হায়াতুন নবী (সা.) অকাট্যভাবে প্রমাণিত
--মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
==============================
====
হায়াতুন নবী (সা.)-এর আলোচনার শুরুতে বিষয়টিকে ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য হায়াতুশ শুহাদা বা শহীদগণের কবরে জীবিত থাকার বিষয়ে আলোকপাত করছি। এরপর সকল নবী (আ.)-এর কবরে জীবিত থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর উল্লিখিত হায়াতুন নবী (সা.)-এর বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনার আশা করছি।
----------------------------
পবিত্র কুরআনে শহীদগণকে জীবিত ঘোষণা
----------------------------
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻟِﻤَﻦ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ۚ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻟَّﺎ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।”
(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ১৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺤْﺴَﺒَﻦَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗُﺘِﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺗًﺎ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳُﺮْﺯَﻗُﻮﻥَ
“যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিত; তাদের রব-প্রতিপালকের নিকট তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৯)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর পথে শহীদগণের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে মৃত বলা যাবে না। বরং তারা জীবিত। আবার উক্ত আয়াতদ্বয়েই রয়েছে যে, যারা নিহত (শহীদ) হয়েছেন অর্থাৎ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তবুও তাদেরকে জীবিত বিশ্বাস করতে হবে।
এর স্বরূপ বা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরের কিতাবে রয়েছে--দুনিয়াতে তাদেরকে সকলে নিহত বা শহীদ হিসেবেই জেনে কাফন-দাফন করেছেন। কিন্তু দুনিয়াবী মৃত্যুর পর আলমে বরযখে তারা জীবিতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অনন্য জীবন লাভ করেছেন-যে জীবনে তারা মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় জীবিত বলে ভূষিত হয়েছেন এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক দেয়া হয়-যা তাদের বিশেষভাবে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এক্ষেত্রে যদিও মুমিন বা কাফির নির্বিশেষে সকল মৃত ব্যক্তিরই আলমে বরযখে জীবিত হয়ে সুওয়াল-জাওয়াব ও আরাম বা আজাবের সম্মূখীন হওয়ার কথা হাদীস শরীফে রয়েছে, কিন্তু শহীদগণের এক্ষেত্রে বিশেষত্ব হলো, অন্যান্য মৃতের তুলনায় তাদের জীবন-অনুভূতি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও অধিক তাৎপর্যমণ্ডিত-যদ্দরুণ তারা জীবিত হিসেবে জীবনোকরণ স্বরূপ রিযিক লাভ করেন। আর তাদের এ জীবন-অনুভূতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাদের বিশেষ ধরনের জীবনের কিছু লক্ষণ পৃথিবীতেই তাদের দেহে প্রকাশ পায় যে, তাদের দেহ মাটিতে খায় না; তাদের লাশ বরাবর অবিকৃত থাকে। এ ধরনের বহু ঘটনা পৃথিবীতে প্রত্যক্ষিত হয়েছে।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতবী, ৩য় খণ্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে ইবনে কাসীর [ইফাবা], ৪র্থ খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন [ইফাবা], ২য় খণ্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
শহীদগণ আলমে বরযখে কিভাবে জীবিত অবস্হায় জীবন অতিবাহিত করেন এবং রিযিক লাভ করেন, সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে--
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--
ﺃَﺭْﻭَﺍﺣﻬﻢْ ﻓِﻲ ﺟَﻮْﻑ ﻃَﻴْﺮ ﺧُﻀْﺮٍ ﻟَﻬَﺎ ﻗَﻨَﺎﺩِﻳﻞ ﻣُﻌَﻠَّﻘَﺔ ﺑِﺎﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺗَﺴْﺮَﺡ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔ ﺣَﻴْﺚُ ﺷَﺎﺀَﺕْ
“শহীদগণের রূহ সবুজ রঙের পাখির পেটের ভিতরে বিশেষ সম্মানিত অবয়বে অনন্য জীবন লাভ করে। আর তাদের জন্য আরশে প্রদীপসমূহ লটকানো হয়। তারা জান্নাতে যেখানে খুশী বিচরণ করেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৭)
শহীদগণ আলমে বরযখে রিযিক কীভাবে লাভ করেন-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﺎﺭِﻕِ ﻧَﻬْﺮٍ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﻭَﻳَﻈْﻬَﺮُ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓِﻲ ﻗُﺒَّﺔٍ ﺧَﻀْﺮَﺍﺀَ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭِﺯْﻗُﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺑُﻜْﺮَﺓً ﻭَﻋَﺸِﻴًّﺎ
“শহীদগণ জান্নাতের দ্বারে নির্ঝরণীর ঝলকে সবুজ গম্বুজের মধ্যে অবস্হান করেন। তখন জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের নিকট রিযিক আগমন করে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮৬)
অপরদিকে সাধারণ মুমিনগণের রূহ সম্পর্কে হযরত কা‘ব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻧَﺴَﻤَﺔُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻃَﺎﺋِﺮٌ ﻳَﻌْﻠُﻖُ ﻓِﻲ ﺷَﺠَﺮِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺮْﺟِﻌَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺒْﻌَﺜُﻪُ
“মুমিনের রূহ পাখিরূপে জান্নাতের গাছে বিচরণ করে--যে পর্যন্ত রোজ কিয়ামতে তার দেহে তাকে ফেরানো না হবে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৩৫১)
সুতরাং এক্ষেত্রে শহীদগণের রূহ তারকার ন্যায়-যা সবুজ পাখির ভিতর প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে সাধারণ মুমিনগণের রূহ স্বয়ং পাখির স্বরূপ হয়ে যায়।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা)
----------------------------------------
শহীদগণের চেয়ে উত্তম অবস্থায় নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত
----------------------------------------
আলমে বরযখে শহীদগণের উল্লিখিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবনের চেয়ে অধিক শক্তিমান ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন হচ্ছে নবী-রাসূলগণের বরযখী জীবন। কারণ, তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন--তাদের শরীরকে কখনো মাটি খেতে পারে না এবং তারা নামায পড়াসহ জীবিত মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্য লাভ করেন।
নবীগণের কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) বলেন-
ﻷﻥ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻓﻲ ﺻﻮﺭﺓ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕ ﺑﺎﻟﻨﺴﺒﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻭﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﻟﻠﺸﻬﺪﺍﺀ . ﻭﻻ ﺷﻚ ﺃﻥ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺭﻓﻊ ﺭﺗﺒﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ
“কেননা, নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন কারণ, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।”
(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা)
আলমে বরযখে নবীগণের (আ.) জীবিত থাকার প্রমাণে বহু সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসসমূহে তাঁদের কবরে জীবিত থাকা এবং শহীদগণের চেয়েও অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত অসাধারণ জীবন লাভের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ
“নিশ্চয়ই নবীগণ কবরে জীবিত; তারা নামায পড়েন।”
(বাইহাক্বী-হায়াতুল আম্বিয়া, ১৫ খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৩৯১/ মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৫ প্রভৃতি)
উক্ত হাদীসে নবীগণের (আ.) মৃত্যুর পর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা এবং সেখানে নামায পড়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কবরে নবীগণের নামায পড়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বর্ণনায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﺮَﺭْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺃُﺳْﺮِﻱَ ﺑِﻲ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜَﺜِﻴﺐِ ﺍﻷَﺣْﻤِﺮِ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ
“আমি যে রাতে আমাকে মি’রাজে নেয়া হলো মূসা (আ.)-এর নিকট এলাম এমতাবস্হায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১)
এ হাদীস উল্লেখ করার পর আল্লামা কুরতবী (রহ.) বলেন--
ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳﺪﻝ ﺑﻈﺎﻫﺮﻩ ﻋﻠﻰ : ﺃﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺃﻯ ﻣﻮﺳﻰ ﺭﺅﻳﺔ ﺣﻘﻴﻘﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻘﻈﺔ ، ﻭﺃﻥ ﻣﻮﺳﻰ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﺣﻴﺎ ، ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ ، ﻭﻫﺬﺍ ﻛﻠﻪ ﻣﻤﻜﻦ ﻻ ﺇﺣﺎﻟﺔ ﻓﻲ ﺷﻲﺀ ﻣﻨﻪ ، ﻭﻗﺪ ﺻﺢ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻳﺮﺯﻗﻮﻥ ، ﻭﻭﺟﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺘﻐﻴﺮ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﻴﻦ ، ﻭﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﺮﻯ ﻭﺃﻭﻟﻰ
“এ হাদীসের দ্বারা বাহ্যতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মূসা (আ.)কে বাস্তবেই জাগ্রত অবস্হায়ই দেখেছেন এবং মূসা (আ.) কবরে জীবিত ছিলেন, তিনি সেখানে সেই নামাযই পড়ছিলেন-যা তিনি জীবদ্দশায় পড়তেন। এ সবই সম্ভব, এর কোন কিছুতে অবাস্তবতা নেই। আর বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শহীদগণ জীবিত এবং তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন আর তাদের অনেককে এমন অবস্হায় পাওয়া গিয়েছে যে, অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বীয় কবরের মধ্যে তাঁরা কোনরূপ পরিবর্তন হননি। তারা সম্পূর্ণ অবিকৃতরূপে আছেন। সুতরাং যখন শহীদগণের অবস্হা এই, তখনতো নবীগণের অবস্হা আরো উন্নত ও উত্তম হবে!” (আল-মুফহিম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা)
তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইবরাহীম (আ.)কে এ অবস্হায় দেখেছেন যে, তারা নামায পড়ছেন বলে অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত হাদীসসমূহে নবীগণের ওফাতের পর কবরে যে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, এটা দুনিয়াতে তাঁদের প্রতি আরোপিত তাকলীফী নামায নয়, বরং এটা কবরে তাঁদের বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক তাশরীফী নামায। তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত হওয়ার পর এ নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করেন-যেমন ফেরেশতাগণ মুকাল্লাফ না হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর বিভিন্ন ইবাদত পালনের দ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করেন। নবীগণ কবরে গমনের পর কখন এ তাশরীফী নামায আদায়ের সম্মান লাভ করেন, সে সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀَ ﻻ ﻳُﺘْﺮَﻛُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺑَﻌْﺪَ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً , ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻬُﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻨْﻔَﺦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ
“নবীগণ তাঁদের কবরে চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিবৃত্ত থাকেন না এ ছাড়া যে, তারা মহান আল্লাহর সমীপে নামায পড়তে থাকেন। আর তা অব্যাহত থাকবে যাবত (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হয়।”
(মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৮/ মুসনাদে বায্যার, হাদীস নং ৬৩৯৬/ মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)
অপরদিকে আলমে বরযখে শহীদগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি আলমে বরযখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু তাঁদের শরীর কবরে অক্ষত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে এসবই কবরে তাঁদের সশরীরে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻓﻨﺒﻲُّ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻲٌّ ﻳُﺮْﺯَﻕ
“আল্লাহ তা‘আলা যমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খাবে। তাই আল্লাহর নবী মাত্রই জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৬৩৭)
এ সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো--নবী ও রাসূলগণ কবরে সশরীরে জীবিত আছেন; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন এবং নামায পড়েন।
এ ছাড়াও মি‘রাজের ঘটনার হাদীস শরীফে অনেক নবীর কথা এসেছে যে, তাঁদের সাথে আসমানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম হয়েছে এবং মূসা (আ.) উম্মতে মুহাম্মদীর উপর আরোপিত ৫০ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে আনতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার পরামর্শ দেন। যার বদৌলতে পরিশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজরূপে বলবৎ করা হয়। আবার সকল নবী ও রাসূল (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসে তাশরীফ এনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতীতে নামায আদায় করেন।
(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৪)
এসব ঘটনা নবীগণের (আ.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের এ আকীদা-বিশ্বাস রাখা কর্তব্য
তবে নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত-এটা যেমন অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তেমনি দুনিয়া থেকে তাঁরা ওফাত পেয়েছেন-একথাও সত্য এবং এর ওপরও ঈমান রাখতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻣَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻗَﺪْ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻪِ ﺍﻟﺮُّﺳُﻞُ
“মুহাম্মদ (সাা.)তো একজন রাসূলই, আর তার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন--
ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٌ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣَّﻴِّﺘُﻮﻥَ
“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”
(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৩০)
সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা ওফাতের ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই। যেমন, কবরে সশরীরে জীবিত থাকা, যমিন তাদের শরীর না খাওয়া, সেখানে রিযিক লাভ করা, নামায পড়া প্রভৃতি।
--------------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে সশরীরে জীবিত আছেন
--------------------------------
উপরোল্লিখিত দলীল-প্রমাণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে--নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। আর তিনি সেখানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন এবং তিনি সেখানে তাশরীফী নামায আদায়ের বিশেষ সম্মান লাভ করেন।
এ ছাড়াও বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে অনন্য বৈশিষ্ট্যে জীবিত থাকার প্রমাণে হাদীস শরীফে বহু বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্য হতে কিছু হাদীস নিম্নে পেশ করা হলো--
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে--
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﺸْﻬُﻮﺩٌ ﺗَﺸْﻬَﺪُﻩُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺇِﻥَّ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻟَﻦْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻋُﺮِﺿَﺖْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺻَﻠَﺎﺗُﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻭَﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻓَﻨَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻲٌّ ﻳُﺮْﺯَﻕُ
হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“তোমরা জুমু‘আর দিনে বেশী করে দরূদ পড়ো কেননা, এদিন উপস্থিতির দিন-ফেরেশতাগণ এদিনে উপস্থিত হন আর তোমাদের কেউ যখনই আমার প্রতি দরূদ পড়ে, তখনই সেই দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়-এ পর্যন্ত যে, সে দরূদ পড়া থেকে ফারেগ হয়।” হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) বলেন, আমি বললাম--(আপনার) ওফাতের পরও তা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-“(আমার) ওফাতের পরও তা হবে কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে কাজেই নবীগণ জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)
অনুরূপভাবে সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী প্রভৃতিতে অপর রিওয়ায়াতে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে--
ﻋَﻦْ ﺃَﻭْﺱِ ﺑْﻦِ ﺃَﻭْﺱٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓِﻴﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺨَﺔُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼَّﻌْﻘَﺔُ ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ ﻣَﻌْﺮُﻭﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻴْﻒَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻠَﺎﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭَﻣْﺖَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺑَﻠِﻴﺖَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ
হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে আর এদিনে সবাই সেই আওয়াজে বেহুঁশ হয়ে যাবে সুতরাং এদিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী করে দরূদ শরীফ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হবে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন--ইয়া রাসূলুল্লাহ! (আপনার ওফাতের পর) যখন আপনি মাটিতে গলে যাবেন, সে অবস্থায় আপনার নিকট কিভাবে আমাদের দরূদ পৌঁছানো হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন--“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৮/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৭৩/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫ প্রভৃতি)
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সালামের জাওয়াবও সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭُﻭﺣِﻲ ﺣﺘَّﻰ ﺃﺭُﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼﻡَ
“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকী-সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)
এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তাঁর রওজা মুবারকে দরূদ ও সালাম কী উপায়ে পৌঁছবে-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻼﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻧِﻲ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡَ
“নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছেন-যারা আমার নিকট আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন।”
(সুনানে নাসায়ী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা/ সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং ৯১৪/ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪২১২)
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মুবারকের নিকটে এসে কেউ সালাম পেশ করলে, তা রাসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি শুনতে পান এবং তার উত্তর দেন আর দূর থেকে তার নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করা হলে, তা ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে এ মর্মে হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺑَﻌِﻴْﺪًﺍ ﺃُﻋْﻠِﻤْﺘُﻪ
“যে কেউ আমার কবরের নিকটে এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।”
(আল-কাওলুল বাদী‘ লিল-সাখাবী, ৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্ষ্ঠা/ আল-লাআলী লিল-সুয়ূতী, ১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
এ হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা গেলো--রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরও তাঁর কবর মুবারকে তাঁর নিকট উম্মতের দরূদ পৌঁছানো হয় এবং সেই দরূদ স্বয়ং তিনি নিজে গ্রহণ করেন আর উম্মতের সালামের জাওয়াবও প্রদান করেন। সেই সাথে এটাও জানা গেলো যে, তিনি কবরে সশরীরে জীবিত। তেমনিভাবে সকল নবীই করবে জীবিত আছেন এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন
এভাবে যে কেউ যেখান থেকেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করে, তা তাঁর নিকট পৌঁছে এবং তিনি তার উত্তর প্রদান করেন। এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻼﺗَﻜُﻢْ ﺗَﺒْﻠُﻐُﻨِﻲ ﺣَﻴْﺚُ ﻛُﻨْﺘُﻢْ
“আমার প্রতি দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে তোমরা যেখানেই থাকো।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, ২য় খণ্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৫৮৬ / তাবরানী কাবীর, হাদীস নং ২৮২৯)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উম্মতের আমলও পৌঁছানো হয়, যা দেখে ভালো আমল হলে, তিনি খুশী হয়ে মহান আল্লাহর তারীফ করেন এবং আমল খারাপ হলে, আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটাও তাঁর রওজা মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকাকে প্রমাণ করে এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺣَﻴَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜُﻢْ ﺗُﺤَﺪِّﺛُﻮﻥَ ﻭَﻳُﺤَﺪَّﺙُ ﻟَﻜُﻢْ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻭَﻓَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟَﻜُﻢْ ، ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﺣَﻤِﺪْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ، ﻭَﺇِﻥْ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻏَﻴْﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻜُﻢْ
“আমার জীবন তোমাদের জন্য মঙ্গলময়; তোমরা পরামর্শ করে কাজ করো আর তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এরপর যখন আমি ওফাতবরণ করবো, তখন আমার ওফাত তোমাদের জন্য মঙ্গলময় হবে তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে; তাতে আমি যা ভালো দেখবো, সে জন্য মহান আল্লাহর তারীফ করবো আর যা মন্দ দেখবো, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো।”
(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ১৯২৫/ ইবনে সা‘দ, তবাকাতে কুবরা, ২য় খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা/ দাইলামী, ১ম খণ্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা)
এ সকল হাদীস দ্বারা হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সুতরাং এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদায় বিশ্বাসী হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য। এ জন্যই মুহাক্কিক ইমামুল হাদীস, ইমামুত তাফসীর ও ফক্বীহগণের বর্ণনায় নবীগণের (আ.) কবরে জীবিত থাকা ও হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ইমাম বাইহাক্বী (রহ.) হায়াতুন নবী প্রসঙ্গের বহু সহীহ হাদীস সংকলন করে একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন--যার নাম ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ (হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম) অর্থ : নবীগণের স্বীয় কবরে জীবিত থাকা)। উক্ত কিতাবের প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছেন--
ﻟﺤﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﻣﻮﺗﻬﻢ ﺻﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺷﻮﺍﻫﺪ ﻣﻦ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ
“নবীগণের মৃত্যুর পর কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে বহু সহীহ হাদীসের দলীল বিদ্যমান রয়েছে।” এরপর তিনি সেই হাদীসগুলো উক্ত কিতাবে বর্ণনা করেন
(দ্রষ্টব্য : হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম লিল-বাইহাকী, ৭৭ পৃষ্ঠা)
তেমনি আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) ﺍﻧﺒﺎﺀ ﺍﻻﺫﻛﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﺣﻴﺎﻩ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ (আমবাউল আযকিয়া বি-হায়াতিল আম্বিয়া) অর্থ : “নবীগণের জীবিত থাকার ব্যাপারে বিজ্ঞজনগণের সংবাদ” নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাব সংকলন করেছেন। উক্ত কিতাবে তিনি বলেন--
ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﻫﻮ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻣﻌﻠﻮﻣﺔ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻋﻠﻤﺎً ﻗﻄﻌﻴﺎً ﻟﻤﺎ ﻗﺎﻡ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﺩﻟﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻭﺗﻮﺍﺗﺮﺕ ﺑﻪ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ﺍﻟﺪﺍﻟﺔ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ
“হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে জীবিত থাকা এবং সকল নবীগণের (আ.) তাদের কবরে জীবিত থাকার বিষয় আমাদের নিকট অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল-প্রমাণ স্হাপিত হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে বহু মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে।”
(আবনাউল আযকিয়া : আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)
সুতরাং শহীদগণের ন্যায় বরং তাদের চেয়েও উত্তমরূপে সকল নবীগণের (আ.) এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো এবং এর বিস্তারিত অবস্থাপ্রকৃতি সম্পর্কেও জানা গেলো এখানে কোন জাল বা অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করা হয়নি পবিত্র কুরআন ও সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীসের মাধ্যমেই বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদা পোষণ করা অপরিহার্য কর্তব্য অন্যথায় উল্লিখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে ইনকার বা অগ্রাহ্য করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে
*****************************************
দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন প্রিয়জনদের কাছে। দ্বীনের হিদায়াতের সমূজ্জ্বল আলোকরশ্নিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
--মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
==============================
====
হায়াতুন নবী (সা.)-এর আলোচনার শুরুতে বিষয়টিকে ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য হায়াতুশ শুহাদা বা শহীদগণের কবরে জীবিত থাকার বিষয়ে আলোকপাত করছি। এরপর সকল নবী (আ.)-এর কবরে জীবিত থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর উল্লিখিত হায়াতুন নবী (সা.)-এর বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনার আশা করছি।
----------------------------
পবিত্র কুরআনে শহীদগণকে জীবিত ঘোষণা
----------------------------
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻟِﻤَﻦ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ۚ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻟَّﺎ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।”
(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ১৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺤْﺴَﺒَﻦَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗُﺘِﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺗًﺎ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳُﺮْﺯَﻗُﻮﻥَ
“যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিত; তাদের রব-প্রতিপালকের নিকট তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৯)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর পথে শহীদগণের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে মৃত বলা যাবে না। বরং তারা জীবিত। আবার উক্ত আয়াতদ্বয়েই রয়েছে যে, যারা নিহত (শহীদ) হয়েছেন অর্থাৎ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তবুও তাদেরকে জীবিত বিশ্বাস করতে হবে।
এর স্বরূপ বা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরের কিতাবে রয়েছে--দুনিয়াতে তাদেরকে সকলে নিহত বা শহীদ হিসেবেই জেনে কাফন-দাফন করেছেন। কিন্তু দুনিয়াবী মৃত্যুর পর আলমে বরযখে তারা জীবিতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অনন্য জীবন লাভ করেছেন-যে জীবনে তারা মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় জীবিত বলে ভূষিত হয়েছেন এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক দেয়া হয়-যা তাদের বিশেষভাবে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এক্ষেত্রে যদিও মুমিন বা কাফির নির্বিশেষে সকল মৃত ব্যক্তিরই আলমে বরযখে জীবিত হয়ে সুওয়াল-জাওয়াব ও আরাম বা আজাবের সম্মূখীন হওয়ার কথা হাদীস শরীফে রয়েছে, কিন্তু শহীদগণের এক্ষেত্রে বিশেষত্ব হলো, অন্যান্য মৃতের তুলনায় তাদের জীবন-অনুভূতি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও অধিক তাৎপর্যমণ্ডিত-যদ্দরুণ তারা জীবিত হিসেবে জীবনোকরণ স্বরূপ রিযিক লাভ করেন। আর তাদের এ জীবন-অনুভূতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাদের বিশেষ ধরনের জীবনের কিছু লক্ষণ পৃথিবীতেই তাদের দেহে প্রকাশ পায় যে, তাদের দেহ মাটিতে খায় না; তাদের লাশ বরাবর অবিকৃত থাকে। এ ধরনের বহু ঘটনা পৃথিবীতে প্রত্যক্ষিত হয়েছে।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতবী, ৩য় খণ্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে ইবনে কাসীর [ইফাবা], ৪র্থ খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন [ইফাবা], ২য় খণ্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
শহীদগণ আলমে বরযখে কিভাবে জীবিত অবস্হায় জীবন অতিবাহিত করেন এবং রিযিক লাভ করেন, সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে--
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--
ﺃَﺭْﻭَﺍﺣﻬﻢْ ﻓِﻲ ﺟَﻮْﻑ ﻃَﻴْﺮ ﺧُﻀْﺮٍ ﻟَﻬَﺎ ﻗَﻨَﺎﺩِﻳﻞ ﻣُﻌَﻠَّﻘَﺔ ﺑِﺎﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺗَﺴْﺮَﺡ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔ ﺣَﻴْﺚُ ﺷَﺎﺀَﺕْ
“শহীদগণের রূহ সবুজ রঙের পাখির পেটের ভিতরে বিশেষ সম্মানিত অবয়বে অনন্য জীবন লাভ করে। আর তাদের জন্য আরশে প্রদীপসমূহ লটকানো হয়। তারা জান্নাতে যেখানে খুশী বিচরণ করেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৭)
শহীদগণ আলমে বরযখে রিযিক কীভাবে লাভ করেন-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﺎﺭِﻕِ ﻧَﻬْﺮٍ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﻭَﻳَﻈْﻬَﺮُ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓِﻲ ﻗُﺒَّﺔٍ ﺧَﻀْﺮَﺍﺀَ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭِﺯْﻗُﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺑُﻜْﺮَﺓً ﻭَﻋَﺸِﻴًّﺎ
“শহীদগণ জান্নাতের দ্বারে নির্ঝরণীর ঝলকে সবুজ গম্বুজের মধ্যে অবস্হান করেন। তখন জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের নিকট রিযিক আগমন করে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮৬)
অপরদিকে সাধারণ মুমিনগণের রূহ সম্পর্কে হযরত কা‘ব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻧَﺴَﻤَﺔُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻃَﺎﺋِﺮٌ ﻳَﻌْﻠُﻖُ ﻓِﻲ ﺷَﺠَﺮِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺮْﺟِﻌَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺒْﻌَﺜُﻪُ
“মুমিনের রূহ পাখিরূপে জান্নাতের গাছে বিচরণ করে--যে পর্যন্ত রোজ কিয়ামতে তার দেহে তাকে ফেরানো না হবে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৩৫১)
সুতরাং এক্ষেত্রে শহীদগণের রূহ তারকার ন্যায়-যা সবুজ পাখির ভিতর প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে সাধারণ মুমিনগণের রূহ স্বয়ং পাখির স্বরূপ হয়ে যায়।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা)
----------------------------------------
শহীদগণের চেয়ে উত্তম অবস্থায় নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত
----------------------------------------
আলমে বরযখে শহীদগণের উল্লিখিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবনের চেয়ে অধিক শক্তিমান ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন হচ্ছে নবী-রাসূলগণের বরযখী জীবন। কারণ, তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন--তাদের শরীরকে কখনো মাটি খেতে পারে না এবং তারা নামায পড়াসহ জীবিত মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্য লাভ করেন।
নবীগণের কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) বলেন-
ﻷﻥ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻓﻲ ﺻﻮﺭﺓ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕ ﺑﺎﻟﻨﺴﺒﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻭﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﻟﻠﺸﻬﺪﺍﺀ . ﻭﻻ ﺷﻚ ﺃﻥ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺭﻓﻊ ﺭﺗﺒﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ
“কেননা, নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন কারণ, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।”
(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা)
আলমে বরযখে নবীগণের (আ.) জীবিত থাকার প্রমাণে বহু সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসসমূহে তাঁদের কবরে জীবিত থাকা এবং শহীদগণের চেয়েও অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত অসাধারণ জীবন লাভের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ
“নিশ্চয়ই নবীগণ কবরে জীবিত; তারা নামায পড়েন।”
(বাইহাক্বী-হায়াতুল আম্বিয়া, ১৫ খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৩৯১/ মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৫ প্রভৃতি)
উক্ত হাদীসে নবীগণের (আ.) মৃত্যুর পর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা এবং সেখানে নামায পড়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কবরে নবীগণের নামায পড়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বর্ণনায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﺮَﺭْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺃُﺳْﺮِﻱَ ﺑِﻲ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜَﺜِﻴﺐِ ﺍﻷَﺣْﻤِﺮِ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ
“আমি যে রাতে আমাকে মি’রাজে নেয়া হলো মূসা (আ.)-এর নিকট এলাম এমতাবস্হায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১)
এ হাদীস উল্লেখ করার পর আল্লামা কুরতবী (রহ.) বলেন--
ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳﺪﻝ ﺑﻈﺎﻫﺮﻩ ﻋﻠﻰ : ﺃﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺃﻯ ﻣﻮﺳﻰ ﺭﺅﻳﺔ ﺣﻘﻴﻘﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻘﻈﺔ ، ﻭﺃﻥ ﻣﻮﺳﻰ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﺣﻴﺎ ، ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ ، ﻭﻫﺬﺍ ﻛﻠﻪ ﻣﻤﻜﻦ ﻻ ﺇﺣﺎﻟﺔ ﻓﻲ ﺷﻲﺀ ﻣﻨﻪ ، ﻭﻗﺪ ﺻﺢ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻳﺮﺯﻗﻮﻥ ، ﻭﻭﺟﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺘﻐﻴﺮ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﻴﻦ ، ﻭﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﺮﻯ ﻭﺃﻭﻟﻰ
“এ হাদীসের দ্বারা বাহ্যতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মূসা (আ.)কে বাস্তবেই জাগ্রত অবস্হায়ই দেখেছেন এবং মূসা (আ.) কবরে জীবিত ছিলেন, তিনি সেখানে সেই নামাযই পড়ছিলেন-যা তিনি জীবদ্দশায় পড়তেন। এ সবই সম্ভব, এর কোন কিছুতে অবাস্তবতা নেই। আর বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শহীদগণ জীবিত এবং তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন আর তাদের অনেককে এমন অবস্হায় পাওয়া গিয়েছে যে, অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বীয় কবরের মধ্যে তাঁরা কোনরূপ পরিবর্তন হননি। তারা সম্পূর্ণ অবিকৃতরূপে আছেন। সুতরাং যখন শহীদগণের অবস্হা এই, তখনতো নবীগণের অবস্হা আরো উন্নত ও উত্তম হবে!” (আল-মুফহিম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা)
তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইবরাহীম (আ.)কে এ অবস্হায় দেখেছেন যে, তারা নামায পড়ছেন বলে অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত হাদীসসমূহে নবীগণের ওফাতের পর কবরে যে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, এটা দুনিয়াতে তাঁদের প্রতি আরোপিত তাকলীফী নামায নয়, বরং এটা কবরে তাঁদের বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক তাশরীফী নামায। তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত হওয়ার পর এ নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করেন-যেমন ফেরেশতাগণ মুকাল্লাফ না হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর বিভিন্ন ইবাদত পালনের দ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করেন। নবীগণ কবরে গমনের পর কখন এ তাশরীফী নামায আদায়ের সম্মান লাভ করেন, সে সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀَ ﻻ ﻳُﺘْﺮَﻛُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺑَﻌْﺪَ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً , ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻬُﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻨْﻔَﺦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ
“নবীগণ তাঁদের কবরে চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিবৃত্ত থাকেন না এ ছাড়া যে, তারা মহান আল্লাহর সমীপে নামায পড়তে থাকেন। আর তা অব্যাহত থাকবে যাবত (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হয়।”
(মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৮/ মুসনাদে বায্যার, হাদীস নং ৬৩৯৬/ মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)
অপরদিকে আলমে বরযখে শহীদগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি আলমে বরযখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু তাঁদের শরীর কবরে অক্ষত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে এসবই কবরে তাঁদের সশরীরে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻓﻨﺒﻲُّ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻲٌّ ﻳُﺮْﺯَﻕ
“আল্লাহ তা‘আলা যমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খাবে। তাই আল্লাহর নবী মাত্রই জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৬৩৭)
এ সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো--নবী ও রাসূলগণ কবরে সশরীরে জীবিত আছেন; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন এবং নামায পড়েন।
এ ছাড়াও মি‘রাজের ঘটনার হাদীস শরীফে অনেক নবীর কথা এসেছে যে, তাঁদের সাথে আসমানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম হয়েছে এবং মূসা (আ.) উম্মতে মুহাম্মদীর উপর আরোপিত ৫০ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে আনতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার পরামর্শ দেন। যার বদৌলতে পরিশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজরূপে বলবৎ করা হয়। আবার সকল নবী ও রাসূল (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসে তাশরীফ এনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতীতে নামায আদায় করেন।
(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৪)
এসব ঘটনা নবীগণের (আ.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের এ আকীদা-বিশ্বাস রাখা কর্তব্য
তবে নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত-এটা যেমন অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তেমনি দুনিয়া থেকে তাঁরা ওফাত পেয়েছেন-একথাও সত্য এবং এর ওপরও ঈমান রাখতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
ﻭَﻣَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻗَﺪْ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻪِ ﺍﻟﺮُّﺳُﻞُ
“মুহাম্মদ (সাা.)তো একজন রাসূলই, আর তার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন--
ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٌ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣَّﻴِّﺘُﻮﻥَ
“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”
(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৩০)
সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা ওফাতের ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই। যেমন, কবরে সশরীরে জীবিত থাকা, যমিন তাদের শরীর না খাওয়া, সেখানে রিযিক লাভ করা, নামায পড়া প্রভৃতি।
--------------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে সশরীরে জীবিত আছেন
--------------------------------
উপরোল্লিখিত দলীল-প্রমাণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে--নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। আর তিনি সেখানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন এবং তিনি সেখানে তাশরীফী নামায আদায়ের বিশেষ সম্মান লাভ করেন।
এ ছাড়াও বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে অনন্য বৈশিষ্ট্যে জীবিত থাকার প্রমাণে হাদীস শরীফে বহু বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্য হতে কিছু হাদীস নিম্নে পেশ করা হলো--
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে--
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﺸْﻬُﻮﺩٌ ﺗَﺸْﻬَﺪُﻩُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺇِﻥَّ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻟَﻦْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻋُﺮِﺿَﺖْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺻَﻠَﺎﺗُﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻭَﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻓَﻨَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻲٌّ ﻳُﺮْﺯَﻕُ
হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“তোমরা জুমু‘আর দিনে বেশী করে দরূদ পড়ো কেননা, এদিন উপস্থিতির দিন-ফেরেশতাগণ এদিনে উপস্থিত হন আর তোমাদের কেউ যখনই আমার প্রতি দরূদ পড়ে, তখনই সেই দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়-এ পর্যন্ত যে, সে দরূদ পড়া থেকে ফারেগ হয়।” হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) বলেন, আমি বললাম--(আপনার) ওফাতের পরও তা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-“(আমার) ওফাতের পরও তা হবে কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে কাজেই নবীগণ জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)
অনুরূপভাবে সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী প্রভৃতিতে অপর রিওয়ায়াতে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে--
ﻋَﻦْ ﺃَﻭْﺱِ ﺑْﻦِ ﺃَﻭْﺱٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓِﻴﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺨَﺔُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼَّﻌْﻘَﺔُ ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ ﻣَﻌْﺮُﻭﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻴْﻒَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻠَﺎﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭَﻣْﺖَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺑَﻠِﻴﺖَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ
হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে আর এদিনে সবাই সেই আওয়াজে বেহুঁশ হয়ে যাবে সুতরাং এদিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী করে দরূদ শরীফ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হবে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন--ইয়া রাসূলুল্লাহ! (আপনার ওফাতের পর) যখন আপনি মাটিতে গলে যাবেন, সে অবস্থায় আপনার নিকট কিভাবে আমাদের দরূদ পৌঁছানো হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন--“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৮/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৭৩/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫ প্রভৃতি)
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সালামের জাওয়াবও সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭُﻭﺣِﻲ ﺣﺘَّﻰ ﺃﺭُﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼﻡَ
“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকী-সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)
এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তাঁর রওজা মুবারকে দরূদ ও সালাম কী উপায়ে পৌঁছবে-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻼﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻧِﻲ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡَ
“নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছেন-যারা আমার নিকট আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন।”
(সুনানে নাসায়ী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা/ সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং ৯১৪/ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪২১২)
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মুবারকের নিকটে এসে কেউ সালাম পেশ করলে, তা রাসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি শুনতে পান এবং তার উত্তর দেন আর দূর থেকে তার নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করা হলে, তা ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে এ মর্মে হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺑَﻌِﻴْﺪًﺍ ﺃُﻋْﻠِﻤْﺘُﻪ
“যে কেউ আমার কবরের নিকটে এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।”
(আল-কাওলুল বাদী‘ লিল-সাখাবী, ৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্ষ্ঠা/ আল-লাআলী লিল-সুয়ূতী, ১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
এ হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা গেলো--রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরও তাঁর কবর মুবারকে তাঁর নিকট উম্মতের দরূদ পৌঁছানো হয় এবং সেই দরূদ স্বয়ং তিনি নিজে গ্রহণ করেন আর উম্মতের সালামের জাওয়াবও প্রদান করেন। সেই সাথে এটাও জানা গেলো যে, তিনি কবরে সশরীরে জীবিত। তেমনিভাবে সকল নবীই করবে জীবিত আছেন এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন
এভাবে যে কেউ যেখান থেকেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করে, তা তাঁর নিকট পৌঁছে এবং তিনি তার উত্তর প্রদান করেন। এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻼﺗَﻜُﻢْ ﺗَﺒْﻠُﻐُﻨِﻲ ﺣَﻴْﺚُ ﻛُﻨْﺘُﻢْ
“আমার প্রতি দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে তোমরা যেখানেই থাকো।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, ২য় খণ্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৫৮৬ / তাবরানী কাবীর, হাদীস নং ২৮২৯)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উম্মতের আমলও পৌঁছানো হয়, যা দেখে ভালো আমল হলে, তিনি খুশী হয়ে মহান আল্লাহর তারীফ করেন এবং আমল খারাপ হলে, আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটাও তাঁর রওজা মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকাকে প্রমাণ করে এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
ﺣَﻴَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜُﻢْ ﺗُﺤَﺪِّﺛُﻮﻥَ ﻭَﻳُﺤَﺪَّﺙُ ﻟَﻜُﻢْ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻭَﻓَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟَﻜُﻢْ ، ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﺣَﻤِﺪْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ، ﻭَﺇِﻥْ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻏَﻴْﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻜُﻢْ
“আমার জীবন তোমাদের জন্য মঙ্গলময়; তোমরা পরামর্শ করে কাজ করো আর তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এরপর যখন আমি ওফাতবরণ করবো, তখন আমার ওফাত তোমাদের জন্য মঙ্গলময় হবে তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে; তাতে আমি যা ভালো দেখবো, সে জন্য মহান আল্লাহর তারীফ করবো আর যা মন্দ দেখবো, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো।”
(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ১৯২৫/ ইবনে সা‘দ, তবাকাতে কুবরা, ২য় খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা/ দাইলামী, ১ম খণ্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা)
এ সকল হাদীস দ্বারা হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সুতরাং এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদায় বিশ্বাসী হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য। এ জন্যই মুহাক্কিক ইমামুল হাদীস, ইমামুত তাফসীর ও ফক্বীহগণের বর্ণনায় নবীগণের (আ.) কবরে জীবিত থাকা ও হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ইমাম বাইহাক্বী (রহ.) হায়াতুন নবী প্রসঙ্গের বহু সহীহ হাদীস সংকলন করে একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন--যার নাম ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ (হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম) অর্থ : নবীগণের স্বীয় কবরে জীবিত থাকা)। উক্ত কিতাবের প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছেন--
ﻟﺤﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﻣﻮﺗﻬﻢ ﺻﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺷﻮﺍﻫﺪ ﻣﻦ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ
“নবীগণের মৃত্যুর পর কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে বহু সহীহ হাদীসের দলীল বিদ্যমান রয়েছে।” এরপর তিনি সেই হাদীসগুলো উক্ত কিতাবে বর্ণনা করেন
(দ্রষ্টব্য : হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম লিল-বাইহাকী, ৭৭ পৃষ্ঠা)
তেমনি আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) ﺍﻧﺒﺎﺀ ﺍﻻﺫﻛﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﺣﻴﺎﻩ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ (আমবাউল আযকিয়া বি-হায়াতিল আম্বিয়া) অর্থ : “নবীগণের জীবিত থাকার ব্যাপারে বিজ্ঞজনগণের সংবাদ” নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাব সংকলন করেছেন। উক্ত কিতাবে তিনি বলেন--
ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﻫﻮ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻣﻌﻠﻮﻣﺔ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻋﻠﻤﺎً ﻗﻄﻌﻴﺎً ﻟﻤﺎ ﻗﺎﻡ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﺩﻟﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻭﺗﻮﺍﺗﺮﺕ ﺑﻪ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ﺍﻟﺪﺍﻟﺔ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ
“হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে জীবিত থাকা এবং সকল নবীগণের (আ.) তাদের কবরে জীবিত থাকার বিষয় আমাদের নিকট অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল-প্রমাণ স্হাপিত হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে বহু মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে।”
(আবনাউল আযকিয়া : আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)
সুতরাং শহীদগণের ন্যায় বরং তাদের চেয়েও উত্তমরূপে সকল নবীগণের (আ.) এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো এবং এর বিস্তারিত অবস্থাপ্রকৃতি সম্পর্কেও জানা গেলো এখানে কোন জাল বা অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করা হয়নি পবিত্র কুরআন ও সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীসের মাধ্যমেই বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদা পোষণ করা অপরিহার্য কর্তব্য অন্যথায় উল্লিখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে ইনকার বা অগ্রাহ্য করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে
*****************************************
দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন প্রিয়জনদের কাছে। দ্বীনের হিদায়াতের সমূজ্জ্বল আলোকরশ্নিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন