বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

মাযহাব সম্পর্কে ডা. জাকির নায়েকের ভুল ফতোয়া

ডা. সাহেব অন্যত্র বলেন: “এসব কারণে মুসলমানদের একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুকরণ করা উচিত। পরস্পরে বিভিন্ন নামে (হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী) বিভক্তি সৃষ্টি করা উচিত নয়। আজকাল মুসলমানদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বলেন, আমি হানাফী বা শাফেয়ী, দেওবন্দী বা বেরলভী। এ সমস্ত লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করা দরকার রাসূল সা. কি হানাফী ছিলেন, না শাফেয়ী? সমস্ত নবী রাসূলগণ ছিলেন একমাত্র মুসলমান। সুতরাং আমরাও নিজেদেরকে মুসলমানই পরিচয় দিতে হবে। (হাকীকতে জাকির নায়েক-১৯৬-১৯৭)
উক্ত ফতোয়ার সঠিক জবাব
জাকির নায়েকের এ লেকচারে অনেক মুসলমান আজ বিভ্রান্তের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডা. সাহেব একটি ভিত্তিহীন অপবাদ তুলে ধরেছেন মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি বিধর্মীদের মোকাবেলায় নিজের পরিচয় তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করেন, তখন নিজকে মুসলমান বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে এবং দেয়াই উচিত। সে ক্ষেত্রে কখনও কেউ হানাফী, শাফেয়ী নামে পরিচয় দেয় না। যদি জাকির নায়েক এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে উক্তিটি করে থাকেন, তাহলে তার বক্তব্য সঠিক। কিন্তু এমন ধারণা যে তার ছিল না তা অবাস্তব ও অতি স্পষ্ট।
অনরূপ কোনো মুসলমান যদি বিদআতীদের মোকাবেলায় নিজের পরিচয় দিতে চায়, তখন নিজকে আহলে সুন্নাত নামেই পরিচয় দিয়ে থাকে। আর যদি কখনো শাফেয়ী বা হাম্বলীদের সামনে নিজের পরিচয় দিতে হয়, একমাত্র তখনই নিজকে হানাফী নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। যেমন, ইন্ডিয়ানের মোকবেলায় বাংলাদেশী। আবার সিলেটের মোকাবেলায় ফেনবী।
উল্লেখ্য, যখন কেউ নিজেকে ফেনবী বলে বা সিলেটী কিংবা ঢাকাবী বলে, তখন যেভাবে বাংলাদেশী হওয়াকে অস্বীকার করে বলার উপায় থাকে না। তদ্রুপ যখন কেউ হানাফী বা সুন্নী বলে, তখন সে মুসলমান হওয়াকে অস্বীকার করে বলার উপায় নেই।
সারকথা: আমরা খ্রিষ্টান ইহুদিদের মোকাবেলায় মুসলমান। বিদআতীর মোকাবেলায় সুন্নী। শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকীদেরর মোকাবেলায় হানাফী। একই সাথে আমরা হানাফীও সুন্নীও এবং মুসলিমও। এ বাস্তবতাকে ডা. সাহেব কিভাবে অস্বীকার করে মুসলিম উম্মাহর উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপ করলেন? কি তার উদ্দেশ্য? বিশ্ব মুসলিমকে কেন যে এভাবে বিভ্রান্ত করছেন? আজ এটাই জাতির জিজ্ঞাসা।
তাছাড়া ডা. সাহেব রাসূল সা. এর ব্যাপারে এ মন্তব্যও করেছেন যে, আমাদের নবী ও অন্যান্য নবীগণ একমাত্র মুসলিম ছিলেন। ডা. সাহেব “একমাত্র” বলে তিনি আমাদের নবীকে খাটো করলেন। কেননা, যদি বলা হয় বিশ্বনবী একমাত্র মুসলিমই ছিলেন, তাহলে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে যে, তাহলে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কে ছিলেন? রাসূলের বহু উপাধী রয়েছে যা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এতগুলো উপাধী থাকা সত্ত্বেও রাসূল সা. এর ব্যাপারে তিনি শুধু মুসলিম ছিলেন বলা কি রাসূলের শান-মান পরিপন্থি বা খাটো করা হলো না? কোনো মুসলমানের পক্ষে এভাবে উক্তি করা কি সম্ভব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন