বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫

বংশগত মুসলিম মুক্তি পেলে বংশগত অমুসলিমের দোষ কী?

মাওলানা  মামুনুক হক সাহেব
-----------------------------------------
মুক্তমনা এক যুবকের প্রশ্ন :
ইসলামের গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছাড়া বাকি ৯৯% মুসলমান জন্মগতভাবে ইসলাম পালন করে। কিন্তু তারা জানে না, ইসলাম কেন মানছে বা মানতে হবে। বংশগত ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তারা এতটা অন্ধ অনুসরণ ও মোহগ্রস্ত যে ইসলাম ত্যাগ করা তাদের জন্য ( বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া) একটা অকল্পনীয় বিষয়। অথচ তারা ইসলামকে পরিপূর্ণ না মেনে সকল পাপ করেও শুধু ঈমানটুকু নিয়ে মৃত্যুববরণ করলে শাস্তিভোগের পর জান্নাতে যাবে। ধর্মের প্রতি মোহগ্রস্ততা ও অন্ধ অনুসরণ ছাড়া তাদের আর কোনো যোগ্যতা নেই।
এখন প্রশ্ন হলো তারা যদি মুসলিম পরিবারে জন্ম না নিত, অন্য সব ধর্মের সাধারণ অনুসারীর মতো অন্য ধর্মে জন্মগ্রহণ করত, তাহলে তো তাদের জান্নাত নসিব হতো না। জন্মগ্রহনের ব্যাপারে তো মানুষের কোনো এখতিয়ার নেই। এমতাবস্থায় মুসলিম ভিন্য অন্য ধর্মের সাধারণ অনুসারীদের দোষটা কোথায়, তাদের কেন আজীবন জাহান্নামে থাকতে হবে?
সাধারণ মুসলমান যেমন নিজ ধর্মের সঠিকতা যাচাই করে না তবুও পার পেয়ে যাবে। অথচ অন্য ধর্মের সাধারণ অনুসারীরা পার পাবে না। এমন কেন?
উত্তর:
মনে করুন দুটি জাহাজ পাশাপাশি কাছাকাছি সময়ে বন্দর ছেড়ে যাবে ৷ দুটোতেই যাত্রী উঠলো ৷ কিছু দূর পথ চলার পর দেখা গেল একটি জাহাজের তলা ফুটো হয়ে অনর্গল পানি উঠছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে অথৈ জলে ডুবে যাবে ৷ এমতাবস্থায় অপর জাহাজটি এসে পাশে নোঙর করলো ও যাত্রীদেরকে উদ্ধার করতে লাগলো ৷ এই অবস্থায় ধরুন দুটি জাহাজেই তিন রকম যাত্রী আছে -
ডুবন্ত জাহাজের যাত্রীরা যথাক্রমে
১) বে-খবর ৷ কি হচ্ছে কোনোই খবর নেই ৷ নিজ অবস্থানেই থেকে গেলো ৷
২) জাহাজটি ডুবে যাচ্ছে বুঝেও থেকে গেলো ৷
৩) উদ্ধারকারী জাহাজে আশ্রয় নিলো ৷
ঠিক তদ্রূপ উদ্ধারকারী জাহাজেও তিন রকম যাত্রী যথাক্রমে -
১) বে-খবর ৷ কি হচ্ছে কিছুই বুঝল না ৷
২) বুঝেশুনেই থেকে গেলো ৷
৩) তারা এই জাহাজ ত্যাগ করে ডুবন্ত জাহাজে গিয়ে উঠলো ৷
এবার ভেবে দেখুন বে-খবর যাত্রী কিন্তু উভয় জাহাজেই আছে ৷ কিন্তু রক্ষা পাওয়া জাহাজের বে-খবর যাত্রীরা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গলো ৷ আর ডুবন্ত জাহাজের বে-খবর যাত্রীরা তাদের অসচেতনতার শাস্তি পেলো ৷ তাদেরকে বলা হবে তোমাদের ডুবন্ত জাহাজ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজে আশ্রয় গ্রহনকারীদের মতো তোমরাও কেন আশ্রয় নিলে না?
আর রক্ষা পাওয়া জাহাজের বে-খবর যাত্রীদের ব্যাপারে কথা হলো, কারো যদি ভাগ্য ভালো হয় তবে কার বলার কি? কিন্তু রক্ষা পাওয়া জাহাজের মধ্যেও তো কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত যাত্রী ছিলো যারা তাদের জাহাজ ছেড়ে ডুবন্ত জাহাজে চলে গিয়েছে ৷ বে-খবর লোকগুলো তো অন্তত এদের মতো অন্যায় করে নি ৷ বরং এ অন্যায় থেকে বিরত থেকেছে ৷ যার বিনিময়ে তারা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ৷
তেমনি জন্মগত অমুসলিমের অপরাধ হলো, সে কেন অসচেতন থাকলো ৷ যারা বিধর্মী থেকে ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের মতো কেন ইসলাম গ্রহন করলো না?
আর জন্মগত মুসলিমের নাজাত প্রাপ্তির এক কারণ হলো সৌভাগ্য ৷ আর দ্বিতীয় হলো তারা তো ইসলাম ত্যাগকারী নাস্তিক-মুরতাদদের মতো ইসলাম ত্যাগ করে নি ৷
দুই জাহাজের ছয় রকম যাত্রীদের মধ্যে সব চেয়ে দূরবস্থা হলো রক্ষা পাওয়া জাহাজ ত্যাগ করে ডুবন্ত জাহাজে চলে যাওয়া যাত্রীদের ৷ ঠিক তদ্রূপ, মুসলিম অমুসলিম সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সব চেয়ে জঘন্য ও হতভাগ্য মানুষ হলো তারা, যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও নাস্তিক বা মুরতাদ হয়ে যায় ৷ কথিত মুক্তমনা নাস্তিকরা হলো সেই নিকৃষ্ট জীব, যারা মুক্তির পথ সহজে পেয়েও ধ্বংসের হাতছানিতে অন্ধকারে হারিয়ে যায় ৷ আল্লাহ সকলকে হেদায়াত দান করুন ৷ আমীন ৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন