ধরে নেই বিজ্ঞানের প্রথম যুগান্তকারী, মানব ইতিহাসের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনকারী আবিষ্কার আগুন যদি আবদার করে বসে যে আপনি তাকে দিয়ে শূয়রের মাংস রাধতে পারবেন, গরুর নয় কিংবা আপনার মাথার উপরের ফ্যান যদি ঠিক করে দেয় যে যখন আপনার শীত লাগবে তখন সে চলবে যখন আপনার ঘাম ঝরবে তখন নয় তবে ব্যাপারটা কেমন হবে?
আমরা আমাদের মাথার উপরের ফ্যান কিংবা ঘরে চলা এসির দিকে তাকাই...... ফিরে যাই ঐ সময়ে যখন এ বস্তুগুলো ছিল না, তখন বিজ্ঞানের এ আবিষ্কারগুলোর অনুপস্থিতিতে বাতাসের যে চাহিদা আমাদের রয়েছে তা আমরা কি দিয়ে পূরন করতাম? নাকি পূরন করতাম না? আমরা কিছুদিন আগেও এ চাহিদা পূরন করতাম হাত-পাখা দিয়ে, আমরা দেখতাম যে ধনবানরা চাকর নিয়োগ করত তাদেরকে পাখা দিয়ে বাতাস করার জন্য, সময়ের পরিবর্তনে এই চাকর প্রতিস্থাপিত হয়েছে বিজ্ঞানের নব-আবিষ্কৃত বস্তুগুলো দ্বারা, বা আমরা যদি আমাদের সামনের কম্পিউটার এর দিকে তাকাই যার আবিষ্কার মূলত হিসেব করার জন্য তা এসেছে কেরানী যে হাতে-কলমে হিসেব করতো তার পরিবর্তে ; ইমেইল , সেল ফোন এসেছে ডাক-হরকরার পরিবর্তে;শিল্প-প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিজ্ঞান এসেছে শ্রমিকের পরিবর্তে। উড়োজাহাজ হয়ে বিজ্ঞান এসেছে বলদ-গাধা-ঘোড়ার পরিবর্তে। বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি আবিষ্কার ই আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে, প্রতিস্থাপন করেছে ঐ জায়গায় ব্যবহৃত আমাদের ভৃত্যদের, এখন কখনো সে আমার ভাত রেধে দেয়, কখনো আমার কাপড়কে আরো সাদার চেয়ে সাদা করে, কখনো আমার টয়লেট পরিষ্কার করে জীবানুমুক্ত করে। একজন আদর্শ চাকর বলতে আমরা যা বুঝি আমরা বিজ্ঞান কে ঠিক সেইভাবেই কাজে লাগিয়েছি, তাকে নিয়ে গেছি চাকরামির সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
এখন কেমন হবে আপনার বাসার চাকর যদি ঠিক করে দেয় আপনি কয়বেলা ভাত খাবেন? মদ খাবেন কি খাবেন না? টয়লেট সপ্তাহে না মাসে পরিষ্কার করবেন?
বিজ্ঞান আপনাকে আই্ফোন এর মত বস্তু দিতে পারে কিন্তু আপনি আইফোন এ মিথ্যা বলতে পারবেন কি পারবেন না সে আদর্শ দেয়ার ক্ষমতা কি বিজ্ঞানের আছে?
বিজ্ঞান আপনাকে উড়োজাহাজ দিতে পারে কিন্তু এই উড়োজাহাজ আপনি কি কাজে ব্যবহার করবেন, তা কি ব্যবহার করবেন মানবজাতিকে বোম্বিং করার জন্য নাকি মানুষ পাড়াপাড়ে তা বিজ্ঞান ঠিক করে দিতে পারেনা।
বিজ্ঞান ক্লোনিং এর মত বিষয় নিয়ে আসতে পারে কিন্তু এই ক্লোনিং আদৌ করা ঠিক হবে কি হবেনা তা ঠিক করে দিতে পারেনা।
আমাদেরকে স্পষ্টভাবেই বুঝতে হবে বস্তু এবং আদর্শের মাঝে পার্থক্য কি।
#আপনি কি আমাজনের জঙ্গলের অধিবাসীদের মতই#পশ্চাৎপদ_চিন্তার_অধিকারী?
আপনার মাথার উপর দিয়ে একটা প্লেন উড়ে গেলে আপনার মাঝে কি কোন ভাবান্তর হয়? হয় না , কারন এটি আপনার কাছে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে , কিন্তু গ্রামের বৈজ্ঞানিকভাবে পশ্চাৎপদ মানুষের কাছে এটি এক বিরাট আজুবা, কিংবা অনেক সিনেমা অনুযায়ী আমাজনের জংগলের মানুষের কাছে আপনার হাতের দেয়াশলাইটিই হয়তবা তাদের কাছে আপনাকে স্রষ্টা বানিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু আপনার কাছে নয় কারন আপনি এর ক্রিয়া-প্রক্রিয়া জানেন, কারন তারা পশ্চাৎপদ আপনি নন। তাই আরেকটু উচু স্তরের মানুষ হন, আমাজনের জংগলের মানুষরা হয়ত ছোট্ট দেয়াশলাই দিয়ে মেসমারাইজড (বিস্মিত) হয় আর আপনি হন কোয়ান্টাম ফিজিক্স দিয়ে, আপনারা দুইজনই কিন্তু পশ্চাৎপদ কিন্তু দুইজনের পশ্চাতপদতার ধরন আলাদা, এ পার্থক্য হচ্ছে টানবাজারের ২০০ টাকা দিয়ে পাওয়া যাওয়া পতিতা আর ২ কোটি টাকা দিয়ে পাওয়া যাওয়া বলিউডি পতিতা সানি লীওনের মত, দুইজনই পতিতা একজনের রেট একটু বেশি এই যাহ।
#বিজ্ঞান কি জীবন নির্ধারনী প্রশ্নের উত্তরের #মাপকাঠি হতে পারে?
মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই মানুষ জীবন এবং মহাবিশ্বের আগে কি ছিল, পরে কি আছে এবং এ জীবনের আগের ও পরের জীবনের সাথে বর্তমান জীবনের সম্পর্ক কি? এখন এ প্রশ্নের উত্তর যদি হয় এ জীবনের আগে আল্লাহ ছিলেন এবং পরেও আল্লাহ আছেন তাই তিনিই ঠিক করে দিবেন এ জীবনে কিভাবে চলব তাহলে এ উত্তরের ভিত্তিতে আমাদের জীবন হবে একরকম আর যদি উত্তর হয় যে না এ জীবনের আগেও কিছু ছিল না পরেও কিছু নেই, আমরা বান্দর থেকে এসেছি আর মাটিতে মিশে সার হয়ে যাব তাহলে আমার জীবন হবে অন্যরকম। এ প্রশ্নের উত্তরের উপর ভিত্তি করে ঠিক হবে যে আমি মদ খাব কি খাবনা, আমরা বিয়ে করব কি করব না? সমকামিতা গ্রহনযোগ্য হবে কি হবে না? রাস্তাঘাটে চুমু খেতে পারব কি পারব না? সেক্স কি কুকুরের মত যেখানে সেখানে করা যাবে কি যাবেনা, জান্নাত আছে কি নাই?
সুতরাং জীবন নির্ধারনী এ প্রশ্নের উত্তরে বিচারক হিসেবে সায়েন্স কতটা ভরসাযোগ্য, কেন সায়েন্স ভরসাযোগ্য নয় তার কিছু পয়েন্ট নিচে দেয়া হলো-
• বিজ্ঞান এর কর্মপদ্ধতিঃ পর্যবেক্ষন-> পরীক্ষা নিরীক্ষা-> ফলাফল-> তত্ত্ব -> পর্যবেক্ষন (বাস্তবতার তুলনায়)
• বিজ্ঞান শুধুমাত্র Tangible অথবা Sensible (ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুধাবনযোগ্য) বিষয়ে সীমাবদ্ধ (যেখানে স্রষ্টার বিষয়টি র্যাশনাল মাইন্ড দ্বারা যাচাইযোগ্য এটি ট্যাঞ্জিবল কিংবা সেন্সিবল নয়)
• এটি বিজ্ঞানের আলোচনারই বিষয় নয়
• বিজ্ঞান ঘটনা ব্যাখ্যা করে , কিন্তু কোন কিছু অস্তিত্বে কেন আছে তা করেনা- যেমন ফ্যান কিভাবে চলে তা বিজ্ঞান ব্যাখা করে এটা বিজ্ঞানের পরিধির (Sphere) আলোচনা কিন্তু ফ্যান কে লাগিয়েছে এটি বিজ্ঞান নয় র্যাশনাল থিঙ্কিং এর পরিধির (Sphere) আলোচনা।
• বিজ্ঞান Tangible ( অনুধাবনযোগ্য) অনেক কিছুই ব্যাখা দিতে পারে না আইসে স্রষ্টা আছে কি নাই ব্যাখা দিতে । যেমন – এয়ার পকেট, বা সমুদ্রের পানি কেন নীল দেখায়।
• বিজ্ঞানের তত্ত্ব পরিবর্তনশীল অস্থির, এটি ভুলের উর্ধে নয় , সবসময় সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার বাস্তবতা এর নেই, যেমন- কপার নিকাসের (geocentric vs heliocentric approach) সৌরজগতের সূর্য্য ও পৃথিবীর উদাহরন টানা যেতে পারে, একসময় Fact ছিল সূর্য্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে তারপর Fact হল পৃথিবী সূর্য্যের চারিদিকে ঘুরে তারপর বিজ্ঞান ভোল পালটিয়ে এখন বলছে যে পৃথিবী এবং সূর্য্য একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরে। একসময় ফ্যাক্ট ছিল বিশ্বজগত স্থির এখন বলে সম্প্রসারনশীল। টিচার এসে বলেছে জৈব যৌগ ল্যাবরে্টরিতে তৈরি করা সম্ভব নয় ওই টিচারের ছাত্র এসে ল্যাবে জৈব যৌগ তৈরী করে দেখিয়ে দিয়েছে। এই ভোলাকে জীবন নির্ধারনী প্রশ্নের উত্তরের বিচারক নির্ধারন করলে লাইফ ছ্যাড়াবেড়া করে ফেলবে চাকর চাকরের জায়গাতেই ঠিক আছে।
মানুষের মাঝে প্রথিত (Built In) প্রবৃত্তি (Instinct) রয়েছে আত্মসমর্পনের, এক নাহয় সে আত্মসমর্পন করবে আল্লাহর কাছে নয়তো , মূর্তি নয়তো কার্ল মার্ক্স, মাও সেতুং , কিংবা লাল বই এর কাছে। তার এ প্রবৃত্তিকে ঠিকমত গাইড করা না হলে মাঝে সাঝে সে স্রষ্টা বানাবে ব্রিটনি স্পিয়ার্স কে , নয়ত বেক হ্যাম কে নয়তো শচীনকে। এ কারনেই আমরা দেখতে পাই যে আমাজনের জংগলের লোকেরা যাদের কাছে কোন ধর্মই পৌছে নি তারাও কোন না কোন কিছু তা হোক গাছ লতা পাতা তার পূজা করে। বা আমরা দেখতে পাই একজন বিরাট এক বিল্ডিং বানিয়ে এইডা আমি কি বানাইলাম এই চিন্তা করে বিল্ডিং এর পুজা শুরু করে দেয়। মানুষের মাঝে এ প্রবৃত্তি স্রষ্টা প্রথিত করে দিয়েছেন , তাই নাস্তিক ও চিপায় পড়লে স্রষ্টাকে ডাকে, মুখ ফসকে স্রষ্টার সাহায্য চাওয়ার কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে। মানুষের এই প্রবৃত্তিকে বুদ্ধিবৃত্তিক (Intellectually) ভাবে গাইড না করলে মানুষ স্রষ্টার পূজা বাদ দিয়ে সৃষ্টির পূজা শুরু করে দেয়। এমনকি আপনি নাস্তিকদেরো কার্ল মার্ক্স কিংবা লেনিন কিংবা চেগুয়েভরাকে স্রষ্টার মত করে পুজো করতে দেখবেন। লাল বইকে দেখবেন কোরয়ানের মত ট্রিট করতে।
স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসের এ প্রবৃত্তি সঠিক ভাবে গাইড না হওয়ায়, এ প্রবৃত্তি পূজা করেছে বিভিন্ন বস্তুর , আগে তা পূজা করেছে মুর্তির এখন মূর্তি প্রতিস্থাপিত হয়েছে বিজ্ঞান দ্বারা । যেমন বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যের পর এর দ্বারা Mesmerize (বিস্মিত) হয়ে পশ্চিমারা সবকিছুর মাঝেই বিজ্ঞান নিয়ে আসলো যা বিজ্ঞানের বিষয় নয়। যেমন- ফিজিক্স, বায়োলজি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি পরীক্ষনযোগ্য বিষয়গুলো বিজ্ঞানের আলোচনার মূল বিষয় হলেও তারা একে সীমাবদ্ধ রাখেনি এইসকল বিষয়ের মাঝে তারা ফিলোসফি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন, এবং জীবনাদর্শের সাথেও বিজ্ঞান শব্দটি জুড়ে দিয়ে এসকল বিষয়কেও বিজ্ঞানের আলোচনার অধীনে নিয়ে আসে যা কখনোই বিজ্ঞানের কর্ম প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যা পূর্ন্য নয় । এটাও অনেকটা কোন গায়কের গান শুনে তার গানে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দেয়ার মত। বিজ্ঞানের মত একটি বিচ্ছিন্ন বিষয়কে আমাদের স্রষ্টা বানানোর প্রয়োজন নেই, আমাদের একজন স্রষ্টা রয়েছেন যিনি স্বয়ংসম্পূর্ন্য
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন