বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

২০ রাকায়াত তারাবীহ্‌র বর্ণনা সায়েব বিন ইয়াযীদ রাযিঃ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত

ইয়াযীদ বিন খুসায়ফা সাহাবী হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন- " তারা (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীগণ) হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রঃ) এর যুগে ২০ রাকা'আত পড়তেন। ( আস সুনানুল কুবরা, বাইহাক্বীঃ ২/৪৯৬। (সনদ সহীহ) )
এ ছাড়াও এটি ভিন্ন সনদে মা'রিফাতুস সুনান অল আসার, বাইহাক্বীঃ ২/৩০৫; আস সুনানুল কুবরা, বাইহাক্বীঃ ১/২৬৭-২৬৮ এ বর্ণিত হয়েছে যার সনদ সহীহ।

কিন্তু মুযাফফর বিন মুহসিন সাহবে সম্পূর্ণ জালিয়াতির সাথে আর আল্লামা আলবানি রাহঃ এর কথার কপিপেস্ট করে সাথে অনেক মিথ্যাচার করে এটাকে জাল বলেছে। আল্লাহর জমিনে এরকম ধোকাবাজ আর কতটা আছে আল্লাহই ভালো যানে যে আলেম হয়ে সহীহ হাদীসকে জাল বলতে পারে।
সামনে তার সবগুলো আপত্তি ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা এখন বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' বা 'মারেফাতুস সুনান' এর রেওয়ায়েত সম্পর্কে প্রকৃত মুহাদ্দিসীনগণ এবং প্রকৃত সলফে সালেহীনগণ কি বলেছেন তার প্রতি দৃষ্টি দিব।
এর সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মত
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
এর কিছু উদ্ধৃতি ইমাম বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' কিতাবের সংক্ষিপ্ত ভার্সনে পাওয়া যায় যার শুরু হয়েছে নিম্নোক্ত শব্দগুলো দ্বারাঃ
كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطّاب

১। ইমাম আল নববী (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ ) তার 'আল মাজমু শরহ আল মুহাযযাব' কিতাবে বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ৪র্থ খণ্ড/ পৃ-৩২, আল রাফী এর 'ফাতহ আল আযিয' এবং ইবনে হাজার আল আসক্বালানী এর 'তালখীস আল হাবির' এর সাথে ছাপানো )
ইমাম নববী তার 'খুলাসাতুল আহকাম' কিতাবেও (১/৫৭৬) বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।

২। ইমাম ফখরুদ্দীন আল যায়লাই (মৃঃ ৭৪৩ হিঃ) তার 'তাবেয়ীণ আল হাক্বাইক' কিতাবে বায়হাক্বীর রেওয়ায়েতের সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/১৭৮, দারুল কুতুব আল ইসলামি, কায়রো থেকে ছাপানো, ১৩১৩হিঃ )
৩। ইমাম তক্বীউদ্দীন আল সুবকী (মৃঃ ৭৫৬ হিঃ) বায়হাক্বীর 'মারেফাতুস সুনান' এ উল্লেখিত সনদটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম আল সুয়ুতী তার কিতাব 'আল মাসাবিহ ফি সালাতুল তারাবীহ' তে তারাবীহ নামাযের রাকাআত সংক্রান্ত আলোচনাতে আল সুবকীর কিতাব 'শরহ আল মিনহাজ' থেকে উদ্ধৃতিটি নকল করেন।
৪। শাফী মাযহাবের হাফেজ, ইবনে আল মুলাক্কীনও (মৃঃ ৮০৪ হিঃ) তার 'আল বদর আল মুনির' কিতাবে (৪/৩৫০) বায়হাক্বীর এই সনদকে সহীহ বলেছেন। এই কিতাবের ৫ জন সম্পাদক ৯ নং পাদটীকায় এই রেওয়ায়তকে বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা'র (২/৪৯৬) দিকে নিসবত করেছেন।
৫। শাফি মাযহাবের হাফেজ, ওয়ালিউদ্দীন আল ইরাক্বীও (মৃঃ ৮২৬ হিঃ) তার 'তারহিল তাতরীব ফি শরহিল তাকরীব' কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ২/৩৬৫, এই শরাহতে তার পিতা শায়খ যয়নুদ্দীন আল ইরাকীর মতামতও রয়েছে। )
৬। সহীহ আল বুখারীর ভাষ্যকার শাফি মাযহাবের ইমাম আল ক্বাসতাল্লানীও (মৃঃ ৯২৩ হিঃ) তার কিতাব 'ইরশাদ আল সারী' তে হাফিয ওয়ালীউদ্দীন আল ইরাক্বীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেছেন যে, সুনানে আল বায়হাক্বীর সনদটি সহীহ। ( ৩/৪২৬, ইমাম আল নববীর 'শরহে মুসলিম' এর সাথে বুলাক্ব প্রেস, মিশর থেকে ছাপানো, ১৩০৪ হিঃ )
৭। ইমাম বদরুদ্দীন আল আইনী আল হানাফী (মৃঃ ৮৫৫ হিঃ) তার 'আল বিনায়া' কিতাবে (১/১৬০) ইমাম বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' তে উল্লেখিত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। 
আল আইনী বায়হাক্বীর (সুনানে আল কুবরা) সনদটিকে শুধুমাত্র সহীহ - এটুকু বলেছেন তা নয়, বরং এটিকে আমাদের ইমামগণ (হানাফী), শাফি এবং হাম্বলীরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাও উল্লেখ করেছেন।

৮। শাফি মাযহাবের ইমাম জালালুদ্দীন আল সুয়ুতীও (মৃঃ ৯১১ হিঃ) তার 'আল মাসাবিহ ফি সালাতুল তারাবীহ' কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( তার কিতাব 'আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়ী' এর সাথে ছাপানো, ১/৩৮৭ )
৯। হাফিয ইবনে হাজার আল আসক্বালানী এর একজন স্বনামধন্য ছাত্র এবং শাফি মাযহাব কর্তৃক শায়খুল ইসলাম উপাধি প্রাপ্ত, শীর্ষস্থানীয় ফক্বীহ, শায়খ যাকারিয়া আল আনসারি (মৃঃ ৯২৬ হিঃ)। তার 'ফাতহ আল ওয়াহহাব বি মিনহাজ আল তুল্লাব' কিতাবে (১/৬৮) তিনি শুধুমাত্র ২০ রাকাআত এর পক্ষে মত দিয়েছেন তা নয়, বরং বায়হাক্বীর রেওয়ায়েতের একটি সনদকে সহীহও বলেছেন।
শায়খ যাকারিয়া আল আনসারি তার 'আসনা আল মাতালিব ফি শরহ রাওদ আল তালিব' কিতাবেও একে সহীহ বলেছেন। ( ১/২০১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, ২০০০ খ্রিঃ )

১০। হানাফী ফক্বীহ ইবরাহীম আল হালাবি (মৃঃ ৯৫৬হিঃ) তার 'গুনিয়াতুল মুতামাল্লি', যা 'কাবিরি' নামে সুপ্রসিদ্ধ, কিতাবে (পৃঃ ৩৮৮) 'সুনান আল কুবরা' তে উল্লেখিত বায়হাক্বীর সনদটিকে সহীহ বলেছেন।
১১। শাফী মাযহাবের ফক্বীহ, খতীব আল শিরবিনি (মৃঃ ৯৭৭ হিঃ) তাঁর 'মুগনী আল মুহতাজ' কিতাবে ২০ রাকাআতের সমর্থনে বায়হাক্বীর সনদটিকে সহীহ বলে রায় দিয়েছেন।(১/২২৬, দারুল ফিকর, বৈরুত)
১২। হানাফী ইমাম আলি আল ক্বারীও (মৃঃ ১০১৪ হিঃ) বায়হাক্বীর এই সনদকে তার 'শরহ আল নুক্বাইয়াহ' কিতাবে (১/২৫০) সহীহ বলেছেন।
১৩ । হাদীসের হাফিয হানাফী ইমাম মুহাম্মদ মুরতাযা আল যাবিদী (মৃঃ ১২০৫ হিঃ) তার রচিত ইমাম আল গাযালীর 'ইয়াহইয়া উলুম উদ দ্বীন' কিতাবের অত্যন্ত মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থ, যা 'ইতহাফুস সাদাতুল মুত্ত্বাকী' নামে পরিচিত, কিতাবে (৩/৪১৫) বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।
১৪। শায়খ সুলাইমান আল বুজাইরমি আল শাফি (মৃঃ ১২২১ হিঃ) 'শরহ মিনহাজ আল তুল্লাব' এর হাশিয়াতে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/৩৭০, মাকতাবা ইসলামিয়্যা, দিয়ার বকর, তুরস্ক )
১৫। শাফী মাযহাবের মুফতী শায়খ আবু বকর আল দিমইয়াতি (মৃঃ ১৩১০ হিঃ) তার 'ইয়ানাতুল তালিবিন' কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/২৬৫, দারুল ফিকর, বৈরুত )
সমকালীন আলেমগণ যারা বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন 
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১। হানাফী মুহাদ্দিস, শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্ব, ইমাম বাগাবী এর কিতাব 'শরহ আল সুন্নাহ'এর সম্পাদনাতে (৪/১২০) ইমাম বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' তে উল্লেখিত সনদটিকে সহীহ বলেছেন ( এবং এর সমস্ত রাবীকে তিনি ন্যায়বান ও বিশ্বস্ত বলেছেন)।
ইমাম হাফিয যাহাবীর 'সিয়ারু আলামিন নুবালা' কিতাবের সম্পাদনাতে(১/৪০১, ১ নং পাদটীকা) শায়খ শুয়াইব এই সনদকে সহীহ এবং এর সমস্ত রাবীকে ন্যায়বান এবং বিশ্বস্ত বলেছেন।

সালাফী স্কলারবৃন্দ যারা এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন অথবা গ্রহণ করেছেন
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২। আব্দুর রহমান আল মুয়াল্লিমি আল ইয়ামানী (মৃঃ১৩৮৬ হিঃ) তার 'কিতাব কিয়াম রমাদ্বান' এ (দেখুনঃ পৃ - ৫৭,মাকতাবা আল মাক্কীয়া, প্রথম সম্পাদনা, মক্কা, ১৯৯৭) বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' তে বর্ণিত রেওয়ায়েতটিকে সহীহ বলেছেন এবং ন্যায়বিচার করেছেন।

৩। সাম্প্রতিক কালের একজন সালাফী যিনি আলবানী এর প্রতিপক্ষ, ইসমাঈল আল আনসারী (মৃঃ ১৯৯৬ খ্রিঃ / ১৪১৭ হিঃ), তার 'তাসহীহ হাদীস সালাতিল তারাবীহ ইশরীন রাকা'আ ওয়াল রাদ আলা আল আলবানী ফি তাদ'ইফিহি' কিতাবে (পৃঃ ৭, মাকতাবা আল ইমাম আল শাফী, রিয়াদ, ২য় সম্পাদনা, ১৯৮৮) ইমাম বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' তে বর্ণিত রেওয়ায়েতটির কথা উল্লেখ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, এই হাদীসকে ইমাম আল নববী তার 'আল খুলাসা' এবং 'আল মজমু' কিতাবে আল যায়লাই (নাসবুর রায়াহ এর লিখক) এর সাথে সম্মতিক্রমে, তক্বীউদ্দীন আল সুবকী তার 'শরহে আল মিনহাজ' কিতাবে, ইবনে আল ইরাক্বী তার 'তারহীল তাতরীব' কিতাবে, আল আইনী তার 'উমদাতুল ক্বারী' কিতাবে, আল সুয়ুতী তার 'আল মাসাবিহ' কিতাবে, আলি আল ক্বারী তার শরাহ মুয়াত্তাতে এবং আল নীমাভী তার 'আছারুস সুনান' কিতাবে সহীহ বলেছেন।
৪। দামেস্ক এর সাম্প্রতিককালের সালাফী আব্দুল ক্বাদীর আল আরনাউতও (মৃঃ ২০০৪ খ্রিঃ / ১৪২৫ হিঃ) ইমাম ইবনে আল আসির আল জাযারী (মৃঃ ৬০৬ হিঃ) এর 'জামি আল উসুল ফি আহাদিস আল রসুল' কিতাবের সম্পাদনাতে (৬/১২৩-১২৪) বায়হাক্বীর 'সুনান আল কুবরা' তে উল্লেখিত রেওয়ায়েতকে সহীহ বলেছেন।
৫। সালাফী দলের একজন লিখক হলেন সৌদী পন্থী আবদুল্লাহ আল দুয়াইশ (মৃঃ ১৪০৭ হিঃ)। তার 'তানবীহ আল ক্বারী লি তাকবিয়া মাদু'য়াফা আল আলবানী' কিতাবে (পৃঃ৪৭-৪৮), এই সনদের সমস্ত রাবীকে ছিকাহ (বিশ্বস্ত) বলেছেন।
৬। হামুদ আল তুবাইযিরি (মৃঃ ১৯৯২ খ্রিঃ) যিনিও একজন সৌদী সালাফী লেখক হিসেবে খুবই বিখ্যাত, তার 'আল রাদ আলাল কাতিব আল মাফতুন' কিতাবে (পৃঃ ১৩২) ইমাম আল বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।
সংক্ষেপে মূলত এই হল বায়হাক্বীর এর রেওয়ায়েত সম্পর্কে সলফে সালেহীন এবং মুহাদ্দিসীনদের রায়। আহলে হাদীস ভাইয়েরা দেখুন আপনাদের তথাকথিত শায়খ এবং ইমামরা কি করেছেন এসব হাদীস নিয়ে !! কতজন বড় বড় মুহাদ্দিসীনদের তারা উম্মতের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযুক্ত করে ফেলেছেন !! দেখুন, আপনাদের শায়খদের আসল চেহারা নিজের চোখে !! কি ধরণের মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি আর প্রতারণা তারা নিজেরা করেছেন উম্মতের সাথে !!
তাই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আসুন, সত্য পথে আসুন, ন্যায় পথে আসুন, ৮ রাকাআত তারাবীহ এর বিদয়াতী পথ পরিহার করে সাহাবাদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যে ২০ রাকাআত তারাবীহ প্রমাণিত তা গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী আমল করুন। আপনাদের সত্যের দাওয়াত দিচ্ছি, গ্রহণ করুন। আর মনে রাখবেন একদিন আপনাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, আপনাকে সত্যের পথে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, আপনি গ্রহণ করেছিলেন কি না ? যদি গ্রহণ না করে থাকেন তবে এর উপযুক্ত জবাব আপনার কাছে আছে কি ? ভেবে দেখুন আর একটিবার !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন