সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০১৫

হযরত উমর রা. পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন আবুজর গিফারি রা. এর কাছে

হযরত উমর রা. পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন আবুজর গিফারি রা. এর কাছে। পত্রে লিখা আজ শুক্রবার বাদ জুমা আবুজর গিফারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। আবুজর যেন জীবনের শেষ জুমার প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে নববীতে হাজির হয়।
খবর শোনে সারা মদীনায় কান্নার রোল পরে গেছে। একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবুজর গিফারী আজ বিনা দোষে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে। জুমার পর মদিনার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই মসজিদে নববীর সামনে হাজির। সবার চোখে পানি। খলিফা উমর রা. এর চোখেও পানি। জল্লাদ কেদে কেটে অস্থির। জীবনে কতজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না। আবুজরের মত জলিলে কদর সাহাবী সম্পূর্ন বিনা দোষে আজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে, এটা মদীনার কেউ মেনে নিতে পারছে না। এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদানকারী খলিফা উমর রা. ও অনবরত কাদছে। তবু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারো পরিবর্তনের হাত নেই। আবু জর রা. মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। আবু জর রা. হাসতেছেন তারাতারি নবী সা. এর সাক্ষাত পাবে সে আশায়। জল্লাদ ধীর পায়ে আবু জর রা. এর দিকে এগুচ্ছেন আর কাদছেন। আজ যেন জল্লাদের পা চলে না। পায়ে যেন কেউ পাথর বেধে রেখেছে।
ঘটনার বিবরনিতে জানা যায়, জনৈক্য মুসলিম নওজোয়ান নবী সা. এর রওজা জিয়ারতের জন্য মদীনাতে আসেন। তার বাড়ি মদীনা থেকে সাড়ে তিনশত মাইল দূরে। মদীনার কাছাকাছি এসে একটি খেজুর বাগান দেখতে পেয়ে নওজোয়ান বিশ্রামের জন্য খেজুর গাছের ছায়ায় বসলেন। ক্লান্ত শরীরে অল্পতেই ঘুমিয়ে গেলেন। এদিকে নওজোয়ানের ঘোড়া খেজুর বাগানের যে অংশে চারা বপন করা হয়েছে ঐ অংশে হেটে খেজুর চারা নষ্ট করতে লাগলো। বাগানের বৃদ্ধ মালিক ঘোড়া তারানোর জন্য ঘোরার দিকে একটি ডিল ছুরলেন। পাথরের ডিলটি দুর্ভাগ্যক্রমে ঘোড়ার মাথায় লেগে মাথা ফেটে ঘোড়াটি সাথে সাথে মারা গেলো। কিছুক্ষন পরে নওজোয়ান ঘুম থেকে উঠে ঘোড়া খুজতে লাগলো। একটু সামনে গিয়ে দেখে ঘোড়া মৃত, পাশেই বৃদ্ধ দাড়ানো। কে ঘোড়া মেরেছে বৃদ্ধকে জিজ্ঞাস করতেই বৃদ্ধ স্বীকার করলো তিনিই মেরেছে।
█████████████████████████
মাঝখানে ছোট্ট একটি অনুরুধ করি, নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে আমার পথপদর্শক, বড় আপু, সহকর্মী China Khatun আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। সবাই একে এড করে নিন। উল্লেখ্য চায়না আপু সাচনিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এডমিন ও উনার নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম তসলিমা নাসরিনের আইডি ডিজেবল করা হয়। বর্তমানে উনিনাচনিক - [নাস্তিক ও চটি নির্মূল কমিশন] গ্রুপে কর্মরত আছেন।
█████████████████████████
নওজোয়ানের পথের সম্বল একমাত্র ঘোড়াকে মৃত দেখে নওজোয়ান হিতাহিত জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। নওজোয়ান বৃদ্ধার হাতে থাকা লাঠি দিয়েই বৃদ্ধাকে বাড়ি দিতেই বৃদ্ধা লুটিয়ে পরেন, কিছুক্ষন পর বৃদ্ধাও মারা গেলো।
কিন্তু আশ্চার্যের বিষয় হলো, বৃদ্ধকে হত্যা করেও নওজোয়ান পালালো না, লাশের পাশেই দাড়িয়ে রইলেন। সন্ধার দিকে বৃদ্ধের দুই সন্তান বৃদ্ধের খোজে বাগানে আসলেন।
পিতাকে মৃত দেখে সন্তান দুটি নওজোয়ানকে জিজ্ঞাস করলো কে মেরেছে? নওজোয়ান বললো সে নিজেই মেরেছে। সন্তান দুটি বললো, তারা বিশ্বাস করে না। সে যদি মেরেই থাকে তবে দাড়িয়ে রইলো কেন? সুযোগ পেয়েও পালালো না কেন?
যারা ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম বলে, তাদের জবাবের জন্য এ ঘটনা পরম দৃষ্টান্ত। নওজোয়ান বললো, মাথা ঠিক ছিলোনা, শয়তানের প্ররোচনায় হত্যা করে ফেলেছি। আজ পালিয়ে গিয়ে কাল কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সামনে খুনি হিসেবে দাড়াতে চাই না। দুনিয়াতেই হত্যার বিচার হয়ে যাক, আল্লাহ বিচার করলে তা সইতে পারবো না। এ কথা বলে নওজোয়ান দুই ভাইকে বললো, তারাতারি শরিয়াহ আদালতে আমাকে নিয়ে যান। আমি দুনিয়াকেই হত্যার শাস্তি পেতে চাই। কেয়ামতে আল্লাহর সামনে খুনি হিসেবে দাড়াতে চাই না।
দুই ভাই পিতার হত্যার বিচার নিয়ে খলিফা হযরত উমর রা. এর দরবারে হাজির হলো। উমর রা. সব শোনে বললো ঘোড়া হত্যার বদলে একটা ঘোড়া নিলেই হতো, কিন্তু তুমি বৃদ্ধকে হত্যা করেছো। হত্যার বদলে হত্যা, এখন তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। তোমার কোন শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।
নওজোয়ান বললো, আমি ব্যবসা করি। একবার ব্যবসার জন্য গিয়ে এক ইয়াহুদীর কাছে কিছু ঋন নেই। তিনি আমাকে চিনেন না, আমার বাড়িও তিনি চিনেন না। আমি মুসলিম বিধায় বিশ্বাস করে তিনি ঋন দিয়েছিলো। এখন ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে তিনি সারা জীবন মুসলিমদের গালি দিবে, মুসলিমদের অবিশ্বাস করবে।
আমাকে যদি কিছুদিন সময় দিতেন তবে আমি বাড়ি গিয়ে ইয়াহুদির ঋন পরিশোধ করে আসতাম।
খলিফা উমর রা. বললেন তোমাকে একা ছেড়ে দিতে পারি না কারন তুমি ফিরে নাও আসতে পারো। পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারো।
তোমার সাথে ২/৩ জন পাঠিয়ে দিবো সে ভরষাও পাই না। কারন ভিন দেশে এসে তুমি একজনকে হত্যা করেছো। ২/৩জন তোমার সাথে পাঠালে তোমার পরিবারের সবাই মিলে এদের হত্যা করতে পারো। আর তোমার সাথে সেনা বাহিনির এক কাফেলা পাঠাবো তাও এ মুহুর্তে সম্ভব না। কারন সবাই যোদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যাস্ত। এখন যদি তোমার বদলি কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো তবে তোমাকে মুক্তি দিতে পারি।
নওজোয়ান বললো, এই ভিন দেশে কে আমার জিম্মাদার হবে? আজ যদি এখানে আমার বাবা থাকতো তবে আমার বাবা জিম্মাদার হতো। যদি আমার মা থাকতো তবে মা জিম্মাদার হতো। যদি আমার কোন ভাই এখানে থাকতো, তবে ভাই জিম্মাদার হতো। কিন্তু এখানে আমার কেউ নেই। কে হবে আমার জিম্মাদার?
একথা শুনে আবু জর রা. বললেন আমি হবো জিম্মাদার। নওজোয়ান আফসোস করে বলতেছে, তার ভাই থাকলে আজ তার জিম্মাদার হতো, হযরত মোহাম্মদ সা. বলেছেন প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। কাজেই আমি নওজোয়ানের ভাই হিসেবে তাঁর জিম্মাদার হয়ে গেলাম।
খলিফা বললেন আগামি শুক্রবার জুম্মা পর্যন্ত নওজোয়ানকে মুক্তি দেওয়া হলো। জুম্মার আগে নওজোয়ান মদিনায় না আসলে নওজোয়ানের বদলে আবু জরকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।
মুক্তি পেয়ে নওজোয়ান ছুটলো ৩৫০ মাইল দূরে তার বাড়ির দিকে। আবুজর রা. চলে গেলো তাঁর বাড়িতে।
এদিকে জুম্মাবার এসে গেছে, নওজোয়ানের কোন খবর নেই।
হযরত উমর রা. পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন আবুজর গিফারি রা. এর কাছে। পত্রে লিখা আজ শুক্রবার বাদ জুমা আবুজর গিফারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। আবুজর যেন জীবনের শেষ জুমার প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে নববীতে হাজির হয়।
খবর শোনে সারা মদীনায় কান্নার রোল পরে গেছে। একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবুজর গিফারী আজ বিনা দোষে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে। জুমার পর মদিনার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই মসজিদে নববীর সামনে হাজির। সবার চোখে পানি। খলিফা উমর রা. এর চোখেও পানি। জল্লাদ কেদে কেটে অস্থির। জীবনে কতজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না। আবুজরের মত জলিলে কদর সাহাবী সম্পূর্ন বিনা দোষে আজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে, এটা মদীনার কেউ মেনে নিতে পারছে না। এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদানকারী খলিফা উমর রা. ও অনবরত কাদছে। তবু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারো পরিবর্তনের হাত নেই। আবু জর রা. মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। আবু জর রা. হাসতেছেন তারাতারি নবী সা. এর সাক্ষাত পাবে সে আশায়। জল্লাদ ধীর পায়ে আবু জর রা. এর দিকে এগুচ্ছেন আর কাদছেন। আজ যেন জল্লাদের পা চলে না। পায়ে যেন কেউ পাথর বেধে রেখেছে।
এমন সময় এক সাহাবী জল্লাদকে বললো, হে জল্লাদ একটু থামো। মরুভুমির ধুলার ঝড় উঠিয়ে ঐ যেন কে আসতেছে। হতে পারে ঐটা নওজোয়ানের ঘোড়ার ধুলি। একটু দেখে নাও, তারপর আবু জরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করিও।
ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায় সত্যিই এটা ঐ নওজোয়ান। নওজোয়ান দ্রুত খলিফার সামনে এসে বললো, হুযুর বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি ঘোড়ার জ্বীন না ভেঙ্গে যেতো তবে সঠিক সময়েই আসতে পারতাম। জ্বীন ভেঙ্গে দেরী হয়ে গেছে।
বাড়িতে আমি একটুও দেরী করি নাই। বাড়ি পৌছে গচ্ছিত টাকা থেকে ইয়াহুদীর বাড়িতে গিয়ে ঋন পরিশোধ করি। তারপর বাড়ি এসে বাবা, মা এবং নববধুর কাছে সব খুলে বলে চীর বিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এখন আবু জর রা. ভাইকে ছেরে দেন, আমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে পবিত্র করেন। কেয়ামতে খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাড়াতে চাই না।
খলিফা বললেন, যে পবিত্র হবার জন্য সারে তিনশ মাইল দূর থেকে নববধুর মায়া ছেরে মৃত্যুদন্ড বরন করার জন্য আসতে পারে, তাকে পবিত্র করার জন্য মৃত্যুদন্ডের দরকার নেই। সে এমনিতেই পবিত্র মানুষ, জান্নাতি মেহমান। কিন্তু ইসলামি শাষন মোতাবেক মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতেই হবে।
জল্লাদ এবার নওজোয়ানের দিকে এগুচ্ছে, কিন্তু এবারও তার চোখে পানি।
জল্লাদ প্রায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে এমন সময় দুই যুবক খলিফাকে বলল, হে আমিরুল মু‘মেনিন, আমরা হলাম সেই যুবক আজ যাদের পিতার হত্যার বিচার করা হচ্ছে। আমরাই মামলা করেছিলাম। আজ আমরাই মামলা উঠিয়ে নিচ্ছি, এবং আবেদন জানাচ্ছি এ নওজোয়ানকে মুক্তি দিয়ে আমাদের ভাই বানিয়ে দেন। যে লোক সারে ৩শত মাইল দূর থেকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়ে পবিত্র হবার জন্য আসতে পারে, সে ইচ্ছা করে খুন করতে পারে না। একে মুক্তি দিয়ে দিন, ভাই বানিয়ে এ নওজোয়ানকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই।
অতঃপর খলিফা উমর রা. সেই নওজোয়ানকে মুক্তি দিয়ে দিলো।
লেখিকা-
মাইমুনা আক্তার,
সহকারী শিক্ষিকা,
পস্তাইল সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন