বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশ

কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
আজ আন্তর্জাতিক হিজাব সংহতি দিবস। এই দিবসের গোড়াপত্তনের মূল লক্ষ্য হলো মুসলিম নারীদের স্বাধীনভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে উৎসাহ প্রদান এবং সাহস জোগানো।
'দ্য মুসলিম ওমেনস সোসাইটি (গডঝ)' এবং 'মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন (গঅই)' নামের সংগঠন দুটি 'অ্যাসেমবি্ল ফর দ্য প্রটেকশন অব হিজাব' নামের একটি ইভেন্টের আয়োজন করে ২০০৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। এই ইভেন্টটি পরিচালনা করেন আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি এবং তিনি ৪ সেপ্টেম্বর এই দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সে থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আসলে হিজাব একজন মুসলিম নারীর ধর্মীয় অধিকার।
আমরা জানি, ইসলাম নারীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মুক্তি দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। শিশুকালে নারী দুগ্ধপানের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ তত্ত্বাবধান ও উত্তম লালন-পালনের দাবিদার। এ বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান প্রদান করার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে, সে যদি তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ করে, তাদেরকে সঠিকভাবে লালন-পালন করে, তবে তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য পর্দাস্বরূপ হয়ে যাবে।'-সহিহ বোখারি
নারী প্রাপ্তবয়স্ক হলে পরিবারে সর্বাধিক সম্মানিত। যার সম্মান ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষার জন্য পুরুষ তার সর্বাধিক প্রিয় বস্তুর প্রাণও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। পরপুরুষের কালো হাত অগ্রসর হলে, অপ্রিয় কণ্ঠ তাকে ত্যক্ত করলে ও লোভনীয় চোরাদৃষ্টি তার প্রতি নিক্ষিপ্ত হলেই সে তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয় এবং তার ইজ্জতের সংরক্ষণ করতে নিজের জানকে বাজি রাখে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হবে, সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।' তিরমিজি
শুধু তাই নয়, নারী বিবাহিত হলে আল্লাহর বাণীর দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে হয়। স্বামীগৃহে সে হয় সর্বাধিক নিকটতম সঙ্গী, সম্মানিত প্রতিবেশী। স্বামীর ওপর আবশ্যক হয় তাকে সম্মান করা, তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। ভরণপোষণসহ তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকা এবং সে ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি না করা।
নারী মাতা হলে, আল্লাহর হক আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব হয়ে যায়। আল্লাহর সঙ্গে শিরক যেমন নিষিদ্ধ, তেমনই মায়ের নাফরমানি ও তার সঙ্গে অসদাচরণও নিষিদ্ধ। জনৈক ব্যক্তি রাসূলকে (সা.) প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল, মানুষের মধ্যে কে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকার রাখে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।' সহিহ্ বোখারি
নারী বোন হলে, ইসলাম তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, তাকে সম্মান ও তার সম্ভ্রম রক্ষা করতে আদেশ করেছে। নারী খালা হলে, খেদমত ও সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে মায়ের স্থানে তার মতোই মর্যাদাবান। নারী বৃদ্ধ হলে বা দাদি-নানি হলে পরিবারে তিনি হন অত্যধিক সম্মানিতা ও সর্বশ্রদ্ধেয়। সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনি ও নিকটাত্মীয় সবাই তার প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকে। তার মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এক কথায় জীবনের পরতে পরতে ইসলাম নারীকে পূর্ণ অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে ভূষিত করেছে। ধাপে ধাপে পুরুষদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদেরকে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করার। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় এভাবেই সর্বত্র নারী সম্মানিত। সেই নারীর ইসলামী পোশাক হিজাবের সমর্থনে পালিত 'আন্তর্জাতিক হিজাব সংহতি দিবস' সফল হোক এ প্রত্যাশা রইল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন