ইবন উমার (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৬৭; আহমাদ ৫৪৬৮; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৪ (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)
আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সলাত আদায়ের চেয়ে তার গৃহে সলাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সলাত আদায়ের চেয়ে তার গোপন কামরায় সলাত আদায় করা অধিক উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৭০; বায়হাকী ৯৩/১৩১; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৮, ১৬৯০; হাকিম ১/২০৯; ইমাম হাকিম বলেন, হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে ঐকমত পোষণ করেছেন। আলবানি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
ঘরের নির্জন স্থানে সলাত আদায় করা অধিক উত্তমঃ
আবু হুমাইদ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ (রাঃ) নাবী (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাথে মসজিদে নববীতে সলাত পড়তে মন চায়। নাবী (সাঃ) বললেনঃ ''আমি জানতে পারলাম যে, তুমি আমাদের সাথে সলাত পড়তে চাও, কিন্তু তোমার জন্য ক্ষুদ্র কুঠুরিতে সলাত পড়া কক্ষে সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম, আর কক্ষে সলাত পড়া বাড়ীতে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম, আর বাড়ীতে সলাত পড়া মহল্লার মসজিদে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম''
তারপর উম্মে হুমাইদ (রাঃ) আদেশ দিলেন যেন, তাঁর জন্য ঘরের একেবারে ভিতরের অন্ধকার স্থানে একটি সলাতের স্থান নির্ধারণ করা হয়। তিনি সবসময়, এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার কুঠুরিতেই সলাত পড়তেন’’ ইবন হিব্বান; আহমাদ ২৬৫৫০; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৩৮
কোন উত্তমের ব্যতিক্রম করা হারাম বা অবৈধ নয়ঃ
যেমন ‘’ফরয ছাড়া অন্য সলাত বাড়ীতে পড়া কোন ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম সলাত’’ মুসলিম ৭৮১
এমনকি মসজিদে নববীতে সুন্নত বা নফল সলাত আদায় করার চাইতে নিজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম’’ আবু দাউদ ১০৪৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
উপরোক্ত দু’টি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি পুরুষদের জন্য সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম এবং মসজিদে জায়েজ। এখন এই হাদীস দিয়ে কেউ যদি দলীল পেশ করেন ‘মসজিদে সুন্নত বা নফল নামাজ অবৈধ’ তাহলে তিনি নিশ্চিত ভুলের মধ্যে পতিত হবেন। কারন উত্তমের ব্যাতিক্রম হওয়া মানেই হারাম নয়। অনুরুপভাবে নারীদের ঘরে নামাজ পড়া উত্তম হলেও মসজিদে আদায় করা জায়েজ।
২- মসজিদে জামা’আতে অংশগ্রহণ করা মহিলাদের জন্য জায়েজঃ
ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বারন করো না’’ বুখারী ৮৬৫; মুসলিম ৮৭৩
বুখারী ও মুসলিমের সহীহ হাদিসগুলো যুবতীদেরকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার সাক্ষ্য প্রমান করে। এসব যুবতীদের মধ্যে ছিলেন আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ)এর স্ত্রী আতিকাহ বিনতে যায়েদ, ফাতিমা বিনতে কায়েস, উম্মে ফযল, ইবন মাস’উদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব, মুয়াযের মেয়ে রবী এবং আরও অনেকে।
৩- মহিলারা পুরুষদের সামনে নয় পিছনের কাতারে দাঁড়াবেঃ
মহিলারা পুরুষদের আগে দাঁড়াবে না, তাদের সাথেও দাঁড়াবে না; তারা পিছনে আলাদা কাতারে দাঁড়াবে, যদিও তারা একাকী হয়ঃ
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতিম ছেলে নাবী (সাঃ)-এর পিছনে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন’’ বুখারী ৭২৭
উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলারা তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে চলে যেতেন। নাবী (সাঃ) দাঁড়ানোর পূর্বে স্বীয় স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী বলেন, আমাদের মনে হয়, তা এজন্য যে, অবশ্য আল্লাহ ভালো জানেন, যাতে পুরুষদের যাবার পূর্বেই (পিছনের কাতারে অবস্থারত) নারীরা চলে যেতে পারে’’ বুখারী ৮৭০
হিন্দ বিনতে হারিস (রহঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন, নারীরা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর সময় ফরজ সলাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গে সলাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন’’ বুখারী ৮৬৬
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ''মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার সর্বশেষে আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার প্রথম। পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার প্রথম, আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল শেষ কাতার’’ মুসলিম ৮৬৮
এমনকি স্বামী-স্ত্রী হলেও এক কাতারে সলাত আদায় করতে পারবে নাঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর সাথে সলাত পড়েছি। আয়িশাহ (রাঃ) পিছনের কাতারে আমাদের সাথে সলাত পড়েছেন। আমি নাবী (সাঃ)এর পাশে দাঁড়াতাম’’ নাসায়ী ৮০৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
পুরুষদের পিছনে সলাত আদায়কারিনী নারীদের প্রতি নির্দেশ, তারা যেন পুরুষদের মাথা উঠানোর পূর্বে নিজেদের মাথা না উঠায়ঃ
সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি তহবন্দ খাটো হবার দরুন মানুষকে বালকের ন্যায় তাদের তহবন্দ গলায় বেঁধে নাবী (সাঃ)-এর পিছনে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে নারী সমাজ! পুরুষরা তাদের মাথা উত্তোলন না করা পর্যন্ত, তোমরাও সিজদাহ হতে তোমাদের মাথা উত্তোলন করবে না’’ ৮৭০ মুসলিম
৪- ফজরের ও ইশার জামা’আতে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ফজরের সলাত আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। অতঃপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত। আর তাদেরকে কেউ (অন্ধকারের কারনে) চিনতে পারত না’’ বুখারী ৩৭২
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যখন ফজরের সলাত শেষ করতেন তখন নারীরা চাদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের দরুন তাদেরকে চেনা যেত না’’ বুখারী ৮৬৭
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্ধকার থাকতেই ফজরের সলাত আদায় করতেন। অতঃপর মু’মিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেন। অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না’’ বুখারী ৮৭২
ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়েদ) ফজর ও ইশার সলাতের জামা’আতে মসজিদে উপস্থিত হতেন’’ বুখারী ৯০০
যায়নাব আস-সাকাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেন, কোন স্ত্রীলোক যখন ইশার সলাত আদায় করতে (মসজিদে) আসে, তখন সে যেন ঐ রাতে খোশবু না লাগায়’’ মুসলিম ৮৭৯
যেই ফজরের জামা’আতে উমার (রাঃ)-কে আঘাত করা হয় অতঃপর সেই আঘাতেই তাকে শহীদ করা হয় সেই সলাতে তাঁর স্ত্রী আতিকাহ (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেনঃ ইমাম যুহরী বলেনঃ ‘’উমার (রাঃ) যখন আততায়ীর আক্রমনে আহত হয়েছিলেন, সে সময় আতিকাহ (রাঃ) মসজিদেই ছিলেন’’ ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৪
৫- মাগরিবের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, উম্মু ফাযল (রাঃ) তাকে সুরা ‘ওয়াল মুরসালাত উরফান’ তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, হে বৎস! তুমি এ সুরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে মাগরিবের সলাতে এ সুরাটি পড়তে শেষবারের মতো শুনেছিলাম’’ বুখারী ৭৬৩ মুসলিম ৪৬২
আব্বাস (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মুল ফাযল বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-কে মাগরিবের সলাতে সুরা ‘ওয়াল মুরসালাত উরফান’ পাঠ করতে শুনেছি। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ কবজ করা পর্যন্ত তিনি আমাদের নিয়ে আর কোন সলাত আদায় করেননি’’ বুখারী ৪৪২৯
* উপরোক্ত দু'টি হাদীস থেকে এটাও প্রমানিত হয়, নাবী (সাঃ) ইমামতিতে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মহিলা সাহাবীরা জামা'আতে সলাত আদায় করতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন