বিভিন্ন কর্পোরেশনের ম্যানেজারদের সম্মানে আয়োজিত এক সভায়, মিস কার্লেটন ফিওরিনা বিজ্ঞান এবং সভ্যতায় মুসলিমদের অবদান বিষয়ক একটি যুগান্তকারী, অসাধারণ, বক্তব্য প্রদান করেন। মিস ফিওরিনা একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, ইতিহাসবিদ এবং বর্তমানে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। তিনি HP (হিওলেট-প্যাকার্ড) কর্পোরেশনের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। বিজ্ঞান ও সভ্যতায় ইসলামের অবদান সম্পর্কে জানুন এই অমুসলিমের মুখ থেকেই,
“এক সময় পৃথিবীতে এমন একটি সভ্যতা ছিল, যা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। বিভিন্ন উপমহাদেশকে একত্রিতকরণের মাধ্যমে এটি এমন একটি সুপার ষ্টেট তৈরি করতে সমর্থ হয়, যার সীমানা বিস্তৃত ছিল এক মহাসাগর থেকে অন্য মহাসাগর পর্যন্ত, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল, মরুভুমি থেকে শুরু করে, নাতিশীতোষ্ণ এবং বিভিন্ন জলবায়ুর অঞ্চলসমুহ। বিভিন্ন বিশ্বাস এবং বৈচিত্র্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রাষ্ট্রের অধিবাসী ছিল। এর ভাষা হয়ে পড়েছিল সার্বজনীন, যা শত শত ভুখন্ডের মধ্যে রচনা করেছিল সেতুবন্ধন। এর সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন জাতির সৈন্য সমাবেশ ঘটেছিল, এবং এই সেনাবাহিনী শান্তি এবং সুরক্ষায় এমন পারদর্শী ছিল, যা ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। এই সভ্যতার বানিজ্যের প্রসার লাতিন আমেরিকা এবং চীনের মধ্যেকার সমস্ত অঞ্চলকেই পরিবেষ্টন করে ছিল। আর বাকি সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে এই সভ্যতার আবিষ্কার। এর আর্কিটেক্টরা এমন দালান কাঠামো তৈরি করেছিল, যা অভিকর্ষের প্রভাব নিস্ক্রিয় করে দিত। এর গণিতবিদরা আবিষ্কার করেছিলেন আলজেব্রা আর এলগোরিদম, যা কম্পিউটার আবিষ্কারের দ্বার উন্মুক্ত করেছে, যার দরুন এনক্রিপশন (সাংকেতিক ভাষায় গোপন বার্তা পাঠানোর এক ধরণের পদ্ধতি ,যেমন দা ডা ভিঞ্চি কোড ছবিতে দেখানো হয়েছে) পদ্ধতিও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এর চিকিৎসকরা মানবদেহ পর্যবেক্ষণ করে নতুন নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছিলেন। এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন নক্ষত্রের নামকরণ করেছিলেন, মহাকাশ ভ্রমনের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন। এর সাহিত্যিকরা রচনা করেছিলেন প্রেম, সাহসিকতা আর জাদু নিয়ে হাজারো উপাখ্যান। এর কবিরা লিখেছেন প্রেমের কবিতা, যখন অন্যান্য অঞ্চলের কবিরা এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তারই সাহস পেতেন না। যখন অন্য জাতিগুলো বিভিন্ন চিন্তা, দর্শন এর চর্চা করতে ভয় পেত, তখন এই সভ্যতার মহানায়করা এগুলো সিঞ্চন করেছেন, বাঁচিয়ে রেখেছেন জ্ঞানকে। যখন পূর্ব জাতিসমুহের জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল, অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল, তখন এই সভ্যতার ধারক বাহকরাই জ্ঞানকে রেখেছিল জীবিত, করেছিল সমৃদ্ধ এবং পৌঁছে দিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় আজ এই বিষয়গুলো আমাদের জানা, কিন্তু আমি যে সভ্যতার কথা বলছি, তা হল ৮ম শতাব্দী হতে ১৬শ শতাব্দীর ইসলামিক সভ্যতা, যা উসমানী খিলাফত, বাগদাদ (আব্বাসীয় খিলাফত), সিরিয়া (উমাইয়্যা খিলাফত), মিশরের মত অত্যাধুনিক শহর এবং সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট এর মত শাসকদের অধিকারে ছিল। যদিও আমরা অনেকেই ইসলামী সভ্যতার কাছে আমরা কতটুকু ঋণী সে ব্যপারে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখিনা, তবুও আমাদের ঐতিহ্যের অনেকাংশই তাদের অবদান। আজকের প্রযুক্তি শিল্প কখনই গড়ে তোলা সম্ভব হত না যদি না আমরা এই আরব গণিতবিদদের পেতাম!”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন