নিজেদের আরো বেশি সেক্যুলার প্রমাণ করার জন্য বহু বছরের পুরনো এক রীতি পরিবর্তন করতে চাচ্ছে ফ্রান্স। ধর্ম ও রাষ্ট্রকে পৃথক করার ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী এ দেশ। এ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও ধর্মকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক মেয়র। এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে বিতর্ক।
এবার এই সেক্যুলারিকরণের প্রক্রিয়া স্কুলের বাচ্চাদের দুপুরের খাবারের ওপরও আরোপ করার চিন্তাভাবনা চলছে। বাচ্চাদের পারিবারিক ধর্ম অনুমিত খাবার স্কুল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে নাকি সবার শিশুর জন্য কোনো বাছবিচার না করে একই খাবার দেয়া হবে। কারণ খাবার মেনুতে মাংস থাকলে অনেক সময় শুকরের মাংসও দেয়া হয়। ফলে সেইসব স্কুলে মুসলিম শিশুদের জন্য কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে হালাল মেনু রাখতে হয়।
শালন সু সাঁও এর বারগুন্দি শহরের স্কুলগুলোতে এতোদিন চলে আসা তথাকথিত ‘বিকল্প খাবারের’ চল তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। গত ৩০ বছর থেকে এ শহরের স্কুলগুলোতে মুসলিম (কিছু ইহুদিও আছে) শিশুদের জন্য মাঝে মাঝেই বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয় কারণ সেদিনের মেন্যুতে শুকরের মাংস থাকে। ফ্রান্সের বেশিরভাগ সরকারি ও বেসরকারি স্কুলেই এমন ব্যবস্থা আছে।
কিন্তু গত মাসে ওই শহরের ডানপন্থি মেয়র গিলস প্লাত্রে এই রীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তার যুক্তি হলো, এই রীতি ফ্রান্সের সেক্যুলার ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব সাধারণ একটা কাজ করছি : আমরা স্কুলের ফটক থেকে ধর্মকে বিদায় করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য বিশেষ মিল বন্ধ করার মানে হলো আমরা আর ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে লোকজনকে নথিভুক্ত করবো না, আমরা খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে মানুষকে বিভাগ করবো না।’
প্লাত্রে এবং তার সমর্থকরা মনে করছেন, এমন সিদ্ধান্তের মানে কিন্তু সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করার মতো নীচ মানসিকতার প্রকাশ নয় বরং নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
প্লাত্রে বলছেন, যেদি শিশুরা শুকরের মাংস খেতে না চায় তাহলে সবজি বা অন্য কিছু নিতে পারে; নিজেরাই দুপুরের খাবার তৈরি করতে পারে অথবা বাসায় গিয়ে খেতে পারে। আর যদি অভিভাবকরা এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন তাহলে তারা অন্য বেসরকারি মুসলিম বিদ্যালয়ে তাদের শিশুদের ভর্তি করাতে পারেন।
সঙ্গে তিনি এও বলেন যে, স্কুলের মেনুতে যদি শুকর নাও থাকে তারপরও মুসলিম বাবা-মারা তাদের সন্তানকে আগেই সতর্ক করে দেবে যেন তারা স্কুলে কোনো মাংসের মেনু না ছোঁয়। কারণ ফরাসি বিদ্যালয়ে যেসব সরবরাহ করা হয় তা সাধারণত হালাল নয়।
ফ্রান্সের বামপন্থিরা এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করছেন। তারা একে অপ্রয়োজনীয়, উসকানিমূলক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন।
মেয়র ‘মুসলিম শিশুদের জিম্মি’ বিবেচনা করছেন বলে অভিযোগ করছে ফ্রান্সের সমাজতান্ত্রিক সরকার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন