বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।

প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। যেটা ইহ্সান সেটা তাকে অবশ্যই করতে হবে। যতটুকু তার দায়িত্ব রয়েছে ঠিক ততটুকু সে করবে। যদি কেউ তার পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার না করে; তার জন্য কঠিন শাস্তি, কঠিন পরিণতিও রয়েছে।
যেটা হাদীস শরীফে রয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “আবু বাকরাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন, উনার থেকে দু’টা হাদীস রেওয়ায়েত রয়েছে, একটা বায়হাক্বী শরীফে, একটা মুসতাদরেকে হাকেমের মধ্যে। দু’টার মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, ‘আল্লাহ্ পাক ঐ সমস্ত সন্তানদেরকে অর্থাৎ যারা পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করেনা, তাদের সহিত অসদাচারণ করার কারণে, পিতা-মাতার সহিত খারাপ ব্যবহার করার কারণে বা পিতা-মাতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কারণে অথবা খাওয়া-পরার জরুরত থাকলে, খাওয়া-পরা না দেয়ার কারণে তাদেরকে যে শাস্তি দিবেন সে শাস্তিটা কিছু তার জমিনে হবে অর্থাৎ কিছু তার দুনিয়াতে বা হায়াতে হবে আর কিছুটা তার পরকালে হবে।
যেটা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
كل الذنوب لا يؤخر الله عزو جل منها ماشاء الى يوم القيامة الا حقوق الوالدين.
প্রত্যেক গুণাহ্ যা সন্তান বা মানুষ করে থাকে, সে গুণাহ-এর শাস্তি দানে আল্লাহ্ পাক দেরী করবেননা। منها ماشاء অর্থাৎ সে গুণাহ্ থেকে যেটা ইচ্ছা আল্লাহ্ পাক সেটা ক্ষমা করবেন বা ছেড়ে দিবেন আর যেটা আল্লাহ্ পাক বিশেষ করে, حقوق الوالدين
পিতা-মাতার হক্ব সেটার বদলা দানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাকে সুযোগ দান করবেননা। অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত দেরী হবে তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য, সে রকম নয়।
حقوق الوالدين فان الله يعجله لصاحبه فى الحيوة قبل الممات.
কিন্তু পিতা-মাতার সহিত যে সে সদ্ব্যবহার করে নাই, অসদ্ব্যবহার করেছে, তার জন্য যে শাস্তিটা রয়েছে তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত দেরী করা হবে তা নয়। বরং দেখা যায় তার হায়াতে, তার জিন্দেগীতে বা তার মৃত্যুর সাথে সাথে সেটা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, হযরত আওয়াম বিন হাওশাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আমি এক এলাকাতে সফর করতে গিয়েছিলাম। সফর করতে করতে আমি এক এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে অবস্থান করলাম। রাত অতিবাহিত হলো, সকাল হলো, দিন হলো, আছর হলো। হঠাৎ আছরের সময় সে এলাকাতে আমার জানা মতে, আমার দেখা মতে কোন গাঁধা বা গর্ধব ছিলনা। কোন গাঁধা ছিল না সে এলাকায়। কিন্তু হঠাৎ আছরের সময় গাঁধার আওয়াজ শুনলাম। একে একে তিনটা আওয়াজ শুনে আমি আশ্চর্য হলাম। কি ব্যাপার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম? এখানে গাঁধা আসলো কোত্থেকে? তারা বললো যে, এখানে একটা ঘটনা রয়েছে, ঘটনা রয়েছে। কি ঘটনা রয়েছে- সেটা আপনাকে কালকে দেখাব, আছরের সময়। কালকে আছরের সময় আপনাকে সেটা দেখাব আমরা। সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। পরের দিন যখন আছর হলো, আমি বাইরে বসে রয়েছি। সামনে কবরস্থান, সামনে কবরস্থান, হঠাৎ আছর সময় যখন হলো, দেখা গেলো কবর, একটা কবর ফেটে একটা লোক দাঁড়িয়ে গেছে কবরের মধ্য থেকে। তার চেহারাটা হচ্ছে গাধার মত, শরীরটা মানুষের মতো। সেই লোক চিৎকার করে তিনটা গাধার আওয়াজ করলো। করে আবার অদৃশ্য হয়ে গেলো, কবরটা আবার বন্ধ হয়ে গেল। একটু পরে দেখলাম, একজন মহিলা আসলেন কোত্থেকে; এসে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। তখন লোকেরা আমাকে বললো, আপনি তো ঘটনা দেখলেন, কি ঘটেছে? সে বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, কি ঘটনা, কি হলো তার কিছুই আমি বুঝলাম না! এটা কি আল্লাহ্ পাক-এর কুদরত! কবর থেকে লোক বের হয়ে আসলো, ছুরত তার গাধার মতো অর্থাৎ চেহারা। চিৎকার করে সে গায়েব হয়ে গেল। মেয়ে লোকটা এসে কাঁদা-কাটা করতে শুরু করলো তার কি কারণ? লোকেরা বললো, মূলতঃ যে লোকটা কবর থেকে উঠে গাধার মতো চিৎকার করলো সেই ছেলে ছিল যেই মহিলা এসে কাদাঁ-কাটা করতেছে তার সন্তান, তার সন্তান ছিল। সে খুব বেশী শরাব পান করতো। তার মা তাকে নেক কাজের জন্য বলতো যে, ‘বাবা তুমি শরাব পান করো না। ভাল হয়ে যাও, সৎ মত সৎ পথে চলো।’ সেই ছেলেটা বলতো তার মাকে যে, ‘তুমি গাধীর মত চিৎকার কর না, তুমি গাধীর মতো চিৎকার করো না।’ সে বার বারই তার মাকে গাধী বলে উল্লেখ করতো। সেই ছেলেটা আছরের সময় মারা গিয়েছিল। যার কারণে তার মৃত্যুর পরদিন থেকে আমরা দেখতেছি, আসরের সময় সে কবর থেকে উঠে এই রকম গাধার মতো তিনটা চিৎকার করে। আর তার চেহারাটা গাধার মতো হয়ে গেছে এবং তার মা দেখে কাঁদে এরপর সে অদৃশ্য হয়ে যায়।
আর একটা হাদীস যেটা উনি বলেছেন,
كل الذنوب يغفر الله عزوجل
প্রত্যেক গুণাহ্ আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন যেটা আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা করেন কিন্তু পিতা-মাতার সহিত যে অসদাচারণ করা হয়েছে, পিতা-মাতার প্রতি যে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে, গালি-গালাজ করা হয়েছে, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে, পিতা-মাতাকে তাকলীফ দেয়া হয়েছে, সেটা কিন্তু আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করবেন না। অর্থাৎ তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে শাস্তি দিবেন। ঠিক তদ্রুপ মৃত্যুর পর থেকে তার আযাব-গজব শুরু হয়ে যাবে, যেমন এই লোকের সুরত হয়েছে, তার বিকৃত আকৃতি গাধার মত হয়েছে। সে তার মাকে গাধী বলার কারণে, আল্লাহ্ পাক তাকে গাধার সুরত করে দিয়েছেন। নাউজুবিল্লাহ ।
তাই প্রত্যেক সন্তানদের উচিত পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন