মুঘল সম্রাট বাবরের শাসনামলে ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মিত হয় । এটি স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে ছিল প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদ এবং একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন । যেটা ১৯৯২ সালে ভারতীয় উগ্রপন্থী হিন্দুদের দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল । এখানে হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ ছিল যে, বাবরি মসজিদটি যে স্থানে নির্মিত হয়েছে, সেটা ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান এবং মসজিদটি রাম মন্দির ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছিল ।
যাইহোক এই বিরোধপূর্ণ ভূমিটি নিয়ে ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্নৌ বেঞ্চের দেয়া রায়ে বিচারিক ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে । অযোধ্যার একটুকরা জমি নিয়ে দীর্ঘ আইনি বিবাদের মিমাংসা তারা করেছেন ‘হিন্দুদের বিশ্বাস ও ভক্তি’র ভিত্তিতে । যে বিশ্বাস যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ ও যাচাইযোগ্য নয় । এই মসজিদটি ভাঙা যে চরম অন্যায় ও মানবতা বিরোধী ছিল তা কখনই সরকারীভাবে স্বীকার করা হয়নি কিংবা উক্ত রায়ে এর জন্য কোন নিন্দাও জ্ঞাপন করা হয়নি । উপরন্তু সেই ঘটনার ১৮ বছর পরে, যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল, তাদের ‘বিশ্বাস ও ভক্তি’কে আইনসঙ্গত করে দিয়ে ভারত আবার সেই অন্যায় ও পাপের পুনরাবৃত্তি করল । এলাহাবাদ হাইকোর্টের ৩ জন বিজ্ঞ বিচারক সুধীর আগরওয়াল, এস ইউ খান ও ধরমবীর শর্মা একটি বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে, ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের তলায় ১৯৪৯ সালে চুপিসারে যে রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী সেটাই ভগবান রামের জন্মস্থান । তাদের মতে এ কারণেই হিন্দুদের ঐ বিতর্কিত ভূমিটির উপর দাবি রয়েছে । তবে আইনের চোখে এ রকম ধর্মীয় বিশ্বাস ও মিথকে আইনি যুক্তি ও বাস্তব তথ্যের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া অদ্ভুত । তুলসীদাস তাঁর ‘রামচরিতমানস’ লিখেছিলেন ষোলশতকের অযোধ্যায় বসে । কিন্তু রামের জন্মস্থানের বিষয়ে তিনি কিছুই না বললেও ৫০০ বছর পর আদালত সেই জন্মস্থানটি এত নিশ্চিত করে চিহ্নিত করেন কিভাবে? আদালত যে বিশ্বাস আর ভক্তির কথা বলেছেন, সেটা কিন্তু জোরদার হয়ে উঠেছিল মাত্র আশির দশক থেকে, যখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপি জন্মস্থানকে মুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করে ।
অন্যান্য প্রেচীন সভ্যতার মতোই ভারতের বহু স্থানেই নতুন স্থাপনা নির্মাণের জন্য আগের আমলের স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে । বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় হিন্দু মন্দির বানানো হয়েছে আবার মসজিদ ভেঙেও হিন্দু মন্দির বানানো হয়েছে । অতএব ষোলশতকে একটি মন্দির ভেঙে যদি একটি মসজিদ বানানো হয়েও থাকে, একুশ শতকে এসে তার কি আইনি প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে? ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায় অনেক কিছুতেই বিশ্বাস করে । কিন্তু আইনের চোখে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারেনা । কারণ ‘বিশ্বাস’ আইন নয় ।
অন্যান্য প্রেচীন সভ্যতার মতোই ভারতের বহু স্থানেই নতুন স্থাপনা নির্মাণের জন্য আগের আমলের স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে । বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় হিন্দু মন্দির বানানো হয়েছে আবার মসজিদ ভেঙেও হিন্দু মন্দির বানানো হয়েছে । অতএব ষোলশতকে একটি মন্দির ভেঙে যদি একটি মসজিদ বানানো হয়েও থাকে, একুশ শতকে এসে তার কি আইনি প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে? ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায় অনেক কিছুতেই বিশ্বাস করে । কিন্তু আইনের চোখে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারেনা । কারণ ‘বিশ্বাস’ আইন নয় ।
সুতরাং উত্তেজনা সৃষ্টি করে ধ্বংসসাধন এবং তারপর আদালতের দ্বারা বৈধকরণের এ নজির ভবিষ্যতে অন্যান্য মসজিদকেও মন্দির বানাতে উৎসাহিত করবে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন