বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ফতোয়া

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ফতোয়া
“চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নেই”
সম্পূর্ণ ভুল এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী :
আল্লামা মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ
অসুস্থ ও অপারগ (মা‘যুর) ব্যক্তিদের ব্যাপারে কুরআনে সূরা বাকারার ২৮৬নং আয়াতে বলা হয়েছে-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ..
(البقرة:২৮৬)
“সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার আল্লাহ মানুষের উপর চাপিয়ে দেননি।”
ক্স সূরা নূরের আয়াত নং ৬১ তে বলা হয়েছে-
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَى حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ
...(النور: ৬১)
“অসুস্থ রোগীর জন্য অনেক বিষয় ছাড় দেয়া হয়েছে। তারা যেভাবে পারে সাধ্যমত আমল করতে পারে।”
ক্স বুখারী শরীফে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন-
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الصَّلَاةِ فَقَالَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.
(صحيح البخارى: ১/১৫০، رقم الحديث:১১০৬)
“যারা দাঁড়াতে পারেনা তারা বসে নামায আদায় করবে। মাটিতে পারলে মাটিতে বসবে, তা না হলে যেথায় পড়তে পারে সেথায় বসে নামায আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে পার্শ্বদেশের উপর (শুয়ে) নামায পড়বে।” (বুখারী-হা: ১১০৬)
ক্স ইবনে ইয়া‘লা রা. সূত্রে বর্ণিত-
قال :كان رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفر فأصابتنا السماء فكانت البلة من تحتنا والسماء من فوقنا وكان في مضيق فحضرت الصلاة فأمر رسول الله صلى الله عليه و سلم بلالا فأذن وأقام وتقدم رسول الله صلى الله عليه و سلم فصلى على راحلته والقوم على رواحلهم يومي إيماءً يجعل السجود أخفض من الركوع
(المعجم الكبير للطبرانى: رقم:৬৬৩)
রাসূল সা. নিজেই মুষলধার বৃষ্টির কারণে মাটিতে নেমে নামায পড়তে অক্ষম হওয়ায় আপন বাহনের উপর বসে নামায আদায় করেছেন। (ই’লাউস সুনান হাদীস নং১৯২৪)
ক্স ফতোয়ার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে শামী’তে বলা হয়েছে,
(مَنْ تَعَذَّرَ عَلَيْهِ الْقِيَامُ) .... (صَلَّى قَاعِدًا) ... (كَيْفَ شَاءَ) عَلَى الْمَذْهَبِ.
(رد المحتار: ২/৯৫)
মা’যুর (অপারগ), অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে অক্ষম হলে বসেই নামায পড়বে। যেভাবে ও যেখানে বসা সম্ভব সেখানে বসেই নামায পড়বে। (শামী-১/১০৩)
উপরোক্ত কুরআন-হাদীস ও ফতোয়ার আলোকে বিশ্বের মুফতিগণ চেয়ারে বসে নি¤েœ বর্ণিত সূরতে নামায আদায় করা বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
১) যেসব অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম বা দাড়ালে রোগ বৃদ্ধি পাওয়া বা রোগমুক্তি বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং যারা যমিনে বসে রুকু-সিজদা করতেও অক্ষম বা মারাত্মক কষ্টকর, তবে চেয়ারে বসে নামায পড়তে গেলে সমস্যা হয় না। এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া সর্ব সম্মতিক্রমে বৈধ। কারণ চেয়ারে বসাও শোয়া হিসাবে গণ্য। তাই সে শুয়ে নামায পড়বে না, বরং চেয়ারে বসেই নামায পড়বে। যেমন, বুখারী শরীফ ও ফতোয়ায়ে শামীতে উদ্বৃত হয়েছে।
২) যেসব মা‘যুর মাটিতে বসতে কোনো সমস্যা নেই, তবে মাটিতে বসে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে সিজদা করতে অক্ষম বা কষ্টকর, তার জন্য মাটিতে বসে ইশারায় সিজদা করা সুন্নাত বা অতি উত্তম হলেও এমতাবস্থায় চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করে নামায আদায় করলেও নামায সহীহ হবে। যদিও তা সুন্নাত পরিপন্থি বা অনুত্তম।
৩) যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম, কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাটিতে বা ফ্লোরে বসতে সক্ষম নয় বা বসতে সক্ষম হলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটিতে সিজদা করতে অক্ষম বা অপারগ কিংবা কঠিন কষ্টকর সে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে রুকু-সিজদা চেয়ারে বসে ইশারায় আদায় করলেও নামায সহীহ হবে। বিশেষ করে মেঝেতে বসতে অপারগ হলে। এই তিন রকম ওজর বা অসুস্থতার কারণে চেয়ারে নামায পড়া বৈধ।
তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মত দায়িত্বশীল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে যে ফতোয়া প্রকাশ হয়েছে তা কুরআন হাদীস ও ফতোয়া শাস্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাই অবিলম্বে মুফতি আব্দুল্লাহর অপসারণ দাবি করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন