বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

জাতীয় সংগীত

ইতিহাসের অনেক পরিহাস। তবে বঙ্গের অন্যতম পরিহাস হলো, ১৯৭১ সালে পুর্ব পাকিস্থান স্বাধীনতা পেল আর তারা কিনা তাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে বেছে নিলো ‘আমার সোনার বাংলা’ র প্রথম দশ লাইন। সেটি ছিল রবীন্দ্রনাথের এমন একটি কবিতা, যা অবিভক্ত বাংলার চেতনায় অনুপ্রাণিত।যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম স্বাধীনতাত বিরোধী গান। এ গানের প্রতিটি শব্দে বঙ্গভংগের বিরোধীতা, রবীন্দ্রঠগের দেব-দেবীর প্রতি ভক্তি, পুজার বর্ননা দেওয়া হয়েছে। 
রবীন্দ্র ঠগের লিখিত এ পুজা অর্চনা সঙ্গীতের মাত্র ১০ লাইন পাঠ করা হয় কিন্তু মুল গান ২৫ চরনের। যে লাইনগুলোতে সরাসরি দেবী বন্দনা করা হয়েছে তা কারচুপি করে উল্লেখ করা হয়নি।
রবিন্দ্র ঠগের পুরো গান আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি -

১. আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে
মুল থিম- আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় এই গানটি প্রথম গীত হয়েছিল। যে গানের মুল উদ্ধেশ্য ছিল অখন্ড বাংলা। বাংলাদেশের বিরোধীতায় এ গান রচিত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গের পটভূমিতে লিখিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির আরেকটি দিক হলো, সেখানে ‘মা’ বলতে আরো বোঝানো হয়েছে অখন্ড- বাংলাকে, আর বঙ্গভঙ্গকে তুলনা করা হয়েছে ‘দুর্গা মায়ের অঙ্গচ্ছেদের সাথে। https://goo.gl/KdQyRq

২. ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে
মুল থিম- হিন্দুরা বিভিন্ন বৃক্ষের পুজা করে থাকে যার অন্যতম বটে মুলে পুজা ।হালের পহেলা বৈশাখী পুজা যার অন্যতম নিকৃষ্ট উদাহরন। । http://goo.gl/kSI0uZ,http://goo.gl/EaNJVQ

৩. মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে

মুল থিম- এই মা হল হিন্দুদের দুর্গা+কালী মা। যার মুখ মলিন হলে তার বুক ফেটে যায়। মায়ের পুজার ঘরে জীবন কেটেছে তার। দিন ফুরালে সন্ধাকালে কারা দীপ জ্বালিয়ে উলু ধ্বনি দেয় তা আর মনে হয় নতুন করে কাউকে বুঝাতে হবেনা।http://goo.gl/Zr9Poi
৪. তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি।
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারাদিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে
মুল থিম- এখানে সে তার খাদ্যদেবী অন্নপুর্নার কথা উল্লেখ করেছে। উল্লেখ্য বর্তমান সিলেবাসে অন্নপুর্নার প্রশংসায় একটি কবিতাও রয়েছে। http://goo.gl/AiibWv,https://goo.gl/BT2Hj9

৫. ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, তোমার রাখাল তোমার চাষি।
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি।
মুল থিম- দেবী মায়ের কদমে হিন্দুরা মাথা ঠুকে । পুজায় নানা রকমের খাবার দেবীর চরনে থাকে। https://goo.gl/LF0Ax9 "আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি" শেষের এই লাইনে সে অবিভক্ত বাংলাকে দেবী মায়ের সাথে তুলনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে গলার ফাস হিসেবে উল্লেখ করেছে।

দেখা যাচ্ছে সরকার এদেশের আম মুসলমানদের উপর জাতীয় সংগীতের নামে রবি ঠগের রচিত যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি চাপিয়ে দিয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং হিন্দুদের দেবীর প্রতি ভক্তি। প্রাবন্ধিক নীরদ সি চৌধুরী তার বইতে রবীন্দ্র ঠগের দেবী মাতার বন্দনা ও ভক্তি সম্পর্কে লিখেছে-“ইহার পর রবীন্দ্রনাথের হিন্দুত্বের কথা বলিতে হইবে, উহা বঙ্কিমচন্দ্র ও তাহার মতো বাঙালির দ্বারা সৃষ্ট ও প্রচারিত নব্য বাঙালি হিন্দুত্ব। ইহার স্বপক্ষে প্রথমে একটি ইঙ্গিতসূচক দৃষ্টান্ত দিতেছি। ইহাও একটি গান, ১৯০৫ সনে বঙ্গবিচ্ছেদ কার্যকরী হইবার সময়ে রচিত। এই গানটির নাম দেয়া হইয়াছিল ‘মাতৃমূর্তি’। তবে মাতার মূর্তি কিরূপ? রবীন্দ্রনাথ লিখিল-
ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ

এই দেশমাতৃকার সহিত আর এক দেশমাতৃকার কোনও প্রভেদ নাই
‘ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমলদলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িনী নমামি ত্বাম...”

(সূত্র: ‘আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ’, নীরদ সি চৌধুরী, মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১০৬) যবন-ম্লেচ্ছ রবি ঠগ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ‘মাতৃমূর্তি’ গানটি রচনা করেছিল তার গুরু বঙ্কিমের ‘বন্দেমাতরম’ গানের ‘ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী’ ছত্রের সাথে মিল রেখে, যা নীরদ সি চৌধুরী তার লেখাতে উদাহরণসহ উল্লেখ করেছে। আর রবি ঠগের বঙ্গভঙ্গবিরোধী গানসমূহের মধ্যে শুধু নীরদের বইতে উল্লিখিত গানটিই নয়, বরং সেই একই ১৯০৫ সালে লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিও রয়েছে। রবি ঠগ ‘আমার সোনার বাংলা’ গানেও ‘মা’ বলতে দুর্গা ও কালীকেই বুঝিয়েছে, বাংলাদেশকে নয়।
ভারতের কোনো মুসলমান আজো ‘বন্দেমাতরম’ গায় না, কারণ সেখানে দুর্গার বন্দনা করা হয়েছে। ভারতীয় মুফতীগণ কর্তৃক ‘বন্দেমাতরম’ গাওয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার ফতওয়াও দেয়া হয়েছে। যেখানে ভারতের সাধারণ মুসলমানরাও ‘বন্দেমাতরম’ গায় না, সেখানে আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমানরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিক হয়েও রবি ঠগের গান গাইছে। যার ফলে তারা নিজেদের অজান্তেই মুসলমান হয়েও দুর্গা ও কালীর বন্দনা করছে। (নাউযুবিল্লাহ)

এ সংগীত বাদ দিয়ে মুসলিম চেতনায় লিখিত লিখা জাতীয় পাঠ করা হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন