মিসরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট থমুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত মুহাম্মদ মুরসিকে সেনা অভ্যুত্থানে মতাচ্যুতির পর সেনাপ্রধান ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি দেশটির গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছেন। গণতন্ত্রপন্থীদের যেসব কারাগারে আটক রাখা হয়েছে সেগুলি যেন নির্যাতনের একেকটি প্রকোষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত জুন থেকে বিনাবিচারে আটক এক নারীর চিঠিতে বন্দীদের দুর্বিষহ জীবনের চিত্র উঠে এসেছে। গত ৭ জুলাইয়ের লেখা এ চিঠি গণমাধ্যমে আসে মঙ্গলবার। ইসরা আল-তাবিল নামে এ তরুণীকে গত জুনে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন অপরিচিত মানুষ। এরপর তাকে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানকার নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওই ভবনে ১৫ দিন অতিবাহিত করেছি, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছি। এ সময় আমি নির্যাতনের শব্দ শুনেছি, বন্দীরা চিৎকার করে কাঁদছিল, সেখানে ছিলাম আমিই একমাত্র নারী। ১৫ দিন আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল।’
তরুণ ফটোগ্রাফার তাবিলকে ১৬ দিন পর আদালতে নেয়া হয়। সেখানে শুনানি চলাকালে প্রায় ১৮ ঘণ্টা তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তিনি জানান, দাঁড়িয়ে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল তার। কারণ ২০১৪ সালের জানুয়ারির বিােভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তার মেরুদণ্ড তিগ্রস্ত হয়। ফলে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছেন না তিনি। এরপর তাবিলকে আল-কানাতির কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এ কারাগারের বেশির ভাগ বন্দী মুসলিম ব্রাদারহুডের। তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগের ধরনও প্রায় একই। তাবিলের বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হওয়া এবং মনগড়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তিনি। বন্দিজীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তাবিল বলেন, ‘কারাগারের অবস্থা ভীতিকর ও ভয়ঙ্কর। এটা পুরোই ভিন্ন জগৎ ; কেউ (বন্দী) মাদক ব্যবহারের জন্য, কেউবা পতিতাবৃত্তি, কেউ পকেটমারি ও চুরির জন্য আটক হয়েছে। কারাগারে তেলাপোকা রয়েছে ভরপুর। এখানকার সবকিছুই বাজে এবং জীবন বেশ কঠিন। আমি আমার বাড়ি, পরিবার, বন্ধু ও আমার বেড়াল উডিকে মিস করছি।’
তবে যখন পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে আসেন এবং যখন তাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের নারী বন্দীদের সাথে রাখা হয়, তখন একটু দম ফেলার ফুরসত মেলে। নিজে ব্রাদারহুডের কেউ নন বলে জানিয়ে তাবিল বলেন, ব্রাদাহুডের বন্দীদের সাথেই থাকতে পছন্দ করেন তিনি। কারণ, তাদের কেউ ধূমপান করেন না। চিঠির শেষে নিজের অবস্থা নিয়ে ােভ প্রকাশ করে তাবিল বলেন, ‘ টানেলের শেষ মাথায় জীবন আমাদের আলো দেয়। এটা আমাদের বড় কষ্টগুলো ভুলিয়ে দেয়। ওহ আল্লাহ! কখন এ দুঃস্বপ্নের শেষ হবে!’আলজাজিরা অবলম্বনে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন