শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক(রহ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক(রহ) মুসলিম বিশ্বের একজন প্রিয় এবং প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। ইলমে হাদিস,ইলমে ফিকাহ ও ইলমে তাসাওউফের তিনি শ্রেষ্ঠ ও শীর্ষ স্থানীয় আলিম ছিলেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানে না,তাঁর জীবনের পট পরিবর্তনের কাহিনী। তিনি তারুণ্যের শুরুতে ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ও বেপোরায়া জীবনের অধিকারী এক যুবক। তখন তিনি সর্বক্ষণ মত্ত থাকতেন নেশা,গান-বাজনা ও আনন্দ ফূর্তি ও ভোগ-বিলাসে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে প্রচুর অর্থ-সম্পদ ও দান করেছিলেন।
তাঁর মূল্যবান সহায় সম্পত্তির মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিল একট নাশপাতির বাগান। বাগানে ফল তোলার মৌসুমে একবার তিনি জাকজমকপূর্ণ এক ভোজনের আয়োজন করলেন এবং তাঁর সকল বন্ধুবান্ধবকে দাওয়াত দিলে। খাওয়া দাওয়া শেষে বসল মদের আসর। সকলে মহা আনন্দে ,ফুর্তি আর ধূমধামের সাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিল। একের পর এক মদের পাত্র খালি হচ্ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক এত পরিমাণ মদ পান করেছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি নেশার ঘোরে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। রাতভর বেঁহুশ থাকার পর সকালে তার হুঁশ ফিরল।
হুঁশ ফিরতেই দেখতে পেলেন তার বীণাটা পড়ে আছে। বীণাটি উঠিয়ে বাঁজাতে চাইয়ালেন,কিন্তু তা বাঁজাতে পারলেন না। সূর তোলার জন্য যন্ত্রাংশ খুলে তিনি নেড়ে চেড়ে দেখলেন। তবুও সুর আসল না। এতে আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক যথেষ্ট অস্থির ও বিরক্ত হয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। হঠাত বীণা থেকে আওয়াজ আসল-
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ
মুমিনদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে কোমল ও বিগলিত হওয়ার সময় এখনো কি হয়নি?
(সূরা হাদিদ- ১৬)
কুরআনের এই অনাবিল বাণী শুনে তার অন্তর জগৎ আন্দোলিত এবং আলোড়িত হলো, কালবিলম্ব না করে তিনি বীণাটি ভেঙ্গে ফেললেন। মদের পাত্র গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেললেন। গায়ের রেশমী কাপড় ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। সর্বপোরি তখনি তওবা করে ইলমে দ্বীন অন্বেষণ ও আল্লাহর ইবাদাতে লেগে গেলেন।
ঘটনাটি এভাবে আবু আব্দুল্লাহ হাম্মাদ তার মুখতাসারুল মাদারেক, নামের এক কিতাবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তবাকাতে কাফাবী তে অন্য রকম আছে। তাতে উল্লেখ আছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক মদের নেশায় ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নে দেখলেন যে, একটি প্রানী নিকটবর্তী একটি গাছ থেকে পূর্বের উল্লেখিত আয়াতটি তিলাওয়াত করছে। তখনই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
হযরত শাহ আব্দুল আযীয(রহ) বলেন, হতে পারে আল্লাহ তা'আলা সর্ব প্রথম তাঁকে স্বপ্ন যোগে সতর্ক করেছেন, পুনরায় জাগ্রত হবার পর বীণা দ্বার তাগীদ দিয়েছেন।
ঘটনা যাই হোক তারপর উনার জীবন পুরোপুরি বদলে গেল।তারপর আল্লাহর এই নেক বান্দাকে কখনো দেখা গেলো ইলমের মজলিসে,কখনোবা জিহাদের ময়দানে, কখনো মসজিদে অশ্রুসিক্ত চোখে। তাঁর আমল দেখে তৎকালীন মসজিদে হারামের ইমাম হযরত ফোযায়েল ইবনে আয়াজ(রহ) ও ঈর্ষা করতেন। আর সেই মদ্যপ যুবক অবশেষে পরিচিত হলেন আল ইমাম আল মুজাহিদ আমীরুল মুমিনা ফিল হাদিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ) নামে।
তথ্যসূত্রঃ
১,বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন-৯৭
২,তারাছে-৬২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন