একটি শিশু তার বাল্যকালে যেই শিক্ষা ও পরিবেশ পেয়ে থাকে তা সারা জীবন তাকে প্রভাবিত করে। আমাদের বাংলাদেশের গ্রামীন সংস্কৃতি ছিলো ফজরের আজানেরও আগে বা আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠে বড়রা ফজরের নামাজ পড়ে ফসলের মাঠে চলে যেতো। যারা আগে থেকেই ফসলের মাঠে তারা মাঠেই গামছা বিছিয়ে মাটির উপর নামাজ আদায় করতো। আর ফজরের পর গ্রামের প্রতিটি পরিবার তাদের ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে স্থানীয় মকতব-মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিতো। কায়দা, আমপাড়া এবং কুরআনের শিক্ষার মাধ্যমেই তাদের দিবসের সূচনা হতো, জীবনের সূচনা হতো।
এরপর তারা স্কুলে গেলে অতীতে সেখানেও তারা মোটামুটি দ্বীনী শিক্ষা পেতো। নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা লাভ করতো। স্কুল গুলোর সিলেবাসে মুসলিম লেখক-সাহিত্যিকদের লেখা ভরপুর ছিলো। আযান, নামাজ, ইবাদত, সমাজে পরোপকার ইত্যাদি নানাবিধ সুন্দর সুন্দর শিক্ষামূলক এবং আদর্শিক ভিত্তি মজবুত করার মতো লেখা, কবিতা ইত্যাদি আগেরকার সময়ের পাঠ্যবই গুলোতে ছিলো।
কিন্তু আফসোস!
বর্তমানে কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের যুগ শুরু হওয়ার পর এই জাতীর ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের শোলকলা পূর্ণ হয়েছে। আগেকার সেই মকতব থেকে কুরআনের শিক্ষা নিয়ে দিবসের সূচনা করা আজ আর অনেক পরিবারের শিশুদের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ সেই সময়ে তাদেরকে চলে যেতে হবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা আধুনিক কিন্ডারগার্টেন গুলোতে।
সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সুযোগ নিয়ে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি, রাম-বাম অনৈসলামিক সম্মিলিত কুচক্রীরা গত কয়েকবছরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক থেকে আগের লেখা ও সিলেবাস গুলোকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। আল্লাহ এবং তার রাসূলের পরিবর্তে বই গুলোকে কট্টর হিন্দুয়ানী কালচার দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হচ্ছে। মুসলিম লেখক, সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী মুশরিকদের নাপাক লেখার মাধ্যমে একটি অন্ধকার আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশের হিন্দু এবং অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন হলে আলাদা সিলেবাস করে দিলে আমাদের আপত্তি ছিলো না। কিন্তু মুসলিম সন্তানকে শৈশবেই তার ঈমান নষ্টের বীজ বপন করার মতো বিষাক্ত লেখা কিছুতেই একটি মুসলিম দেশের জাতীয় সিলেবাসে থাকতে পারে না।
উম্মাহর এই কঠিন দূরাবস্থা ও এর থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আমাদের এখনই ভাবা দরকার। আমরা আগেও বলেছিলাম, “শুধুমাত্র রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল করাই নয় বরং রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম” কায়েম করার জন্য আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। গণতান্ত্রিক কুফরী শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতিবাজ শাসক ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের পরিবর্তন ছাড়া এই জাতির সত্যিকার পূর্ণাঙ্গ মুক্তি নেই।
তবে এটাও সত্য যে, রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম আসার অপেক্ষায় বসে না থেকে আমাদেরকে তৃণমূল থেকেও কাজ করতে হবে। মারাত্মক জখম নিয়ে হাসপাতালে আসা মুমূর্ষ রোগীকে ডাক্তার একদিকে যেমন স্যালাইন দেয়া শুরু করে, অপরদিকে তার রক্ত শূন্যতা দূরিকরণের জন্য আলাদা সিরিঞ্জ দিয়ে ভিন্ন রগে রক্ত দেয়াও শুরু করে। পাশাপাশি দরকারী ঔষধও চলতে থাকে স্যালাইনের ভেতরে দিয়ে। এমতাবস্থায় অপারেশনের প্রয়োজন হলে অপারেশনও করা হয়। আমাদের দেশের জনগণের দ্বীনী অবস্থা বর্তমানে ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষ রোগীর চাইতেও ভয়ানক। তাই আজ আমাদের একই সাথে কয়েকটি বিষয়ে কাজ করতে হবে-
১। জাতীয় পর্যায়ে স্কুলের সিলেবাস অনতিবিলম্বে সংশোধন করার দাবী তুলতে হবে।
৩। মুসলিম শিশু-কিশোরদের ঈমান গঠনে উপযুক্ত পাঠ্য, বই, লেখা সহজভাবে সারা দেশে পৌঁছে দিতে হবে।
৪। কুরআনের প্রাথমিক পাঠকে আরো সহজ করে মসজিদ ভিত্তিক মকতব কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে হবে।
৫। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প মেয়াদী আলাদা দ্বীনী সিলেবাস প্রণয়ন করে তার ডকুমেন্ট ও গ্রন্থনাসমূহ ব্যাপকভাবে আমাদের দেশের গণমানুষের পৌঁছে দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
(সংগৃহিত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন