الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ مُخْلِصاً لَهُ الدِّيْنَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ الصَّادِقُ الْأَمِيَنُ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْراً، أَمَّا بَعْدُ :
সৎকাজ, সে তো মুমিনের চিরসঙ্গী তবে,
যাকিছু অসৎ তাও বাসা বাঁধে, কারও কারো জীবনে
অথবা সমাজ-বক্ষে দাবি করে পরিবর্তন, আর তখন
উঠে দাঁড়ায় মুমিন শক্ত হাতে, কখনো ঝড়ের ন্যায়,
বিছিয়ে দিতে দিগন্তজুড়ে শুভ্রতার নিটোল চাদর।
সুপ্রিয় মুসল্লীবৃন্দ! আল্লাহ তাআলা যতগুলো ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন,তন্মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো সৎকাজের নির্দেশ এবং অসৎকাজে বাধা প্রদান। তাই আজ আমরা এই ইবাদতের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করব ইনশা’আল্লাহ।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, সাহাবী সাহল বিন সা‘আদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ ‘তোমার মাধ্যমে যদি একটি লোককেও আল্লাহ হিদায়েত দান করেন, তা হবে লাল উটনীর চেয়েও উত্তম’ ( বুখারী ও মুসলিম)।
প্রিয় ভাইয়েরা! কারো হিদায়েতের জন্য কাজ করার ফযীলত এভাবেই আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। মানুষের হিদায়েতের জন্য কাজ করার অর্থই হলো আল্লাহ যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা করতে বলা, যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বাধা দেয়া। এরই নাম ‘আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার’ বা সৎকাজে নির্দেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা।
আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। বরং, এ তো নবুওয়াতের উত্তরাধিকারতূল্য। কিন্তু আফসোস! ইবলীস মুসলমানদের অনেককেই ধোঁকায় ফেলে রাখে। তাদের কানে-কানে বলে যায়, বিশেষভাবে যিকর ধরো, নামায পড়ো, কিরাত পড়ো, রোযা রাখো, দুনিয়া-বিমুখ হও ইত্যাদি। অন্যেরা কি করল আর কি করল না, তা নিয়ে তোমার ভাবার দরকার নেই। আর তারা চোখ-কান বন্ধ করে নিরুদ্বিগ্ন সময় কাটাতে থাকে। আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটির কথা একেবারেই ভুলে যায়। যারা এরূপ করে তারা আম্মিয়াদের সত্যিকার ওয়ারিশের কাছে সবচেয়ে কম দীনদার। কেননা দীন হলো আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। তাই বান্দার ওপর আরোপিত আল্লাহর হক আদায় করা থেকে যারা বিরত থাকে তারা তো গুনাহগার ব্যক্তির চাইতেও অধম। কেননা কোনো নির্দেশ অমান্য করার অপরাধ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চাইতে বেশি বড় অপরাধ।
এ অপরাধ আরো মারাত্মক হবে, যদি তরুণ উলামা সমাজ অথবা যুবশ্রেণী সমাজসংস্কারের পথ থেকে সরে গিয়ে নিজদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সমাজকে ছেড়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীদের হাতে, অপসংস্কৃতির শিল্পী ও তারকাদের হাতে, ক্রীড়াঙ্গনের লোকদের হাতে, যারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকে সারাণ। আর আমরা বসে বসে অবস্থা দেখে কাঁদি আর বলি, ‘যামানা নষ্ট হয়ে গেছে। দিনকাল খারাপ হয়ে গেছে’। আমরা যামানাকে দোষ দিই। পান্তরে প্রকৃত দোষ তো আমাদেরই। কেননা আমরা নীরব, চুপচাপ বসে থাকি। পরিশেষে যখন অবস্থা নাগালের বাইরে চলে যায়, খারাবী ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে, তখন চমকে উঠি, অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতোই। আর তখন যা ভালো তা করতে নিষেধ করি, যা মন্দ তা করতে শুরু করি। সংস্কার ও ইসলাহের দায়িত্বে অবহেলা করার কারণেই আজ আমাদের এ অবস্থা।
এমন অনেক যুবককে দেখা যায়, যারা বেশভূষায় আল্লাহওয়ালা। কিন্তু তারা সমুদ্রের ফেনার মতো নিষ্ফল ও অকার্যকর। তাদের চোখের সামনেই একটার পর একটা অন্যায় কাজ সংঘটিত হয়, অথচ দাওয়াতের সকল সুযোগ তাদের সামনে উন্মুক্ত, সংস্কারের সকল মাধ্যম তাদের নাগালের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তারা অলস, গাফেল অবস্থায় বসে থাকে। হৃদয়ে কোনো হিম্মত খুঁজে পায় না। আল্লাহর দীনের হুরমত ও মর্যাদা বিনষ্ট হওয়ায় তাদের মধ্যে আদৌ কোনো ভাবান্তর সৃষ্টি হয় না, পরিবর্তন আসে না তাদের কার্যধারায়। এটা খুবই দুঃখজনক, আফসোসের বিষয়।
ভাইয়েরা আমার! আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেছেন:
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে হলে আরো দুটি আয়াতকে সামনে রাখতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে’ (সূরা আলে ইমরান: ১১০)।
লক্ষ্য করুন, ১ম আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই উম্মত থেকে একটি দলকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদানে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আর ২য় আয়াতে প্রকাশ করেছেন যে, এ উম্মতের সর্বোত্তম উম্মত হওয়ার কারণই হলো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকা এবং সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, যে আল্লাহর নিষেধের প্রাচীরকে পদদলিত হতে দেখে, দীনকে পরিত্যক্ত হতে দেখে এবং তার রাসূলের সুন্নতকে বর্জিত হতে দেখে, এরপরও শীতল হৃদয়ে চুপচাপ বসে থাকে, সে তো বোবা শয়তান। যেমনিভাবে খারাব উক্তিকারী বাকপটু শয়তান।
দীনের বিপদ তো এসব লোকের কারণেই আসে। যারা খাওয়া-দাওয়া আর নেতৃত্ব ঠিক রাখতে ব্যস্ত, অথচ দীনের ব্যাপারে কোনো পরোয়া নেই। যাদের ব্যক্তিগত সম্মান ও ধন-সম্পদের পেতে পান হতে চুন খসলেই অস্থির হয়ে পড়ে। তা প্রতিকারের যতরকম উপায় আছে, অবলম্বন করে। এবং যথাসম্ভব বাধা দিতে এগিয়ে আসে। অথচ, দীনের কিছু হলে তারা চুপচাপ থাকে।
এরাই আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়। এদেরকে পৃথিবীতে অনেক বড় বিপদে ফেলে রাখা হয়, অথচ তারা বুঝতেই পারে না। আর তা হলো অন্তরের মৃত্যু ঘটা। কারণ অন্তর জীবিত থাকলে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপে কোনো কিছু হলে তা রেগে উঠবে। দ্বীনের জন্য প্রতিশোধ স্পৃহায় টগবগ করে উঠবে। অথচ তা তো হয় না। তাহলে বুঝতে হবে তাদের অন্তরের মৃত্যু ঘটেছে।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমাদের আশ-পাশে জানা-শোনার মধ্যে যেসব অন্যায় হয়, আমরা সেসবের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবো। হয়ত চুপ থাকার কারণে, নতুবা বাধা না দেয়ার কারণে। কিংবা এসব অন্যায় সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ না করার কারণে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ
‘যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন হাত দিয়ে তা পরিবর্তন করে দেয়। তা সম্ভব না হলে জিহ্বা দিয়ে, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে অন্তর দিয়ে, আর এটা হলো সর্বনিম্ন ঈমানী কর্তব্য’ (মুসলিম)।
হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, অন্যায় কাজে বাধা দেয়ার তিনটি পর্যায় রয়েছে।
১. হাত দিয়ে বাধা দেয়া বা সরাসরি হস্তপে করা।
২. কথার মাধ্যমে বাধা দেয়া বা মৌখিকভাবে নিষেধ করা।
৩. অন্তরে ঘৃণা করা এবং বাধা দেয়ার পরিকল্পনা করা।
যার যতটুকু মতা, সে ততটুকু প্রয়োগ করবে। তবে তাৎণিক বাধা দেয়াই মৌলিক কর্তব্য।
প্রিয় মুসল্লিয়ান! আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার-এর গুরুত্ব এতণে নিশ্চয় আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে
গেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
: عَاقِبَةُ الْأُمُورِ الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ
‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত’ (সূরা আল হজ: ৪১)।
এ আয়াতটি আল্লাহ তাআলা সাহাবীদের প্রশংসায় অবতীর্ণ করেছেন। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা উম্মতকে ধ্বংস থেকে রা করে। পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়ার জন্যও এটি একটি শর্ত।
আল্লাহ তাআলা যখন মুমিনদেরকে নিরাপদ করে দেন। যখন তাদেরকে কোনো ভূখণ্ডে স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনের সুযোগ করে দেন, তখন তারা যথার্থভাবে নামায আদায় করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে বাধা দেয়। এটাই হল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। আর এ বৈশিষ্ট্য থেকে যদি মুমিনরা সরে আসে, তাহলে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় আল্লাহ মুমিনদের ওপর থেকে তার নুসরত ও সাহায্য উঠিয়ে নেন, যতণ না তারা নতুন উদ্যমে দায়িত্ব পালনের শপথ নেয়।
আমর বিল মারূফ এর গুরুত্ব যেমন বেশি, তেমনি এর প্রতি অবহেলার কারণে সৃষ্ট বিপদের পরিমাণও বেশি। ফিতনা বেড়ে যাওয়া, সৎ-অসৎ নির্বিশেষে সকলের ওপর আযাব আসা, আল্লাহর দয়া ও সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং অন্যায়-অনাচার ও বিদ‘আতের সয়লাব হওয়া -ইত্যাদি সবই এর প্রতি অবহেলার ফলাফল।
সমাজে ছোট-বড় যত সমস্যা হয়, তার সিংহভাগই এ কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণে হয়। ভেবে দেখুন, যদি সমাজের তরুণ ও যুবকরা নিজদেরকে এ কাজে জড়িত করত, যদি সমাজ সংশোধনে এগিয়ে আসত, সৎকাজের নির্দেশ দিত এবং অসৎকাজে বাধা দিত, তাহলে সমাজের অপরাধ কত শতাংশ কমে যেত।
এ কাজে অবহেলাকারীর প্রতি হুমকি দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أو لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَليْكُمْ عِقَاباً مِنْهُ فَتَدْعُونَهُ فَلا يَسْتَجِيبُ لَكُمْ ‘আল্লাহর কসম! তোমরা যদি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান না করো, তাহলে শীঘ্রই তোমাদের ওপর আল্লাহর আযাব আসার আশঙ্কা রয়েছে। তখন তোমরা দু‘আ করবে, কিন্তু তা কবুল হবে না’ (তিরমিযী)।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে যয়নব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করে বলেছেন, ‘আযাব আসলে আমরাও কি ধ্বংস হব? অথচ আমাদের মধ্যে অনেক ভালো মানুষও আছে? রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘হ্যাঁ, যখন অন্যায় বেড়ে যাবে তখন সবাই ধ্বংস হবে’(বুখারী ও মুসলিম)।
প্রিয় মুসল্লিয়ান! আল্লাহ তাআলা বলেন : فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ. وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ. কাজেই, তোমাদের পূর্ববতী জাতিগুলির মধ্যে এমন সৎকর্মশীল কেন রইল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী। আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও’ (সূরা হূদ: ১১৬)।
ল্য করুন! এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ‘মুসলিহূন’ বলেছেন, ‘সালিহূন’ বলেননি। যারা নিজেরা সৎকর্ম করেই ান্ত হন তারা সালিহ। আর যারা অন্যকে সৎকর্ম করতে বলেন, তারা মুসলিহ। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, একটি জনগোষ্ঠীর ধ্বংসের হাত থেকে রা পাওয়ার উপায় হলো সেই জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ‘মুসলিহ’ বা সংস্কারক হওয়া। শুধু ‘সালিহ’ তথা নিজে সৎকর্মশীল হওয়া নয়।
বরং, সালিহ যদি মুসলিহ না হন, তাহলে তিনিও ধ্বংস হবেন। কুরআন ও হাদীস থেকে এটাই বোঝা যায়। হ্যাঁ, যদি তিনি মুসলিহ হন, তাহলে তার ইসলাহ বা সংশোধনমূলক কাজ তাকে ধ্বংসের হাত থেকে রা করবে। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন : لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ. كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ বনী-ইসলাঈলের মধ্যে যারা কাফির, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মতনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা একারণে যে, তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমালংঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল (সূরা আল মায়েদা: ৭৮-৭৯)।
আল্লাহ আমাদের যথার্থরূপে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন