বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করা সুন্নাত ।

ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা সুন্নাত। এ ‘মুনাজাত’ নির্ভরযোগ্য হাদীস, ফতওয়া ও ইমামগণের বাণী দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত, হাদীস ও ইমামগণের বাণী নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
আয়াত-১
(سورة البقرة-১৮৬) وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ١ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
অর্থ, আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করি যখন আমার কাছে দোয়া করে। (সূরা বাকারা-১৮৬)
আয়াত-২
وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ اِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِیْ سَیَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیْنَ۠ ۝۶۰ (سورة المؤمن -৬০)
অর্থ, আপনাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। যারা আমার এবাদতে (অর্থাৎ দোয়ার ক্ষেত্রে) অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা মুমিন-৬০)
হাদীস -৩ [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
(১) عَنْ اَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعُ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ ( ترمذي , باب ما جاء في عقد التسبيح, ২/১৮৭, رقم الحديث- ৩৪২১)
(৩) হযরত আবূ উমামা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন সময়ে দুয়া কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘শেষ রাতে এবং ফরয নামাযের পরে।’ [তিরমিযী শরীফ ২:১৮৭, হাদীস নং ৩৪২১]
হাদীস -৪ [ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত]
(২) مُحَمَّدُ بن اَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأْيَتُ عَبْدَ اللَّهِ بن الزُّبَيْرِ، وَرَاَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ يَدْعُو قَبْلَ اَنْ يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ:" اِنََ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعُ يَدَيْهِ، حَتَّى يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ" (معجم الكبيري للطبراني- رقم الحديث-৯০; مجمع الزوئد-১০/১৬৯)
(৪) হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আবু ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) দেখলাম যে তিনি একজন নামাজীকে দেখলেন, সে নামাজ শেষ করার আগেই হাত তুলে দোয়া করছেন। তখন তিনি তাকে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শেষ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতেন না। (মাজমাউয যাওয়াইদ-১০/১৬৯)
হাদীস -৫ [ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত]
(৩) عَنْ جَابِرٍ بْنِ يَزِيْدٍ الاَسْوَدِ الْعَامِرِيِّ عَنْ اَبِيْه قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ اِنْحَرَفَ وَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا . (منصف ابن ابي شيبه ১/৩৩৭)
(৫) হযরত জাবের ইবনে ইয়াযিদ আল আসওয়াদাল আমেরী (রা) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত তুলে দোয়া করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-১/৩৩৭)
হাদীস -৬ [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন তুমি ফরয নামায হতে ফারেগ হবে, তখন দোয়ায় মশগুল হয়ে যাবে।’ [তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা: ,৫১৪পৃ]
হাদীস -৭ [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
হযরত কাতাদাহ, যাহ্হাক ও কালবী (রহ:) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, ফরয নামায সম্পন্ন করার পর দোয়ায় মশগুল হবে। [তাফসীরে মাযহারী ১০:২৯পৃ:]
হাদীস -৮ [নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো]
(৬) عَنْ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا اِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلًا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (سنن الترمذي, باب ما جاء في التخشع, رقم الحديث-৩৫১)
(৮) হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নামায দুই রাকাত; প্রত্যেক দুই রাকাতে আত্ত্যাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতা ও বিনীতভাবে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দুই হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত আল্লাহ তাআলার দিকে উঠাবে এবং চেহারা কিবলামুখী করবে। অতপর বলবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ ! (এভাবে দোয়া করবে।) যে ব্যক্তি এরুপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। [তিরমিযী শরীফ, ১৮৭, হাদীস নং-৩৫১]।
হাদীস -৭ [মুনাজাতে হাত উঠানো]
(৭) عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللَّهَ حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي اِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ اِلَيْهِ يَدَيْهِ اَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ (ترمذي, باب دعاء النبي صلي الله عيله و سلم, ২/১৯৫, رقم الحديث-৩৪৭৯)
(৯) হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বড় দয়ালু দাতা। যখন বান্দা তাঁর কাছে দোয়ায় হাত উঠায় তখন তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিযী শরীফ, ২/১৯৫, হাদীস নং-৩৪৭৯)
হাদীস নং-১০ [ইমাম-মুক্তাদীর মুনাজাত]
(৮) عَنْ ثَوْبَانَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَحِلُّ لِامْرِئٍ اَنْ يَنْظُرَ فِي جَوْفِ بَيْتِ امْرِئٍ حَتَّى يَسْتَأْذِنَ فَ اِنْ نَظَرَ فَقَدْ دَخَلَ وَلَا يَؤُمَّ قَوْمًا فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُونَهُمْ فَ اِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ (ترمذي, باب ما جاء في كراهية أن رقم الحديث-৩২৫)
(১০) হযরত সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য উচিত নয় অন্য কারোর ঘরের ভিতরে তাকানো তাদের থেকে অনুমতি নেওয়ার আগে। যদি সে (অনুমতি নেওয়া আগে) তাকায় তাহলে সে খেয়ানত করলো। কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দোয়াতে শুধু নিজের জন্যই দোয়া করবে। যদি এরুপ করে, তাহলে সে তাদের সাথে খেয়ানত করল।’ [তিরমিযী শরীফ ১:৮২, হাদীস নং-৩২৫]
(১১) কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে দোয়া করা প্রসঙ্গে
(১১) عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:"مَا رَفَعَ قَوْمٌ اَكُفَّهُمْ اِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْاَلُونَهُ شَيْئًا، اِلا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ اَنْ يَضَعَ فِي اَيْدِيهِمُ الَّذِي سَاَلُوهُ". ( معجم الكبيري للطبراني, رقم الحديث-৬০১৯)
(১১) হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু লোক হাত তুলে আল্লাহ তাআলার কাছে চায় তখন আল্লাহ তাআলার কাছে (তাদের) হক হয়ে যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাদের হাতে তাদের চাওয়ার জিনিস দান করেন। (মুজামুল কাবীর লিত ত্ববরানী-৬০১৯)
মুনাজাতের ব্যাপারে ইমামগণের বাণী
ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা যে সুন্নাত। এটা পূর্বাপর সকল মহান ব্যক্তিদের নিকট নির্ধিদায় স্বীকৃত। এমনকি আহলে হাদীস ও গায়রে মুকাল্লিদ আলেমদের নিকটও সুন্নাত। যেমন,
১. হাফেজ আব্দুল্লাহ রোপড়ী বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করার যে প্রচলন রয়েছে তা সঠিক।’ (ফাতাওয়ায়ে আহলে হাদীস-২/১৯০)
২. মিয়া নজীর হুসাইন দেহলভী বলেন, ‘ চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। যায়েদ (যিনি এই মুনাজাতকে বিদআত বলেন সে) ভুল বলেন।’ (ফাতাওয়ায়ে নাজীরিয়াহ-১/৫৬৬)
৩. মাওলানা ছানাউল্লাহ আমৃতসরী বলেন, ‘কোন কোন রেওয়ায়েতে নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করার কথা রয়েছে।’ (ফাতাওয়ায়ে ছানাইয়্যাহ-১/৫২৭)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন