বিনিময় ছাড়া কাউকে কোনো জিনিস দেওয়ার নাম উপঢৌকন। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে
হাদিয়া [الْهَدِيَّةُ]। পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকেই হাদিয়া আদান-প্রদানের রেওয়াজ চলে আসছে। জাতি-ধর্ম
নির্বিশেষে সকল মানুষই এর সঙ্গে যুক্ত। কেউ হাদিয়া দেয়, আবার কেউ নেয়। কেউই এর
বাইরে নয়। হাদিয়া যেমন বৈধ হতে পারে তদ্রƒপ অবৈধ হাদিয়াও রয়েছে। সব হাদিয়াই জায়েয় নয়, আবার সকল হাদিয়া নাজায়েযও
নয়। হাদিয়াদাতা মুসলিমও হতে পারে, আবার অমুসলিমও হওয়া সম্ভব। তখন একজন মুসলিম কী করবে? এবং সকল মুসলিমেরই কি
হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে? ইত্যাদি বিষয় শরয়ী
দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করা উচিত।
হাদিয়ার অন্যান্য শব্দ
আরবীতে হাদিয়া বুঝানোর জন্যে আরো
কয়েকটি শব্দের ব্যবহার রয়েছে। যদিও প্রত্যেকটি শব্দের বিশেষ সংজ্ঞা আছে; কিন্তু
মর্ম ও মতলব প্রায় একই। যথা : হেবা, অসিয়ত, ওয়াকফ, আরিয়া
[الْعَارِيَّةُ], রুকবা
[الرُّقْبَى], উমরা [الْعُمْرَى]।
হাদিয়ার বৈধতা
হাদিয়ার বৈধতা এবং হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া
মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকল ফকীহ একমত। কারো কোনো দ্বিমত নেই। হাদিয়া মূলত বৈধ ও
কল্যাণকর একটি বিষয়। হ্যাঁ, যদি এর
সঙ্গে অবৈধ কোনো বিষয় সম্পৃক্ত হয় তখন সেটি নাজায়েয় বা মাকরুহ হতে পারেÑ সেটি
ভিন্ন কথা। তবে হাদিয়ার আদান-প্রদান মূলত জায়েয। কুরআন, সুন্নাহ
এবং মুসলিম উম্মাহর ইজমা হচ্ছে এর দলিল। পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে :
فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ
نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
অর্থ : তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে
দিয়ে দেয়, তাহলে
তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। [সূরা নিসা, আয়াত : ৪]
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে :
وَآتَى الْمَال عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى
وَالْيَتَامَى
অর্থ : এবং তারা আল্লাহর ভালোবাসায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মীয়স্বজন ও এতিমদের জন্যে সম্পদ ব্যয় করে। [সূরা বাকারা, আয়াত :
১৭৭]
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ ، لاَ تَحْقِرَنَّ
جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ
অর্থ : হে মুসলিম রমণীবৃন্দ! তোমাদের
প্রতিবেশীর জন্যে সামান্য উপঢৌকনকেও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর
হয়। [হাদীস নং- ২৪২৭]
অন্য একটি হাদীসে বিধৃত হয়েছে :
تَهَادُوا تَحَابُّوا
অর্থ : তোমরা পরস্পরে হাদিয়ার
আদান-প্রদান করো, তাহলে
মুহাব্বত বৃদ্ধি পাবে। [ইমাম বুখারী রচিত আদাবুল মুফরাদ, হাদীস
নং- ৫৯৪]
উপরন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া দিয়েছেন এবং
হাদিয়া গ্রহণও করেছেন। হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার অসংখ্য ঘটনা হাদীসের কিতাবে সহীহ সনদে
বর্ণিত হয়েছে। যা প্রমাণ করে হাদিয়া দেওয়া এবং নেওয়া একটি বৈধ ও উত্তম কাজ।
হাদিয়ার বৈধ হওয়ার শর্ত
হাদিয়ার লেনদেন একটি শরীয়তসম্মত বিষয়।
তবে এক্ষেত্রে শরীয়তের অন্যান্য বিধিনিষেধ সামনে রাখতে হবে। যদি শরীয়ত অনুমোদিত
পন্থায় হাদিয়ার আদান-প্রদান হয় তখনই কেবল তা বৈধ ও মুস্তাহাব হবে, অন্যথায়
তা নাজায়েয ও হারাম হয়ে যাবে। যেমন :
০১. হাদিয়ার জিনিস হালাল হতে হবে।
সুতরাং কোনো হারাম বস্তু যেমন মদ, শূকরের গোশত হাদিয়া দেওয়া
যাবে না; গ্রহণও
করা যাবে না। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট।
০২. হাদিয়া নিজের পূর্ণ সম্মতিতে হতে
হবে। যে-কোনো দান-অনুদানের ক্ষেত্রে তাই লক্ষণীয়। কারণ, কারো
অসম্মতিতে তার ধনসম্পদ, জিনিসপত্র
নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি কাউকে পরিস্থিতির শিকার বানিয়ে তার কাছ থেকে হাদিয়া
বা দান-অনুদান গ্রহণ করাও হারাম। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করেছেন এই বলে :
لاَ يَحِل مَال امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلاَّ
بِطِيبِ نَفْسِهِ
অর্থ : কোনো মুসলিমের সম্মতি ব্যতীত
তার সম্পদ ব্যবহার করা হালাল হবে না। [সুনানে বায়হাকী, হাদীস
নং- ১১৩২৫]
০৩. কোনো অন্যায় উদ্দেশ্যে হাদিয়ার
লেনদেন হারাম। চাকরি পাওয়া, বিচারে
প্রভাব সৃষ্টি করা, প্রশ্নপত্র
ফাঁস করা, পরীক্ষায়
নম্বর বেশি দেওয়াÑ ইত্যাদি
যে কোনো অবৈধ ও অন্যায় সুযোগলাভের জন্যে হাদিয়া দিলে তা আর বৈধ হাদিয়া থাকে না; অবৈধ
ঘুষ ও উৎকোচের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। বিষয়টি সকলের কাছেই স্পষ্ট।
বিধান হিসেবে হাদিয়ার প্রকারভেদ
হাদিয়ার আদান-প্রদান বৈধতার হিসেবে
হাদিয়াকে তিনভাগে ভাগ করা যায় :
০১. দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্য হাদিয়া
বৈধ। যেমন ভালোবাসা, আন্তরিকতা
সৃষ্টি বা বৃদ্ধি কিংবা এমনিতেই হাদিয়া দেয়।
০২. দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্যেই হারাম।
যেমন অন্যায় কাজে সহযোগিতার জন্য হাদিয়া দেওয়া।
০৩. শুধু গ্রহীতার জন্য হারাম, দাতার
জন্য নয়। যেমন কারো অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাদিয়া দেওয়া। নিজের জান-মাল, সম্ভ্রম
ইত্যাদি রক্ষার জন্যে অত্যাচারীদের হাদিয়া দেওয়া বৈধ; তবে
গ্রহণকারীর জন্য অবশ্যই হারাম।
তদ্রƒপ চাকরির জন্য হাদিয়া
[ঘুষ] দেওয়াও হারাম। তবে এই চাকরি ছাড়া যদি অন্য কোনো চাকরির ব্যবস্থা না হয় এবং
চাকরি না করলে তার জীবনও সঙ্কটের মুখোমুখি হবে, তখন হাদিয়া দেওয়ার
ব্যাপারে কিছুটা ছাড় রয়েছে বলে অনুমিত হয়। (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আল্লামা ইবনে
তাইমিয়া রহ. এর মাজমুআ ফাতাওয়া : খ. ২৯, পৃ. ২৫২ দেখা যেতে পারে।
হাদীস ও ফিকহের মূলনীতিভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সংক্ষিপ্ততার কারণে উল্লেখ
করা হল না।)
হাদিয়াদাতাকে হাদিয়া দেওয়া
ইসলাম অনুগ্রহের প্রতিদানে অনুগ্রহ
করতে শেখায়। কেউ কারো উপকার করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়।
হাদিয়াদাতাকে নিজ সামর্থ্য ও সক্ষমতা অনুযায়ী পার্থিব কোনো কিছু দেওয়া উত্তম।
এমনকি তার জন্যে দোয়া করা কিংবা তার সাথে সদাচরণ করা অথবা তার সাথে হাসিমুখে
সাক্ষাৎ করাও প্রতিদানের অন্তর্ভুক্ত।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا
وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ
অর্থ : কোনো পুণ্যের কাজকেই তুচ্ছ
জ্ঞান করো না; এমনকি
হাসিমুখে কোনো ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকেও না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং- ৬৮৫৭)
অন্য একটি হাদীসে এসেছে :
مِنْ اسْتَعَاذَكُمْ بِاَللَّهِ فَأَعِيذُوهُ,
وَمَنْ سَأَلَكُمْ بِاَللَّهِ فَأَعْطُوهُ, وَمَنْ أَتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا
فَكَافِئُوهُ, فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا, فَادْعُوا لَهُ
অর্থ : আল্লাহর নামে কেউ আশ্রয় চাইলে
তাকে আশ্রয় দাও। আল্লাহর নামে কেউ যাঞ্চা করলে তাকে দাও। কেউ অনুগ্রহ করলে
প্রতিদান দাও। প্রতিদান দিতে না পারলে অন্তত তার জন্যে দোয়া করো। (সুনানে কুবরা
লিন নাসায়ী, হাদীস
নং- ২৩৪৮)
প্রশাসনের কাউকে হাদিয়া দেওয়া
প্রশাসকের কর্তাগণ জনগণের টাকায়
বেতনভাতা গ্রহণ করে থাকেন। তাই তাদের কাজের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।
তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি ফি জমা দেওয়ার সরকারি বিধান থাকে তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি
জমা দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণ বৈধ।
বিচারক ও প্রশাসনের কতৃবৃন্দও তো
মানুষ। তাদেরও তো হাদিয়া গ্রহণ করার অধিকার থাকা দরকার। এক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে, সে
বিচারক বা প্রশাসনের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে যারা তাকে যে পরিমাণ হাদিয়া দিত, ওই
পরিমাণ হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ। এর বেশি নয়। কারণ, বেশি দিলে মনে করা হবে, এই
পদের জন্য দেওয়া হচ্ছে। এবং পরবর্তী কোনো সময়ে হাদিয়াদাতা কোনো অবৈধ ফায়দা হাসিলের
সুযোগ নিতে পারে।
এ ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
هَدَايَا الْعُمَّال غُلُولٌ
অর্থ : প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ হাদিয়া
কবুল করলে চুরি বলে গণ্য হবে। অর্থা হারাম। [মুসনাদে আহমদ : খ. ৫, পৃ.
৪২৪]
আরেকটি হাদীসে এসেছে :
هَدَايَا السُّلْطَانِ سُحْتٌ
অর্থ : রাজা-বাদশাদের হাদিয়া গ্রহণ
করা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। [খতিবে বাগদাদী রচিত তালখীসুল মুতাশাবিহ : খ. ১, পৃ.
৩৩১]
নিচের হাদীসটিতে বিষয়টি আরো
স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে :
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ " اسْتَعْمَل رَجُلاً مِنَ الأَسْدِ يُقَال لَهُ ابْنُ
اللُّتْبِيَّةِ عَلَى صَدَقَةٍ فَلَمَّا قَدِمَ قَال : هَذَا لَكُمْ وَهَذَا لِي
أُهْدِيَ لِي . فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى
الْمِنْبَرِ : فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ، وَقَال : " مَا بَال
عَامِلٍ أَبْعَثُهُ فَيَقُول : هَذَا لَكُمْ ، وَهَذَا أُهْدِيَ لِي ؟ أَفَلاَ
قَعَدَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ فِي بَيْتِ أُمِّهِ حَتَّى يَنْظُرَ أَيُهْدَى
إِلَيْهِ أَمْ لاَ ؟ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَنَال أَحَدٌ
مِنْكُمْ مِنْهَا شَيْئًا إِلاَّ جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى
عُنُقِهِ ، بَعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ ، أَوْ بَقَرَةٌ لَهَا خُوَارٌ ، أَوْ شَاةٌ
تَيْعَرُ ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْنَا عَفْرَتَيْ إِبِطَيْهِ ، ثُمَّ
قَال : اللَّهُمَّ هَل بَلَّغْتُ ؟ مَرَّتَيْنِ
অর্থ : আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে
রাসুল সা. যাকাতের কাজে নিয়োগ দেন। তার নাম ছিল ইবনুল লুতবিয়্যাহ। কাজ থেকে ফেরার
পর বলল, এ
হচ্ছে যাকাতের সম্পদ; আর
এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। তখন রাসুল সা. মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর
প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর বললেন, আমার প্রেরিত কর্মচারীর
কী হল, সে বলে
এটা যাকাতের সম্পদ, আর এটা
আমি হাদিয়াস্বরূপ পেয়েছি। সে তার বাপ-মা’র ঘরে বসে দেখতে পারে না তাকে হাদিয়া
দেওয়া হয় কিনা? আল্লাহর
কসম করে বলছি, তোমাদের
কেউ খেয়ানত করলে তা নিজের কাঁধে নিয়েই কেয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হবে। উট, গরু বা
ছাগল যাই হোক সেগুলো আওয়াজ করতে থাকবে। এরপর রাসুল সা. উভয় হাত উত্তোলন করে দুইবার
বললেন, হে
আল্লাহ! আমি পৌঁছে দিয়েছি? হাত
উত্তোলনের কারণে রাসুল সা. এর বগলের শুভ্রতা আমরা দেখতে পেলাম।
[সহীহ
বুখারী, হাদীস
নং- ৬৫৭৮, ৮৮৩]
বিচারকদের জন্য হাদিয়া গ্রহণ
উমর রা. এর বিচারব্যবস্থা (আলকাজা ফী
আহদি উমর) নামক গ্রন্থে রয়েছে :
বিচারক নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত
সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে আমাদের সৎ পূর্বসূরিদের বিচারকগণ বিচারকার্যের
অনন্য নমুনা ছিলেন। পবিত্রতা, দোষমুক্ততা, তাকওয়া
ও খোদাভীতি, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে
আল্লাহর ভয়ে তটস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন উপমা। এমনকি তারা অন্যদের জন্যে বৈধ
কার্যাবলি থেকেও নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতেন; যেন এর দ্বারা পরবর্তীদের
কারো ইনসাফ ও ন্যায় থেকে বিচ্যুত হওয়ার দলীল না হয়ে যায়। এ কারণেই তারা কারো
হাদিয়া-উপঢৌকন গ্রহণ করতেন না, পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে এমন দাওয়াতে উপস্থিত হতেন না। কাজী ওয়াকী’ রহ. বর্ণনা করেন, আলী
ইবনে হারব মুসেলী বলেন, ইসমাঈল
ইবনে রাইয়ান তাঈ আবী যিয়াদ আল-ফাকীমীর সূত্রে আবু হারীয থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম
শা’বী হতে বর্ণিত রয়েছে :
أن رجلاً كان يهدي إِلَى عُمَر بْن الخطاب كل
عام رجل جزور، خاصم إليه يوماً؛ فقال: يا أمير المؤمنين اقض بيننا قضاء فصلاً كما
يفصل الرجل من سائر الجزور؛ فقضى عُمَر عليه، وكتب إِلَى عماله: ألا إن الهدايا هي
الرشا، فلا تقبلن من أحد هدية.
‘একব্যক্তি
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর কাছে প্রতিবছর জবাইকৃত উটের পা হাদিয়া পাঠাত। একবার
তার বিরুদ্ধে উমর রা. এর কাছে মামলা দায়ের করা হয়। তখন সে বলল, হে
আমীরুল মুমিনীন! এমন চূড়ান্ত ফয়সালা প্রদান করুন, যেমন সমস্ত উট থেকে পা
পৃথক করা হয়। তখন উমর রা. নিয়মমাফিক তার বিরুদ্ধে রায় দিলেন। এবং সমস্ত গভর্নর ও
কর্মকর্তাদের কাছে এই মর্মে ফরমান পাঠালেন যে, হাদিয়া-উপঢৌকন উৎকোচ ও
ঘুষের অন্তর্ভুক্ত; তোমরা
কারো কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করবে না।’ [আখবারুল কুজাত : খ. ১, পৃ.
৫৫-৫৬]
ওয়ায়েজ ও মুফতিকে হাদিয়া দেওয়া
ওয়ায়েজ ও মুফতি দীনি সেবায় নিয়োজিত।
তাদের হাদিয়া দেওয়া জায়েয। তাদের জন্যেও হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ। মানুষ তাদেরকে
ভালোবেসে হাদিয়া-উপঢৌকন দিয়ে থাকে। তারা যদি হাদিয়ার প্রলোভনে সত্য বিষয় গোপন করে
কিংবা হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করে তাহলে তাদের এ হাদিয়া গ্রহণ করা
সম্পূর্ণ হারাম। এরা আল্লাহর দীনকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, ওয়ায়েজ
ও মুফতি কিংবা দীনি সেবায় নিয়োজিত যে কারো জন্যে হাদিয়া গ্রহণ না করা উত্তম। যেন
তাদের খেদমত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যে হয়ে থাকে।
অমুসলিমের হাদিয়া
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোনো কোনো কাফের থেকে হাদিয়া গ্রহণ করেছেন; আবার
কোনো কাফেরের হাদিয়া ফিরিয়েও দিয়েছেন। কোনো অমুসলিম কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করলে যদি
সে ইসলামের দিকে ঝোঁকে, তার
ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে কিংবা ইসলাম বা মুসলমানের কোনো কল্যাণ সম্পৃক্ত হয়, তাহলে
তার হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ। পক্ষান্তরে এমন কোনো কাফেরের হাদিয়া নিলে যদি ইসলাম ও
মুসলমানের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে কিংবা হাদিয়াদাতা খোটা দিয়ে বেড়াবে ইত্যাদি
কারণে তাদের হাদিয়া গ্রহণ করা অবৈধ। এ ভিত্তিতেই রাসুল সা. কোনো কাফেরের হাদিয়া
গ্রহণ করেছেন আবার কারো হাদিয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইমাম বুখারি স্বীয় সহিহ
বুখারি গ্রন্থে ‘মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা’ [باب قبول الهدية من المشركين] নামে একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদ স্থাপন করেছেন। এ শিরোনামের অধীনে
রাসুল সা. কর্তৃক মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পেশ করেছেন।
তবে অন্য হাদিসে স্পষ্ট আছে, এক মুশরিক রাসুলের কাছে
হাদিয়া পেশ করলে তিনি বলেন : إني لا أقبل هدية مشرك অর্থ : আমি
মুশরিকের হাদিয়া গ্রহণ করি না। উপরের শিরোনামের অধীনে বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে
এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানির ফাতহুল বারী : খ. ৫, পৃ.
২৩০; বদরুদ্দীর
আইনির উমদাতুল কারী : খ. ২০, পৃ. ১৫৮।
হাদিয়া খাদ্যদ্রব্যও হতে পারে আবার
অন্যান্য সামগ্রীও হওয়া সম্ভব। খাদ্যদ্রব্য হলে দু প্রকার : জন্তুর গোশত অথবা
জন্তুর গোশত ব্যতীত অন্যান্য যে কোনো খাবার। যেমন : মাছ, সব্জি, তরিতরকারি, চিড়া-মুড়ি, মিষ্টি, দুধ-দই
ইত্যাদি। এসব বস্তু/খাবার গ্রহণ করা এবং হাদিয়া কবুল করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট
নীতিমালা রয়েছে। আগত শিরোনাম লক্ষ্য করুন।
হালাল-হারামের মৌলিক নীতিমালা
এ মাসআলার ভিত্তি একটি মৌলিক মূলনীতির
ওপর ভিত্তিশীল। তা হল, গোশতের
ক্ষেত্রে আসল হচ্ছে হারাম হওয়া। আর গোশত ব্যতীত অন্য বস্তুতে মূল হচ্ছে হালাল ও
বৈধ হওয়া। তাই এসব বস্তু ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল মনে করা হবে যতক্ষণ তাতে হারাম
হওয়ার দলিল-প্রমাণ নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যাবে। উদাহরণস্বরূপ রুটি মূলত হালাল ও
বৈধ। চাই এ রুটি কোনো কাফের থেকে ক্রয় করা হোক। তা আপনার জন্য খাওয়া হালালÑ যতক্ষণ
না প্রমাণিত হয় যে, এর
সাথে কোনো নাপাক বা হারাম বস্তু রয়েছে, তখন সে রুটি হারাম হবে।
আর গোশত বা মাংসের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে তা হারামÑ যতক্ষণ না প্রমাণিত হয় যে, তা
হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হয়েছে, ততক্ষণ তা হারাম বিবেচিত
হবে। তাই কোনো কাফের গোশত বিক্রি করলে/হাদিয়া দিলে শরয়ি দলিল দ্বারা প্রমাণিত না
হয় যে, তা বৈধ
পন্থায় জবাই করা হয়নি তাহলে তা ভক্ষণ করা আমাদের জন্য জায়েয নেই। সুতরাং গোশতকে
হালাল বলার জন্য দলিলের প্রয়োজন এবং অন্যান্য বস্তুসামগ্রীকে হারাম আখ্যায়িত করার
জন্যে দলিলের দরকার। হালাল-হারামের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিÑ যা
স্মরণ রাখা উচিত।
মাও. তাকি উসমানি সাহেবের বয়ান সঙ্কলন
ইসলাম আওর হামারী জিন্দেগী [বঙ্গানুবাদ : ইসলাম ও আমাদের জীবন] গ্রন্থে
দ্রব্যসামগ্রীর বৈধ ও অবৈধতা শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। উৎসুক পাঠক সেখান
থেকে উপকৃত হতে পারেন।
মসজিদে অমুসলিমদের হাদিয়া/দান
মসজিদ নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণে
অমুসলিম হাদিয়া বা দান করলে তার হাদিয়া/দান গ্রহণ করা বৈধ হবে কি-না? বিষয়টি
কিছুটা মতানৈক্যপূর্ণ। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত উক্তিমতে মসজিদের জন্যে অমুসলিমদের
হাদিয়া/দান গ্রহণ করা বৈধ। এ বৈধতা একটি শর্তসাপেক্ষে। তা হল, অমুসলিম
দাতার বিশ্বাসমতে এ কাজটি পুণ্যময় বিবেচিত হতে হবে। সুতরাং সে যদি পুণ্যের কাজ
মনেকরে মসজিদে কিছু দিতে চায় তখন তার অনুদান গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।
বিখ্যাত ফতোয়ার গ্রন্থ রদ্দুল মুহতারে
রয়েছে :
أَنَّ شَرْطَ وَقْفِ الذِّمِّيِّ أَنْ يَكُونَ
قُرْبَةً عِنْدَنَا وَعِنْدَهُمْ كَالْوَقْفِ عَلَى الْفُقَرَاءِ أَوْ عَلَى
مَسْجِدِ الْقُدْسِ ، بِخِلَافِ الْوَقْفِ عَلَى بِيعَةٍ فَإِنَّهُ قُرْبَةٌ
عِنْدَهُمْ فَقَطْ أَوْ عَلَى حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ فَإِنَّهُ قُرْبَةٌ عِنْدَنَا
فَقَطْ.
অর্থ : জিম্মি (অমুসলিম) ব্যক্তির
ওয়াকফ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল, ওই কাজটি তাদের ও আমাদের
বিশ্বাসমতে পুণ্যের হতে হবে। যেমন- গরিব-দুঃখী বা মসজিদে আকসার জন্যে ওয়াকফ করা।
গির্জার জন্যে ওয়াকফ করার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, তা কেবল তাদের মতে
পুণ্যময়। তদ্রƒপ হজ ও
উমরা। কারণ, তা
শুধু আমাদের মতে সওয়াবের কাজ। [খ. ১৭, পৃ. ১৭৫]
উপর্যুক্ত শর্তের পাশাপাশি আরো কয়েকটি
বিষয় লক্ষণীয় :
০১. দীনি কোনো কাজে অমুসলিমদের
দান-অনুদান/হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। পরবর্তীতে এর অপকারিতা
প্রকাশ পেতে পারে।
০২. এ রকম কোনো আশঙ্কা থাকে না যে, তাদের
অনুদান গ্রহণ করলে পরবর্তীতে তাদের গির্জা, মন্দির, উপাসনালয়ে
বা শরিয়তগর্হিত কোনো কাজে মুসলিমদের অনুদান দিতে হবে। এমন শঙ্কা থাকলে তাদের
হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না।
তৎসঙ্গে মসজিদে বা ওই দীনি কাজে
অমুসলিম দাতাদের প্রভাব বিস্তার করার কোনো সম্ভাবনা না থাকে। থাকলে গ্রহণ করা যাবে
না। কারণ, এর ফল
ভালো হবে না। উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। (মাও. খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি রচিত
জাদিদ ফেকহি মাসায়েল : খ. ১, পৃ. ১৫৫-১৫৬)
ওয়াজ মাহফিল বা দীনি কাজে অমুসলিমদের
হাদিয়া
সাক্ষাতে এবং ফোনে অনেক ভাই বারবার
জানতে চেয়েছেন, ওয়াজ
মাহফিলের জন্যে হিন্দুদের টাকা নেওয়া যাবে কি-না? মসজিদে অমুসলিমদের হাদিয়া
গ্রহণের নীতিমালাও এখানে কার্যকর হবে। অর্থাৎ উপর্যুক্ত শর্তসাপেক্ষে তাদের
দান-অনুদান/হাদিয়া গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে জোরপূর্বক আনা যাবে না। আনলে
হারাম হবে। শুধু অমুসলিম কেন, কোনো মুসলিমের কাছ থেকেই
জোরকরে নফল কাজের জন্যে অনুদান আনা যাবে না। হারাম। পূর্ণ সম্মতি ও সন্তুষ্টি
আবশ্যক। কারণ, রাসুলে
কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لا يحل مال أمرئ مسلم إلا بطيب نفسه
অর্থ : কোনো মুসলিমের (তদ্রƒপ
অমুসিলমেরও) পূর্ণ সম্মতি ব্যতীত তার সম্পদ গ্রহণ করা হালাল হবে না। (সুনানে
দারাকুতনি : খ. ৩, পৃ.
২৬)
মাদরাসা, পাঠাগার
কিংবা যে কোনো দীনি কাজে অমুসলিমদের হাদিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে উপরে বিধৃত মূলনীতি
প্রযোজ্য হবে।
হারাম উপার্জনকারীর হাদিয়া
অনেক লোক সরাসরি হারাম উপার্জনে
লিপ্ত। তার অন্য কোনো বৈধ উপার্জন নেই। তাহলে এমন ব্যক্তির হাদিয়া হারাম থেকে
হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হবে। তাই তার হাদিয়া গ্রহণ করা হারাম। তবে তার যদি অবৈধ
উপার্জনের পাশাপাশি বৈধ উপার্জনও থাকে তখন এ হাদিয়া বৈধ উপার্জন থেকেও হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অবৈধ উপার্জন থেকেও দিতে পারে। তাই তখন তার হাদিয়া গ্রহণ করা
জায়েয হলেও অনুত্তম। আল্লাহ তাআলা কেবল হালাল ভক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ
হচ্ছে :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ
طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে আমি
যে রিজিক দিয়েছি তাত্থেকে হালালগুলো ভক্ষণ করো। (সূরা বাকারা : ১৭২)
একটি হাদিসে রাসুলে কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দেন :
إِنَّ الْحَلاَلَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ
بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ
فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِى
الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِى الْحَرَامِ ...
অর্থ : নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট; হারামও
স্পষ্ট। হালাল ও হারামের মাঝে অনেক সন্দেহযুক্ত বিষয় রয়েছে যা অনেক মানুষই জানে
না। সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বিরত থাকলে তার দীন ও সম্মান হেফাজতে থাকবে। পক্ষান্তরে
সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলিতে লিপ্ত হলে সে যেন হারামেই লিপ্ত হল...। (সহিহ মুসলিম, হাদিস
নং- ৪১৭৮)
হাদিয়ার নিয়তে হাদিয়া দেওয়া
হাদিয়া সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ও
স্বেচ্ছাদানমূলক বিষয়। হাদিয়া দিতে হয় খাঁটি নিয়তে। কোনো পার্থিব উদ্দেশ্য ছাড়া। তবে
হাদিয়াগ্রহীতার উচিত হচ্ছে, তার
সামর্থ্য থাকলে হাদিয়াদাতাকেও হাদিয়া দেওয়া। রাসুলে কারিম সা. বলেন :
تَهَادَوْا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ
وَغَرَ الصَّدْرِ
অর্থ : তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময়
করো। এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস
নং- ৯২৫০)
এর দ্বারা অনুমিত হয়, একজন
হাদিয়া দিলে পরে তাকেও হাদিয়া দেওয়া সুন্নত। নবী কারিম সা. এবং সাহাবায়ে কেরাম
এভাবেই আমল করেছেন।
তবে হাদিয়া পাওয়ার নিয়তে হাদিয়া দেওয়া
একটি গর্হিত, নিন্দিত
ও ছোটলোকি কাজ। আজকাল বিয়ে-শাদি কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করার পূর্বে
হিসেব করা হয় যে, কাকে
দাওয়াত দিলে কত টাকা বা পুরস্কার পাওয়া যাবে। কতজন অতিথি আসলে কত টাকা উঠতে পারে।
অনুষ্ঠান করলে খরচ উঠবে কিনা এ চিন্তা করে। দাওয়াতে হাদিয়া না নিয়ে আসলে খারাপ মনে
করা হয়। এমনকি পরবর্তীতে ওই বাড়িতে কোনো দাওয়াতে গেলে তার বাড়িতে কত টাকা/হাদিয়া
দিয়েছিল সেটা মনে রাখা হয়। সে অনুপাতে গিফট করে। এটা একটি অসামাজিক কাজ। অভদ্রতা
আর কাকে বলে! ইসলাম এটাকে কখনো সমর্থন করে না। হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক
বিষয়।
হাদিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বিধিবিধান
জানতে আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, আল্লামা ইউসুফ
আল-কারযাবীর আল-হালাল ওয়াল হারাম এবং অন্যান্য ফিকহের কিতাবের হাদিয়া, রিশওয়াহ
(ঘুষ) ও হেবা অধ্যায় দেখা যেতে পারে।
[লেখাটি
একটি মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুকেও দিয়েছিলাম। এখন আংশিক পরিমার্জন
করলাম। হয়তো উপকারিতা বৃদ্ধি পাবে।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন