প্রশ্ন
আস সালামু আলাইকুম ভাই,
আমি একটা হাদিস উল্লেখ করছি,
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، قَالَ: أَخْبَرَنَا حَمْزَةُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْعَقَبِيُّ بِبَغْدَادَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوْحٍ الْمَدَائِنِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَّامُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْمَدَائِنِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَّامُ بْنُ سُلَيْمٍ الطَّوِيلُ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنِ الْحَسَنِ الْعُرَنِيِّ، عَنِ الْأَشْعَثِ بْنِ طَلِيقٍ، عَنْ مُرَّةَ بْنِ شراحيل، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: لَمَّا ثَقُلَ رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْتَمَعْنَا فِي بَيْتِ أُمِّنَا عَائِشَةَ، قَالَ: فَنَظَرَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عليه وسلم فَدَمَعَتْ عَيْنَاهُ، ثُمَّ قَالَ لَنَا: قَدْ دَنَا الْفِرَاقُ. وَنَعَى إِلَيْنَا نَفْسَهُ، ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِكُمْ، حَيَّاكُمُ اللهُ، هَدَاكُمُ اللهُ، نَصَرَكُمُ اللهُ، نَفَعَكُمُ اللهُ، وَفَّقَكُمُ اللهُ، سَدَّدَكُمُ اللهُ، وَقَاكُمُ اللهُ، أَعَانَكُمُ اللهُ، قَبِلَكُمُ اللهُ، أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ، وَأُوصِي اللهَ بِكُمْ، وَأَسْتَخْلِفُهُ عَلَيْكُمْ، إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ، أَنْ لَا تَعْلُوا عَلَى اللهِ فِي عِبَادِهِ وَبِلَادِهِ فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى:
ذِكْرُهُ: قَالَ: ذَكَرَهُ لِي وَلَكُمْ تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُها لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلا فَساداً. وَالْعاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ [ (2) ] ، وَقَالَ: أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوىً لِلْمُتَكَبِّرِينَ [ (3) ] ، قُلْنَا: فَمَتَى أَجَلُكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «قَدْ دنا الأجل وَالْمُنْقَلَبُ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالسِّدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَالْكَأْسِ الْأَوْفَى، وَالْفَرْشِ الْأَعْلَى، قُلْنَا فَمَنْ يُغَسِّلُكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: رِجَالُ أَهْلِ بَيْتِي الْأَدْنَى فَالْأَدْنَى مَعَ مَلَائِكَةٍ كَثِيرَةٍ يَرَوْنَكُمْ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ، قُلْنَا: فَفِيمَ نُكَفِّنُكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟
قَالَ: فِي ثِيَابِي هَذِهِ إِنْ شِئْتُمْ أَوْ فِي يَمِنَةٍ، أَوْ فِي بَيَاضِ مِصْرَ» ، قُلْنَا مَنْ يُصَلِّي عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَبَكَى وَبَكَيْنَا، فَقَالَ: «مَهْلًا غَفَرَ اللهُ لَكُمْ، وَجَزَاكُمْ عَنْ نَبِيِّكُمْ خَيْرًا، إِذَا غَسَّلْتُمُونِي، وَحَنَّطْتُمُونِي، وَكَفَّنْتُمُونِي فَضَعُونِي عَلَى شَفِيرِ قَبْرِي، ثُمَّ اخْرُجُوا عَنِّي سَاعَةً، فَإِنَّ أَوَّلَ مَنْ يُصَلِّي عَلَيَّ، خَلِيلَايَ، وَجَلِيسَايَ جِبْرِيلُ وَمِيكَائِيلُ، وَإِسْرَافِيلُ ثُمَّ مَلَكُ الْمَوْتِ، مَعَ جُنُودٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، وَلْيَبْدَأْ بِالصَّلَاةِ عَلَيَّ رِجَالٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، ثُمَّ نِسَاؤُهُمْ، ثُمَّ ادْخُلُوهَا أَفْوَاجًا وَفُرَادَى، وَلَا تُؤْذُونِي بِبَاكِيَةٍ، وَلَا بِرَنَّةٍ، وَلَا بِصَيْحَةٍ وَمَنْ كَانَ غَائِبًا مِنْ أَصْحَابِي فَأَبْلِغُوهُ عَنِّي السَّلَامَ وَأُشْهِدُكُمْ بِأَنِّي قَدْ سَلَّمْتُ عَلَى مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ، وَمَنْ تَابَعَنِي على ديني هذا مند الْيَوْمِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ» ، قُلْنَا: فَمَنْ يُدْخِلُكَ قَبْرَكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟، قَالَ: «رِجَالُ أَهْلِ بَيْتِي الْأَدْنَى فَالْأَدْنَى، مَعَ مَلَائِكَةٍ كَثِيرَةٍ، يَرَوْنَكُمْ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ»
অনুবাদ:
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘’হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আপনার যাওয়ার সময় খুব নিকটে চলে এসেছে; (আপনি মারা যাওয়ার পর) আপনাকে কে গোসল দিবে?
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ‘’আমার আহলে বাইত’’
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদঃ কে আপনাকে কাফন পরাবে?
রাসুল (সাঃ) ঃ ‘’আমার আহলে বাইত’’
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদঃ কে আপনাকে কবরে নামাবে?
রাসুল (সাঃ)ঃ ‘’আমার আহলে বাইত’’
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদঃ আপনার জানাযা কে পড়াবে?
তখন রাসুল (সাঃ)-এর চোখে পানি চলে এলো।
তিনি বললেনঃ তোমাদের নাবীর জানাযা এমন হবে না, যেমন তোমাদের হয়। যখন আমার গোসল হয়ে যাবে তখন তোমরা সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। সবার আগে আমার আল্লাহ আমার জানাযা পড়বেন। তারপর জিবরীল, মিকাঈল ও ইস্রাফিল অতঃপর আরশের অন্যান্য ফেরেশতারা আসবে ও আমার জানাজা পড়বে।
হাদিসটি কোন গ্রন্থে আছে? এটা কি সহীহ? যদি সহীহ হয় তাহলে আমি জানতে চাই যে আমরা তো আল্লাহর কাছে জানাযার সলাত আদায় করি, দু’আ করি। আল্লাহ কার কাছে জানাযা পড়লেন?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
উপরোক্ত হাদীসটি কোন বানোয়াট হাদীস নয়।
যে সকল কিতাবে বর্ণিত হয়েছে উক্ত ঘটনা
১- দালায়েলুন নবুয়্যাহ লিলবায়হাকী, বাবু জিকরিল হাদীস আল্লাজি রুয়িয়া আন ইবনে মাসঈদ রাঃ।
২- আলখাসায়েসুল কুবরা, রাসূল সাঃ এর গোসল অধ্যায়।
৩- তাবকাতে ইবনে সাদ, রাসূল সাঃ এর মৃত্যুকালীন অসিয়ত অধ্যায়।
৪- আলমুনতাজিম ফী তারীখিল মুলুকি ওয়াল উমামি, রাসূল সাঃ এর অসুস্থ্যকালীন সময়ে একত্র হওয়া সাহাবীদের ওসিয়ত অধ্যায়।
৫- শরহুজ যুরকানী, ১২তম খন্ড, ১০ম অধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছেদ।
৬- তারীখুল খামীস, রাসূল সাঃ এর ওফাত অধ্যায়।
৭- আলমাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, তৃতীয় খন্ড, ১০ মাকসাদ, ১ম পরিচ্ছেদ।
৮- ইতহাফুল মাহরাহ লিইবনে হাজার, হাদীস নং-১৩১৮৬।
৯- আলমুস্তাদরাক আলাস সাহীহাইন, হাদীস নং-৪৩৯৯।
১০-আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/২২২।
উক্ত হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনদের মন্তব্য
وقال الحاكم: عبد الملك بن عبد الرحمن هذا لأعرفه بِعَدَالَةٍ وَلَا جَرْحٍ وَالْبَاقُونَ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ. قُلْتُ: لم ينفرد به عبدلملك بن عبد الرحمن بل تابعه عليه غيره كما رواه البزار بسند رواته ثقات..
১
ইমাম হাকেম রহঃ বলেন, উক্ত বর্ণনার শুধু রাবী আব্দুল মালিক বিন আব্দুর রহমান এর ব্যাপারে আদালত ও জারাহ কোন বিষয়ই পাওয়া যায় না। আর বাকি সকল রাবীই সিকা তথা নির্ভরযোগ্য।
২
আল্লামা বুসিরী রহঃ বলেন, আব্দুল মালিক বিন আব্দুর রহমান এ বর্ণনায় মুনফারিদ নয়। বরং তার “তাবে”আরো অনেকে আছেন। যেমন মুসনাদুল বাজ্জার সংকলক সিকা রাবীদের সনদে তা বর্ণনা করেছেন। {ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ-৩/৬৫১২}
৩
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এর রাবীগণ সবাই সহীহ, শুধু মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বিন সামুরা ছাড়া। তিনি সিকা। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-৯/২৭}
সুতরাং বুঝা গেল এটি কোন বানোয়াট কথা নয়। সহীহ সনদে বর্নিত একটি হাদীস।
আল্লাহ তাআলা কার কাছে জানাযা পড়লেন?
এ প্রশ্নের জবাবে আমরা আপনাকে আরো কয়েকটি প্রশ্ন করি। সেসব প্রশ্নের আপনি যে জবাব প্রদান করবেন উপরোক্ত প্রশ্নের জবাব তাই হবে। যথা-
১
দরূদ পড়ার অর্থ হল রাসূল সাঃ এর উপর রহমাতের দুআ করা। তো পবিত্র কুরআনে এসেছে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাঃ এর উপর দরূদ পড়েন। দেখুন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [٣٣:٥٦]
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। {সূরা আহযাব-৫৬}
এখন প্রশ্ন হল আল্লাহ তাআলা কার কাছে রহমাতের দুআ করেন দরূদ পড়ে?
২
কুরআনের প্রতিটি আয়াত প্রথমে আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল আঃ কে বলেছেন, তারপর তা রাসূল সাঃ কে জানানো হয়েছে। প্রশ্ন হল আল্লাহ তাআলা যখন জিবরাঈল আঃ কে বলেছেন-
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ [١:٥]
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। {সূরা ফাতিহা-৫}
প্রশ্ন হল, আল্লাহ তাআলা যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তখন তিনি বলছেন আমি তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই। তো আল্লাহ তাআলা কার ইবাদত করেন এবং কার কাছে সাহায্য চাইলেন?
উপরোক্ত দুই প্রশ্নের জবাব কি? যদি উপরোক্ত প্রশ্ন দু’টির জবাব বের করতে পারেন, তাহলে আপনার প্রশ্নটির জবাবও আপনি পেয়ে যাবেন। এক কথায় আমাদের দু’টি প্রশ্নের যে জবাব হবে, আপনার প্রশ্নটির জবাবও তাই হবে।
যেমন আমরা বলি, আল্লাহ তাআলা দরূদ পড়েন, মানে হল তিনি রহমাত পাঠান, তিনি রহমাতের দুআ কারো কাছে করেন না, বরং এটির গুরুত্ব বুঝাচ্ছেন। সেই সাথে আল্লাহ তাআলা কারো ইবাদত বা কারো কাছে সাহায্য চান না, বরং তিনি ইবাদত সাহায্য কিভাবে চাইতে হয়, তা শিখাচ্ছেন এবং এর গুরুত্ব বুঝাচ্ছেন।
ঠিক তেমনি আল্লাহ তাআলা জানাযা পড়েছেন, মানে হল, তিনি এটির গুরুত্ব বুঝাচ্ছেন। সেই সাথে আল্লাহর নবী যে মাকবুল ও শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করলেন।
এতটুকুই। এটি নিয়ে অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার কোন মানে হয় না। এসবের উপর আমাদের ঈমান ও আখেরাতে মুক্তি নিহিত নয়। তাই এসব বিষয় নিয়ে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া কিছুতেই সমীচিন হবে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের অহেতুক বিষয় থেকে মুক্ত রেখে তার বন্দিগী বেশি বেশি করে করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন