বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

UBAT এর ২০১২ সালে আরেক দফা পাঞ্জাবি টুপি বোরকার নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে একা লড়ে যাওয়া এক ভাই তার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি,

.
"এই লক্ষ্যে উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়টার ক্যাম্পাসে গেলাম । খবর নিয়ে জানলাম - এই বিশ্ববিদ্যালয়টা তাবলীগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তাবিত স্হান দখল করে গড়ে উঠেছে । ক্যাম্পাসের কিছু ছাত্রীর সাথে কথা বল্লাম । আমার সামনেই বোরকা পরা এবং সেলোয়ার কামিজ ও আমিরা স্টাইলে হিজাব (মাথা ও বুক ঢাকার জন্য ওড়না পড়ার বিশেষ পদ্ধতি) পরা মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি । আমি দ্বাররক্ষীদের কাছে কারণ জানলে ভীষণ খারাপ ব্যবহার করে । পরবর্তীতে আমি কিছু ছাত্রদের সাথে কথা বলি । তাদের অভিমত : মনযোগ দিয়ে শুনি । কয়েক জনের অভিমত : বিশেষ রাজনৈতিক দল ও মতের লোকরা এসব পোষাক পরে থাকে । এসব পোষাক পরা ছাত্রদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টার ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এই নিয়ম করা হয়েছে । এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই । ...আমি তাদের সাথে কোন যুক্তি তর্কে যাইনি । 
.
এর পরবর্তী কয়েক ঘন্টা আমার জন্য শুভকর হয়নি । বিশ্ববিদ্যালয় হতে কয়েক কিলোমিটার দুরবর্তী ধৈউর নামক স্হানে আমি যখন পৌছাই , তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ( মূলত সন্ত্রাসী ) আমার গতিরোধ করে । আমার মূলবান ভিডিও ক্যামেরা ও ভয়েস ট্রেসার ছিনিয়ে নেয় । আমি এই বিষয়ে স্বয়ং ভিসির সাথে কথা বলি ফোনে । তিনি আমাকে সরাসরি তার সাথে কথা বলার জন্য আসতে বলেন । আমি অস্বীকৃতি জানাই এবং দাড়ি-টুপি-বোরকা নিষিদ্ধ করণের কারণ এবং কোমলমতি ও পবিত্র ছেলে-মেয়েদের পাশ করার পরও ফেল করানোর কারণ কি জানতে চাই । তিনি এক কথা দুই কথার পর তিনি বলেন, যদি আমি অদুর ভবিষ্যতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিসীমানায় আসি, তাহরে তিনি হত্যা করে তুরাগ নদীতে আমার লাস ফেলে দিবেন । ....।
.
আমি আর কথা বড়াইনি । কারণ সময়টা ছিল বেরহম । আমি ধৈর্যধারণ করলাম । আমি নয়া দিগন্তের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর সাথে দেখা করলাম । তিনিই সর্বপ্রথম বিষয়টি পত্রিকায় নিয়ে আসেন । তারপর ডেইলী স্টার । তিনি আমাকে নির্যাতনের স্বীকার কিছু ছাত্রের মোবাইল নম্বর দিলেন এবং তাদের কীভাবে ফেল করানো হচ্ছে তার কিছু প্রমাণ দেখালেন । আমি সেগুলো ফটোকপি করে নিলাম । এমন কিছু ছাত্রের সাথে কথা বল্লাম । তাদের অনেকে এই বিষয়টা নিয়ে অগ্রসর হতে আগ্রহী নয় । অনেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছে । কেহ আবার দাড়ি টুপি ছেড়ে ক্লাস ও পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছে । আমি অনেক বার চেষ্টা করেছি বোরকা পরা এক মেয়ের সাথে কথা বলার । কিন্তু সে সুযোগ হয়নি । পরে শুনেছি সেই মেয়ে আর কোথাও পড়াশোনা করেননি । তাকে তার বাবা-মা পাত্রস্হ করেছেন । অথচ সেই মেয়েটার রেজাল্ট ভীষণ ভাল ছিল । আমি অনেক বার তার পরিচিতদের বলেছি - তার উপর নির্যাতনের ব্যাপারে তার সোচ্চার হওয়া উচিত এবং তার অভিভাবকদের উচিত প্রতিবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ-অণুপ্রেরণা দেওয়া । 
.
পরবর্তীতে আমি তাবলীগ জামায়াতের এক মুরব্বী ( যাকে নিয়ে বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে ও যার ছেলে খিদমাহ হাসপাতালের ডিরেক্টার ) -র সাথে কথা বলি । তিনি আমাকে বলেন যে দাড়ি-টুপি-বোরকা নিয়ে কথা বলার আগে আমার শরীরকে আগে সুন্নতী তরীকায় গড়ে তোলেতে হবে ও সময় যেহেতু আছে সেজন্য আমার চিল্লা দেওয়া উচিত । এই ব্যাপারে তিনি শুধু এতটুকু বলেন - এটা আল্লাহর পক্ষ হতে পরীক্ষা মাত্র । মুমীনদের কাছে দুনিয়া জেলখানা স্বরুপ । যারা এমন অবস্হায় পড়েছে তারা অনত্র পড়লেই পারে । .............। আমি তার এসব কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হলাম । আমি এটাও বল্লাম যে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা দখল করে এই বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে । শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ই না আরে ৩৫ টা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ইজতেমার জায়গা কৌশলে দখল করেছে । ............ তিনি এব্যাপারে বল্লেন, তুমি গৃহায়ণ ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয় ও টঙ্গি পৌরসভায় কথা বল । 
.
কয়েক দিন পর নয়া দিগন্তের সাংবাদিক হাসান মেহেদী-র সাথে কথা বলি । তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন যে ছেলেগুলো জামায়াত-শিবিরের কেহ না । সবাই তাবলীগ জামায়াতের ছেলে । আমাদের মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আর কিছু লেখা হোক - তা চাচ্ছেন না । এর কারণ অনেক । তবে এতটুকু বলছি : জামায়াতের প্রায় সব প্রকাশনাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন থাকে । ................। উপরন্তু নয়াদিগন্তের মালিক নিজে জামায়াত করেন । ..
.
আমি এসব কথা শোনার পর চরমভাবে হতাশ হলাম । পরবর্তীতে অন্য আরেকটা বিষয়ে হাসান মেহেদীর সাথে কথা বলি।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন