বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায়। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মিত্রবাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে যায় বীর বাঙ্গালী। এদিনেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সার্থক হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় একের পর এক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মতো কোণঠাসা করে তোলে।কুমিল্লায় মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজারে পাকসেনাদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিয়াবাজার দখল করে নেন। আখাউড়ার আজমপুর স্টেশনে দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানেথেকে দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে যায়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গেযুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। নোয়াখালীতে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সোনাইমুড়ি মুক্ত করে। এরপর তারা চৌমুহনীতেনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মাইজদীতে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। রংপুরের পলাশবাড়ীতে ১২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। সাতক্ষীরা থেকে পিছু হটে দৌলতপুরের দিকে যায় পাকবাহিনী।পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়। এদিন ১১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী কামালপুর বিওপি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।এদিকে বিকেলে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কালকাতার এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে ভারতের বিমানবাহিনীর স্থাপনা ও রাডার স্টেশনগুলোতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। পাকিদের এ আক্রমনঅপারেশন চেঙ্গিস খাননামে পরিচিত । টাইম ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, নয়াদিল্লীতে সহসা অন্ধকার নেমে এলো। সন্ধ্যা ৬টায় ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোতে সাংবাদিকরা একত্র হয়েছিলেন বাংলাদেশের যুদ্ধের খবর সংগ্রহের নিয়মিত কাজে। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এটা ব্ল্যাক আউটের মহড়া নয়, আসল ঘটনা। এইমাত্র আমরা জানলাম, পাকিস্তানি বিমানবাহিনী অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগরে হামলা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতা সফরকালে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানের সভা সংক্ষেপ করে সন্ধ্যায় হঠাৎ দিল্লী রওয়ানা হন। রাতে জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে তিনি বলেন, পাকিস্তান আজ ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে। ভারতকে এ যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।পরদিন লোকসভার অধিবেশনে ইন্দিরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বিষয়ে বক্তব্য দেন। এভাবে এ দিনেইপাক-ভারত যুদ্ধশুরু হয় ।এদিকে পাকিস্তানের ভারত আক্রমণের জের ধরে এ দিনে গঠন হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাক অবস্থানকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের ৭টি এলাকা দিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ পরিচালনা করে। পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের চার ডিভিশন সৈন্য ভারতের সাত ডিভিশন সৈন্য ও মুক্তিযোদ্ধার মুখোমুখি হয়।এদিনে জামায়াতের গু আজম করাচীতে বলেনঃএদিন জুমার নামাজের পর ভারতীয় হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল চট্টগ্রাম শহর প্রদক্ষিণ করে লালদীঘি ময়দানে জড়ো হয়। জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-মাদানীর সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য রাখেন কনভেনশন লীগ প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী, পিডিপির মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, ছাত্রনেতা আবু তাহের প্রমুখ।(দোহাইঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, মূলধারা’৭১, বিবিসি নিউজ আর্কাইভ,ইত্তেফাক, উইইকিপেডিয়া )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন