বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

এক অসহায় মুসলমান সাংবাদিক

আমেরিকায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দৌরাত্ম্য ও হিন্দুদের বয়কট দাবির মুখে এক অসহায় মুসলমান সাংবাদিক
বর্তমান আমাদের দেশে হিন্দুদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পুরোধা হলো হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গং। এই গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে তো বটেই, আমেরিকাতেও যথেষ্ট আশকারা পেয়েছে সেদেশের সরকারের মুসলমানবিরোধী নীতির কারণে। এ নিয়ে আমেরিকায় এটিএন বাংলার সাংবাদিক দর্পণ কবিরের স্ট্যাটাস থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
১) ২০০৯ সালের শেষের দিকে (সম্ভবত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের কোন একটি দিনে) নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখিকা মিনা ফারাহ ও তার স্বামী ফরহাদ রেজার পুত্র (ডাক নাম ছিল জয়) লং আইল্যান্ডে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। জয় মুসলিম ধর্মের চর্চা করতেন বলে জানা গেছে। মৃত্যুর এক সপ্তাহে আগেও জয় ও তার পিতা নামাজ আদায় করেছেন (এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মোল্লা সানি। তিনি জয়ের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন-এ কথা তিনি জানান) সাইদ রহমান মান্নানের (মান্নান গ্রোসারীর মালিক) বাড়িতে। জয়ের পিতা মুসলিম এবং মা হিন্দু ধর্মালম্বী। জয়ের মরদেহ ইসলাম ধর্মানুযায়ী নামাজে জানাযা দেয়ার পরপরই মায়ের ইচ্ছায় তার (জয়ের) মরদেহ হিন্দু ধর্ম মতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটির মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ মুসলমানরা দল বেধে জ্যাকসন হাইটসের মিনা ফারাহ ও ফরহার রেজার বাড়ির সামনে একাধিক দিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ঐ সময়ে শীতাংশু গুহ (হিবৌখৃ ঐক্য পরিষদের নেতা) ও তার সংগঠনের নেতারা এসে মিনা ফারাহ’র পক্ষ নিয়ে পাল্টা অবস্থান নেয়। কয়েকদিন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ এসেছিল এবং নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিকও এসেছিলেন এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে। এ নিয়ে মুসলমানদের মনে চাপা ক্ষোভ জমে আছে। শীতাংশু গুহ গংরা মিনা ফারাহ’র পক্ষ নিয়ে তখন মুসলমানদের গালাগাল করেছিল।
২) সম্প্রতি জ্যামাইকা এলাকায় বসবাসকারী রিফাত জামান নামে এক যুবককে হিন্দু-খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের একাধিক নেতা একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। ঐ যুবকের নাম রাখা হয়েছে সুমন রায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী একটি মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করে প্রথমে মেয়েটির পরিবার এবং পরে কথিত হিন্দু নেতাদের চাপে যুবক নিজের ধর্ম ত্যাগ করে। এ নিয়ে থানা পুলিশও হয়েছে। হিন্দু নেতারা যারা মুসলমান যুবককে হিন্দু করেছিল, তারা আমাদের (দর্পণ কবিরসহ আরো একাধিক মুসলমান সাংবাদিক) দেখলে বিদ্রুপ করত।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এসব ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখার কারণে নিউইয়র্কে হিন্দু নেতারা প্রেসরিলিজ দিয়েছে দর্পণ কবিরকে বয়কট করার জন্য, তাদের পাশে রয়েছে মুসলমান নামধারী কথিত সুশীলেরা।
আশ্চর্যের বিষয়, সংখ্যালঘু হয়েও এই হিন্দুরা প্রবাসে এক মুসলমানকে বয়কট করার ডাক দেয়। অথচ বাংলাদেশী ‍মুসলমানদের ব্যতীত প্রবাসে এসব হিন্দুদের সামাজিকতা রক্ষা করাই সম্ভব হবে না। মুসলমানরাও তো মার্কামারা, হিন্দুর পূজায় না গেলে, হিন্দুর বাড়ির নাড়ু না খেলে তাদের ভাত হজম হয় না।
হয়তো প্রবাসে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কমিউনিটির মাঝে কিছু করতে পারবে না হিন্দুরা, কিন্তু ভারতে হিন্দুরা সাতচল্লিশের পর থেকে এই বয়কটের মাধ্যমেই মুসলমান সমাজকে একঘরে করে রেখেছে এবং যাবতীয় শিক্ষা-চাকরি থেকে বঞ্চিত রেখেছে। ক্ষমতা পেয়ে আজ এদেশের হিন্দুরাও কথায় কথায় মুসলমানদের বয়কট করার ঘোষণা দেয়। এর পেছনে যতোটা না দায়ী হিন্দুদের ক্ষমতায়ন, তারচেয়ে বেশি দায়ী মুসলমানদের হিন্দুপ্রীতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন