বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

আদর্শ নারী বা শ্রেষ্ট সম্পদের গুন কি?

পৃথীবিতে ভোগ বিলাশের শ্রেষ্ট সম্পদ হলো একজন আদর্শ নারী।
পুরুষের ভাগ্যে সাধারণতঃ তিন প্রকার স্ত্রী জোটে
১,,,,, কারো ভাগ্যে জোটে প্রভু! ফলে সে স্ত্রীর নিকট স্ত্রৈণ হয়। নিহাতই বিবির গোলাম হয়ে তার আঁচল ধরে সংসার করে।
বিবি যেমন বলে ঠিক তেমনি চলে। দাড়িকে ‘ছিঃ’ করলে চট্ ক’রে গাল তেল পারা করে।
সিনেমায় যাওয়ার বায়না ধরলে শতখুশী হয়ে স্ত্রীর পশ্চাতে পশ্চাতে চলে। দ্বীন শিখতে, লেখাপড়া করতে বাধা দিলে তাই মানে।
মা-বাপকে দেখতে মানা করলে তাই শোনে। ঘরে থাকে সে, আর বাজার করে বিবি।
মাছ ধরে সে, ভাগ করে বিবি! আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করেও বিবির বাধ্য থেকে সুখানুভব করে। কোন বিষয়ে স্ত্রীকে শাসন করার কথা কল্পনাই করা যায় না, উল্টে সেই স্বামীকে দস্ত্তরমত শাসিয়ে থাকে; এমন মেয়ে কোকিলবধূ হয়, এমনকি নিজেরও যত্ন নেয় না সে।
এমন স্ত্রী স্বামীকে যা বলে স্বামী তা ধ্রুব সত্য বলে মেনে তাকে ফিরিশ্তার মত বিশ্বাস করে এবং যার বিরুদ্ধে বলে তাকে পাকা দুশমন মনে করে। স্বামীর সুস্থ বিবেককে একেবারে হজম করে ফেলে।
কোন ভুল হলে কথায় এবং কখনও দৈহিক আঘাতও দিয়ে থাকে স্বামীকে! অথচ এমন গোবেচারী মুসলিম হলে সেই কষ্ট দেখে তার বেহেশ্তী স্ত্রী (হুর)গণ ঐ স্ত্রীকে অভিশাপ দিয়ে বলতে থাকে ‘ওকে কষ্ট দিস্ না, আল্লাহ তোকে ধবংস করুক! ও তো তোর নিকট ক’দিনকার মেহমানমাত্র। অদূর ভবিষ্যতে তোকে ছেড়ে ও আমাদের কাছে এসে যাবে।১
এমন সংসারে শান্তি কোথায়? কথায় বলে, ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়, আর নারীর দোষে সংসার নষ্ট শান্তি চলে যায়।’
২,,,,কারো ভাগ্যে স্ত্রী হয় নিহাতই চরণের দাসী। ফুটবলের মত যে দিকেই লাথি খায়, সে দিকে গড়িয়ে যায়। কত নির্যাতন সহ্য করে দাসীর মতই।
স্বামী ছাড়া স্বামীর মা-বোনও তাকে কষ্ট দিয়ে থাকে। ‘তোমার জন্য দাসী আনতে চললাম মা’ কথাকে বাস্তবায়ন করে স্বামী।
সময়ে খেতে পায় না কাজের চাপে, সুন্দর পরতে পায় না কথার চোটে। অথচ স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব থাকলেও অবৈধ কর্তৃত্ব নেই। এর জন্যও জবাবদিহি করতে হবে স্বামীকে।
৩,,,,,তৃতীয় প্রকার স্ত্রী স্বামীর জন্য অপেক্ষাকৃত বয়োকনিষ্ঠ বন্ধু। এমন স্ত্রীর নিকট স্বামী শ্রদ্ধা ও সমীহ পায়, ভক্তি ও ভালোবাসা পায়, পরামর্শ ও সদুপদেশ পায়।
এই হল সেই আদর্শ স্ত্রী, যার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘‘জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ।’’২
=======================
‪#‎প্রিয়‬ নবী (সাঃ) বলেন,
أَربَعٌ منَ السَّعَادَة : المرأَةُ الصَّالحَةُ وَالمسكَنُ الوَاسعُ وَالجَارُ الصَّالِحُ وَالمَركَبُ الهَنيءُ، وَأَربَعٌ منَ الشَّقَاوَة : الجارُ السُّوء وَالمرأَةُ السُّوء وَالمسكَنُ الضَّيِّقُ وَالمركَبُ السُّوء.
‘‘পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হল চারটি; সাধবী নারী, প্রশস্ত বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী স্ত্রী, অচল সওয়ারী (গাড়ি) এবং সংকীর্ণ বাড়ি।৩
‘‘সৌভাগ্যের স্ত্রী সেই; যাকে দেখে স্বামী মুগ্ধ হয়। সংসার ছেড়ে বাইরে গেলে স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে।
আর দুর্ভাগার স্ত্রী হল সেই; যাকে দেখে স্বামীর মন তিক্ত হয়, যে স্বামীর উপর জিভ লম্বা করে (লানতান করে) এবং সংসার ছেড়ে বাইরে গেলে ঐ স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে সে নিশ্চিন্ত হতে পারে না।’’৪
========================
সত্যিই তো ‘ছ্যাঁদা ঘটি চোরা গাই, চোর পড়শী, ধূর্ত ভাই। মূর্খ ছেলে, স্ত্রী নষ্ট, এ কয়টি বড় কষ্ট।’
উপযুক্ত স্ত্রীর ব্যবহার সকল অধিকারের ঊর্ধে। দাবীর বাইরে অতিরিক্ত তার দান। স্বামীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে তার কোন দ্বিধা নেই। তার মনে-প্রাণে শুধু এই ধারণাই থাকেঃ-
‘‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’’
এই তো পতিব্রতা সতী। ‘পতি সেবায় থাকে মতি, তবেই তাকে বলি সতী।’ স্বামীর খিদমত হয় তার ব্রত। এমন স্ত্রীই হয় বড় ধৈর্যশীল। যে হালে স্বামীর সাথে থাকে সেই হালেই আল্লাহর শুক্র ও প্রশংসা করে। স্বামী সুশ্রী না হলেও নিজ ভাগ ও ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়।
ধৈর্যের ফল বড় মিঠা। ধৈর্য ও সবর এক অমূল্য সম্পদ। যদ্বারা ধনী না হলেও ধনীর মত জীবন-যাপন করা যায়। সবর ও শুক্রের ফলে উভয় জগতে রত্নলাভ হয়।
========================
সবর ৩ প্রকার; আল্লাহর ফরযকৃত কর্মসমূহের উপর সবর ও ধৈর্যধারণ; তা নষ্ট না করা। তাঁর নিষিদ্ধ হারামের উপর ধৈর্যাবলম্বন; তাতে লিপ্ত না হওয়া। আর তাঁর লিখিত তকদীরের উপর ধৈর্যধারণ; তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং তার উপর ক্ষুব্ধ না হওয়া। যার মধ্যে এই তিন প্রকার সবরই বিদ্যমান সে ফকীর হলেও রাজা। গরীবী হাল হলেও সবর ও শুক্রের বলে তার মন থাকে সবল।
এ স্ত্রীর মনে কোন অভিযোগ নেই। কারণ, যেমন স্বামী, যেমন শ্বশুর-শাশুড়ী ও যেমন শ্বশুরবাড়ি সে পেয়েছে---তা তার ভাগ্যের জিনিস।
উত্বী বলেন, ‘‘একদা বসরার এক রাস্তায় পথ চলছিলাম।
পথিমধ্যে দেখলাম, এক অপূর্বা সুন্দরী একজন কুশ্রী বৃদ্ধের সাথে উপহাস ও হাসাহাসির সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলছে। আমি যুবতীর নিকটবর্তী এসে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ঐ লোকটি তোমার কে?’ বলল, ‘আমার স্বামী।’ আমি অবাক হয়ে তাকে বললাম, ‘তোমার এত সুন্দর রূপ-যৌবন থাকা সত্ত্বেও ঐ কুশ্রী বৃদ্ধকে নিয়ে কি করে সংসার কর?! এটা সত্যই আশ্চর্যজনক ব্যাপার!!’
কিন্তু মহিলাটি আমাকে উত্তর করল, ‘তাতে কি আছে? সম্ভবতঃ উনি আমার মত সুন্দরী পেয়ে আল্লাহর শুক্র আদায় করছেন।
আর আমি উনার মত কুশ্রী পেয়েও সবর করে আছি। আর শুক্রকারী এবং সবরকারী উভয়ে জান্নাতবাসী হবে! আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা জুটিয়েছেন তা পেয়ে সন্তুষ্ট হওয়া উচিৎ নয় কি?!’
এই জবাবে আমি হতবাক হলাম। অতঃপর কিছু না বলে প্রস্থান করলাম।’’
========================
এমন জবাব সত্যিই এক মু’মিন নারীর। পক্ষান্তরে কারো স্ত্রীকে অনুরূপ প্রলোভন, কুমন্ত্রণা ও ফুস্মন্তর দিয়ে তার সংসার নষ্ট করা অবশ্যই কোন মানুষের কাজ নয়;
তার পশ্চাতে থাকে শয়তান। পরন্তু
#প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ.
‘‘যে ব্যক্তি কারো স্ত্রী অথবা ক্রীতদাসকে তার ( স্বামী বা প্রভুর বিরুদ্ধে) প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’৫
অবশ্য যে দম্পতি তকদীরে পূর্ণ ঈমান রাখে তারা কোন দিন বিচলিত হয় না।
এমন দম্পতি মু’মিন দম্পতি।
এমন চরিত্রবাণ আদর্শ দম্পতির লক্ষণ;
লজ্জাশীল হয়,
অপরকে কোন প্রকার ব্যথা দেয় না।
শান্তি ও শৃঙ্খলতাকামী হয়।
পরোপকারী ও হিতাকাঙক্ষী হয়।
সত্যবাদী, মিতভাষী, মিষ্টভাষী,
ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ, অল্পে তুষ্ট,
সহনশীল, অঙ্গীকার পালনকারী,
আমানতদার, সংযমী, জিতেন্দ্রিয়,
ভদ্র, শিষ্টাচারী, বিনয়ী, স্মিতমুখো হয়।
কাউকে লানতান বা অভিশাপ করে না, শীতল মেজাজী হয়।
কাউকে গালাগালি করে না, কারো চুগলী, লাগান-ভাজান, কারো গীবত, পরচর্চা, পরনিন্দা করে না।
অধীর হয় না। হিংসুটে, বখীল, পরশ্রীকাতর হয় না।
যে আল্লাহর জন্য সব কিছুকে পছন্দ করে ও ভালোবাসে, তাঁরই জন্য সকল কিছুকে ঘৃণা করে ও মন্দ বাসে। তাঁরই সন্তুষ্টলাভের উদ্দেশ্যে সন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়।
উমার বিন খাত্তাব < বলেন, ‘নারী তিন প্রকার; প্রথম প্রকার নারী; যারা হয় সরলমতী, সতী এবং আত্মসমর্পণকারিণী, অর্থের ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করে, স্বামীর অর্থের অপচয় ঘটতে দেয় না।
দ্বিতীয় প্রকার নারী সন্তানের আধার। আর তৃতীয় প্রকার নারী হল সংকীর্ণ বেড়ি; আল্লাহ যে বান্দার জন্য ইচ্ছা তার গর্দানে তা লটকিয়ে দেন।’৬
এই ধরনের স্ত্রীরা হল স্বামীর গলার গাব। এরা কেবল ‘হাম করে খায় আর ধুম করে শোয়।’ এদের না আখেরাতের চিন্তা থাকে, আর না-ই দুনিয়ার কোন চিন্তা!
এক প্রকার স্ত্রী আছে; যারা স্বামীর আদেশ-পালনে গড়িমসি, কুঁড়েমি ও গয়ংগচ্ছ করে। বরং তার সে হুকুম তা’মীল না করতে বাহানা খোঁজে। কখনো বা নাক সিঁটকে উপেক্ষাও করে বসে।
দ্বিতীয় প্রকার স্ত্রী; যারা আদেশ শোনামাত্র নিমেষে পালন করে। কোন প্রকারের ওজর পেশ বা গড়িমসি করে না, তারা হুকুমে হাজির হয়।
কিন্তু আর এক প্রকার স্বামী-প্রাণা স্ত্রী আছে; যারা হুকুমের আশা করে না। হুকুমের পূর্বে স্বামীর প্রয়োজন অনুমান করে পূর্ণ করে রাখে।
অনুরূপ স্বামীও তিন প্রকার। শেষোক্তের দম্পতির যে স্বর্গীয় সুখ জগতেই উপভোগ হয় তা কল্পনাতীত!
========================
<<<শেয়ার করে অন্যকে জানিয়ে দিন এবং দ্বীন প্রচার করুন>>>
========================
১,,,, (তিরমিযী, ইমা, প্রভৃতি,আযি ২৮৪পৃঃ)
২,,, (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩৪১৩নং)
৩,,,(আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮২নং)
৪,,, (ঐ ১০৪৭নং)
৫,,, (আবু দাঊদ, নাসাঈ, তুহফাতুল আরূস, ১৪৬-১৪৭পৃঃ)
৬,,, (আল ইকদুল ফারীদ ৬/১১২)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন