বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫

বিদায় মাহে রমজান

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে রমজান দান করেছিলেন। একটি হচ্ছে তাকওয়া অর্জন, অপরটি গুনাহ মাফ। রমজান বিদায়ের পথে। আজ চাঁদ উঠলে কাল ঈদ। আমাদের ভেবে দেখা দরকার আমরা এই রমজানে সেই উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি কিনা। শেষ মুহুর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করে চেয়ে নিতে হবে কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান পাওয়া সত্ত্বেও তার গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে হতভাগা। শেষ মুহুর্তে এসে আমাদের চেষ্টা করতে হবে আমরা যেন হতভাগা না হই। হাদীসে শরীফে এসেছে রমজানের শেষ রাত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। অতঃপর যখন ঈদের দিন হয় অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন, তখন আল্লাহ তায়ালা রোজাদার বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাগণের সাথে গর্ব করে জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! বল দেখি, আমার কর্তব্যপরায়ন প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হবে? ফেরেশতাগণ বলেন, হে প্রভু! পূর্ণরূপে তার পারিশ্রমিক দান করাই তো তার প্রতিদান। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে, অতঃপর আমার কাছে দোয়া করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে (ঈদগাহে) গমন করেছে। আমার সম্মান, মর্যাদা, দয়া, বড়ত্ব ও মহত্বের কসম, জেনে রাখ- আমি তাদের দোয়া কবুল করবো। অতঃপর বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমার এখন ফিরে যাও, আমি তোমাদের পাপসমূহকে নেকীর দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ী ফিরে আসে।
রমজান এখনও বাকী। যদি চাঁদ না উঠে তাহলে আগামীকাল ৩০শে রমজান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ঈদের প্রস্তুতির কারণে আমরা রমজানের শেষ দিনকে খুবই অবহেলা করে কাটাই। নামাজের ঠিক থাকে না। প্রথম রোজার ইফতার যে গুরুত্বের সাথে করি, শেষ দিনের ইফতারকে খুবই অবহেলা করে আদায় করা হয়। অথচ শেষ দিবসের ইফতারেও দোয়া কবুল হয়। শেষ দিবসেও রমজানের পূর্ণ ফজীলত বিদ্যমান থাকে। বরং হাদীসে আছে, আল্লাহ তায়ালা সারা মাস যে পরিমাণ লোককে ক্ষমা করেন এবং পুরস্কৃত করেন তার সমপরিমাণ মানুষকে ক্ষমা ও পুরস্কার প্রদান করে রমজানের শেষ সময়ে।
যাদের জাকাত-ফিতরা এবং প্রয়োজনীয় দান সদকা এখনো করা হয়নি রমজান শেষ হওয়ার আগেই তা আদায়ে সচেষ্ট হওয়া উচিত। কারণ এ সময় চলে গেলে ৭০ গুণ ফজীলত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের তাকওয়ার অনুশীলন করালেন। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ দিলেন। ইবাদত করার অভ্যাস করালেন। রমজানের স্বার্থকতা হচ্ছে রমজান চলে গেলেও যেন আমরা তাকওয়ার পথে থাকতে পারি। রমজান চলে গেলেও যেন ইবাদতের উপর থাকতে পারি। রমজানের আগের জীবন আর পরের জীবন যদি এক হয় তাহলে রমজান কোন কাজেই আসেনি বলতে হয়। এ জন্য রমজানের সকল শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করাই হচ্ছে রমজানের আগমনের ও প্রস্থানের স্বার্থকতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জনের তাওফীক দান করুন। আল্লাহ আমাদের খাঁটি মুত্তাকী করুক এবং গুনাহ মাফ করে নিষ্পাপ করে দিন। আমীন সবাই সুস্থ থাকুন। ধনী-গরীব সকলে মিলে ঈদের আনন্দে একাকার হয়ে যাক। ধুয়ে মুছে যাক অতীতের সকল গ্লানি। এই কামনায় বিদায় মাহে রমজান। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন