যৌতুক এমন একটি শব্দ, যে শব্দ সম্পর্কে কম
বেশি সকলেই জ্ঞাত। শিক্ষিত, অশিক্ষিত থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষ
এই শব্দটির সংগে পরিচিত। অনেকেতো রীতিমতো আতংকিত থাকে এই শব্দটির জন্যে। সে হিসাবে
যৌতুক কে একটি আতংকিত শব্দ হিসাবে তুলে ধরলে ভুল হবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে
অশিক্ষিত গরীব শ্রেণীর মানুষেরা এই যৌতুক নামধারি শব্দটি শুনলেই ভড়কে উঠে। শিক্ষিত
ধনিক শ্রেণী যে একেবারেই শঙ্কামুক্ত তা অবশ্য জোর দিয়ে বলা যাবে না। অনেক সময় এই
শিক্ষিত ও ধনিক শ্রেণীর লোকেরাও যৌতুকের বলির স্বীকার হতে দেখা যায়, তবে তা গরীব অশিক্ষিত
লোকের তুলনায় অনেকটা কম। আতংকিত হবার কারণ তাদের আদরের কন্যাকে বিবাহ দিতে হবে। আর
বিবাহ দেবার সময় বর পক্ষকে খুশি করার নিমিত্তে কন্যা পক্ষকে বর পক্ষ চাহিবা মাত্র
তাদের ইচ্ছানুযায়ী উপঢৌকন দিতে হবে। নচেৎ বর পক্ষ কন্যা কে বিবাহ করিবে না। সুতরাং
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তখন বিবাহ ভেঙ্গে যাবার ভয়ে কন্যা পক্ষ বর পক্ষ কে উপঢোৌকন দিতে
বাধ্য হয়। ইহাকেই যৌতুক বলে। আর এই যৌতুকের ভয়েই আমাদের দেশের অধিকাংশ অশিক্ষিত
গরীব শ্রেণীর লোকেরা ভীতু হয়ে আতঙ্কগ্রস্ত জীবনযাপন করে। যাদের নুন আনতে পান্তা
ফুরায় তারা কিভাবে বর কে খুশি করার জন্য বিয়ের সময় মোটা অংকের উপহার দিবে, সেই চিন্তায় অনেক
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বাবার ঘুম হারাম হয়ে যায়। তারা আরাম করে যে একটু সুখ নিদ্রা
দিবে সেই সুব্যবস্থা তখন তাদের কাছে অমাবস্যার চাদের ন্যায় মনে হয়। আমাদের সমাজে
এটা একটি মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে । বর্তমানে যৌতুক ছাড়া বিবাহের কল্পনা করা
জেনো, রীতিমতো
একটি কল্পনা করার মতো ঘটনা। মহামারি রূপ ধারন করার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইসলামী জ্ঞান
সম্পর্কে অজ্ঞতা। আরেকটি কারণ হচ্ছে হিন্দু ধর্ম মতে মেয়েদের পিতার সম্পত্তিতে কোন
অধিকার থাকে না, যার ফলশ্রুতিতে হিন্দু পিতামাতা বিবাহের সময় কন্যা কে অনেক উপহার উপঢৌকোন
সহকারে বিবাহ দেয়। যা এখনো আমাদের দেশের হিন্দু সমাজের বিবাহের দিকে লক্ষ করলেই
আমরা তাঁর বাস্তবতা উপলব্দি করতে পারি। এক শ্রেণীর ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলমান
হিন্দুদের দেখা-দেখি বিয়েতে বরকে উপহার সামগ্রী দিতে শুরু করে, যা আস্তে আস্তে
সমাজের মহামারীর আকার ধারন করে বর্তমান রূপ ধারন করেছে। ইসলাম নারীকে পিতার
সম্পত্তিতে পুরুষের মতোই অধিকার দিয়েছে। অতএব ইসলামে যৌতুক প্রথার কোন স্থান নেই।
ইসলাম অনুযায়ী যৌতুক দেয়া নেয়া সম্পূর্ণ নাজায়িজ অবৈধ। বরংচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে
অগ্রাধিকার। যখন কোন পুরুষ কোন নারীকে বিবাহ করতে যাবে তখন তাকে অবশ্যই মোহরনা
পরিশোধ করে বিবাহ করতে হবে। মোহরানা ছাড়া বিবাহ সহি হবে না। মোহরনা অবশ্যই অবশ্যই
স্বামী কে দিতে হবে, ইহা স্ত্রীর প্রাপ্য, নয় কোন অধিকার। কোন স্বামী যদি মোহরনার টাকা বা মূল্য
স্ত্রীকে পরিশোধ না করে তাহলে আল্লাহ্র দরবারে হাশরের ময়দানে তাকে ধরা পরে যেতে
হবে। অতএব সব স্বামীকেই তাঁর স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরনা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু
আমাদের সমাজে আজ মুসলমানদের মাঝে দ্বীনি ইলমের সমজ না থাকার ধরুন স্ত্রী তোঁ তাঁর
প্রাপ্য মোহরানা পাচ্ছেই না বরংচ উলটু মেয়ে পক্ষকে বিবাহের সময় বর পক্ষকে মোটা
অংকের উপঢৌকোন দিতে হয়। যা আগেই বলছি যৌতুক নামে পরিচিতি লাভ করেছে। তাই প্রত্যেক
মুসলমানের কাছে আমার অনুরোধ যৌতুক কে না বলুন। ইসলাম যৌতুক কে হারাম করেছে, এই হারাম কর্ম থেকে
বেচে থাকা প্রতিটা মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নচেৎ পরকালে আল্লাহ্র কাঠগড়ায়
দাড়াতে হবে, তখন কোনভাবেই এই অন্যায় অপকর্মের সাস্তি সাজা থেকে বাচতে পারবেন না। আসুন সবাই
স্লোগান তুলি, যৌতুক কে না বলি, যৌতুক মুক্ত ইসলামী সমাজ গড়ি। সাদ্দাম হুসাইন শৈলানী -
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন