বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫

রমজানের শেষ মুহূর্তে

রমজানের শেষ দশক চলছে। এ দশকের নাম দেওয়া হয়েছে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি তথা নাজাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চান তার প্রিয় বান্দারা এ রমজানে নিজেদের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করুক। জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত লাভ করুক। এ জন্য তিনি রমজানে শয়তানকে বন্দী করে দিয়েছেন। জাহান্নামের দরোজা বন্ধ করে দিয়েছেন। উপরোন্ত গুনাহ মাফের জন্য দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার- হে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে আমাদের মুক্তি দাও।
রমজান চলে যাচ্ছে। রমজান বিদায়ের পথে। নিজেকে আত্মজিজ্ঞাসার আয়নার সামনে দাড় করানো উচিত আমাদের। পবিত্র মাহে রমজান যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে, তা কি অর্জন হয়েছে? তাকওয়ার শিক্ষা কি অর্জন হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে রমজান এখনো বাকী আছে। এর মধ্যে অবশ্যই সেই শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
রমজান এসেছে গুনাহ মাফের জন্য। নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তোমার কি গুনাহ মাফ হয়েছে? যদি মাফ না হয়ে থাকে, তাহলে রমজান এখনও বাকী আছে। সে সুযোগ এখনও বিদ্যমান। নিজেকে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজির করে জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে। রমজান পাওয়া সত্ত্বেও যদি গুনাহ মাফ না হয় তাহলে তো হতভাগা হয়ে যাব। হাদীসে তাই বলা হয়েছে। যেমন একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বয়ান করার জন্য উঠছিলেন। তিনি যখন প্রথম ধাপে পা দিলেন, তখন বললেন, আমীন! অনুরূপ দ্বিতীয় ধাপে পা রাখার সময়ও বললেন, আমীন! তৃতীয় ধাপেও বললেন, আমীন! এমনটা কখনও হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম বয়ান শেষে এর কারণ জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যখন প্রথম ধাপে পা রাখলাম তখন জিবরাইল আ. আমার কাছে এসে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে পবিত্র রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না। আমি বললাম, আমীন! অর্থাৎ আল্লাহ তাই করুন। দ্বিতীয় ধাপে পা রাখার সময় জিবরাইল আ. বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার উপর দরূদ পাঠাল না। আমি বললাম, আমীন! যখন তৃতীয় ধাপে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার মাতা-পিতা উভয়ে কিংবা একজন বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছল অথচ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না অর্থাৎ তাদের খুশী করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না। আমি বললাম, আমীন!
রমজানে কুরআন কতটুকু পড়া হয়েছে তা একটু ভেবে নেওয়া দরকার। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে তা পূরণ করা দরকার। দান-সদকা যা করার দরকার ছিল, তা করা হয়েছে কিনা সেটাও ভাবতে হবে। জাকাত-ফিতরা আদায় করা হয়েছে কিনা তা হিসাব করে দেখতে হবে।
মোট কথা আজ একটু পিছন ফিরে দেখা উচিত। যা করার দরকার ছিল, তা করা হয়েছে কিনা, কতটুকু ঘাটতি আছে এসব কিছু হিসাব-নিকাশ করা উচিত। নিজেকে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে তোলা উচিত শেষ মুহূর্তে এসে। যাতে করে রমজানের যে কয়েক দিন বাকী থাকে, সে সময়ে লক্ষ্য পূরনে যেন বেশ তৎপর হওয়া যায়। রমজান শেষ হওয়ার আগেই যেন কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা যায়, সেই মানসিকতা, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তৈরী করার জন্য একটু ভাবা উচিত।
আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের উদ্দেশ্য হাসিল করার তাওফীক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন