শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তার লিজার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার আগের দিন দোকানে ছবি আঁকার রঙ-পেন্সিল কিনতে গিয়ে আর ফিরেনি লিজা।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ধর্ষণের পর নির্মম নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে ৯ বছরের লিজাকে। জড়িত সন্দেহে লিজাদের ভাড়া বাসার মালিক রেজাউল করিমের ছেলে সৌরভকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালামকে।
0মামলাটির তদন্ত থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে যায়। গ্রেপ্তার করা হয় সৌরভের এক বন্ধু ও এক খালাতো ভাইকে। তবে আট মাসে একে একে সব আসামিই জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
শিশু লিজার বাবা, প্রাইভেটকারচালক ফারুক হোসেন হতাশা ভরা কণ্ঠে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এমনভাবে আমার বাচ্চাটারে মারল, তার বিচার মনে হয় পাবই না!’
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক জিহাদ হোসাইন গত মঙ্গলবার বলেন, ‘তদন্তের অবস্থা আমি এখন বলতে পারব না। কিছুদিন আগে মামলাটি সিআইডিতে গেছে।’
শিশু লিজার মতোই নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। তবে বিচারের আওতায় আসছে না অপরাধীরা। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এমন কারণেই শিশু হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অপহরণের মতো অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন অপরাধ, সমাজ ও মানবাধিকার বিশ্লেষকরা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ঘরে-বাইরে শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উদ্বেজনক হারে বেড়েছে। গত দেড় বছরে সাড়ে পাঁচশ’ শিশু খুন হয়েছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে শিশু ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতন।
পরিবারে, স্বজনদের হাতেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। অপরাধীদের বিচার না হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি সিলেটে নির্মম নির্যাতনে সামিউল আলম রাজন হত্যার ভিডিওচিত্র দেশবাসীর মনে গভীর দাগ কেটেছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর খিলক্ষেতে নাজিম উদ্দিন নামে আরেক শিশুকে একই কায়দায় হত্যার খবর প্রচার পায়। খুলনায় শিশু রাকিবের বায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যুটকেসের ভেতরে পাওয়া গেছে অজ্ঞাত পরিচয় আরেক শিশুর লাশ। পুলিশ বলছে, নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ওই শিশুকে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বরগুনার তালতলীতে রবিউল আউয়াল নামে আরেক শিশুকে চোখ উপড়ে, কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
দেশে শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিশু নির্যাতন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুলিশ প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে।’
তবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলছেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো এ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেখবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা অমানুষ। তারা মানুষের কাতারে পড়েন না। অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু এবং রাজধানীতে ধর্ষিত দুই শিশুকে দেখতে যান মন্ত্রী। এসময় এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য মতে, ২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ২০৯ শিশু। এসময় হত্যা চেষ্টা করা হয় আরও পাঁচজনকে। ২০১৩ সালে হত্যা করা হয় ২১৮ শিশুকে এবং হত্যা চেষ্টা করা হয় ১৮ শিশুকে। ২০১৪ সালে দেশে ৩৫০ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এসময় আরও ১৩ শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ১৯১ শিশুকে। এসময় হত্যার চেষ্টা করা হয় আরও ১১টিকে।
বিএসএএফ সূত্র জানায়, চলতি বছরের সাত মাসে ধর্ষণেশিকার হয়েছে ২৩০ শিশু। ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন নীপিড়নের শিকার হয়েছে আরও ৬২টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ শিশুকে। এই সময়ে অপহৃত হয়েছে ১২৭ শিশু। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ শিশুকে।
বিএসএএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে অপহৃত হয় ১১৮টি শিশু, যার মধ্যে ৫০টিকে মেরে ফেলা হয়। ৬৬টি শিশুকে অপহরণের পর উদ্ধার করা হয়। ২০১৩ সালে ৪২টি শিশু অপহরণের শিকার হয়, যার মধ্যে মেরে ফেলা হয় ১৩ টিকে। এর আগে ২০১২ সালে ৬৭ টি শিশু অপহৃত হয়েছিল।
বিএসএএফ-এর পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, ‘শিশু অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, গণপিটুনীর মতো ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আমরা তথ্য সংগ্রহ করি। পরিসংখ্যানগতভাবেই এসব অপরাধ বেড়েছে। পারিবার, সামাজিক ও রাস্ট্র শিশুদের এই নাশকতা থেকে রক্ষা করতে পারছে না। এটা খুবই উদ্বেগজনক।’
এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘শিশুরা অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির হয়ে থাকে। অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা কম। শিশু, হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া সমাজে অপরাধ প্রবণতা বা নিষ্ঠুরতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সামাজিক বন্ধুন সুদৃঢ় করার মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধ কমাতে হবে।’
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ দেখা গেছে, পরিবারে, এমনকি মায়ের গর্ভেও নিরাপদ নয় শিশুরা। গত ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন নাজমা নামের এক অন্তঃস্বত্ত্বা নারী। এরপর তার গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে জীবিত পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন চিকিৎসকরা। সে এখন ঢামেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
এছাড়া পারিবারিক নানা সমস্যারও বলি হচ্ছে শিশুরা। গত শনিবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার লেমুয়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে মৌমি (৪) ও তায়েবা (২) নামে দুই সন্তানকে বিষপান করিয়ে গৃহবধূ রোজী আক্তার নিজেও আত্মহত্যা করেন। গত ১৮ জুন টাঙ্গাইলে দেড় বছরের শিশু শাহিনকে হত্যা করে বাবা রনজু মিয়া মিয়া আত্মহত্যা করেন। গত ২ মার্চ বগুড়ায় লতিপপুরে ফাহমিদা (৭) ও তাছলিমা (২) নামে দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মা সালমা বেগম। গত ৩১ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে গোমতি নদী থেকে ফয়সাল (৭) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, পারিবারিক কলহে বাবা হোসেন মিয়াই তার সন্তানকে হত্যা করেন। গত ১৩ এপ্রিল মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটে এক মাসের শিশুকে হত্যা করেন বাবা। গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়ায় সন্তান জামাল (৬) ও তানজিলা মনিকে (৩) জবাই করেন বাবা কাশেম। ২৮ জুলাই সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদ থেকে নিজের নবজাতক সন্তানকে ফেলে হত্যা করেন বাবা ফজলুল হক।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘পারিবারিক অশান্তি, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, পরকিয়া, হিরোইজম বা ফেন্টাসি মনোভাব চর্চার মতো নানা কারণে পৈশাচিক ঘটনার শিকার হচ্ছে শিশুরা। বিশ্বায়নের প্রভাবে ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে, যার সঙ্গে আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয় হচ্ছে না। হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়ালে নতুন ধরনের নৃশংসতাকে দেখানো হচ্ছে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এ ধরনের অবস্থায় অস্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাও ক্ষতিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজ তথা রাষ্ট্রকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে হবে। শিশুদের নিয়ন্ত্রণ বা মনমতো চালানো, এমনকি নির্যাতন করার মসানসিকতা আছে অনেকের মাঝে। এই ধারণাও পাল্টাতে হবে।’
এছাড়া গত কয়েক দিনে পাঁচ শিশু ধর্ষিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। উৎসঃ বাংলামেইল
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ধর্ষণের পর নির্মম নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে ৯ বছরের লিজাকে। জড়িত সন্দেহে লিজাদের ভাড়া বাসার মালিক রেজাউল করিমের ছেলে সৌরভকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালামকে।
0মামলাটির তদন্ত থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে যায়। গ্রেপ্তার করা হয় সৌরভের এক বন্ধু ও এক খালাতো ভাইকে। তবে আট মাসে একে একে সব আসামিই জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
শিশু লিজার বাবা, প্রাইভেটকারচালক ফারুক হোসেন হতাশা ভরা কণ্ঠে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এমনভাবে আমার বাচ্চাটারে মারল, তার বিচার মনে হয় পাবই না!’
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক জিহাদ হোসাইন গত মঙ্গলবার বলেন, ‘তদন্তের অবস্থা আমি এখন বলতে পারব না। কিছুদিন আগে মামলাটি সিআইডিতে গেছে।’
শিশু লিজার মতোই নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। তবে বিচারের আওতায় আসছে না অপরাধীরা। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এমন কারণেই শিশু হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অপহরণের মতো অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন অপরাধ, সমাজ ও মানবাধিকার বিশ্লেষকরা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ঘরে-বাইরে শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উদ্বেজনক হারে বেড়েছে। গত দেড় বছরে সাড়ে পাঁচশ’ শিশু খুন হয়েছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে শিশু ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতন।
পরিবারে, স্বজনদের হাতেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। অপরাধীদের বিচার না হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি সিলেটে নির্মম নির্যাতনে সামিউল আলম রাজন হত্যার ভিডিওচিত্র দেশবাসীর মনে গভীর দাগ কেটেছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর খিলক্ষেতে নাজিম উদ্দিন নামে আরেক শিশুকে একই কায়দায় হত্যার খবর প্রচার পায়। খুলনায় শিশু রাকিবের বায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যুটকেসের ভেতরে পাওয়া গেছে অজ্ঞাত পরিচয় আরেক শিশুর লাশ। পুলিশ বলছে, নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ওই শিশুকে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বরগুনার তালতলীতে রবিউল আউয়াল নামে আরেক শিশুকে চোখ উপড়ে, কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
দেশে শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিশু নির্যাতন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুলিশ প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে।’
তবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলছেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো এ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেখবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা অমানুষ। তারা মানুষের কাতারে পড়েন না। অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু এবং রাজধানীতে ধর্ষিত দুই শিশুকে দেখতে যান মন্ত্রী। এসময় এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য মতে, ২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ২০৯ শিশু। এসময় হত্যা চেষ্টা করা হয় আরও পাঁচজনকে। ২০১৩ সালে হত্যা করা হয় ২১৮ শিশুকে এবং হত্যা চেষ্টা করা হয় ১৮ শিশুকে। ২০১৪ সালে দেশে ৩৫০ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এসময় আরও ১৩ শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ১৯১ শিশুকে। এসময় হত্যার চেষ্টা করা হয় আরও ১১টিকে।
বিএসএএফ সূত্র জানায়, চলতি বছরের সাত মাসে ধর্ষণেশিকার হয়েছে ২৩০ শিশু। ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন নীপিড়নের শিকার হয়েছে আরও ৬২টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ শিশুকে। এই সময়ে অপহৃত হয়েছে ১২৭ শিশু। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ শিশুকে।
বিএসএএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে অপহৃত হয় ১১৮টি শিশু, যার মধ্যে ৫০টিকে মেরে ফেলা হয়। ৬৬টি শিশুকে অপহরণের পর উদ্ধার করা হয়। ২০১৩ সালে ৪২টি শিশু অপহরণের শিকার হয়, যার মধ্যে মেরে ফেলা হয় ১৩ টিকে। এর আগে ২০১২ সালে ৬৭ টি শিশু অপহৃত হয়েছিল।
বিএসএএফ-এর পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, ‘শিশু অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, গণপিটুনীর মতো ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আমরা তথ্য সংগ্রহ করি। পরিসংখ্যানগতভাবেই এসব অপরাধ বেড়েছে। পারিবার, সামাজিক ও রাস্ট্র শিশুদের এই নাশকতা থেকে রক্ষা করতে পারছে না। এটা খুবই উদ্বেগজনক।’
এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘শিশুরা অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির হয়ে থাকে। অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা কম। শিশু, হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া সমাজে অপরাধ প্রবণতা বা নিষ্ঠুরতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সামাজিক বন্ধুন সুদৃঢ় করার মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধ কমাতে হবে।’
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ দেখা গেছে, পরিবারে, এমনকি মায়ের গর্ভেও নিরাপদ নয় শিশুরা। গত ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন নাজমা নামের এক অন্তঃস্বত্ত্বা নারী। এরপর তার গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে জীবিত পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন চিকিৎসকরা। সে এখন ঢামেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
এছাড়া পারিবারিক নানা সমস্যারও বলি হচ্ছে শিশুরা। গত শনিবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার লেমুয়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে মৌমি (৪) ও তায়েবা (২) নামে দুই সন্তানকে বিষপান করিয়ে গৃহবধূ রোজী আক্তার নিজেও আত্মহত্যা করেন। গত ১৮ জুন টাঙ্গাইলে দেড় বছরের শিশু শাহিনকে হত্যা করে বাবা রনজু মিয়া মিয়া আত্মহত্যা করেন। গত ২ মার্চ বগুড়ায় লতিপপুরে ফাহমিদা (৭) ও তাছলিমা (২) নামে দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মা সালমা বেগম। গত ৩১ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে গোমতি নদী থেকে ফয়সাল (৭) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, পারিবারিক কলহে বাবা হোসেন মিয়াই তার সন্তানকে হত্যা করেন। গত ১৩ এপ্রিল মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটে এক মাসের শিশুকে হত্যা করেন বাবা। গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়ায় সন্তান জামাল (৬) ও তানজিলা মনিকে (৩) জবাই করেন বাবা কাশেম। ২৮ জুলাই সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদ থেকে নিজের নবজাতক সন্তানকে ফেলে হত্যা করেন বাবা ফজলুল হক।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘পারিবারিক অশান্তি, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, পরকিয়া, হিরোইজম বা ফেন্টাসি মনোভাব চর্চার মতো নানা কারণে পৈশাচিক ঘটনার শিকার হচ্ছে শিশুরা। বিশ্বায়নের প্রভাবে ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে, যার সঙ্গে আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয় হচ্ছে না। হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়ালে নতুন ধরনের নৃশংসতাকে দেখানো হচ্ছে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এ ধরনের অবস্থায় অস্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাও ক্ষতিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজ তথা রাষ্ট্রকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে হবে। শিশুদের নিয়ন্ত্রণ বা মনমতো চালানো, এমনকি নির্যাতন করার মসানসিকতা আছে অনেকের মাঝে। এই ধারণাও পাল্টাতে হবে।’
এছাড়া গত কয়েক দিনে পাঁচ শিশু ধর্ষিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। উৎসঃ বাংলামেইল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন