্তর ককেশাসের আরো কয়েকটি এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ককেশাসের প্রথম ইমাম শাসিত রাষ্ট্র। কিন্তু রুশ আগ্রাসী শক্তি ছিল নাছোড়বান্দার মতো। তারা আরো বেশি শক্তি নিয়ে হামলা অব্যাহত রাখে। ইমাম মনসুরও বিভিন্ন সীমান্তে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যান। সর্বশেষ ১৭৯১ সালে কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী এক এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে ইমাম মনসুর তুর্কিদের আনাপা দুর্গে আবস্থান নেন।
জারিনার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন এ দুর্গ অবরোধ করে রাখে। অবশেষে দুর্গের পতন হলে ইমাম মনসুরকে বন্দি করা হয়। বন্দি হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তলোয়ার হাতে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। কিন্তু অসংখ্য রুশ সৈন্যের আক্রমণের মুখে টিকতে পারেননি। তিনি যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জারিনার নির্দেশ ছিল তাকে যে কোনোভাবে জীবিত বন্দি করতে হবে। রুশ সেনারা অনেক কৌশল খাটিয়ে তাকে ক্ষত-বিক্ষত শরীরে বন্দি করতে সক্ষম হয়। তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় জারিনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু মর্দে মোমিন ইমাম মনসুর মাথানত করেননি। তিনি জালিমের কাছে মাথানত করার চেয়ে কারাগারে বন্দি থাকাকেই শ্রেয় মনে করলেন। ইমাম মনসুরকে বন্দি করে সেন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার দুর্ধর্ষ শ্লুসেলবার্গ কারাগারে তাকে বন্দি করা হয়। তাকে কারাগারেও কয়েকবার বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় জারিনার বশ্যতা স্বীকার করাতে। কিন্তু চেচেন বীর মোজাহিদ ইমাম মনসুর মাথানত করেননি। অবশেষে ১৭৯৪ সালে কারাগারেই ককেশাসের এই বীর মোজাহিদের জীবনাবসান ঘটে।
রুশ আগ্রাসনকে প্রতিহত করে ককেশাসের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানদের একতাবদ্ধ করে যিনি সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ বা জেহাদের ডাক দিয়েছিলেন তার নাম শেখ মনসুর উসুরমা। তিনি চেচনিয়ার আলদাইয়ের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। শেখ মনসুর মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিখে জ্ঞান অর্জন করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি নকশবন্দি তরিকার অনুসারী একজন আলেম থেকে ক্রমে এলাকার জনপ্রিয় একজন পীর হিসেবে আবির্ভূত হন। ককেশাসে ইমাম মনসুর হিসেবে সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। মাটির ঘরে বাস করতেন। কয়েকটি ঘোড়া আর গরু ছাড়া তার কেনো সম্পদ ছিল না। নিজের সব সম্পদ তিনি জেহাদের জন্য খরচ করেন। ইমাম মনসুর দেখতে পেলেন রাশিয়ার জুলুমশাহী ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে গোটা ককেশাসের মুসলিম আবাসভূমি। তুর্কি খেলাফত তাদের প্রতিহত করতে পারছে না। এ সংকট মুহূর্তে ককেশাসকে বাঁচাতে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখলেন না তিনি। ককেশাসের প্রায় ৩০টি জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই মুসলমান। নিজেরা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষায় বিভক্ত হলেও ইসলাম তাদের প্রধান সেতুবন্ধন। সবাই মুসলিম। শেখ মনসুর এসব মুসলমানকে একতাবদ্ধ হয়ে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ করার ডাক দিলেন। এই জেহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তার হাজার হাজার মুরিদের নেতৃত্বে স্থানীয় চেচেন, ইঙ্গুশ, সার্কাসিয়ান, আভার, নোগাই, বালকার, কারাচাই প্রভূতি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শক্তিশালী এক মোজাহিদ বাহিনী গড়ে ওঠে। ইমাম মনসুর নিজেও একজন দুঃসাহসী বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি সুসংগঠিত মোজাহিদ বাহিনী নিয়ে রাশিয়ার জারিনা ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের বিশাল সেনাবহিনীর মুখোমুখি হন। মোজাহিদ বাহিনীর চেয়ে দশগুণ বেশি ছিল রুশ সেনাবাহিনী। ১৭৮৫ সালে ঐতিহাসিক সুনজা নদীর তীরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দু’পক্ষে প্রচাহিদ বাহিনীর বীর বিক্রমের মুখে জারিনার বিশাল রুশ বাহিনীর ব্যুহ ভেঙে পড়ে। অসংখ্য সৈনিকের মৃতদেহ পেছনে ফেলে রুশ বাহিনী পালিয়ে যায়। মোজাহিদরা বিজয় অর্জন করার পর ইমাম মনসুরের নেতৃত্বে চেচনিয়া, দাগেস্তান, ইঙ্গুশেতিয়া ও উত্তর ককেশাসের আরো কয়েকটি এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ককেশাসের প্রথম ইমাম শাসিত রাষ্ট্র। কিন্তু রুশ আগ্রাসী শক্তি ছিল নাছোড়বান্দার মতো। তারা আরো বেশি শক্তি নিয়ে হামলা অব্যাহত রাখে। ইমাম মনসুরও বিভিন্ন সীমান্তে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যান। সর্বশেষ ১৭৯১ সালে কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী এক এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে ইমাম মনসুর তুর্কিদের আনাপা দুর্গে আবস্থান নেন।
জারিনার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন এ দুর্গ অবরোধ করে রাখে। অবশেষে দুর্গের পতন হলে ইমাম মনসুরকে বন্দি করা হয়। বন্দি হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তলোয়ার হাতে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। কিন্তু অসংখ্য রুশ সৈন্যের আক্রমণের মুখে টিকতে পারেননি। তিনি যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জারিনার নির্দেশ ছিল তাকে যে কোনোভাবে জীবিত বন্দি করতে হবে। রুশ সেনারা অনেক কৌশল খাটিয়ে তাকে ক্ষত-বিক্ষত শরীরে বন্দি করতে সক্ষম হয়। তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় জারিনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু মর্দে মোমিন ইমাম মনসুর মাথানত করেননি। তিনি জালিমের কাছে মাথানত করার চেয়ে কারাগারে বন্দি থাকাকেই শ্রেয় মনে করলেন। ইমাম মনসুরকে বন্দি করে সেন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার দুর্ধর্ষ শ্লুসেলবার্গ কারাগারে তাকে বন্দি করা হয়। তাকে কারাগারেও কয়েকবার বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় জারিনার বশ্যতা স্বীকার করাতে। কিন্তু চেচেন বীর মোজাহিদ ইমাম মনসুর মাথানত করেননি। অবশেষে ১৭৯৪ সালে কারাগারেই ককেশাসের এই বীর মোজাহিদের জীবনাবসান ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন