শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

পুড়ছে দেশ মুক্তি কোথায়

আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল-আযহারী
আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ পুড়ছে। দেশজোড়া হানাহানি ও রক্তপাতের তাণ্ডব চলছে। বিশ্ববাসী বিস্ময়ে দেখছে প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ, আল্লাহর অপার রহমতে যে দেশটির এখন উন্নতির শীর্ষে আরোহণের সুযোগ হাতের মুঠোয় ছিল, তা আজ রসাতলে যাচ্ছে! চিরাচরিত সরকারী ভাষ্য অনুসারে ‘সব কুচ ঠিক হ্যায়’ ‘পূর্ণ স্বাভাবিক’ হলেও দেশের প্রতিটি বিবেকবান লোক এর বিরোধী চিত্রটি খোলা চোখেই দেখতে পাচ্ছে। আপামর জনতা হাড়ে হাড়ে স্বাধীনতা ও জননিরাপত্তার অভাব অনুভব করছে। একজন মুসলমান হিসাবে এর মৌল কারণগুলো ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। বক্তব্যটি র্কা পক্ষে বা বিপক্ষে গেল, সে চিন্তা না করেই এ ছোট্ট নিবন্ধটিতে সোজা সাপটা বক্তব্য কুরআন হাদীসের আলোকেই তুলে ধরতে চাই। অনুরাগ বা বিরাগ প্রকাশের পরিবর্তে এর আলোকে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ঘাটতিগুলো উপলব্ধি করে এর প্রতিকারে এগিয়ে না এলে আমাদের ভাগ্যবিপর্যয় এড়ানোর কোনই সম্ভাবনা দেখি না।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا
কোন ব্যাপারে যদি তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তা হলে তা তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট উপস্থাপিত কর যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো- এটাই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর। সূরা নিসা : ৫৯
বলাবাহুল্য, এ আয়াতে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহতে সমাধান খোঁজার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তা না করে আমরা এখন সমাধান খুঁজছি সরকারী ও বেসরকারী আইনী ও বে-আইনী অস্ত্রধারীদের কাছে। সমাধান খুঁজছি কাফির বেদীনদের রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শে। এখানেই ঘটেছে যত বিপত্তি। একদল সরকারী ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে যাকে যখন ইচ্ছা গ্রেফতার, নির্যাতন, হত্যা ও গুম করছে। অপর দল হরতাল, অবরোধ ও সরকারের সমপর্যায়ের শক্তির অভাবে চোরাগোপ্তা বোমাবাজির দ্বারা তা ঠেকাবার ভ্রান্ত প্রয়াস পাচ্ছে। ফলে এই স্বাধীন দেশের হাজার হাজার স্বাধীন নাগরিক কথায় কথায় গ্রেফতার হয়ে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সর্বশেষে হরতাল অবরোধে অনেকে বোমার শিকার হচ্ছে। অথচ আল্লাহর কুরআনে স্পষ্টভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, এরূপ সমস্যায় তোমরা কুরআন-হাদীসের শিক্ষার দ্বারস্থ হও, সমাধান পেয়ে যাবে। সে সমাধানে যাওয়ার পূর্বেই কয়েকটি মৌলিক কথা আলোচনা করা দরকার।
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে এ দুনিয়ায় মানবজাতি হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা গোটা বিশ্বকে স্রষ্টার খলীফা বা প্রতিনিধিরূপে তাঁরই নির্দেশ মোতাবেক পরিচালনা করবে। অন্তত এদেশের শতকরা ৮৫জন মুসলমানের সিংহভাগই তো কালিমার শিক্ষানুসারে বিশ্বাস করে যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহই হচ্ছেন পৃথিবীর সর্বশক্তির নিয়ামক, রাজনৈতিক পরিভাষায় সার্বভৌমত্বের অধিকারী এবং এ ক্ষমতাটা এককভাবে একমাত্র তাঁরই। স্রষ্টার কাছে তাঁরই সৃষ্ট সাদা-কালো, ধনী-নির্ধন সকলেই সমান। তাই তাঁর বিধানে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা বিরাগ নেই। ফলে, তাঁর বিধান মেনে চলতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আপত্তি থাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কেননা, তাঁর আইনে কোন গোত্র-বর্ণ-গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার প্রয়াস নেই, কাউকে প্রদমিত বা বঞ্চিত করার ব্যাপারও নেই। পৃথিবীর শত বিচ্ছিন্ন মানুষকে ঐ সর্বশক্তিমানের নির্ধারিত আইনের সুনির্দিষ্ট ছকে চালাতে পারলে কোথাও কোন বিপর্যয় বা বৈষম্য সৃষ্টির অবকাশমাত্র নেই। ¯্রষ্টা যেহেতু তিনিই, রিযিকদাতাও তিনিই, সুতরাং আইন চলবে তাঁরই। আল কুরআনের ভাষায়- اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَمْرُ অর্থাৎ সৃষ্টি তাঁরই এবং সার্বভৌম শক্তি বা আইনও চলবে তাঁরই।
আমাদের কিছু সংখ্যক বিদেশী বিজাতীয় তন্ত্রমন্ত্রভক্ত এবং প্রবৃত্তিপূজারী ও মতলববাজ ধুরন্দর ব্যক্তি ছাড়া এদেশের পনের কোটি মুসলমানের এটিই ধর্মীয় বিশ্বাস। বিজাতীয় বিদেশী আদর্শ ও মতবাদের ধারক বাহকরা সকল সার্বভৌম ক্ষমতা গণতন্ত্রের কথিত নাগরিকদের বলে বুলি কপচালেও বাস্তবে তারা তাদের দল, গোষ্ঠী, পরিবার এমন কি সুনির্দিষ্ট কোন ক্ষমতাবান নেতা-নেত্রীর জন্যেই এ ক্ষমতাটি এক চেটিয়া পাওনা বলে বিশ্বাস করে। তাই মুখে না বললেও তাদের হালচাল ও বাচনভঙ্গি সাম্প্রতিক পরিভাষায় ইড়ফু খধহমঁধমব বা অঙ্গভঙ্গির দ্বারা ফিরাউনের কথিত সেই উক্তিটিই উচ্চারিত হচ্ছে- اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰی আমি তোমাদের সর্বোচ্চ প্রভু। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে শাসক কোন প্রভু নয়, সে জনগণ তথা আল্লাহর মাখলুকাতের সেবকমাত্র। এজন্যেই খলীফা হযরত উমর রাযি. বলেছিলেন- একটি গাধাও যদি পা পিছলে পড়ে মারা যায়, তবে এজন্যে কাল কিয়ামতে আমাকে রাব্বুল আলামীনের দরবারে তার কৈফিয়ত দিতে হবে। খুলাফায়ে রাশেদার পঞ্চমতম খলীফা বলে কথিত উমাইয়া খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বলেছিলেন, ফোরাত নদীর তীরে একটি ছাগলছানাও যদি ঘাসের অভাবে মারা যায়, তাহলে কাল কিয়ামতে এজন্যে আমাকে জবাবদেহি করতে হবে। আমাদের নেতানেত্রীদের এই মুমিনসুলভ দায়িত্ববোধের অভাবের কারণেই আজ লাখ লাখ নাগরিকের ন্যূনতম নাগরিক অধিকার বঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও তাঁদের মনে কোন অশান্তি বা উচাটন নেই।
এই ইসলামী মূল্যবোধের দাবী হচ্ছে, আল কুরআনের ভাষায়,
وَ اَمْرُهُمْ شُوْرٰی بَیْنَهُمْ
অর্থাৎ তাদের (মুমিনদের) শাসনকর্ম পরিচালিত হবে তাদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে। সূরা শূরা : ৩৮
এদেশের শতকরা ৮/৯ ভাগ হিন্দু এবং ২/৩ ভাগ বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বাদ দিলে শতকরা প্রায় নব্বুই ভাগ লোকই যেখানে কুরআনে বিশ্বাসী, নবীর হাদীসে বিশ্বাসী, সেখানে এদেশের শাসনব্যবস্থায় পরামর্শ বা শূরার ব্যবস্থা অনুপস্থিত থাকবে কেন? কেনই বা ৩০/৩৫ ভাগ লোকের ভোট পেয়েই একটি দল সরকার গঠন করে শতকরা ৭০/৭৫ ভাগ লোকের সম্মতি ব্যতিরেকেই যেন তেন করে ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার কায়েম করবে? ইদানীং ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর তো সে প্রতিনিধিত্ব শতকরা ১০ ভাগেরও কম লোকের তলানীতে পড়ে রয়েছে। অথচ এই সরকারই কোনরূপ জাতীয় ঐকমত্য ছাড়াই ইচ্ছেমত, তাদের সুবিধামত আইন ভেঙ্গে নতুন আইন প্রবর্তন করছে, এমনকি কোন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রশ্নে ‘গণভোট’ অনুষ্ঠানের বিশ্ব স্বীকৃত বিধানটাও বাতিল করে দিচ্ছে! আর তারপর তাড়স্বরে ঘোষণা করছে : ‘মোরা আইনের লোক’। আইন অনুসারেই রাষ্ট্র ও সরকার চলবে! কে রচনা করল সেসব আইন? কত পার্সেন্ট নাগরিকের সম্মতি তাতে রয়েছে? এগুলো আজ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়! এই কি স্বাধীনতার চেতনা? এটাই আইনের শাসন? স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকগোষ্ঠী কোন দল বা গোষ্ঠীর গোলাম তো হতে পারে না!
আইনের শাসন
যে কোন সমাজ বা রাষ্ট্র আইন দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে। এ আইনের প্রতীক হচ্ছে দাড়িপাল্লা। আইনের দৃষ্টিতে পক্ষ-বিপক্ষের সমতা ছাড়া কোন আইনই সার্থকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। স্বৈরাচারী শাসনে কোনমতেই সে সমতা রক্ষিত হয় না। কেননা, শেষ পর্যন্ত শাসকও একজন মানুষ বৈ নয়। তার মানবিক অনুরাগ-বিরাগ, পক্ষ বা বিপক্ষ থাকা অতি স্বাভাবিক। সেই মানবিক দুর্বলতার শিকার মানুষই যদি আইনের সর্বেসর্বা বা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যায় তা হলে তার পক্ষে অনুরাগ-বিরাগ বাদ দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
ফিরাউন তার দাবী মতে মিসরের সার্বভৌম সম্রাট ছিল- যা পূর্বেই উক্ত হয়েছে। সে তার স্বপক্ষের লোক মানে কিবতীদের প্রতি একপেশে আনুকুল্য প্রদর্শন করতো। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও রাসূলে বিশ্বাসী বনি ইসরাঈলদেরকে করতো অমানবিক নির্যাতন। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন- اِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِی الْاَرْضِ وَ جَعَلَ اَهْلَهَا شِیَعًا
অর্থাৎ ফিরাউন যমীনে আধিপত্য লাভ করলো এবং তার অধিবাসীদেরকে পক্ষ-বিপক্ষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিল। সূরা কাসাস : ৪
এটাই ছিল ফিরাউনের অপরাধ। কেবল ফিরাউনই নয় পৃথিবীর দেশে দেশে যত স্বৈরাচারী শাসকের জন্ম হয়েছে, তারা তা-ই করেছে এবং আজও তা-ই করে যাচ্ছে। সুতরাং ফিরাউন যদি পাপাচারী ও জাহান্নামী বলে নিন্দিত হয়ে থাকে তা হলে তার অনুসারী স্বৈরাচারীরা ঐ একই অপরাধে তারই পরিণতির শিকার না হবে কেন?
আমাদের বাংলাদেশের ‘৭২ সালের শাসনতন্ত্র নাকি পৃথিবীর একটি উন্নত শাসনতন্ত্র। যদি তা-ই হয়ে থাকে তবে কেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাইটি মোঘল’ বা সর্বশক্তির অধিকারী বলে সমালোচনা করা হয়ে থাকে? এর পেছনে যে সত্যতা আছে তার দু’জন বড় প্রমাণ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের উক্তি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিরোধীদলীয় মন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাবগ্রহণে অনীহা প্রকাশ। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘একমাত্র কবর যিয়ারত ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোন শক্তি নেই।’ অনেক বছরের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিচালিত মামলাসমূহে উচ্চতম বিচারালয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শতাধিক ফাঁসির আসামী যখন কলমের এক খোঁচায় ফাঁসির প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এসে মন্ত্রী, সাংসদ ও মেয়র হয়ে যেতে পারে, তা হলে এ আইন ও বিচারব্যবস্থাকে কীভাবে সমর্থন করা যায়? কীভাবেই বা এ আইন ও বিচারালয় নাগরিকদরে সাম্য ও সুবিচারের গ্যারান্টি দিতে পারে? আর যদি তা না পারে তা হলে কেন স্বয়ং ¯্রষ্টার আইনকে বাদ দিয়ে আমাদের বৃটিশ প্রবর্তিত এ আইন ও আদালতের প্রতি আস্থাবান থাকতে হবে? এ আইনে যে যখন যে দল সরকারে আসে তাদেরকে অবৈধ সম্পদ গড়ার সুযোগ দেয় এবং বিপক্ষদলের হাজার হাজার নাগরিককে কেবলমাত্র পুলিশী প্রতিবেদনে প্রকাশিত সন্দেহের বশে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে পঁচতে বাধ্য করে, এতো আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি!
ফল হচ্ছে এই যে, বাদী যেমন সহজে বা স্বল্প ব্যয়ে বিচার পাচ্ছে না তেমনি বিবাদীও বিনা অপরাধে বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দী জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হয়। মাঝখানে লাভবান হয়ে পুলিশ ও আইন আদালতের সাথে জড়িত উকীল ব্যারিষ্টার থেকে শুরু করে পাইক-পেয়াদা সকলেই। অথচ সঠিক ইসলামী বিচারব্যবস্থা চালু থাকলে সুবিচার যেমন সহজলভ্য হতো তেমনি অহেতুক নিরপরাধ নাগরিকদের জীবন ভারাক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকতো না। একেকটি মামলার পনের বিশ বছর পর্যন্ত আদালতের দরজায় পড়ে থাকারও দরকার হতো না। হাজার হোক, আমাদের আইন আদালত সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ও পরিচালিত। ¯্রষ্টার আইনের এখানে কোন ভূমিকা পালনেরও সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে আসার বা দেশে প্রচলিত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধের কোনই সুযোগ নেই।
বর্তমান সংকট সৃষ্টিতে কার কতটুকু ভূমিকা সেটাই বা নির্ধারণ করবে কে? আদালত থেকে অনেক সময় কল্যাণমূলক সুয়েমোটো বা স্বতঃস্ফূর্ত রায়ের একটা প্রচলন ছিল- যাতে অনেক সময় জাতি উপকৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে তা-ও দেখা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের মুক্তির একটি মাত্র পথ, ইসলামের পথে কুরআনের পথে ফিরে যাওয়া- যে ইসলাম ৭/৮ শ বছর পর্যন্ত অর্ধেক বিশ্বকে শাসনের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাজ-রাজড়াকে লিখিত তাঁর পত্রে তাই লিখেছিলেন- اسلم تسلم অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করে শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী হউন! আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম (এখন তৃতীয়) মুসলিম রাষ্ট্র বলে বঙ্গবন্ধু যে রাষ্ট্রটির পরিচয় দিয়ে গর্ব করতেন। আমরা কি পারবো- বিশ্ব নবীর উচ্চারিত বাণীটির অনুসরণ করে শান্তির পথ খুঁজে নিতে?
যদি আমরা মহামানবের সেই বাণীতে পুনঃপ্রত্যয় স্থাপন করে আল কুরআনের বিধান মতে পরামর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ায় মনোযোগী হতে না পারি, তা হলে কেবল পাকিস্তানী জান্তার অনুসরণে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করে ও ‘ঠেঙ্গারু বাহিনী’ নিয়োজিত করে জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা কতটুকু সম্ভব তা কালই বলে দেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, পানি দিয়েই আগুন নিভানো সম্ভব, পেট্রোল দিয়ে, আগুন দিয়ে আগুন নিভানো যায় না। ইসলামের সাম্য ও সুবিচারকেন্দ্রিক পরামর্শভিত্তিক একটি আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থাই এখন জাতির জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন! আল্লাহ আমাদেরকে সে পথে চলার তাওফীক দান করুন! আমীন!!
লেখক : প্রবীণ আলেম, বিশিষ্ট লেখক, প্রাক্তন সম্পাদক, মাসিক নেয়ামত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন